ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস
সে যখন মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতো, আমি তখন ক্লাস ফাঁকি দিতাম। সে যখন তার অন্দরের চঞ্চলতাকে ঠোঁটে ঝুলিয়ে হেসে উঠত খিল খিল, আমি তখন বেবলার মত চেয়ে থাকতাম।
নজরে নজর লাগলে সে যখন লজ্জা পেতো, আমি তখন তার টুকটুকে লাল হয়ে ওঠা মসৃণ গাল দুটোর প্রেমে পড়তাম।
সে যখন শুভ রাত্রী বলে ঘুমাতে যেতো, আমি তখন বুকের ভেতর আরোও কথা বলার তৃষ্ণায় মিষ্টি এক যন্ত্রণা নিয়ে বিছানার এপাশ করতে করতে রাত জেগে তার জন্য কবিতা লিখতাম। সে যখন আমার হাত ধরতো শক্ত করে, তখন আমার আঙুলের ডগায় বসে হৃদয় কাঁপতো থরথর।
সে যখন গোপন অভিমানে গাল ফুলিয়ে রাখতো, আমি তখন খালি গলায় গান ধরতাম। সে যখন সুঁতির শাড়ি পরে বারান্দায় দাঁড়াতো, তখন আমার মনের বাগানে বসন্ত ছাড়াও ফুটে যেত শত শত ফুল। সে যখন অজানা দুঃখে হুঁহুঁ করে কাঁদতো, আমি তখন বাংলায় ভালোবাসি বলতাম বার বার।
আমি যখন জ্বরে পুড়ে যেতাম, সে তখন আমার হায়াৎ চেয়ে দু'হাত তুলে মোনাজাতে মায়ের মত কেঁদে উঠতো ঝরঝর। অনেকদিন দেখা না পেয়ে সে যখন চিঠি লিখতো, আমি তখন কলেজের বেতন মওকুফের জন্য পিন্সিপালের কাছে দরখাস্ত লিখতাম।
সে যখন আমার কাছে আমারে চাইতো, আমি তখন বন্ধুদের কাছে একটা চাকরি চাইতাম। সে যখন আমার সাথে বাঁচতে চাইতো, আমি তখন একটা চাকরির অভাবে বেকারত্বের অভিশাপে মরতে চাইতাম।
সে যখন পরপুরুষের সাথে থাকতে পারবে না বলে একটার পর একটা বিয়ে ভেঙে আমারই সাথে থাকতে চাইতো, আমি তখন নিয়তির কথা বলে তার 'ভালো থাকা' চাইতাম।
সে যখন এক বৃহস্পতিবারে বুকের ভিতরে সাত সমুদ্র পরিমাণ ভালোবাসা গোপন রেখে চাপা যন্ত্রনায় কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে তিন কবুল বলল, আমি তখন লিমিট অতিক্রম করে তিন নাম্বার মদের গেলাস মুখে ঠেসে দিয়ে বিড়বিড় করে বললাম, ভালো থেকো ভালোবাসা।
সে যখন এসব বৃহস্পতিবার রাতে অফিস ফেরত স্বামীকে শান্ত করতে চোখের নিচে কাঁজল টানতে গিয়ে চোখ ভিঁজিয়ে ফেলে, আমি তখন হাহাকার নিয়ে ঠোঁটে জলন্ত সিগারেট চেপে ধরে চিৎকার করে বলে উঠি, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com