যে পাখি ঘর বোঝেনা । পর্ব - ০৩
আজকে মাহিরের ভার্সিটিতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। সে তার মায়াবতীকে খুঁজে বেড়াচ্ছে, কিন্তু সমস্ত ডিপার্টমেন্ট খুঁজেও মায়াবতীর দেখা পেলো না।
-- কেমন আছেন?
-- আরে ভাইয়া যে, এই তো আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?
-- আলহামদুলিল্লাহ, আজকে একা কেন?উনি আসেন নি?
-- আচ্ছা ভাইয়া আমরা তো আপনার জুনিয়র তাহলে আপনি, উনি, এভাবে বলেন কেন তুমি করে বলবেন।
-- সে ঠিক আছে, কিন্তু....
-- আপনাকে গতকাল আমাদের বাসার নিচে দেখলাম, কাউকে খুঁজছিলেন কি?
-- কোথায় তোমাদের বাসা?
-- ভাইয়া ঢং করবেন না, আমি কিন্তু জানি আপনি নোয়াকে পছন্দ করেন, প্রথম দিনে আপনি যে নোয়াকে লুকিয়ে লুকিয়ে খেয়াল করছিলেন সেটা আমি বুঝেছি।
-- তু তুমি.....!!
-- তোতলাচ্ছেন কেন? আচ্ছা ছেলেরা এত ভীতু কেন বলেন তো আমায়?
-- মা মানে....
-- থাকেন আমি গেলাম।
-- আচ্ছা নোয়া আজকে আসে নি কেন?
-- আচ্ছা আচ্ছা নোয়ার খোঁজ নিতে আসছেন!তাই তো বলি আপনার তো এখন আর ক্লাস নেই, ভার্সিটিতে কেন?
-- ভাইয়া তুই এখানে কি করছিস?আমি তোকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। এটা কে? (মাহিরকে জিজ্ঞেস করলো অবনীকে দেখিয়ে)৷ এই তুমি আমাদের ব্যাচমেট না?(অবনীকে উদ্দেশ্য করে) ~~(মেহের)
-- ফার্স্ট ইয়ারে তুমি?(অবনী)
-- হ্যাঁ। চলো বন্ধু হয়ে যাই!
-- অবশ্যই, দেরি কিসের!
দুজন কথা বলছে আর নিজের বোনকে দেখে মাহির অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর তাদের কথোপকথন শুনছে আর ভাবছে যাক দুজন এক ধরনের, মিলে গেলেই ভালো হয়।
কিন্তু বোন চলে আসায় অবনীকে আর নোয়ার কথা জিজ্ঞেস করতে পারলো না।
-- আচ্ছা তাহলে তোরা থাক আমি আসি। বাইরে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
কথাটি বলে মাহির পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে চলে গেল। মেহের আর অবনী সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকলো।
-- আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?(মেহের)
-- হ্যাঁ বলো।(অবনী)
-- আমার ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে?
-- আরে না না, সিনিয়র ভাইয়া হিসেবে কথা বলছিলাম। তবে হ্যাঁ ভাইয়া প্রেমে পড়েছে কারও।
-- আচ্ছা তাই নাকি! তুমি জানো সে কে?
-- কিছুদিন গেলে বুঝতে পারব হয়তো।
-- আচ্ছা তোমার সাথে সেদিন আরেকজনকে দেখেছিলাম,সে আজকে আসে নি?
-- নোয়া? ও তো আমার আগে এসেছে আজকে কিন্তু আমি এসে ওকে খুঁজে পাচ্ছি না ফোন ও বন্ধ।
-- তার আবার কি হলো!
-- বাসায় গিয়ে দেখি।
-- তোমরা ফ্রেন্ড না?এক বাসায় থাকো?
-- হ্যাঁ ভার্সিটির পাশে একটা রুম নিয়েছি দুজন।
-- ইশ তোমাদের মত যদি ফ্রেন্ডদের সাথে থাকতে পারতাম!
-- কেন থাকতে পারো না?
-- না গো ভাগ্য খারাপ।
-- এমন কেন?
-- পারিবারিক কারণে, আমার রাজনীতিতে যুক্ত তো সেজন্য আমাদের বাহিরে তেমনটা ঘুরাফেরা করা হয় না,।ভাইয়া ঘুরাঘুরি করে কিন্তু আমার ব্যাপারে এটা অনুমতি নেই। আর এইখানে ব্যক্তিগত মানুষজন কিভাবে হেনস্তা হয় সেটা তো তোমার অজানা না নিশ্চয়ই।
-- এগুলো আসলেই একটা সমস্যার ব্যাপার। তবে তুমি মাঝে মাঝে আমাদের সাথে আসতে পারো। এত ভয় পেলে আসলে ভয়টা কুরে কুরে খায়, ভয় থেকে বাঁচতে হলে নিজেকে নিজের সাহস দেওয়া উচিত।
দুজনে দুজনের নানা রকম কথাবার্তা শেয়ার করতে থাকে আসলে মেহের মেয়েটা অনেক ফ্রি মাইন্ডের সে খুব তাড়াতাড়ি অন্যজনের সাথে মিশে যেতে পারে। আর অবনীও তো তাই সে জন্যই তো ভর্তির সেই প্রথম দিনেই নোয়াকে নিজের বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে। অবনী মেহেরের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বাসার পথে হাঁটছে আর নোয়াকে বারবার কল করে যাচ্ছে। ভার্সিটিতেও পেল না ফোনেও পাচ্ছে না এবার নোয়ার জন্য অবনীর সত্যি সত্যি খুব চিন্তা হচ্ছে।
অবনী এবার বাসার দিকে রওনা দেয়। এবার সত্যি সত্যি বাসায় যাওয়া প্রয়োজন।
বাসায় গিয়ে রুমের দরজায় নক করতেই দরজা খুলে যায়, দরজা খোলা থাকার তো কথা না। অবনী ধীর পায়ে রুমে ঢোকে। কিন্তু রুমে তো কেউ নেই, অবনী বেলকনিতে গিয়ে দেখে নোয়া মাথা নিচু করে বসে আছে। অবনী গিয়ে নোয়ার কাধে হাত
দিতেই নোয়া চমকে ওঠে। নোয়া কাঁদছে!
-- কি হয়েছে নোয়া?
-- কি হলো? তুই তো ভার্সিটিতে গেলি আগে, ক্লাস না করে চলে এসেছিস কেন? কিছু হয়েছে কি? বল আমায়, কি হলো বল?
নোয়া তবুও চুপ করে থাকে, কোন কথা মুখ দিয়ে বের হয় না তার। নোয়াকে দেখে অবনীর কেমন যেন খটকা লাগে, কিছু একটা নিশ্চয়ই হয়েছে নোয়ার। কিন্তু যদি কিছু তাহলে জানতেই হবে।
অবনী নোয়াকে রুমে নিয়ে এসে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে এক গ্লাস পানি খেতে দেয়। নোয়া সেই পানি ঢকঢক করে খেয়েও নেয়।
-- নোয়া এবার বল তো কি হয়েছে? সকালে তো ভালোভাবেই ক্লাসে গেলি তবে ক্লাস না করে চলে এসেছিস কেন? আর রুমের দরজা খুলে রেখে বেলকনিতে গিয়ে মুখ নিচু করে বসে কান্না কেন করছিলি?
-- আমি এখনই তোকে কিছু বলতে পারবো না অবনী।
-- এখনই কিছু বলতে পারবি না মানে? কি হয়েছে বল আমাকে? আচ্ছা তুই কি আমাকে বিশ্বাস করিস না নোয়া?
-- এসব কি বলছিস অবনী! এখানে তুই ছাড়া আমার কেউ নেই।
-- তাহলে বলছিস না কেন? তুই আমাকে এখনি সব বলবি।
-- আমি সকালে তৈরি হয়ে ভার্সিটিতে যাই।তারপর...............................
-- তুই নিশ্চিত?
-- হুম।
-- আচ্ছা চিন্তা করিস না,তুই সবকিছু অন্য সাইডে রেখে আঙ্কেলের ইচ্ছে-পূরণ কর,আর নিজেরও।
অনেকক্ষণ বোঝানোর পর নোয়া একটু স্বাভাবিক হয়।অবনী নোয়াকে রেখে ফ্রেশ হতে যায়।
[অবনী নোয়ার তুলনায় অনেক ধনী পরিবারের মেয়ে।বাবা বড় পুলিশ অফিসার। বাবার একমাত্র মেয়ে সে। বাসা থেকে ভার্সিটি খুব একটা দূরে না তবুও তার এখানে থাকার ইচ্ছে বন্ধু বান্ধব নিয়ে।
আর অন্যদিকে নোয়া মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।বাবা বিদ্যালয়ের শিক্ষক। নাদিয়াকে তো খুঁজে পাওয়া গেল না আর আরেকটা বোন চট্টগ্রাম পড়াশোনা করে। মা বাড়িতেই থাকে আর বাকিটা তো সবাই জানেন।]
নোয়ার বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছিলো তাই সে একটু কথা বলতে বাড়িতে ফোন দেয়।
-- হ্যাঁ মা?কেমন আছো?
-- এই তো ভালো রে মা তুই কেমন আছিস?ওখানে সব ঠিকঠাক তো?
-- হ্যাঁ মা সবকিছু ঠিক আছে।তোমার শরীর ঠিক আছে তো মা?ওষুধ খাচ্ছো ঠিকঠাক?আর বাবা কোথায়?
-- তোর বাবা তো বাহিরে।
মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয় নোয়া।
এর মধ্যে অবনীও চলে আসে দুজনের জন্য খাবার নিয়ে।
-- চল খেয়ে নে তাড়াতাড়ি।
-- খেতে ইচ্ছে করছে না।পরে খাবো।
-- কি খাবি তাহলে?
-- কিছু না।
-- নেকামি বাদ দিয়ে খেয়ে নে।
অনেক জোড়াজুড়িত নোয়া ও অবনীর সাথে খেয়ে নেয়।
সন্ধ্যায় দুজন একটু ঘুরতে বের হয়,ভার্সিটির পাশেই মেলা হচ্ছিলো।দুজন মেলার মধ্যে ঢুকে পড়ে,অবনী আর নোয়া হাত ধরে হাটছে আর গল্প করছে।এদের দেখলে কারও বলার ক্ষমতা নেই যে এদের বন্ধুত্ব অল্প কিছুদিনের।
-- চল আজকে অনেক কিছু কিনবো।(অবনী
-- সে না হয় কিনবো, তুই ওদিকে তাকিয়ে দেখ একবার।(নোয়া)
-- কোনদিকে?
-- আরে ওই যে দেখ.....(নোয়া)
-- মাহির?
-- হুম তার দলবল নিয়ে।হয়তো মেলায় মেয়ে দেখতে আসছে হয়তো।(নোয়া)
-- হতেই পারে,অথবা তোকে দেখতে এসেছে।আজকে সকালে তোর কথা জিজ্ঞেস করছিলো।
-- কি বলছিলো?
-- তুই গেছিস নাকি সেটা।
-- এখন এখান থেকে নইলে আমাদের দেখে আবার চলে আসবে।
কথা বলতে বলতে নোয়া আর অবনী সামনের দিকের দোকানে ঢুকে পড়ে।
যার নজর এড়িয়ে যেতে চাইছিলো নোয়া, তার নজর নতুন করে যেন তাকে খুঁজে পায়।
নোয়াকে দেখা মাত্র মাহিরের চোখ আটকে যায়। কালো রঙের সালোয়ার কামিজ, মাথার বেণি প্রায় হাটু পেয়ে গেছে, গায়ে জড়িয়ে নেওয়া পাতলা একটা শাল/চাদর পরিহিতা মেয়েটি যেন মাহিরকে আরও কাছে টানছে। তাহলে কি মাহির এবার সত্যি কাউকে ভালবাসতে যাচ্ছে! এতদিনে কি তাহলে মাহিরের জীবনে সত্যিকারের প্রেম এলো!
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com