বাইশের বন্যা । ডাকাতের রাত । পর্ব - ০৩ । লিখা- তাসরিফ খান
দেলোয়ার ভাই বললো, কয়ডা দিনই তো ভাই। আল্লায় তো আর সারাবছর বন্যা দিয়া রাখবো না ।
আমাদের এই ফুড প্যাকিং গোডাউনে চব্বিশ ঘণ্টা তিন শিফটে আমাদের তিনশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিলাম, আজ দুইটা টিম মিলে প্রায় এক হাজার বস্তা খাবার নিয়ে আমরা দুয়ারা বাজারের দিকে যাবো।
একটা টিমের নেতৃত্ব দিবে শ্রাবন। অপর টিমের দায়িত্বে থাকবে সাব্বির এবং আসাদ। সাব্বিরদের টিমে ভলান্টিয়ার আছে দশজন আর শ্রাবনের টিমে ভলান্টিয়ার পনেরো জন। আমি যাচ্ছি শ্রাবনের টিমের সাথে। আমাদের ট্রাকের লোডিং প্রায় শেষ পর্যায়ে ওদিকে সাব্বিরদের ট্রাকও লোড হচ্ছে— পরবর্তী নির্দেশনা অনুসরণ করে ওরা এগিয়ে যাবে। লোড শেষে আমরা আমাদের ট্রাক নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম দিরাই রাস্তার সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পের দিকে।
যাওয়ার পথে আমাদের ট্রাক দেখে ক্ষুধার্ত মানুষেরা ট্রাকের পেছনে ছুটতে শুরু করলো। ঘটনা এমন অবস্থায় দাঁড়ালো যে— হাঁটু সমান পানির মধ্য দিয়ে ট্রাক চলছে আর ট্রাকের পেছন পেছন এক একজন মানুষ দশ-পনেরো মিনিটের বেশি সময় নিয়ে দৌড়াচ্ছে। যারা খাবারের জন্য ট্রাকের পেছনে দৌড়াচ্ছে, তাদের মধ্যে শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ সবরকমের মানুষই আছে। তাদের দেখে বারবার মনে হচ্ছিলো, আমার পরিবারেও তো এরকম শিশু-বৃদ্ধ রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ
তারা যদি ক্ষুধার জ্বালায় এভাবে ট্রাকের পিছু পিছু ছুটতো, এড়িয়ে যেতে পারতাম? আমি জানি না । কিন্তু এখন আমাদের কিছুই করার নেই । কারণ এখানে যদি ট্রাকটা থামিয়ে তাদের খাবার দিতে যাই তাহলে আশেপাশের আরো অনেক ক্ষুধার্ত মানুষজন এসে ভিড় করবে এবং একটা হুলস্থুল কাণ্ড ঘটে যাবে। ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ যে কতটা হিংস্র হয়ে উঠতে পারে তা কখনো নিজের চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। এই ক্ষুধার্ত মানুষগুলো কোনো আইন বোঝে না, নিয়ম বোঝে না।
একরকম নিরুপায় হয়েই বুকে পাথর বেঁধে এই ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে পিছনে ফেলে সামনে ছুটতে হচ্ছে আমাদের। একবার ভাবুন তো, এখানেই যদি খাবারের জন্য এমন হাহাকার তৈরি হয়; তাহলে আরো সাত-আট ঘণ্টা পথের দূরত্বে যে মানুষগুলো না খেয়ে রাত-দিন পার করছে তাদের অবস্থা কতটা করুণ হতে পারে?
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com