পরী যখন বউ । পর্ব - ০৫
আকাশ,ঘুমিয়ে পড়ে,রাতের বাজে এক টা, চোখটা মাত্র লেগে এসেছে এমন সময় কেউ একজন তার গায়ের কাথা সরিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করতেছে,
আকাশ,ঘুরে ঠাসসসস করে একটা থাপ্পড় লাগাই দেয়,
আকাশ লক্ষ করে দেখে মাবশূরাহ গালে হাত দিয়ে বসে আছে,
কি সমস্যা তোমার হা...?
আমাকে না বারন করেছো তুমি আমায় ভালেবাসো না,
আর তোমার সাথেও যেন এই সব রসিকতা না করি...!
মাবশূরাহ, গালে হাত দিয়ে কান্না করে দিছে,হা ভালোবাসি না তো
কিন্তু আমার যে ঘুম আসতেছে না,তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ধরতে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেছে...!
আকাশ,তো আমি কি করবো...!
ঘুম আসলে আসুক না আসলে না আসুক সেটা তোমার ব্যপার,কিন্তু তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারবে না,আর বেবি টা হলে তুমি তারপর যেখানে খুশী চলে যেও সমস্যা নাই....!
মাবশূরাহ, সে তো যাবো, কিন্তু এখন আমি জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো
আমার তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসে না,
আকাশ,সরি তা হচ্ছে না!
মাবশূরাহ, নাহ আমি জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো দরকার হয় তুমি আমাকে আরো দুইটা থাপ্পড় দাও, তাও জড়িয়ে ধরতে দাও...!
আকাশ,ধুর শান্তি মত ঘুমাতেও পারবো না,রাগ করে বিছানা ছেড়ে উঠে চলে যায়,উঠে বারান্দায় চলে যায়....!
মাবশূরাহ, বিছানায় বসে আছে,আর আকাশের গোষ্ঠী উদ্ধার করতেছে, ডুমের বাচ্চা করে কেমন দেখ না কি ভাব জড়িয়ে ধরেছি বলে
ঘুম আসে না, না হয় রাম ছাগল তোকে আমি কোনদিন জড়িয়ে ধরতাম না...!
অন্যিদকে আকাশ,
বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবতেছে,কেমন মেয়েরে বাবা, রাগ করছি কোথায় রাগ ভাঙ্গাবে তা না উল্টো আরো বলে কিনা বেবি হলে ছেড়ে দিয়ে চলে যাবে,কিন্তু এখন ঘুম আসে না দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে, যদি ভালোবেসে বলতো তাহলে ঠিক এই দিতাম....!
বেশ কিছুক্ষণ পর আকাশ রুমে গিয়ে দেখে মাবশূরাহ ছোট বাচ্চার মত জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে আছে বালিশকে জড়িয়ে ধরে,ইশ কি মায়াবী লাগতেছে দেখতে ইচ্ছে করতেছে জড়িয়ে ধরে সারা কপালে কিস করতে,
কিন্তু নাহ করা যাবে না,আমি তো ওর উপরে রাগ করছি
আকাশ সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে,
সকালে উঠে আবার বের হয়ে চলে যায়,নতুন চাকরিতে কারন গতকালকে সারাদিন সময় নিয়ে জব খুজেছে,ভালো একটা জব পেয়েও গেছে,
একটা ছোটখাটো অফিসের ম্যানাজার পদে সে চাকরি পেয়েছে,
অন্যদিকে মাবশূরাহ সকালে উঠে আকাশকে কোথাও দেখতে পায় না,
কিরে গেলো কোথায়,এখন আমাকে সকালের নাস্তা কে খাইয়ে দিবে,
নাহ আম্মুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেসা করি,
আম্মু আম্মু আকাশ কোথায়...?
আম্মু,মা রে সে তো বলে গেছে আজ থেকে নাকি নতুন চাকরিতে জয়েন করবে,তাই অফিসে গেছে হয়তো...!
মাবশূরাহ, কিহহহহ, মনে মনে খাটাশ একটা নতুন চাকরি পেয়েছে আমাকে একটা বারো বলে নাই,ঘরের বউ এর কথা ভুলেই গেছে,
ধুর ধুর কি বলছি আমি তো ওর বউ না,খালি এক বছর এনা,
আম্মু,আকাশ তো চলে গেছে আমাকে না খাইয়ে দিয়ে,
এখন সকালের নাস্তা কে খাইয়ে দিবে আমাকে...?
আম্মু,কেন রে আমরা কি মরে গেছি নাকি,আকাশ খাইয়ে যায়নি বলে কি আমরা তোকে না খাইয়ে রেখে দিবো,
তারপর আকাশের মা মাবশূরাহ কে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়,
আকাশ,অনেক রাত করে বাসায় আসে,মাবশূরাহ রুমে বসে আছে কিন্তু মাবশূরাহ এর সাথে একটা শব্দ ও কথা বলে নাই,
সে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে,
মাবশূরাহ, কিরে ও আমার সাথে কথা বললো না কেন..?
আগে তো সব সময় আমাকে জ্বালিয়ে শেষ করতো, কিন্তু এখন এমন চুপচাপ কেন হয়ে গেছে...!
আকাশ,ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে খেয়ে নেয়,মাবশূরাহ কে একবারো জিজ্ঞেসা করে নাই সে খেয়েছে কিনা,দরকারো মনে করে না সে,
আকাশ খাবার খাচ্ছে কিন্তু মাবশূরাহ এসে খাবার টেবিলের পাশে ঘুরঘুর করছে,
আকাশ,মনে মনে বাছা ঘুরঘুর করে কোন লাব হবে না,তোমাকে ভালোবাসা শিখিয়ে তারপর ছাড়বো, ভালো না বেসে যাবে কোথায় তুমি...!
তারপর রুমে এসে শুয়ে পড়ে,
মাবশূরাহ, এর সাহস হচ্ছে না, যে আকাশকে বলতে সে জড়িয়ে ধরে ঘুম যাবে,
আকাশ,ঘুমিয়ে পড়ে,এভাবেই দিন কাটতে থাকে, প্রায় দুইমাস কেটে যায়,
আকাশ মাবশূরাহ এর থেকে দূরে দূরে থাকে, তার সাথে মিশে না,
দরকার ছাড়া কোন কথাই বলে না,
কিন্তু মাবশূরাহ গায়ে পড়ে আকাশের সাথে কথা বলে,
মাবশূরাহ আস্তে আস্তে উপলব্ধি করতে পারে আকাশকে ছাড়া তার চলবে না,
আর আকাশকে তার যে করেই হোক বসে আনতে হবে,না হয় আকাশ তার হাত থেকে ছুটে গেলে
তার বারো বছরের সাধনা নষ্ট হয়ে যাবে,
এতবছর পরে যুগ সাধনা করার সময় এসেছে,
কিন্তু একটা জিনিস মাথায় কাজ করে না,
ওর জন্য মনের কোন এক জায়গায় ভালোলাগা কাজ করে,
১১ আমাবস্যায় ১১ জন পুরুষকে সে বলি দিয়েছে,কারন হচ্ছে পরী- পালকের সাধু বলেছিলো
যে ১২ জন পরুষকে বলি দিলে সে বিশাল এক প্রত্নতত্ত্ব হাসিল করবে,
তার সাথে সাথে সে একশত শক্তিশালী পুরষের সমান শক্তির অধিকারী হবে,
যার ফলে সে সমস্ত পরী-পালকে রাজ করতে পারবে,
নাহ আকাশ আজকে আসলে ওকে নিজের করে নিবো যে ভাবেই হোক,
দরকার হয় নিজের শরীরের মোহে ফাঁসাবো, না হয় ও হাত থেকে দূরে চলে যাবে,
আকাশ,আজকে অফিসে কাজ বেশি থাকায় রাত হয়ে যায়,প্রায় বারোটা পার হয়ে গেছে,
রোডে তেমন গাড়ি গোড়াও দেখা যাচ্ছে না,
আজ মনে হয় হেটে হেটেই বাসায় যেতে হবে,হেটে হেটে বাসার দিকে রওনা দেয়...?
মাবশূরাহ,ধুর আকাশটা এখনো আসতেছে না কেন,
অন্যিদকে আমার মন্ত্র পাঠের ও সময় পেরিয়ে যাচ্ছে,নাহ মন্ত্রটা পাঠে করে ফেলি,
মাবশূরাহ ওর মন্ত্র পাঠের স্থানে চলে যায়,মাবশূরাহ মন্ত্র পাঠ করা শুরু করে,
আজ প্রায় দুইমাসরে ও বেশি সময় হয়ে গিয়েছে সে মন্ত্র পাঠ করছে,
আর কিছুদিন মন্ত্র পাঠ করলে সে আবার তার শক্তি ফিরে পাবে,
মাবশূরাহ মন্ত্র পাঠ করছে,আর তার চোখ জোড়া সবুজ হয়ে গেছে,
চোখ থেকে আলো জ্বলছে,
আকাশ,হটাৎ ঘরে পৌঁছে দেখে বাগানের পাশের একটা জায়গায় আলো জ্বলছে,
পরে সে চুপি চুপি সেখানে যায়,
আর গিয়ে দেখে মাবশূরাহ একটা বই খুলে কি যেন পাঠ করছে,
আর তার চোখ জোড়া থেকে এক ধরনের সবুজ আলো বের হয়ে আশেপাশের জায়গাটা আলোকিত হয়ে আছে,
আকাশ,তো সাথে সাথে ভয় পেয়ে যায়,সে সেখানে চুপ করে লুকায় থাকে,
তারমানে মাবশূরাহ আমার অগোচরে এই সব কার্জক্রম চালাচ্ছে,
মাবশূরাহ, মন্ত্রপাঠ করে তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে আলমারিতে বইটা লুকিয়ে রেখে দেয় কারন যে কোন সময় আকাশ চলে আসবে,
কিন্তু আকাশ যে এসে গেছে সে জানে না,
আকাশ,লক্ষ করে মাবশূরাহ আলমারিতে বইটা রেখেছে,
মনে মনে ঠিক করে নাহ আমার এই বইটা দেখতে হবে,এই বইয়ের মধ্যে কি আছে, যা মাবশূরাহ এমন রাতের বেলায় নির্জনে বসে পাঠ করেছে,কিন্তু মাবশূরাহ কে জানতে দেওয়া যাবে না,
আকাশ, ঘরে ঢুকে,
মাবশূরাহ মাত্র বইটা রেখে খাটে গিয়ে বসেছে,
আকাশ,তুমি কখন এলে...!
আকাশ,মাত্র..!
মাবশূরাহ, খাট থেকে উঠে গিয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরে,
আর বলতে শুরু করে আকাশ আমি না তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি,
তোমাকে ছাড়া আমার কোন কিছুুই ভালো লাগে না,প্লিজ সব কিছুর জন্য আমাকে ক্ষমা করে দাও,
তোমার অবহেলা আমি আর নিতে পারছি না,
ভালোবাসো না হয় মেরে ফেলো আমাকে তাও নিজের করে নাও,
বলে গা থেকে শাড়ির আঁচলটা মাটিতে ফেলে দেয়,এই আমাকে আদর করো না...?
তোমার আদর পেতে খুব ইচ্ছে করছে আমার...!
আকাশ,মাবশূরাহ এর আঁচলটা মাটি থেকে গায়ে তুলে দেয়,
মাবশূরাহ যাও মাফ করে দিয়েছি,কিন্তু এখন এই সব করা আমার দ্বারা সম্ভব না, সারাদিন কাজ করে এখন আর এই সবের জন্য কোন শক্তি অবশিষ্ট বাকি নাই,প্লিজ আজকে না অন্য কোনদিন...!
মাবশূরাহ, আচ্ছা ঠিক আছে যাও মেনে নিলাম,
হাত মুখ ধুয়ে এসো আমি খাবার দিচ্ছি,
আকাশ,ফ্রেশ হতে চলে যায়,আর মাবশূরাহ খাবার রেডি করতে,
মাবশূরাহ, যাক লাইনে আনতে পেরেছি অল্প করে,যে করেই হোক ওর মনে বিশ্বাস জোগাতে হবে,
পুরোপুরি লাইনে আনতে হবে ওকে, না হয় খাটাশটাকে বলি দিতে পারবো না,
আকাশ,নাহ ওর চালে আমি পা দিবো না,
মাবশূরাহ তোমার কি মনে হয় আমি বোকা তুমি চাল চেলেই যাবে আর আমি কিছুই বুঝবো না
এটা কি করে হয়,আজ রাতে খালি তুমি ঘুমাও তারপর দেখবো তোমার ঐ বইটাতে কি আছে,
তারপর মাবশূরাহ আকাশকে খাবার বেড়ে দেয়,আর আকাশ খেয়ে এসে রুমে শুয়ে পড়ে,
মাবশূরাহ ও এসে শুয়ে পড়ে,মাবশূরাহ আকাশকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে,
কিন্তু আকাশ আজকে কিছু বলে না,না হয় ও সন্দেহ করবে....!
তারপর মাবশূরাহ ঘুমিয়ে গেলে চুপিচুপি গিয়ে আলমারিটা খুলে বইটা বের করে,
বইটা নিয়ে ঘরের বাহিরে চলে আসে,তারপর বইটা অপেন করে কিন্তু কিছুই সে বুঝতেছে না,
কারন লিখা গুলা অন্য রকম, আকাশ এমন লেখা এর আগে কোনদিনও দেখে নাই,
এখন কি করবে সে,হটাৎ সাজ্জাদের পরিচিত মানুষটার কথা মনে পড়ে,
হা উনি হয়তো বুঝতে পারে এতে কি লিখা আছে,
কিন্তু বইটা নিয়ে গেলে তো আকাশ ধরা খেয়ে যাবে,
তাই ফোনটা বের করে ছবি তুলে নেয়ে,আর বইটা জায়গায় রেখে সে ঘুমিয়ে পড়ে
পরেরদিন সকালে সে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গিয়ে সাজ্জাদ সহ ঐ লোকটার কাছে যায়,
আর ফোনে তোলা বইয়ের ছবি গুলা দেখায়...!
লোকটা দেখে তো মাথায় হাত দিয়ে ফেলে,
আকাশ ভাই আপনি তো শেষ.....!
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com