রম্যগল্প আব্বুর ফেসবুক
রাতেরবেলা শুয়ে শুয়ে গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ফেসবুকে চ্যাটিং করছিলাম। সেই মুহুর্তে মরতে মর আব্বু আমার রুমে এসে হাজির।
আমিঃ কিছু বলবে আব্বু?
আব্বুঃ ইভান তোর ফোনে যে সবসময় দেখি পকিং পকিং আওয়াজ হয়,
ওই আওয়াজ টা আমার খুব ভালো লাগে।
আমিঃ এ্যাহ।
আব্বুঃ কি এ্যাহ, আমার ফোনেও ওইটা করে দে না প্লিজ।
আমিঃ আব্বু ওইটা তো মেসেঞ্জারে মেসেজ আসার সাউন্ড।
আব্বুঃ যাইহোক না কেনো। আমাকেও ওমন করে দে,
যাতে আমার ফোনেও সবসময় ওমন পকিং পকিং আওয়াজ হয়।
আমিঃ আব্বু ওটার জন্যে তো তোমার প্রথমে ফেসবুক একাউন্ট খুলতে হবে।
তারপরে মেসেঞ্জারে লগইন করলে, তোমাকে কেউ মেসেজ দিলে ওমন সাউন্ড হবে।
আব্বুঃ তাহলে আগে কি মুখ বললি? ফেসমুখ ওইটাই খুলে দে।
আমিঃ আরে আব্বু ফেসমুখ নাহ ফেসবুক।
আব্বুঃ আরে একই হলো, খুলে দে তো বেশী কথা না বলে।
আমিঃ আচ্ছা আচ্ছা তোমার ফোন দাও।
অতঃপর আব্বুর জন্যে একটা ফেসবুক একাউন্ট খোলা শুরু করলাম।
আমিঃ আচ্ছা তোমার পুরো নামই দিবো নাকি ডাকনাম?
আব্বুঃ নাম দে - ডিজে কুল বয় মিঃ এমডি জাহিদ। ( একটু ভেবে)
আমিঃ হোয়াট? ( অবাক হয়ে)
আব্বুঃ আরে হাট বাজার দিবি কেনো, যা দিতে বললাম তাই দে।
অতঃপর আমি হাবলার মতো আব্বু যেমন যেমন বলে সেভাবেই একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলে দিলাম।
আমিঃ আব্বু তোমার একাউন্ট খোলা শেষ। তোমার ডাকনাম কি দিবো?
যেটা তোমার প্রোফাইলে শো করবে।আব্বুঃ উমম ডাক নাম দিবি হলো - ৭৮ % ইনোসেন্ট, ৯৫ % সেক্সী, ৬৬ % কুল ডুড, ৪৪ % লাভার বয়...
আমিঃ আরে হয়েছে হয়েছে এতবড় নাম, নিকনেইমে দেওয়া যাবে না।
অন্য কিছু বলো- তোমার নিজের নাম দিয়ে দেই?
আব্বুঃ হোপ ব্যাটা - ডাকনাম দে হার্ট হ্যাকার।
আমিঃ ওরে আল্লাহ এই বুড়ো বয়সে আব্বুর একি ভীমরতি ধরলো ( মনে মনে)
আব্বুঃ কিরে ইভান দেস না ক্যান।
আমিঃ আরে বাবা দিচ্ছি তো।
অবশেষে ফুল ফিল আব্বুর একটা ঝাকানাকা ফেসবুক একাউন্ট খুলে দিলাম,
সাথে মেসেঞ্জারেও লগইন করে দিলাম। আর বুঝিয়ে দিলাম কিভাবে কিভাবে মেসেজ করতে হয়।
বাপ তো আমার মহাখুশি। মনে হচ্ছিলো ফেসবুক কোম্পানিই তার নামে লিখে দিয়েছে এমন একটা ভাব। অতঃপর খুশী মনে ফোন নিয়ে তার রুমে চলে গেলো।
আমিও আবার গার্লফ্রেন্ডের সাথে চ্যাটিংয়ে মনোযোগ দিলাম।
এভাবে দেখতে দেখতে প্রায় ১ সপ্তাহ চলে গেলো। আব্বু সারাক্ষণ তার ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
রুম থেকেই বের হয়না বলতে গেলে। সারাদিনই দেখি আব্বুর ফোনে মেসেজের পকিং পকিং সাউন্ড হয়। আমি ভেবে পাইনা আব্বু কার সাথে এত মেসেজ করছে।
আমি যদি দেখতে চাই আমাকে দেখায়ও নাহ। এভাবে আরো দুইদিন পেরিয়ে যায়।
ঘুমিয়ে আছি হঠাৎই দেখি রাত তিনটার দিকে "কথা" মানে আমার গার্লফ্রেন্ডের কল।
এত রাতে কল দেওয়ার কারণ ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম নাহ।
অতঃপর আমি কলটা রিসিভ করলাম।
আমিঃ এত রাতে কল দিলে হঠাৎ?
কথাঃ ছিহ ইভান তোমার বাবা এমন আমি ভাবতেও পারিনি।
আমিঃ আমার বাবা আবার তোমাকে কি করলো? ( অবাক হয়ে)
কথাঃ সেটা তোমার বাবাকেই জিজ্ঞেস করে নিয়ো। এটা বলার জন্যেই কল দিয়েছি যে - তুমি আর জীবনে আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করো না - ব্রেকআপ।
আমিঃ হ্যালো হ্যালো কথা শুনো।
কথা কিছু না বলেই লাইন কেটে দিলো। আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম,
আব্বু কি এমন করলো যেটার জন্যে কথা আমার মুখের উপরে ব্রেকআপ বলে দিলো।
সেদিন রাতে হাজার চেষ্টা করেও আর কথার সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারলাম নাহ।
নাহ এখানে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি, এই রহস্য আমাকে সমাধান করতেই হবে।
সেদিন রাতে আর চিন্তায় চিন্তায় ঘুমই আসলো নাহ।
-- অতঃপর পরের দিন সকালবেলা --
এখন প্রায় সকাল ছয়টা বাজে। আমি চুপিচুপি আব্বুর রুমে ঢুকে গেলাম।
গিয়ে দেখতে পেলাম আব্বু বেহুসের মত ঘুমোচ্ছে। আমার মা নেই তাই আব্বু একাই ঘুমোয়।
আমি আর সুযোগ হাত ছাড়া করলাম নাহ,
আব্বুর ফোনটা নিয়েই এক দৌড়ে সোজা আমার রুমে চলে এলাম।
এসেই প্রথমে আব্বুর মেসেঞ্জার ওপেন করলাম।
আর মেসেঞ্জার ওপেন করেই চ্যাট লিস্টের প্রথমেই আমার গার্লফ্রেন্ডের আইডি দেখতে পেলাম।
এটা দেখে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো।
দেখতে পেলাম আরো বেশ কয়েকজনের সাথে চ্যাট কনভারসেশন রয়েছে।
অতঃপর কথার টা দিয়েই পড়া শুরু করলাম।
( কথার সঙ্গে চ্যাট)
আব্বুঃ Kaman acha? (কেমন আছো?)
কথাঃ ঠিক বুঝতে পারলাম না আঙ্কেল?
আব্বুঃ Tamar kaman ache ( তুমি কেমন আছো)
কথাঃ বেশী ভালোনা আঙ্কেল একটু জ্বর। ( হয়তো বুঝতে পেরেছে লেখাটা)
আব্বুঃ Ahade tamar bichi acha? ( তোমার জ্বর বেশী আছে)
কথাঃ ছি ছি আঙ্কেল কি বলেন এগুলো।
আব্বুঃ Balam tamar jar bichi kay digiri? ( বললাম তোমার জ্বর বেশী, কয় ডিগ্রী)
কথাঃ ছিহ আঙ্কেল আপনার কাছ থেকে এমন কথা কখনোই আশা করিনি।
আব্বুঃ Acha tamar mar kaman acha? ( আচ্ছা তোমার মা কেমন আছে)
কনভারসেশন শেষ : You can't reply to this conversation. ( আব্বুকে কথা ব্লক করে দিয়েছে )
( পাশের বাসার আন্টির সঙ্গে চ্যাট)
আন্টিঃ কেমন আছেন ভাইয়া?
আব্বুঃ Ade bodoi karap, pachay karent nai. (আরে বড়ই খারাপ, বাসায় কারেন্ট নাই)
আন্টিঃ কি বলছেন এগুলো ওখানে কারেন্ট থাকবে কিভাবে?
আব্বুঃ Kano, apanar pachay ki karent acha? ( কেনো আপনার বাসায় কি কারেন্ট আছে)
কনভারসেশন শেষ (Block)
( এলাকার মুদির দোকানদারের সঙ্গে চ্যাট)
আব্বুঃ Bador Badare ki ekan valo magi acha ( বাবর, বাজারে কি এখন ভালো মাঝি আছে)
দোকানদারঃ নাহ ভাই মাঝিরা সকালে চলে গেছে। আপনার মাছ লাগবো?
আব্বুঃ Tala tak, ekn tui amar pachay ese choday deye ja ( তাহলে থাক, এখন তুই আমার বাসায় এসে সদাই দিয়ে যা)
আস্তাগফিরুল্লাহ,
আমি যদি আর একমিনিট এই চ্যাট কন্টিনিউ করি - নির্ঘাত আমি হার্ট ফেইল করে মারা যাবো।
কোন পাপে আমি আব্বুরে ফেসবুক খুলে দিতে গেলাম,
আল্লাহ তুমি আমারে উঠাইয়া নাও।
এইসব চ্যাট যদি কোনো নবজাতক শিশু দেখে, ও নির্ঘাত বাঁচার আশা ছেড়ে দিবে।
অতঃপর আর এক মুহূর্তও দেরি করলাম নাহ, আব্বুর ফেসবুক একাউন্ট ডিলিট মাইরা দিলাম।
না থাকবো ছালা আর না থাকবো আম।
পাপ করছি বহুত বড় পাপ করছি, আব্বুরে এই ফেসবুক একাউন্ট খুইলা দিয়া।
যার কারণে আমার এত সাধের গার্লফ্রেন্ড আমারে বিধবা বানাইয়া দিয়া চইলা গেলো। খোদা তুইলা নাও আমারে, আমার আর বাঁচার ইচ্ছা নাই
( সমাপ্ত )
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com