হুজুর যখন বর । পর্ব - ০১
মিথিলা: এই যে হুজুর সাহেব, কই যাইতেছেন?
নয়ন: জ্বি বাসায় যাইতেছি,,,,(নিচে মাটির দিকে তাকিয়ে)
মিথিলা: সারাদিন কি বাসায় থাকেন নাকি?
শারমিন: আরে কি বলিস, হুজুর মনে হয় নতুন বিয়ে করেছে তাই বাসায় সব সময় থাকে,,(মুখ চেপে হাসলো মিথিলার বান্ধবী)
নয়ন কিছু না বলে দৃষ্টি নিচের দিকে দিয়ে আছে ।
মিথিলা: সব সময় নিচের দিকে তাকিয়ে থাকেন কেনো??
নয়ন: না মানে এমনি । আমার দেরি হয়ে যাইতেছে গেলাম ।(বলেই বাসার দিকে যেতে থাকলো)
এতক্ষণ যাদের কথা শুনলেন, নয়ন হলো প্রাইভেট একটা মাদ্রাসার শিক্ষক এবং পাশাপাশি পড়াশুনাও করতেছে।
আর মিথিলা হলো মর্ডান যুগের একটা মেয়ে । বন্ধু বান্ধব ,আড্ডা ,ভার্সিটি এসব নিয়ে সারাটা দিন কেটে যায় ।
মিথিলা দেখতে অনেক সুন্দর,,। ভার্সিটির টপ ১-৩ এর মধ্যে থাকবে সুন্দরীর লিস্ট এ ।
রাতে মিথিলা শপিং করে সিএনজি করে বাসার সামনে নেমে দেখে তার কাছে খুচরো কোনো টাকা নাই,,।
সিএনজি চালককে নোট টাকা দিলে সেও বলে খুচরো নাই ।
নয়ন তখন এশা নামাজ পড়ে যাইতেছে পাস দিয়েই ।
মিথিলা: এইযে মিস্টার,,,,(সামনে দাড়িয়ে)
নয়ন: কিছু বলবেন?(নিচের দিকে তাকিয়ে)
মিথিলা: আমি কে চিনেছেন?
নয়ন: হুমম,, ।
মিথিলা: আমি শারমিন বলতেছি,,,
এই কথা শুনার পরেই নয়ন অবাক হয়ে যায় আর অজান্তেই মিথিলার দিকে তাকিয়ে দেখে,,,,।
মিথিলা: এইতো এবার হুজুর সাহেব আমার দিকে তাকালো,,,,এভাবে তাকিয়ে কথা বলবেন বুঝলেন ।
নয়ন: আপনি মিথ্যে কেনো বললেন?
মিথিলা: এটা না বললে কি আর আপনি আমার দিকে তাকাতেন?
নয়ন: আপনার শরীর দেখা যাইতেছি ,,ছোট কাপড় পড়েছেন ,তাই তাকাই না ।
মিথিলা: আমাকে ৫০ টা খুচরো দেন তো দ্রুত ।
নয়ন: জ্বি,,(বলে পকেট থেকে বের করে দিলো)
মিথিলা দেরি না করে টাকা নিয়ে সিএনজি চালককে দিয়ে ফিরে তাকিয়ে দেখে নয়ন নেই সেখানে ।
মিথিলা:, একটা ধন্যবাদ ও দিতে দিলো না তার আগেই চলে গেলো ।
পরের দিন নয়ন মাদ্রাসা শেষ করে একটা ছোট্ট চায়ের দোকানে বসে চা খাইতেচে,,,। কারো শুকনো কাশির শব্দে ফিরে তাকিয়ে দেখে মিথিলা ।
মিথিলা: চা খেতে বলবেন না?
নয়ন: জ্বি,,,চাচা আর একটা চা দেন ।
মিথিলা: কালকে কোথায় উধাও হয়ে গেছিলেন?
নয়ন কিছু না বলে চা খাওয়াতে মনোযোগ দিয়েছে ।
নয়ন: কিছু মনে না করলে,,,একটা কথা বলতাম ।
মিথিলা: হুমম,,,বলো ।
নয়ন: না থাক । (বলে চায়ের বিল দিয়ে চলে গেলো উঠে)
মিথিলা: কি আজব প্রাণী এটা? (অবাক হয়ে )
দোকানদার: ছেলেটা অনেক ভদ্র, । আমার এখানে সব সময় আসে আমি চিনি তাকে । এভাবে তাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য কইরেন না ।
মিথিলা উঠে ভার্সিটি চলে গেলো ।
শারমিন: আজকে ভার্সিটিতে আসলি ২দিন পর । দেখ কতগুলা চিঠি জমা হয়ে আছে ।(১০/১২ টা চিঠি হাতে দিয়ে)
মিথিলা: এগুলা কি?
শারমিন: তোকে প্রেম পত্র পাঠিয়েছে এগুলা,,,।
মিথিলা: আর তুই এগুলা আমাকে দিতেছিস?? ছিড়ে ফেলে দে ।
ক্লাস করার জন্যে ৪ তলায় যাবে ওইসময়,
আকাশ: মিথিলা কেমন আছো? অনেক দিন পর দেখলাম তোমাকে ।
মিথিলা: ভাইয়া ভালো আছি,,,(একটু বিরক্ত নিয়ে)
আকাশ: আমাকে ভাইয়া বলতেছ কেনো? শুধু আকাশ বলবে ।
মিথিলা: আপনি আমার থেকে দুই ক্লাস বড় তাই সাধারন ভাবেই আপনি আমার বড় ভাই,,,,তাইনা আকাশ ভাই
আকাশ: বাসায় যাওয়ার সময় দেখা করিও তো ,(বলে চলে গেলো)
ভার্সিটি শেষ করে ,
বাসায় চলে আসে ।
রাতে,
মিথিলার আণ্টি: মিথিলা কালকে হৃদয়কে নিয়ে মাদ্রাসায় যাবি,,,পরীক্ষা আছে ওর ।
মিথিলা: আণ্টি তুমি যেয়ো,,,,আমার কাজ আছে ।
মিথিলার আণ্টি: তোর কি কাজ সেটা আমার জানা আছে,,,বলেছি যাবি নিয়ে তো যাবি ।
আর এসব খোলামেলা পোশাক যেনো না দেখি ঐখানে যাওয়ার সময় কারণ ঐটা মাদ্রাসা তোর আড্ডা দেওয়ার কোনো ক্লাব নয় ।(বলেই চলে গেলো)
শরীফ আহম্মেদ: মিথিলা মা , মন খারাপ কেনো? কোনো ছেলে বিরক্ত করে নাকি?? বল আমাকে ।
মিথিলা: না বাবা তেমন কিছু না । (খাবার খেতে খেতে,)
শরীফ আহম্মেদ: তাহলে ?
মিথিলা: আমার কিছু টাকা লাগবে ।
শরীফ আহম্মেদ: টাকা লাগবে আগে বলবি তো,,,কালকে তোর একাউন্ট এ পাঠিয়ে দিবো ।
আপনারা শরীফ আহম্মেদ কে চিনলেন না তাই তো,,,। ইনি হলেন পুলিশ কমিশনার । মিথিলার বাবা ।
এদিকে রাতে নয়ন বাসায় ফিরে ,
ফাতেমা: ভাইয়া তুই এসেছিস?? আমার জন্যে কি এনেছিস?
নয়ন: আপু আমি তো তেমন কিছু আনার মনে ছিলো না,,,।
ফাতেমা,: ওহহ,,(কিছু মন খারাপ করে)
নয়ন: তুই এই জন্যে বুঝি এত রাত প্রযন্ত জেগে আছিস?
নয়নের মা: সেটা নয়তো কি,,,। আমার মাথা শেষ করে দিতেছে ভাইয়া কখন আসবে ,,,এটা বলতে বলতে ।
নয়ন অনেকগুলো চকলেট দিলো ফাতেমাকে ।
নয়ন: এখন ঘুমাবি গিয়ে,,,। আর সকালে উঠে নামাজ পড়বি ,।
ফাতেমা: ঠিক আছে ভাইয়া,,। (গলা জড়িয়ে ধরে)
নয়ন: মা ,,,বাবা কোথায়?
নয়নের মা: তোর বাবা এখনও আসেনি বাসায়,,। বললো একটু পর দোকান বন্ধ করে আসবে,,(ছোট খাটো একটা দোকান করে নয়নের বাবা)
নয়ন: তুমি খাবার রেডি করো আমি বাবাকে নিয়ে আসতেছি,,,,।
নয়ন হাটতে হাটতে পাশেই বাজারের কাছে গিয়ে দেখে নয়নের বাবা দোকানের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতেছে,,,
নয়ন গিয়ে নিজে সেগুলো ভিতরে রাখলো,,,,। তারপর দুইজন এ বাসায় চলে আসলো ।
পরের দিন সকালে মিথিলা হৃদয়কে নিয়ে মাদ্রাসায় এসে পরীক্ষার জায়গায় বসিয়ে দিয়ে বাইরে বসে অপেক্ষা করতেছে অন্য সকল অভিভাবকের সাথে ।
তারপর পরীক্ষা শেষ হলে হৃদয়কে নিয়ে মাদ্রাসার বাইরে আসবে তখন,,
হৃদয়: স্যার আসসালামু আলাইকুম ।
ওপর দিক থেকে: ওয়ালাইকুম আসসালাম ।
মিথিলা ফোন টিপতে টিপতে যাইতেছে হঠাৎ এদের কথা শুনে সামনে তাকিয়ে দেখে নয়ন ।
নয়ন: তোমার পরীক্ষা কেমন হয়েছে?? খুব কি কঠিন পরীক্ষার প্রশ্ন ছিলো?(মিথিলাকে খেয়াল করেনি,)
হৃদয়: না স্যার,,,যেগুলো ক্লাস নিয়েছেন ওসব এসেছে ।
মিথিলা: এই যে হুজুর সাহেব,,,আপনি এখানে কেনো?
এতক্ষণ নয়ন খেয়াল করেনি পাশে কে ছিলো,,
হৃদয়: আপু এগুলো কি বলো,,,ইনি আমার sir ।
নয়ন কিছু না বলে দ্রুত জায়গা ট্যাগ করলেন ।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com