শাশুড়ি vs বউ । পর্ব - ০৪
ফোন এত কথা বলা লাগে?
আমরা ও তো জামাইর ঘর করছি,এতকথা তো কখনো বলিনি
-মারিয়া তখন নিজের রুমে চলে আসে।
মারিয়ার এখন আর এসব শোনার সময় নাই।
মারিয়া বিছানায় শুয়ে উপড়ে কম্বল দিয়ে কোলবালিশ টা কাছে নিয়ে শুভকে ভেবে কয়েকখানা চুমু দিয়ে কোলবালিশ টা কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়।।
পরেরদিন সকাল ছয়টার দিকে মারিয়া সজাগ হয়েও তাদের বিবাহিত জীবনের প্রথম একমাসের কথা ভাবতেছে এমন সময় শাশুড়ি মা তার রুমে এসে
-এটা কারোর বাপের রাজমহল না যে রানীদের মতো খাইবা আর ঘুমাইবা
-আম্মু বসেন
-আমি বসতে আসিনি
-কিছু বলবেন?
-রান্না করা লাগবে
-এত সকালে রান্নার কাজ?
-হ্যা, রান্না না করলে কোনো ফেরেশতা আকাশ থেকে এসে খাবার দিয়ে যাবে না।
-মারিয়া শাশুড়ি মার এসব শুনে সে বুঝতে পারে কথা বলে লাভ হবে না।
মারিয়া তখন বিছানা ঘুছিয়ে একা একা রান্নার কাজে লেগে যায়।
এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পরে একদিন সকালে মারিয়ার শরীরে প্রচন্ড জ্বর উঠে
প্রতিদিনের মতো শাশুড়ি মা এসে বকাবকি করতে থাকে আর মারিয়া এদিকে শীতে কাপাকাপি করতেছে।
-এই মেয়ে উঠো না কেন?
-মারিয়া সে জ্বরে কাঁপতেছে
-শুভর মা এভাবে কয়েকবার ডাকার পরে সে চিল্লাতে থাকে।
-এই ফাজিল মেয়ে উঠিস না কেন? এটা কি কোন সিনেমার জায়গা যে অভিনয় করবি?
-মারিয়া তখন শোয়া থেকে উঠে বিছানায় বসে
-কি হয়ছে?
-শাশুড়ি মা তখন মারিয়ার গালে কষে এক থাপ্পড় মেরে বসে
-মারিয়া তখন নিঃশব্দে কান্না করতে থাকে আর চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে
-এই ঢং করবিনা, রান্নাঘরে যা রান্না করবি না হলে খুব খারাপ হবে
-মারিয়া তখন শরীরে জ্বর নিয়েই রান্নাঘরে রান্না করার উদ্দেশ্যে যায়।
-চাল ধুয়ে চুলায় আগুন ধরিয়ে বসার কতক্ষণ পরেই মারিয়া জ্ঞান হাড়িয়ে চুলোর পাশে শুয়ে পড়ে।
পাশের ঘরের একটা মেয়ে সম্পর্কে মারিয়ার ননদী লাগে সে উঠোন দিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করে দেখে মারিয়া হঠাৎ চুলোর পাশে পড়ে যায়।
-চাচী আম্মা মারিয়া ভাবি অজ্ঞান হয়ে গেছে বলে সে মারিয়ার কাছে দৌড়ে এসে মারিয়াকে দুজন মিলে মাটি থেকে উঠিয়ে খাটে এনে শুয়িয়ে মাথায় পানি দিতে থাকে।
- বড় ভাবি মারিয়া ভাবির শরীরে এত জ্বর তারপরেও তাকে কিভাবে রান্নাঘরে রান্না করতে পাঠালেন
-আরে মনে হয় বেবি হবে সেকারনে হয়তো জ্ঞান হারিয়েছে
-শরীরে এত তাপ আর তুমি এসব কি বলছো?
তোমরা কি মানুষ নাকি অন্যকিছু?
-ঐ মেয়ে এত বেশি বকবক করবিনা।এখানে থাকলে চুপ করে থাক আর না হয় বেড় হ(শাশুড়ি মা)
-সালমা তখন তাদের কথায় কান না দিয়ে মাথায় পানি ঢালতে থাকে।
মিনিট দশেক পরে মারিয়া চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে তার পাশে সালমা নামের মেয়েটি মাথায় পানি ঢালতে থাকে।
মারিয়া তখন অস্ফুট শব্দে কান্না করে দেয়।
-ভাবি কান্না কইরো না, তুমি ঠিকঠাক ভাবে শুয়ে থাকো আমি মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছি
-আম্মু আর ভাবি কোথায়?
-তারা তাদের মতো সবকিছু নিয়ে ব্যস্ত আছে
-তুমিও চলে যাও না হলে তোমাকেও বকবে
-ওনারা বকা দিলে আমার কিছুই যায় আসে না।
তুমি চুপ করে শুয়ে থাকো আমি চুলের পানি মুছে দিয়ে কপালে পানিপট্টি দিয়ে দিবো।
-মারিয়া তখন শোয়া থেকে মাথা একদিকে কাৎ করে, সালমা তখন সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে করে মারিয়ার মাথায় পানিপট্টি দিয়ে দেয়।
দিন গিয়ে রাত হয় মারিয়া তখন শুয়ে জ্বরে কাঁপতেছে।
রাত ১০ টার দিকে শুভ তার মায়ের মোবাইলে ফোন দেয়।
-কিরে বাবা কেমন আছিস?
-হ্যা মা ভালো,তুমি কেমন আছো?
-হ্যা ভালো
-বাড়ির সবাই কেমন আছে?
-সবাই ভালো আছো
-ওহহ
-হ্যা
-মারিয়া কোথায়?
-সে তো ঘুমিয়ে আছে
-কখন ঘুমিয়েছে?
-৯টার দিকে
-আচ্ছা ওরে খেয়াল রাইখো
-রাখি তো
-হুম আচ্ছা এখন রাখি
মারিয়া তাদের ফোনালাপ শুনে
চোখ ভিজে যায়।
মারিয়া তখন ভাবতে থাকে শুভর সাথে কথা বললে হয়তো সে রাতটা ভালো কাটাতে পারতো কিন্তু তার শাশুড়ির মা হয়তো এটা ও চায় না।
সে রাতে মারিয়ার চোখে আর ঘুম আসে না।
নির্ঘুম রাত কাটে,সকাল ৮টার দিকে
-ভাবি ও ভাবি উঠো
-সালমা কিছু বলবে নাকি?(শোয়া থেকে উঠে)
-এই ধরো এগুলো রাখো
-এসব কি?
-এই হচ্ছে ঔষধ আর এখানে ১কেজি আপেল
-এসব আনতে কে বলল
-আমি এনেছি
-এতটাকা কিভাবে পেলে?
-আমি ক্লাস সিক্স থেকে সেভেন পর্যন্ত একবছর টাকা জমিয়েছিলাম
-এই টাকা দিয়ে এসব আনছো?
-হ্যা
-তুমি কেন এসব আনতে গেলে
-ওরা তোমার জন্য কোনকিছু করবে না। আমি যে এসব এনেছি এটা যাতে তোমার শাশুড়ি না জানে
-আচ্ছা
-তুমি এই আপেল টা খেয়ে এই ঔষধ গুলো খেয়ে নাও
-আচ্ছা খাবো
-হুম আমি গেলাম আর কোন কিছু দরকার হলে বলবা
-আচ্ছা
-সালমা রুম থেকে যাওয়ার পরে.........
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com