শুধু তুই । পর্ব - ০২
কাউকে এড়িয়ে চলতে চাওয়া এবং এড়িয়ে চলার মধ্যে বিশাল বড় তফাৎ থাকে । মাঝে মাঝে দেখা যায় যাকে আমরা সব থেকে বেশি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি তার সাথে তত বেশি বার দেখা কথা হয়ে যায়। বার বার সে ব্যক্তি সামনে এসে দাঁড়ায় তখন তাকে না যায় এড়িয়ে চলা আর না যায় ঠিক করে কথা বলা ।
আমার ক্ষেত্রেও সেই একই ঘটনা ঘটেছিল।
যখন আমি সেই ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি সে বার বার সামনে
এসে আমাকে দুর্বল করে দিয়েছিল।
আচ্ছা যাদেরকে আমাদের খুব পছন্দ তারা যদি আমাদের পায়ের তলায় পিষ্টে দেয়
তখন ও কি আমাদের আত্মসম্মানবোধ জাগে না?
একদিন ক্যাম্পাসে বসে সব গাধা উজ্বুকদের মানে ফ্রেন্ডের সাথে আড্ডা দিচ্ছি সে এসে বসল
আমার ঠিক পাশে । আহা !কি সুন্দর ও মোহনীয় তার সেই হাসি।
আমি তাকিয়ে আছি আর মনে ভাবছি সে কি করে এত সুন্দর হাসি পেল আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে ।
আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টি তৈরি করেছেন বিশেষ বিশেষ নিয়ামত ও সৌন্দর্য দিয়ে।
যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই ওনার সৃষ্টির সৌন্দর্য নজর কাড়ে ।
এই যে সে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে ছোট ছোট দন্ত গুলো বের করে হালকা
মনোমুগ্ধকর শব্দে চোখ দুটো একটু পর পর টিপে হাসছে সেই হাসিটাও বেশ ভালো লাগছে আমার ।
সত্যি বলতে কিছু মানুষ আছে যাদের কথা এবং কাজ আমাদের না চাইতেও বড্ড বেশি আকৃষ্ট করে ।
কথার মাঝপথেই আমার বান্ধবী হৃদি জিজ্ঞেস করল,
ফিউচার প্লান কি ? কে কি করতে চাও ?ঝটপট বলে ফেল মামা।
এদের মধ্যে আমাদের একজন ভীষণ মজার একজন বন্ধু ছিল সে সবসময় এমন সব কথা ও
কাজ করত যা দেখে আমরা সবাই যেমন বিব্রত হতাম তেমনি মজাও নিতাম।
তাকে আমার বড্ড ভালো লাগত ।তবে অবশ্য এই ভালো লাগার আলাদা কারণ ছিল ।
সে কারণটি হলো এই সেই ব্যক্তি যে কিনা আমার প্রিয় মানুষটার সব গোপন কথা জানত ।
আমি অবশ্য ওর কাছ থেকে কয়েকবার চেষ্টা করছি ওর কিছু বিশেষ কথা জানতে
কিন্তু কিছু মানুষ আছে না যাদের পেটে ফাটে কিন্তু মুখ ফুটে না।এই ব্যক্তি ছিল সেই ক্যাটাগরির।
নাম তার রিমেল আহমাদ।
ওর এই অদ্ভুত নামের জন্য আমরা সকলে মিলে ওর একটা নিক নেম দেই যেটা ছিল “ ফিমেল” ।
পরে ও আমাদের বলেছিল ওর এই অদ্ভুত নামের গল্প। গল্পটা ছিল ঠিক এরকম,,
“ তো আমার ভাইয়েরা বোইনেরা এবং ভাবি শুনেন,আমার মায়ের নাম হলো
রিমি জাহান এবং আমার ওয়ান অ্যান্ড অনলি চিপায় কিলায় আব্বার নাম হিমেল চৌধুরী।
শুরু তে ওনাদের অত্যাচারের ভয়ে কোন শিশু পয়দা হইতে চাইতাছিল না।
অনেক চিকিৎসা করানোর ফলে অনেক আশা ও দোয়া দরুদ করার পরে আমি নিস্পাপ
অত্যাচারিত এক নবভুপতিত জন্ম নিলাম । আব্বা ও আমার মা খুশি হইলেন খুব।
কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিল এই কুলাঙ্গারের নাম দিব কি ?
মা কইল পোলা হইছে তাই তার নামেই নাম হইব আর আব্বা কইল পোলা কি তোমার একার নি ।
এরপর নাহি আমার নানু সমস্যার করলেন সমাধান।
রিমির রি এবং হিমেলের মেল (রি+মেল =রিমেল) ।”
ওর এই গল্পটা শুনে আমরা হাসতে হাসতে অনেক মজা করেছিলাম।
আর আমি আড়চোখে দেখেছিলাম তার সেই মনোমুগ্ধকর হাসি।
এই রিমেলের ফিউচার প্লান,
-আমার আরকি একটা বিয়া করমু কয়ডা বাচ্চা - কাচ্চা পয়দা করমু ।
এরপর সারাদিন আব্বা আব্বা কইব এডা-ওডা চাইব তখন আমার বাপের মতন চিপায় কিলায় দিমু ।
কারো ফিউচার প্লান যে এমন হতে পারে আমার মাথাতেও ছিল না।
কিন্তু আমার সেই প্রিয় মানুষটি তখনো ছিল নিস্তব্ধ।যেন সে এক আলাদা পথের পথিক ।
আমরা একেক জন ব্যস্ত তখন নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়
তখন সে নীরবে নিভৃতে শুনে চলেছিল আমাদের উপাখ্যান।
এবার এসেছিল আমার পালা সকলে জোড়াজুড়ি শুরু করে দিল।তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই বললাম ,
আমার আরকি আগে কলেজ লাইফ শেষ করব তারপর যা হবে দেখা যাবে ।
আমাদের মধ্যে একে একে সকলে নিজদের স্বপ্নগুলো বললাম।তবুও তখনও সে নিশ্চুপ।
আমার যেন মনটা হাসপাস করছিল তার কথা শোনার অপেক্ষায়।
যখন সকলে মিলে অনেক করে রিকোয়েস্ট করল তারপর সে মুখটা খুলল।
এমনটা নয় যে সে প্রচুর কথা বলে সে সবসময়ই চুপচাপ থাকতে ভালবাসে।
সে গলাটা খানিকটা পরিষ্কার করে একটু মাধূর্যদা মিশিয়ে বলল ,
মানব সেবা করাই আমার একমাত্র পণ ।
ব্যস এতটুকুই শেষ। এরপর তার মুখ দিয়ে আর একটিও শব্দ বের হলো না।
বড্ড অদ্ভুত সে ।এরপর খানিকটা সময় আমরা সকলেই ছিলাম নিরব ।
সেই নিরবতা ভাঙল ।রিমেলকে আমাকে দেখিয়ে বলল,
যাবার সময় নামিয়ে দিয়ে যাস।
দরকার নেই। আমি ঠিক চলে যেতে পারব ।
আর একটি বারও প্রতিত্তর করলোনা আমার।
করবেই বা কি করে তার যে প্রিয় মানুষের ফোন এসেছে।
সে কথা বলল বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার সময় ঠোঁটে কি অপরূপ হাসি দেখলাম আমি তার ।
আচ্ছা প্রিয় কারো সাথে কথা বললে বুঝি আমাদের ঠোঁটে আপনা আপনি হাসি ফোটে?তারা কি বোঝে না
এই হাসি দেখলে অন্যকেউ গভীর ভাবে মনস্তাপে ভোগে ,,,,,,
( চলবে)
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com