গল্পটা এমনই । পর্ব - ০৩
সোনা ময়না পাখি আমার
শুইনা যা মনের কথা যাইয়োনা গো একলা ছাইড়া রে....
বুকের ভিতর কত জ্বালা মন হইয়াছে দিশেহারা যাইয়োনা গো রাইখা আমারে...
ব্যাথা দিয়া যাইবা কেনো বলো?
সুখে রাখার হলে রাইখো ব্যাথা দিয়া যাইবা কেনো বলো?
সুখে রাখার হলে রাইখো ও আমার পাখি
তুই দেইখা যা আমার মনে
কত যে ব্যাথা ও হলুদিয়া পাখি তুই শুইননা যা আমার মনে
কত যে কথা কেনো রে তুই বুঝলিনা হায়
তোর লাইগা হৃদয় পুড়াই মনটা আমার হায়রে অসহায়
কেনো আমি তোর লাইগা হইয়া গেলাম দিশেহারা সইতে আর আধাও পারিনা।
ও মনরে তুই কোথায় গেলি আমারে ক্যান ভাইঙ্গা দিলি
তোর লাইগা পরাণ পুইড়া যাই ও মনরে তুই কোথায় গেলি
আমারে ক্যান ভাইঙ্গা দিলি তোর লাইগা পরাণ পুইড়া যাই
নিশি রাতে তোরে ভাইবা কাঁইন্দা তোরে কত খুঁজি
বোঝায় কারে আর যে সহেনা নিশি রাতে তোরে ভাইবা
কাঁইন্দা আমি খুঁজে বেড়াই বোঝায় কারে আর যে সহেনা
ব্যাথা দিয়া যাইবা কেনো বলো?...
সুখে রাখার হলে রাইখো?
ও আমার পাখি.. তুই দেইখা যা
আমার মনে কত যে ব্যাথা
ও হলুদিয়া পাখি তুই শুইনা যা
আমার মনে কত যে কথা
অন্ধকার ঘরের মেঝেতে বসে জলন্ত সিগারেট দিয়ে মাঝেমধ্যে কনুইয়ের দিকে ছ্যাকা দিচ্ছে
আবার সেই সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে নিজেকে অঙ্গার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ফারহান।
যখন ছ্যাকা দিচ্ছে কনুইয়ে তখন চোখ-মুখ খিচে ধরছে সাথে চোখের পাখি পড়া তো আছেই জ্বালার কারণে।
তবুও যেনো এই জ্বালা কিছুইনা ফারহানের কাছে।
বুকের ভিতর এর থেকেও অনেক বেশি জ্বালা করছে।
পুড়ছে,ধুক ধুক করে পুড়ছে বুকের ভেতরের হৃদপিন্ডটা ছলনাময়ী অর্পার দেওয়া ছ্যাকায়।
আহা কি যে জ্বালা সে ছ্যাকার।
ফারহানের মনে হচ্ছে বুকের যে জায়গাটা জ্বলছে সেখানে মরিচ ঘসে দিতে
কিংবা কিছু একটা দিয়ে সেই জায়গাটা কেটে ফেলতে তাহলে হয়তো জ্বালাটা কমতো সাথে শান্তিও পাওয়া যেতো।
আজ এক সপ্তাহ হলো ফারহান ছাড়া পেয়েছে জেল থেকে।
ছাড়া অবশ্য পায়নি তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসা হয়েছে কারণ তিন মাস হতে এখনো অনেক দেরি।
আর এই তিন মাস জেলের মধ্যে বন্দি থাকলে ফারহানের ক্যারিয়ারটা বরবাদ হয়ে যেতো যা
তার পরিবার কিছুতেই মেনে নিতে পারতোনা; আর তাইতো বিভিন্ন লোক ধরাধরি করে, টাকা খরচ
করে ফারহানকে তার পরিবার ছাড়িয়ে এনেছে বাসায়।
এক সপ্তাহ থেকে ফারহান কোথাও বের হয়নি।
ঘরের মধ্যেই অন্ধকারের অতলে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছে সে।
অর্পার দেওয়া এমন জঘন্যতম প্রতিদান সে হজম করতে পারছেনা!
পারছেনা অর্পাকে ভূলে যেতেও।
কতই না ভালোবাসা ছিলো তাদের মধ্যে।
কত শত স্বপ্ন ছিলো তাদের ভালোবাসাকে ঘিরে যা একদন্ডে
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পরে ভেঙে গুড়িয়ে নিঃশেষ
হয়ে গেলো। পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে গেলো বিশ্বাসঘাতকতার কবলে পড়ে।
খালা ফারহান কোথায়?" নিহাল ফারহানের মায়ের পাশে বসতে
বসতে ফারহানের মা'কে ফারহানের কথা জিঙ্গেস করলো।
ফারহানের মা চোখের পানি শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে নিহালকে বললেন, "ওর রুমেই আছে।
জেল থেকে আসার পর তো বের হয় না রুম থেকে।
খেতেও আসেনা বাইরে। আমি তিনবেলা গিয়ে দিয়ে আসি খাবার। তা তুই কখন আসলি?"
এখনি আসলাম। পরীক্ষা চলছিলো সেজন্য আসতে পারিনি এই কয়দিন তুমি তো জানোই!"
"আমার ছেলেটা কি আর পড়াশোনা করতে পারবে নিহাল?
কথাটা বলেই ঝড়ঝড় করে কেঁদে ফেললেন ফারহানের মা।
নিহাল ফারহানের মায়ের একটা হাত নিজের হাতের মুঠোই নিয়ে স্বাত্বনার স্বরে বললো,
কেনো পারবেনা খালা! অবশ্যই পারবে তুমি দেখে নিয়ো।
এখন একটু সময় দাও ফারহানকে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য।
ও'তো এখন আর আগের মত গোছানো ছেলেটি নেই! ও এখন এলোমেলো হয়ে গেছে।
ওর মনটা ভেঙে গেছে কিন্তু তুমি দেখো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
ফারহান আবার আগের মত নিজেকে গুছিয়ে নিবে।
ভাঙা মনটা পুরোপুরি জোড়া না লাগলেও সে ঠিক সামলিয়ে নিবে তার মনটাকে।
ফারহানের মা কেঁদেই যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
আমার ছেলেটার জীবনে দাগ পড়ে গেলোরে নিহাল। ছেলেটা আমার শেষ হয়ে গেলো।
সেই সাথে শেষ হয়ে গেলাম আমরাও। তোর খালু রাতে ঘুমাইনা! সারারাত ছটফট করে।
বার বার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, "আমার সোনার ছেলেটা শেষ হয়ে গেলো!
আমার সোনার সংসারটা শেষ হয়ে গেলো।
মান-সম্মান সব শেষ হয়ে গেলো। লোকের সামনে আর মাথা উচুঁ করে কথা বলতে পারবোনা।"
নিহাল দুই হাত দিয়ে ফারহানের মা'য়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, "কিছু হবেনা খালা।
সব ঠিক হয়ে যাবে আর এমনটা শুধু যে ফারহানের সাথেই হয়েছে এমনটা না!
অনেক ছেলেই এমন ধোঁকা খাই মেয়েদের কাছে।
ফারহানের মা নিহালের চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
ধোঁকা খাই কিন্তু সবাই তো আর জেল খাটেনা বাবা। আমার ফারহান যে জেলেও ছিলো।"
ভাগ্যের পরিহাসে সে জেলে গেছিলো এমন অনেকেই যাই। অর্পাও তো ছিলো কিছুদিন।
ফারহান ছেলে আর অর্পা! অর্পাতো মেয়ে..."!
"ওই মেয়ের নাম নিসনা বাবা। ওই মেয়ে আমার ছেলের জন্য শনি।
ওর জন্যই আজ আমাদের এই অবস্থা। ওই মেয়ে আমার ছেলেকে ছেড়ে দিলোনা!
একদিন দেখিস, একদিন ওই মেয়ে পস্তাবে।
আমার ছেলের জন্য কেঁদেও কুল পাবে না তুই দেখে নিস।"
ফারহানের মা আবার কাঁদতে শুরু করলো তখনি রুমে এসে হাজির হলো ফারহানের বড় বোন ফাইজা। ফাইজার বিয়ে হয়ে গেছে। শ্বশুরবাড়ি থেকে গতকাল এসেছে সে বাপেরবাড়ি।
বাড়ির এমন পরিস্থিতি দেখে না এসে থাকতে পারেনি সে বাপেরবাড়ি।
আম্মা, নিহালের তো এখন পরীক্ষা শেষ, নিহাল আর ফারহান যদি কিছুদিন কোথাও ঘুরে আসতো তাহলে কেমন হতো?" নিহাল বসা থেকে উঠে দ্বাঁড়িয়ে বললো, "গুড আইডিয়া আপু। কয়দিনের জন্য আমরা পাহাড় বা সমুদ্রের কাছাকাছি কোথাও যাই। সাজেক গেলেও চলবে।" নিহালের কথা শেষ হতে না হতেই ফারহান তার ঘর থেকে বের হয়ে টলতে টলতে এসে হাজির হলো ওর বাবা-মা'য়ের ঘরে। সেখানেই বসে কথা বলছিলো ফারহানের মা, নিহাল আর ফাইজা। ফারহান এসে প্রথমেই হাত দিয়ে চোখ ঢাকলো তারপর আবার আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো। কয়েকদিন থেকে অন্ধকারে সবসময় থেকে তার আলো প্রথমে সহ্য হচ্ছিলোনা তাইতো হাত দিয়ে সে চোখ ঢেকেছিলো।
ফারহানের মা, ফাইজা আর নিহাল ফারহানের দিকেই তাকিয়ে আছে।
আজ কয়দিন পর ছেলেকে নিজের ঘরের বাইরে দেখে ফারহানের মা মনে মনে খুশিও হয়েছে কিন্তু ফারহানকে দেখে তার ভিষণ কষ্ট ও লাগছে।
অমন সুন্দর ছেলেটার চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে, মাথার চুলগুলো বড় বড় হয়ে আছে।
অযত্নে অবহেলায় কেমন দেখা যাচ্ছে চুলগুলো।
পড়নের শার্টটাও কেমন নোংরা হয়ে আছে সাথে ফারহানের শরীর থেকে বের হচ্ছে বাজে দূর্গন্ধ।
ফারহান নিহালের দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,
আগামীকাল এস এস সির রেজাল্ট তাইনা?" নিহাল বললো, "হ্যাঁ!"
ফারহান বললো, "আগামীকাল তোদের বাড়ি যাবো।
ফারহানের মা ওমনি প্রতিবাদি সুরে বলে উঠলেন, "একদম না।
ওখানে আর যাবেনা তুমি। আর ওই মেয়ের কথাও ভাববেনা।
ওর রেজাল্ট ও দেখে নিবে তুমি ওখানে যাবেনা।"
ফারহান সোফায় বসতে বসতে বললো,
আমার বউয়ের কাল রেজাল্ট আমি না গেলে চলে আম্মা! আমি তো যাবোই।"
"তোমার আব্বা রেগে যাবে ফারহান।"
"রাগলে রাগবে! আমাকে সেখানে যেতেই হবে।
নিহাল রেডি থাকিস আর খালাকে ফোন করে জানিয়ে দিস আমাদের যাওয়ার কথা।"
ফারহান আমার কথা শোন, তোর আব্বা রেগে যাবে।
যাসনা সেখানে। তুই আর নিহাল অন্য জায়গা থেকে ঘুরে আয়, আমি টাকা দিবো।"
"আম্মা, বিশ্বাসঘাতিনীর রেজাল্টের দিন আমাকে যেতে দাও এরপর আমি আর ওর কাছে যাবোনা।
নিহাল পাশ থেকে চিন্তিত সুরে বললো, "ওর আব্বা আর ভাইয়েরা তোকে দেখলে যদি তোর কিছু করে তখন?"ফারহান সোফায় হেলান দিতে দিতে বললো, আমার বা*টাও ছিড়তে পারবেনা শা*রা।
তুই টেনশন নিস না।"
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com