তোর শহরে প্রেম । পর্ব - ০৪
অনু তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বের হচ্ছে তার চোখ জ্বলে যাচ্ছে সামনে সব কিছু ধোয়াসা দেখছে কোন মতে সামনে এগোতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো। পরে গেছে ভেবে চোখ বন্ধ করে রেখেছে, চোখ দিয়ে পানি পরছে। কিন্তু হঠাৎ তার কোমরে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে তাকাতে চাইলো কিন্তু পারছে না চোখ জ্বলে যাচ্ছে ।
তানিম অনুর মায়াবী মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে জীবনের প্রথম কোন মেয়ে তার বাহুতে, মেয়েটির গোলাপি ঠোঁট জোড়া কাঁপছে,চোখ থেকে অশ্রু ঝড়ছে যেগুলো তানিমের চোখে প্রেমের বৃষ্টি মন হচ্ছে। হলদে ফর্সা গায়ের রঙ। মনে মনে বলছে এই মেয়ে এতোদিন কোথায় ছিলো?
অনু কোনমতে বললো, প্লিজ আমাকে ছাড়ুন তন্ময় আমার চোখ জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।
তন্ময় নামটা শুনে তানিম দ্রুত অনুকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে আপনার চোখে কি হয়েছে।
আপনি কে প্লিজ আমার চোখে একটু পানি দিন আমার চোখ জ্বলে যাচ্ছে।
তানিম অনুকে তন্ময়ের রুমে নিয়ে গেলো,
তন্ময়ের ওয়াশরুমে নিয়ে পানি ছেড়ে দিয়ে বলে আপনি ক্লিন করুন আমি তন্ময়কে ডেকে দিচ্ছি।
বলেই তানিম চলে গেলো। অনু পানি নিয়ে নিজের চোখে দিচ্ছে।
এখনো চোখ জ্বলছে। কিছুক্ষণ চোখে পানি দেয়ার পর আয়নাতে তাকালো চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে গেছে। পরণের জামাটাও আর্ধেক ভিজে গেছে। আরো কিছুক্ষণ পানি দিয়ে বের হয়ে আসলো ওয়াশরুম থেকে।
তন্ময়কে তানিম টেক্সট করে বলেছে, তবে তন্ময়ের মাঝে কোন হেলদোল নেই।
তানিম এ নিয়ে চারবার একি টেক্সট করেছে, অনু বিপদে, তোর রুমে আছে প্লিজ ওকে হেল্প কর।
তন্ময় আরো ধীরে ধীরে খাবার খাচ্ছে। তানিম আর সহ্য করতে না পেরে আবার আসলো তন্ময়ের রুমে
অনুর চুলগুলো অনেটাই এলোমেলো হয়ে আছে কিছু চুল ভিজে চেহারায় লেপ্টে আছে,
তানিম গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কেমন এলোমেলো লাগছে নিজেকে।
অনু তানিমকে দেখেই নিজের ওড়না টেনে ভালো ভাবে গায়ে জড়িয়ে নিলো।
তানিম এখনো তাকিয়ে আছে অনুর দিকে।
অনু হালকা আওয়াজে বললো, কিছু বলবেন।
আপনার চোখে কি হয়েছে?
ওই বাচ্চারা, বলেই থেমে গেলো তেমন কিছু না হয়তো চোখে কিছু পরেছিলো।
আপনার চোখতো ফুলে আছে। কি হয়েছে বলুন?
অনু কিছু বলবে তার আগেই আনহা এসে বলে দাভাই চিটারের চোখেনা
আনা এসব কি বলছো ঠিক করে বলো।
না মানে টিচারের চোখে পারফিউম পরেছে। জানো দাভাই টিচার তো পারফিউম ইউস করতেই পারে না। আমি আর আয়ান কত করে বললাম এটা বডিতে স্প্রে করতে হয়।
সে না- বুঝে চোখে স্প্রে করলো।
তানিম ধমকের সুরে বলে, আনা তুমি মিথ্যে কাকে বলছো!
সত্যি করে বলো তোমরা করেছো এসব। দাঁড়াও আজ তোমাদের বিচার করবে বড় আব্বু।
দিনে দিনে বাঁদর তৈরি হচ্ছ।
অনু বললো,ওকে কেনো বকছেন! দোষটাতো আমার।
আমার সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিলো! ওরা ছোটা মানুষ ভুল করতেই পারে।
অনু বের হবে এমন সময় তানিম বললো,আমার সাথে চলুন ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে হবে আপনাকে।
তার কোন প্রয়োজন নেই এমনিতেই সেরে যাবে।
আমি নিচে যাচ্ছি আপনি আসুন কোন না শুনবো না।
দোষটা যেহেতু আমাদের তাই এটা ঠিক করার দ্বায়িত্বও আমাদের।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো চোখের মত একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে হেলা ফেলা করা যাবেনা।
তানিম চলে গেলো।
অনু মনে মনে বলছে,এই বাড়িতে ভালো মানুষও আছে?
অনু তন্ময়ের ঘর থেকে বের হবে এমন সময় চোখে পরলো দেয়ালে টাঙানো তন্ময়ের একটা বিশাল ছবি। অনুর বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো,
বিড়বিড় করে বললো তারমানে আমি স্বশরীরে জমের ঘরে দাঁড়িয়ে আছি!
চোখ থেকে পানি পরা বন্ধ হয়নি। ডানে বামে তাকিয়ে, নিজের ব্যাগ থেকে কলম বের করে,
এক টুকরো কাগজে কিছু লিখলো।
লেখাটা তন্ময়ের বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে গ্লাস দিয়ে চাপা দিয়ে দিলো।
ওড়না দিয়ে চোখটা মুছে বের হয়ে
আসলো রুম থেকে।
তানিম নিচে এসে দেখে তন্ময় টিভিতে ভিডিও গেমস খেলছে।
তানিম টিভির সামনে দাঁড়িয়ে বলে, তোকে আমি কতগুলো টেক্সট করেছি?তুই সত্যি ওই মেয়েকে ভালোবাসিস নাকি অন্য কোন কাহিনি আছে বলতো আমাকে ক্লিয়ার করে!
ভাইয়া সবাই এক কথা কেনো বলছো, ভালো না বাসলে কি বিয়ে করতে চাইতাম?
আমরা যাকে ভালোবাসি তার বিন্দু মাত্র কষ্ট সহ্য করতে পারিনা। সেখানে মেয়েটা এতো কষ্ট পাচ্ছে তাও তোর কোন হেলদোল নেই!
কষ্ট পাচ্ছে মানে কি বলতে চাইছো!
দেখ তন্ময় তুই ফিডার খাওয়া ছোট বাচ্চা না। তোকে সব ডিটেইলস বলতে হবে।
তুই যথেষ্ট ম্যাচিউর অতএব নিজেকে সামলে নে।
সারা পাশ থেকে বললো, দাভাই তোমরা একটা বাহিরের মেয়ের জন্য ঝগড়া করছো! সিরিয়াসলি!
তানিম বললো,তুই ভুলে যাচ্ছিস কেনো বাহিরের মেয়েটাকে তোর ভাই ঘরে আনতে চাইছে, তাই সে এখন আর বাহিরের মেয়ে নয়!
তানিমের কথা শুনে তন্ময় কেশে উঠলো,পরিবেশ শান্ত করতে বললো,
ভাইয়া আমাদের বাসায় ওর কি কষ্ট হবে?
- তোর বাসায় ও বউ হয়ে আসেনি! এসেছে আমাদের বিচ্ছুদের পড়াতে। আমি ভয় পাচ্ছি বড় কোন সমস্যা না হয়ে যায়!
সারা উঠে এসে বললো, কি হয়েছে দাভাই?
এরমধ্যেই অনু নিচে আসলো। সারা অনুকে দেখে বলে কি হয়েছে তোমার চোখে?
সারার কথা শুনে সবাই অনুর দিকে তাকায়। তন্ময় উঠে এসে বলে, কি হয়েছে তোমার? আস্তে করে গালে হাত দিয়ে ধীর কন্ঠে বলে, এখন কোন সিন ক্রিয়েট করলে, পরে এর শোধ তুলবো।
কোন এক অজানা কারণে তনিমের খুব বিরক্ত লাগছে তন্ময়ের অনুকে স্পর্শ করাটা।
তানিম বললো, ওকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে! তুই ওকে হসপিটালে নিয়ে যা।
সারা বললো,ওর যেতে হবেনা আমি যাচ্ছি।
- তোরা কেনো যাবি গেলে আমি যাবো। আমার হবু বউকে হসপিটালে আমি নিয়ে যাবো।
কথাটা শুনে অনুর ভয় হচ্ছে। অনু ভালো করেই জানে এই ছেলে কখন তাকে হসপিটালে নিয়ে যাবে না।
সায়লা বেগম আর ইরা বেগম কিচেনে রান্না করছেন আর গল্প করছেন।
এদিকের কোন খবর তাদের নেই।
ইরা বেগম বললো, ভাবি চলো মেয়েটাকে নাস্তা তুমি আর আমি দিয়ে আসি।
তাহলে আরো ভালো করে মেয়েটাকে দেখেনিতে পারবো।
না, ছোট আজ না। এখন তো প্রতিদিন আমাদের বাসায় আসবে।
আস্তে আস্তে জেনে নেবো। এখন সার্ভেন্ট দিয়ে নাস্তা পাঠিয়ে দে।
যাই বলো ভাবি, আমাদের তন্ময়ের পছন্দ আছে।
আর এদিকে আমার ছেলেটাকে দেখো বড় হয়েও আজ পর্যন্ত একটা প্রেম করতে পারলো না।
- আমার তানিম বাবা তো হিরের টুকরো ছেলে। ওর জন্য আমি নিজে খুঁজে খাঁটি রত্ন আনবো।
- আমাদের তন্ময়ও কম কিসে ভাবি?আমার দু'ই ছেলেই আমার কাছে হিরের টুকরো।
- দেখিসনা ছেলেটা কেমন বাউণ্ডুলে হয়েছে।বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু তো শিখতে পারে?
- শোন তন্ময় আমার ছেলে আর তানিম তোমার ছেলে
- নিয়ে নে ওই বাঁদর ছেলেকে। চাইনা এমন ছেলে।
- বাঁদর ছাড়া তো বাড়িটা শূন্য শূন্য লাগে ভাবি।
তবে ছোট বেলা থেকেই সবাই ভাবতো তানিম আমার ছেলে।
আমার বিয়ের দশ বছর আমার কোল জুড়ে তন্ময় এসেছে।
আর তোকে আনার দুই বছরের মাথায় তোর কোল জুড়ে তানিম এলো।
সেদিন মনে হয়েছিলো আমি মা হয়ে গেছি!
তুমিই তো ওর মা ভাবি। নিজের সন্তানের মতো আমার ছেলেটাকে ভালোবেসেছো।
এই তোর সন্তান আমার সন্তান কিরে। এরা চারজন আমাদের সন্তান এই শেখ বাড়ির আলো।
হুম ঠিক বলেছো।
এবার নাস্তা পাঠা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।
ইরা বেগম নাস্তা রেডি করে সার্ভেন্টকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন।
তন্ময় অনুর হাত ধরে সামনে হাঁটা শুরু করলো।অনু আড় চোখে একবার সারার দিকে তাকালো।
তানিম নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তানিমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অনু তানিমের হাত স্পর্শ করলো।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com