তোর শহরে প্রেম । পর্ব - ১০
তানিম বসে অফিসে নিজের কেবিনে ,এ পর্যন্ত দশ কাপ কফি শেষ করেছে, কিছুতেই নিজের মনকে শান্ত করতে পারছেনা। বার বার অনুর চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ফাইলটা ঠাস করে টেবিলে রেখে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বেরিয়ে আসলো। কেবিন থেকে।
আফিস থেকে বের হয়ে একটা পার্কে আসলো। এই-টাইমে, জনমানবহীন পার্কটা দু'একজন কর্মচারী ছাড়া আর কেও নেই। মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে তানিম।
অনু বললো, ভাবি আমার বাবা কখন শহরে আসবে না।
এমনকি আমাকেও কোনদিন ওই বাসায় ফিরতে নিষেধ করে দিয়েছে!
এমন কি হয়েছে অনু
সে অনেক কথা ভাবি।
শুধু এতোটুকুও জেনে রাখো এই পড়া লেখা করার জন্য আমাকে অনেক সাফার করতে হবে।
আমি আমার পড়া লেখার জন্য অনেক মায়া ত্যাগ করে এসেছি।
তাই আমার জীবনে পড়া লেখাটাই মূল উদ্দেশ্য। এখানে আমি কারো হতে আসিনি!
খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে আমি! আমার এসব বিলাসিতার প্রতি কোন নজর নেই।
আমি সাধারণ সারণের মতই থাকতে চাই!
শোন ভালোবাসা, সাধারণ, অসাধারণ দেখে আসেনা। তার সময় মতো সে এসে পরবেই।
আচ্ছা মন খারাপ করে থেকো না। বাবা,তো!দেখবে কিছুদিন পর নিজেই তোমার কাছে ছুটে আসবে।
বেশী দিন অভিমান পুষে রাখতে পারবে না।
মোবাইলটা অনুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,তুমি কথা বলো! আমি মেহরু কে দেখে আসি।
অনু নিজেরর মায়ের সাথে কথা বললো,সাথে ছোট ভাই আব্দুল্লাহর সাথেও কথা বললো।
কথা শেষ করে একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলো।
মা,আর ভাইয়ের সাথে কথা বলে যেনো হৃদয়ে প্রশান্তি ছেঁয়ে গেলো।
মেহরুবা এসে অনুকে বললো,মামুনি চলো আইসক্রিম খাবো। চলো, চলো।
মিফতা এসে বলল, কি হচ্ছে এসব মেহরু!
বললাম তো তোমার বাবাই অফিস থেকে ফেরার সময় নিয়ে আসবে।
আমার এখন চাই, এনে দাও।
অনু বললো সমস্যা নেই ভাবি আমি যাই ওর জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসি!
আমিও যাবো মামুনি।
মিফতা কিছু টাকা বের করে অনুর হাতে দিয়ে বলে বেশি দূরে যেয়ো না।
ঠিক আছে ভাবি সামনে দোকান থেকে আইসক্রিম নিয়েই চলে আসবো।
দু'জনে বের হলো অনু মেহরুবার হাত ধরে রেখেছে। সামনের দোকান বন্ধ।
এখন আইসক্রিম আনতে হলে আরো খানিকটা সামনে যেতে হবে।অনু একবার ভাবলো ফেরত যাবো।
আবার ভাবলো বাচ্চা মেয়েটার মনটা ভেঙে যাবে। তাই আরো সামনে গেলো।
দুটো আইসক্রিম কিনে ফিরে আসবে। এমন সময় চোখ গেলো।
সামনের পার্কে তানিমের দিকে। অনু কিছু একটা ভেবে রাস্তা পার হয়ে পার্কে চলে আসলো।
তানিম তখনও মাথা নিচু করে রেখেছে। অনু বললো আসসালামু আলাইকুম।
কারো আওয়াজ কর্ণগোচর হতেই তানিম সামনে তাকালো।
এই মূহুর্তে অনুকে আশা করেনি তানিম।
মেহরুবা বলে উঠলো ভালো চাচ্চু তুমি!
তানিম এখনো বোকার মতো তাকিয়ে আছে কি রিয়েক্ট করবে সে তাই ভুলে বসেছে।
অনু আবার বললো আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।
তানিম হ্যাঁ না কিছুই বলছে না।
মেহরুবা অনুর হাত ছাড়িয়ে তানিমের কোলে যেয়ে বসে বলে,
ভালো চাচ্চু তুমি কথা বলছো না কেনো। আমার সাথে রাগ করেছো?
তানিম মেহরুবার গাল টেনে বলে না তোমার সাথে কি রাগ করা যায় মিষ্টি আম্মু!
নাহ ইটুও না। ভালো চাচ্চু এই দেখে মামুনি।
তানিম অনুকে ইগনোর করতে চাইছে কিন্তু পারছেনা।
অনু বলল,আমি কি কোন ভাবে আপনাকে বিরক্ত করলাম!
না কিসের বিরক্ত! হ্যাঁ কি যেনো বলছিলেন?
আমার আপনাকে কিছু বলার ছিলো।
আমাকে!
হুম আপনাকে।
জ্বি বলুন
আমি কি বসতে পারি।
তানিমের নার্ভাস ফিল হচ্ছে। ইচ্ছে করছে অনুকে বলতে আপনি এখান থেকে চলে যান।
তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,জ্বি বসুন।
তানিম এক সাইডে সরে অনুকে বসতে জায়গা দিলো।
কোন ভূমিকা ছাড়াই অনু বললো, ধন্যবাদ
হাত দিয়ে শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বললো মানে!
মানে আপনি সেদিন আমাকে এতো হেল্প করলেন তার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ কেনো দিতে হবে সেটা তো আমার দায়িত্ব ছিলো।
আচ্ছা আপনি এর আগে কোন মেয়ের সাথে কথা বলেননি।
এই প্রশ্ন শুনে তানিম আরো নার্ভাস হয়ে গেলো।
তানিম কিছু বলবে তার আগেই,অনু বলে না মানে আপনি এতো নার্ভাস হচ্ছেন তাই জিজ্ঞেস করলাম! তানিমের একবার বলতে ইচ্ছে করলো, তুমি আমাকে বারবার এলোমেলো করে দিচ্ছ।
তুমি সামনে থেকে চলে যাও।
তানিমকে কিছু বলতে না দেখে অনু মেহরুবাকে বলল, মামুনি এখন চলো।
দেরি হয়ে যাচ্ছে। অনু মেহরুবার হাত ধরে সামনে হাঁটা শুরু করলো,
কিন্তু মনে হচ্ছে পেছন থেকে কেউ তার ওড়না ধরে রেখেছে।
সারা আর রায়হান বসে আছে লেক পার্কের এক পাসে ঘাসের উপর।
প্রায় মিনিট পনেরো হবে দু'জনেই চুপচাপ কেউ কোন কথা বলছেনা।
নিরবতা ভেঙে রায়হান বলল, আপনি কিছু বলবেন বলছিলেন!
সারা অন্য দিকে মুখ করে রায়হানের হাতের উপর আলতো করে হাত রাখলো।
সারার হৃদপিণ্ড মনে হয় এখনি বের হয়ে যাবে এমন ভাবে লাফাচ্ছে।
সারা কম্পিত কন্ঠে বললো, যদি বলি আমি আপনাকে চাই রায়হান ভাই!
রায়হান দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে নিলো।একটু দূরে সরে বলে,
আপনার বায়না ধরার জায়গা এটা নয় মেডাম।আর আমি বাজারের কোন পন্য নই।
অতএব এসব ছেলে মানুষী বাদ দিন।
আপনার কি মনে হয় চব্বিশ বছরের এক যুবতী আপনার সাথে ছেলে মানুষি করছে!
আমি সেই সারা নই যাকে আপনি চিনতেন।
আমি সেই সারা যার হৃদয় সিন্দুকে আপনার জন্য ভালোবাসা জমা রয়েছে।
আমি জানি হয়তো আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না। তবে এটাই সত্যি।
রায়হান পূর্ন দৃষ্টিতে সারার দিকে তাকালো,
মেয়েটা এখনো দেখতে আঠারো বছরের যুবতীর মতো,
তবে চোখের নিচে কেমন কালচে দাঁগ বসে গেছে। মুখটাও কেমন ফেকাসে।
এভাবে কি দেখছেন রায়হান ভাই!
আপনার পাগলামি দেখছি!
শুনেন আমি টিনের একটা ঝুপড়িতে থাকি মাসে একবার আমাদের মাছ মাংস খাওয়া হয়।
কোন কোন মাসে তাও জুটে না। এক টয়লেট কম করে হলেও বিশ /পঁচিশজন ব্যবহার করি।
রান্নার কথা না হয় বাদ দিলাম।
আপনার অট্টালিকা ছেড়ে এখানে আপনি আবেগের জোড়ে বড় জোড় দু'এক মাস থাকবেন।
তারপর শুরু হবে অশান্তি।
কথায় আছে না।" দরিদ্রতা যখন দরজা দিয়ে আসে! ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়"।
আপনি ভুল বললেন, রায়হান ভাই। হয়তো আমার আপনার পরিবেশ মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে।
হয়তো অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে।
তবে জানেন ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে সেই কষ্ট কোন কষ্টই নয়!
বরং একসাথে ভালো থাকার লড়াই করতে পারলে ভালোবাসা জানলা দিয়ে পালায়না।
বরং ভাঙা টিনের ফাঁকফোকর দিয়ে জোছনার আলোর মতো আলোকিত করে তোলে।
যা আমার অট্টালিকায় নেই। আর আমি কোন টিনেজার নই যে ,
এখন আমি আপনার সামনে বসে আমার আবেগ প্রকাশ করবো।
জনপ্রিয় পোষ্ট সমূহঃ
আমি প্রাপ্ত বয়স্ক একজন বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। যার আবেগ নয়।
শুধু শেষ বারের মতো ভালোবাসার মানুষের কাছে ভালো থাকার আবেদন নিয়ে এসেছে।
আপনি আমাকে প্রত্যাখান করলে আমি বি*ষ খাবো বা ফাঁ*সি দেবো এমন না।
তবে সারাজীবন আপনি নামক বিরহে পুরবো।
হয়ত সেই দহন বাহির থেকে আমার মিথ্যে হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকবে।
দেখুন এতো গভীর কথা আমি বুঝিনা।আমি গরীব তবে আত্মমর্যাদা আছে আমার।
নিজের সম্মান খুন্ন হয় এমন কাজ কখনো করিনি আর সামনেও করবো না।
জানেন আমার তো কোন সম্মান নেই তাই এসব বলছি।
যদি আপনার সম্মান থেকে কিছু সম্মান দিতেন তবে নিজেকে সম্মানিত করতাম।
শেষ কথা শুনে রাখুন আমি আপনাকে ভালোবাসি।
তার মানে আপনি আমাকে ভালোবাসলেও আপনাকে
ভালোবাসি আর না ভালোবাসলেও আপনাকেই ভালোবাসি।
এবার আমাকে গ্রহণ করবেন না ফিরিয়ে দেবেন সেটা আপনার ইচ্ছে।
তবে আজ থেকে ঠিক তিনদিন পর আমার উত্তর চাই।
বলেই একটা কাগজের টুকরা রায়হানের হাতে দিয়ে উঠে চলে গেলো।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com