পরী যখন বউ । পর্ব - ০৮
আকাশ,আজ সারাদিন মাবশূরাহ এর দেখাশোনা করে,সারাদিন মাবশূরাহ এর সাথে থাকে,আাজকেই শেষ দিন,এরপর হয়তো মাবশূরাহকে আর নিজ হাতে খাইয়ে দিতে পারবে না,মাবশূরাহ কে
ভালোবাসতে পারবে না....!
আকাশ,ওর মাকেও বলে মা আমার যদি কিছু হয়ে যায়,আমাকে ক্ষমা করে দিও,
তোমার আপন ছেলে না আমি,তারপরেও কখনো আপন মার অাদরের কমতি অনুভব করতে দাওনি....!
আকাশের মা, কিছুই বুঝতে পারছে না,
হটাৎ ছেলে এমন ধারা কথা কেন বলতেছে,আকাশ কি হয়েছে তোর...?
এমন আজে বাজে কথা কেন বলছিস...?
আকাশ,নাহ মা কিছু হয়নি,এমনি বললাম, মা তোমায় খুব ভালোবাসি,মা তোমার কোলে একটু মাথা রাখতে দিবে আমায়....?
আকাশের মা,বাবা কি বলছিস মায়ের কোলে সন্তান মাথা রাখবে এতে না করবো আমি, এটা কি করে হয়,আকাশ ওর মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে,আর আকাশের মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,
সন্ধ্যা ঘনিয়ে প্রায় রাত হয়ে এসেছে,সবাই খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ছে,আর আকাশ বিছানায় বসে আছে,সে তার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে, আজ আমাবস্যার রাত,আজকেই মাবশূরাহ ওর বারো বছরের সাধনার মুল কাজ এন্তেজাম দিবে,
রাতের বেলায়....
আকাশ খেয়ে দেয়ে খাটে শুয়ে আছে,এমন সময় মাবশূরাহ একটা গ্লাসে করে শুরা নিয়ে আসে,
মাবশূরাহ,নাও আকাশ এটা খাও, তোমার জন্য নিজ হাতে বানিয়েছি, পরী-পালকের এই শরবত আমরা প্রায় সময় পান করি...!
আকাশ,আচ্ছা দাও খাবো তবে তার আগে আমার একটা কথা রাখতে হবে...?
মাবশূরাহ, কি কথা....?
আকাশ,তোমায় জড়িয়ে ধরতে দিবে আমায়...?
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এরপর আর কোনদিন তোমায় জড়িয়ে ধরতে পারবো না...!
মাবশূরাহ, ঘাবড়ে যায়,আকাশের কথা শুনে, ও কি কিছু যেনে গেলো না তো...
আচ্ছা জড়িয়ে ধরো....!
আকাশ,মাবশূরাহ কে জড়িয়ে ধরে ওকে পাগলের মত চুমু খেতে থাকে,মাবশূরাহ তোমায় খুব বেশি ভালোবাসি,হাশরের দিন খোদার কাছে একটাই আবদার করবো,পরকালে আমার জীবনসঙ্গিনী হিসেবে যেন তোমাকে পাই,আমার আর কাউকেই চাই না, শুধু তোমাকেই চাই শুধু তোমাকে....!
মাবশূরাহ, মনে মনে ভাবতে থাকে,ছেলেটা আমায় এতটা পাগলের মত ভালোবাসে তাও ওর জীবনটা নিয়ে নিচ্ছি আজ আমি,এমন স্বামী কপালে নসিব হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার,যে তার স্ত্রীকে এতটা পাগলের মত ভালোবাসে,
আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি, তোমার বাচ্চাও যে আমার গর্ভে,
তোমায় ছাড়া থাকবো কি ভাবে আমি,তুমি খাইয়ে না দিলে আমায় কে খাইয়ে দিবে,আমায় কে ঘুম পাড়াবে,কে রাতের বেলায় জড়িয়ে ধরে বলবে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুম যাও,কিন্তু কি করবো আমি,
আমিও যে অপারগ,যুগ্ম করার এটাই নিয়ম জমিনে আসার পর প্রথমে যেই মানুষটাকে নজরে পড়বে তাকে বলি দিতে হবে,
বিশ্বাস করো ছলনা করতে করতে কখন যে ভালোবেসে ফেলেছি তোমায় আমি,তা নিজের ও অজানা,
কিন্তু তোমার যে মরতে হবে,না হয় আমার এত বছরের সাধনা সবটাই যে ধূলোয় মিশে যাবে,
আকাশ,এই মাবশূরাহ এত কি চিন্তা করছো,দাউ শরতের গ্লাসটা আমাকে....?
মাবশূরাহ,আকাশের কথায় হুঁশ ফিরে,ওহ এই নাও গ্লাসটা আকাশের দিকে এগিয়ে দেয়......!
আকাশ,গটগট করে পুরা শুরার পানি টা খেয়ে ফেলে,
একটু পর আকাশের দুনিয়া দাঁড়ি ঘুরতে থাকে চড়কির মত করে,
মাবশূরাহ, আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে বলতে না বলতে ঠাসস করে খাটের উপরে পড়ে যায়,মাবশূরাহ আমার মাথাটা একটু তোমার কোলে নিবে,আমি না তোমার কোলে মাথা রেখে দুনিয়ায় মায়া ত্যাগ করতে চাই,
মাবশূরাহ, হা নিবো তো,মাবশূরাহ আকাশের মাথাটা নিজের কোলে উঠিয়ে নেয়,আর মাবশূরাহ এর চোখ দিয়েও টপটপ করে পানি বেয়ে পড়ছে,যেই ছেলেটা তাকে এতটা ভালোবাসে তার জান নিতেই ব্যস্ত সে....!
আকাশ,মাবশূরাহ তোমায় শেষ একটা কথা বলি,তুমি কখনো নিজেকে দোষী মনে করবে না কেমন,কারন আমি সবটাই জানি,আর জেনে বুঝেই সব টা করেছি,আমি বহুকাল আগেই জেনে গেছি আমার কলিজাটা আমাকে বলি দিবে,না হয় ওর বারো বছরের সাধনা টা নষ্ট হয়ে যাবে,কি করে পারি বলো আমি আমার কলিজার বারো বছরের সাধনাটা নষ্ট করতে,যে আমাকে নিজের সৎমা টাকে নিজের আপন মায়ের মধ্যে রূপান্তর করে দিয়েছে,যে মা আমাকে দুই চোখে দেখতে পারতো না, সেই মা আমাকে নিজের আপন ছেলের মত ভালোবাসে,যেই মানুষটা আমার জন্য এত কিছু করলো,কি করে বলো এমন মানুষটার মনের আশাটা অপূর্ণ রাখি,তাই নিজ ইচ্ছাতেই তোমার জন্য নিজের জীবনটা দিয়ে দিলাম, ভালো থেকো কলিজা বলেই আকাশ চুপ হয়ে যায়...!
মাবশূরাহ, আকাশের এমন কথা শুনে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়,কি করে পারলাম আমি এমনটা করতে,যে আমাকে এতটা পাগলের মত ভালোবাসে যে নিজের জীবনটা দিতেও দুই মিনিট চিন্তা করে নাই,
ফাঁসির আসামীদেরকে যখন শেষ ইচ্ছাটা জিজ্ঞেসা করা হয়,তখন তারাও বলে আমার পরিবারের সাথে দেখা করতে চাই,
কিন্তু এই আকাশ এমন একজন ব্যক্তি যে মরার আগে আমার কাছে শেষ ইচ্ছা পোষন করেছে সে আমায় জড়িয়ে ধরতে চায়,কি করে পারলাম আমি এতটা পাষাণ হতে....!
মাবশূরাহ, এমন একটা শুরা পান করিয়েছে,এরপর আকাশ আর কখনো উঠবে না,এই অবস্থায় তাকে পরী-পালকে নিয়ে গিয়ে বলি দেওয়া হবে....!
এমন সময় মাবশূরাহ এর বাবা রুমে আসে,কিরে কাজ হলো...?
সময় তো ঘনিয়ে আসছে,তাড়াতাড়ি পরী-পালকে যেতে হবে আমাদের না হয় এরপর আর পরী-পালকে যেতে পারবো না,
মাবশূরাহ, হা কাজ শেষ,এখন শুধু ওকে নিয়ে গিয়ে বলি দিলেই বারো বছরের সাধনার অবসান ঘটবে বলে মাবশূরাহ কান্না করে দেয়!
মাবশূরাহ এর বাবা,কিরে তুই এমন কান্না করছিস কেন...?
তোর তো খুশী থাকার কথা,তোর এত বছরের সাধনা যে পূরন হচ্ছে,
মাবশূরাহ, বাবা আমিও ওকে ভালোবাসি,আর সে নিজ ইচ্ছায় জীবন দিয়েছে,সে জানতো সবটা আগে থেকেই যে আমি ওকে বলি দিবো,
তাও আমাকে বুঝতে দেয় নি,কিছু বলেও নি,পাগলের মত ভালোবেসে গেছে....!
মাবশূরাহ এর বাবা,মারে শোন জীবনে কিছু পেতে হলে কিছু বিসর্জন দিতে হয়,যদি ভালোই বাসতি তাহলে আগে তোর ভাবা উচিত ছিলো,
যে ওর সাথে এননধারা কোন কিছু করা ঠিক হবে না...!
কিন্তু এখন ওকে শুরা পান করিয়ে দিয়েছিস,এখন আর কোন কিছু বদলানো যাবে না,ওকে বলি দিতেই হবে...!
তারপর আকাশকে নিয়ে যাওয়া হয় পরী-পালকে,আকাশের বাসার কেউ জানে না...!
পরী- পালকে আজকে পরীর ঢল নেমেছে,কারন আজকে যুগ্ম উৎসব পরী-পালকে,আজকে মানুষ বলি দেওয়া হবে সেই কারনে সমস্ত পরীরা একত্রিত হয়েছে,আর বিশেষ করে আজকে আমাবস্যার রাত,সমস্ত পরীরা আমাবস্যার রাতে একত্রিত হয়ে উৎসব পালন করে...!
আকাশকে বলির কলে আটকানো হইছে,জল্লাদের হাতে বিশাল বড় একটা তলোয়ার,একটু পর সমস্ত কার্জক্রম শেষ করে আকাশকে বলি দেওয়া হবে,তবে অবশ্য আকাশকে বলি দেওয়ার কথা ছিলো মাবশূরাহ এর কিন্তু সে দিবে না,জল্লাদকে বলা হইছে দেওয়ার জন্য,সবাই মন্ত্র পাঠ করতেছে,(বাতিশতাম,বাতিশতাম,বাতিশতাম জোদনাম)
মন্ত্র পাঠ করা শেষ সবার,যেই পন্ডিতটা বলেছিলো বারো বছর বলি দিলে অলৌকিক শক্তির অধিকারী হবে সেও আছে, সেই পন্ডিত টা হাতে করে এক জাতীয় সবুজ কালারের তরল পানি নিয়ে আকাশের ঘাড়ে মেখে দেয়...!
তারপর জল্লাদ তার ধারালো তলোয়ারটা নিয়ে বলির কলে যায়,
আর ছুরিটা হাতে নিয়ে আকাশের ঘাড় বরাবর একটা কোপ মারে সাথে সাথে আকাশের মস্তকটা তার দেহ থেকে আলাদা হয়ে যায়,চিঁড়চিঁড় করে রক্ত বের হচ্ছে আকাশের শরীর থেকে,
দেহটা পড়ে আছে এক পাশে মস্তকটা পড়ে আছে আরেক পাশে,
দেহের দুইটা অংশ দুই দিকে ছিটিয়ে মাটিতে পড়ে আছে...!
এমন সময় মাবশূরাহ এর পেটে পেইন শুরু হয়,আবার অন্যদিকে আকাশকের বলি সে আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে....!
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com