সত্যিকারের ভালোবাসা । পর্ব - ০৩
তনিমা খাটের এককোনায় বসে কান্না করছে,তখনই রাসেল রুমে ডুকলো আর দেখলো তনিমা কান্না করছে---
রাসেলঃকি হলো তনিমা তুমি কান্না করছো কেনো?
তনিমাঃমা-বাবা কি আমাদের মেনে নিবেন।মা-বাবার মনে কষ্ট দিলাম এটা ভেবেই কষ্ট লাগছে।আবার আমার জন্য তাহিয়ার জীবনটাও নষ্ট হয়ে গেলো।(কান্নার বেগ বাড়িয়ে)
রাসেলঃতুমি কান্না করো না জান সব ঠিক হয়ে যাবে।কাল যাবো আমি আর তুমি তোমাদের বাসায়।ঠিক আছে।
তনিমাঃ সত্যি কাল আমরা বাসায় যাবো।সবাই আমাদের মেনে নিবে?
রাসেলঃঠিক তাই জানটা আমার।(তনিমাকে জড়িয়ে ধরে)
দুইজন কিছুক্ষণ চুপচাপ রইল।
রাসেলঃজান
তনিমাঃ হুম
রাসেলঃআমাকে একটু আদর করতে দিবে?
তনিমা সাথে সাথে রাসেল কে ছেড়ে দাড়িয়ে বললো--
তনিমাঃযতদিন সবাই আমাদের মন থেকে মেনে না নেয় ততদিন কোনকিছু হবে না।বুঝতে পেরোছে মিস্টার জামাই।
রাসেল মুখটা কালো করে বললো-
রাসেলঃবিয়ে তো হয়ে গেছে এখন কেনো কষ্ট দিচ্ছো বলো।আমার তো তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করে তাই না।
তনিমাঃহ্যা হ্যা সব বুঝতে পারলাম কিন্তু সবকিছু মা-বাবা মেনে নিলে।এখন ঘুমাও তো মিস্টার জামাই।
রাসেলঃআচ্ছা ঠিক আছে(মুখটা কালো করে)কিন্তু জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে তো আর সমস্যা নাই।
তনিমাঃওওওম....আচ্ছা ঠিক আছে।বাট নো দুষ্টুমি ওকে।
রাসেলঃওকে মেরি জান।
তারপর দুইজন জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো।
আরিশ আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি।লজ্জায় নিজের শাড়ি খামচে ধরি।অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করার পরও কিছু হচ্ছে না আর পাশে কেমন শব্দ হচ্ছে তা শুনে চোখ খুলে যা দেখি তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না(তাহিয়া মনে মনে)
তাহিয়াঃএকি আপনি কিটকেট খাচ্ছেন যে,তাহলে আমি এটা খাওয়ার শব্দ পাচ্ছিলাম।
আরিশঃকেনো আমি তো বললাম মুখে এখনো লবনের স্বাদ লেগে আছে আমার তাই মিষ্টি খাচ্ছি।
তাহিয়াঃওহ।
আরিশঃ হুম।
উনি কিটকেট খাচ্ছেন আর আমি শুধু কিছু না কতকিছু ভাবছিলাম। I hate my mind.(তাহিয়া নিজেই কথাগুলো ভাবতে লাগলো)
হটাৎ তাহিয়া নিজের পায়ে ঠান্ডা কিছু অনুভব করতেই পায়ের দিকে তাকালো--
তাহিয়াঃকি করছেন আপনি?আমার পা ছাড়ুন।
আরিশঃএকদম নরবে না পায়ে ব্যাথা পেয়েছো ঔষুধ লাগাতে হবে।তাই চুপ করে বসো আর আমাকে আমার কাজ করতে দেও।আর নিরব যখন দেখছিলো তখন তো মানা করো নি।
তাহিয়াঃআর ইউ জেলাস?
আরিশঃচুপ করে বসবে তুমি(রাগী লুক নিয়ে)।
এই বলে আরিশ ঔষুধ লাগানো শুরু করলো।তাহিয়ার যেন অন্যরকম লাগছে তার অনুভূতিগুলোকে।আরিশের ছোয়াতে তাহিয়া কেপে কেপে উঠছে।আর আরিশ আড়চোখে দেখছে তাহিয়ার অবস্থা ভালোই উপভোগ করছে আর ঠোঁট কামড়ে হাসছে।
আরিশঃহয়ে গেছে স্টুপিট গার্ল।
তাহিয়াঃকি বললেন আপনি আমি ষ্টুপিড আর আপনি যে মিস্টার অসভ্য,বজ্জাত লোক,আস্ত খাটাশ।
আরিশঃকি বললে তুমি?
তাহিয়াঃকিচ্ছু না।
(বলেই বালিশ নিয়ে সোফায় যাওয়ার জন্য উঠে।তখনই আরিশ তাহিয়ার হাত ধরে ফেললো)
আরিশঃকোথায় যাও?
তাহিয়াঃকেনো ঘুমাতে।
আরিশঃখাটে শুতে পারো।তবে আমাকে বিরক্ত করবে না।চুপচাপ ওই পাশে শুয়ে পরবে।
তাহিয়াঃআপনার শরীর ঠিক আছে তো?
আরিশঃমানে কি,আমার আবার কি হবে?বেশি বকবক না করে ঘুমিয়ে যাও।
তাহিয়াঃওকে।
তাহিয়া তাদের মাঝখানে একটা কোলবালিশ রেখে দেয়।আরিশ তা দেখে ভ্রু কুচকায় কিন্তু কিছু বলে না।
তূর্য তার মায়ের রুমের দিকে যায় আর শুনতে পায় তার মা,বাবা কি নিয়ে যেন কথা বলছে আর আফসানা রহমান কান্না করছে আরমান রহমান তাকে সান্তনা দিচ্ছে।
তূর্যঃ বাবা,মা আসবো?
আরমানঃআরে বাবা ভিতরে আয় অনুমতি নেয়ার কি আছে।তা তুই এই সময় ঘুমাস নি।
আফসানাঃতূর্য তোর মুখটা কেমন শুকনো লাগছে কি হয়েছে?
তূর্যঃআমার বোনদের কথা খুব মনে পড়ছে।দুইটা বোন একসাথে দূরে চলে গেলো।আর তাহিয়া তো এখনো অনেক ছোট মাত্র তো মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করলো।বিয়ের বয়সও তো হয়নি।
আরমানঃ হুম আমরাও সেটা নিয়ে ভাবছি।কি করে সামলাবে সবকিছু।
আফসানাঃনতুন যায়গায় সবার সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে তো আমার ছোট মেয়েটা।
(বলেই আবার কান্নার বেগ বাড়িয়ে কান্না করতে লাগলো)
তূর্যঃআমরা নিজেদের মান-সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের ছোট্ট পরীটার উপর অন্যায় করি নাই তো।
আর তাহিয়া আরিশকে আগে থেকেই তেমন একটা পছন্দ করে না,আমি কি খুব বড় ভুল করে ফেললাম।সব জেনেও বোনটাকে এভাবে বিয়ে দেয়া ঠিক হলো না।(তূর্য মনে মনে ভাবলো)
আরমানঃআচ্ছা তূর্য তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পর অনেক রাত হয়ে গেছে।
তূর্যঃঠিক আছে বাবা।তোমারাও ঘুমিয়ে পড়ো আমি আসছি তাহলে।
রাত ২টা আরিশ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।তখনই তার মোবাইলে একটা মেসেজ আসলো।সে বিরক্তি নিয়ে মোবাইলের দিকে তাকালো।না চাইতেও মেসেজ চেক করলো।
মেসেজ দেখার সাথে সাথে আরিশের মুখের রং বদলে গেলো।সে মোবাইলটা পুনরায় টেবিলে রেখে বেলকনির দরজায় দাড়ালো।কিছুসময় পর সে তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে এক রহস্যময়ী হাসি দিলো।তারপর সে তাহিয়ার অপর পাশে শুয়ে পরলো।
সকালে,
আরিশের ঘুম ভেঙে যায়।সে দেখে তাহিয়া বাচ্চাদের মত তার বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।আরিশ মাথা হালকা উঠিয়ে দেখে কোলবালিশ নিচে পরে আছে।তারপর সে তাহিয়াকে ছেড়ে উঠে বসে।সে দেখে তাহিয়ার শাড়ির আচল এলোমেলো যার দরুন তাহিয়ার কোমরটা উম্মুক্ত,ডান পায়ের হাটুর উপরে শাড়ি উঠে আছে।না চাইতেও আরিশের চোখ তাহিয়ার দিকে চলে যাচ্ছে যা তাকে খুব টানছে।আরিশ তারাতাড়ি করে তাহিয়ার শাড়ি ঠিক করে দেয়। তাহিয়ার মুখের উপর কিছু অবাধ্য চুল তাহিয়ার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে সেটা দেখে আরিশ চুলগুলো তাহিয়ার কানে পিছে গুজে দিলো।
আরিশ আয়নার দিকে তাকিয়ে,না আমি তাহিয়ার প্রতি দূর্বল হলে চলবে না।আমাকে আরও শক্ত হবে।এই বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আরিশ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে তাহিয়া গোমড়া মুখ করে বসে আছে।তা দেখে আরিশ বললো--
আরিশঃস্টুপিট গার্ল কি হয়েছে।গোমড়া মুখ করে বসে আছো কেন?
তাহিয়াঃআমি আজ মা-বাবার কাছে যাবো।তাদের কথা খুব মনে পড়ছে।
আরিশঃওকে নিয়ে যাবো।
যাক ভালো মিস্টার অসভ্য রাজি হয়েছে না হলে তনিমা আপুর সাথে দেখা হত না।(তাহিয়া মনে মনে)
আরিশঃকি ভাবছো ইডিয়ট
তাহিয়াঃকই কিছুনা তো।আর ইডিয়ট,ষ্টুপিড কেমনে হই আমি?
আরিশঃতাহলে আমি মিস্টার অসভ্য,বজ্জাত,খাটাশ কেমনে হই?তুমি যানো অসভ্য,বজ্জাত,খাটাস কাকে বলে?আমি তোমায় শিখিয়ে দিবো ঠিকাছে।
আমার দিকে এগুতে এগুতে কথাগুলো বললো সাথে তার ঠোঁটের কোণে সে মারাত্মক বাকা হাসি যা যে কাওকে ঘায়েল করতে সক্ষম।
তাহিয়াঃআরে মা আপনি এতো সকালে কিছু লাগবে।
আরিশ পিছনে তাকালে আমি এক দৌড় ওয়াশরুমে,আমাকে আর পায় কে।আরিশ বুঝতে পেরে খুব জোরে হেসে উঠলো
আমি ৩দিন পর দেশে আসছি.......
চলবে..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com