Breaking News

যে পাখি ঘর বোঝেনা । পর্ব - ০১

মাহির আমি তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছি"

কথাটি বলেই নাদিয়া মাথা উচু করে মাহিরের দিকে তাকালো।চোখ দুটো ছলছল করছিল নাদিয়ার,যেন এখনি বৃষ্টি নামবে।
-- কি?আমার বাচ্চার মা হতে চলেছো মানে?
-- কেন তুমি আমার কথা বুঝতে পারছো না?
-- না মানে বুঝব না কেন? কিন্তু এখনি বাচ্চা!
-- কেন মাহির?আমরা তো একে অপরকে ভালোবাসি,আর সবচেয়ে বড় কথা আমাদের তো বিয়ে করার কথা মাহির।চলো না আজকেই আমরা বিয়ে করে ফেলি।
-- বিয়ে আজকে?
-- হ্যাঁ আজকে।তুমি চাও না আমাদের সন্তানকে স্বীকৃতি দিতে?
-- বাচ্চা যেহেতু আমাদের তাহলে চাইবো না কেন?
আচ্ছা শোনো না তুমি একদম চিন্তা করো না,আমি বাসায় কথা বলে দেখি, তারা রাজি হলে ভালো আর যদি না হয় আমরা নিজেরাই বিয়ে করে নেব।এবার খুশি আমার পাগলীটা?

-- কি হলো খুশি না আমার পাগলীটা?
-- হুম খুশি,আমি কিন্তু শুধু তোমাকেই চাই মাহির।
-- ঠিক আছে কান্না করতে হবে না,আমি তো তোমারই তাই না??
-- হুম।
-- আচ্ছা শোনো আমি তোমাকে বিকেলে জানিয়ে দিব সবকিছু।
নাদিয়া হ্যাঁসূচক মাথা নাড়িয়ে মাহিরের সামনে থেকে চলে যায়।
" শীট,এটা হওয়াই বাকি ছিল!এখন এটাই আমার জীবনের বড় ফল্ট হয়ে দাঁড়ালো,কিছু একটা করতেই হবে" মাহির মাটিতে একটা লা/থি দিয়ে কথাগুলো বলে নিজেও অন্যদিকে চলে যায়।

-- দোস্ত, কাহিনী তো ঘটে গেছে।(মাহির)
-- কেন কি হয়েছে?(পিয়াস)
-- নাদিয়া প্রেগন্যান্ট।
-- বাহ, বন্ধু আমার বাবা হতে চলেছে!(মাহদি)
-- মজা করিস না তো।কি করব সেটা বল,চিন্তা হচ্ছে খুব।
-- কি করতে চাইছিস?(পিয়াস)
-- আমার কোনভাবেই এখন বিয়ে করা সম্ভব না।
-- প্রেম তো ঠিকই করেছিস,আবার প্রেমিকা প্রেগন্যান্ট। বিয়ে করে নে (মাহদি)
-- মজা করিস না।বিয়ে করলেও সমস্যা আবার আমি যদি এখন বলি আমি বিয়ে করব না তাহলে আমার বাবার সম্মান কতখানি নষ্ট হবে একবার ভেবে দেখ!এই ব্যাপার নিয়ে জলঘোলা হলে বাবার সম্মানের সাথে আমিও শেষ হয়ে যাব।

-- তাহলে কি করতে চাইছিস?(পিয়াস)
-- সেটাই জানতে চাইছি তোদের কাছে।
-- লুকিয়ে বিয়েটা করে রাখ,কাক পক্ষিতেও টের পাবে না।
-- নাদিয়াকে বিয়ে করা কি ঠিক হবে,তবে একটা কথা কি জানিস মেয়েটা আমাকে খুব ভালোবাসে।
-- তাহলে তো আর কোন কথাই নেই,বিয়েটা করে নে,বাকিটা আমরা ঠিক করে নেব।(পিয়াস)
-- কিন্তু কিভাবে কি করব?(মাহির)

-- তাহলে শোন (..........................)(মাহদি)
-- যাহ,আমি রাজি।ধরা পড়া যাবে না কিন্তু মনে রাখিস।আমি তাহলে আগাম এগিয়ে রাখি কাজটা কি বলিস?(মাহির)
কথাটি বলে হোহো করে হেসে ওঠে তারা।
মাহির তাদের অন্য বন্ধুদের ফোন দিয়ে তাদের করা প্ল্যানে সামিল হতে বললে সবাই এক কথায় রাজি হয়ে যায়।

রাত ৮টা নাদিয়া একটা শাড়ি পড়ে,পায়ে নুপুর, কপালে টিপ(রুপক অর্থে),খোপায় বেলিফুলের মালা,পায়ে আলতা,হাতে চুড়ি,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, সুন্দর করে সেজে বের হয় মেস থেকে,বলতে গেলে একদম লুকিয়ে।মনে যেন তার খুশি ধরছে না,আজকে সে তার প্রিয় মানুষটিকে পেয়ে যাবে সারাজীবনের জন্য।মেস থেকে বের হয়ে হাটছে আর মাহিরের কথা ভাবছে।

অতঃপর পিছন থেকে একটা মাইক্রো এসে নাদিয়ার কাছে থেমে যায়,মাইক্রোর দরজা খুলে দেয় ভেতর থেকে।কেউ একজন নাদিয়াকে ডাক দেয়।
-- ভাইয়া আপনি?
-- হ্যাঁ চলুন আমাদের সাথে।
-- ঠিক আছে।
নাদিয়া সাত-পাঁচ না ভেবে খুশি খুশি গাড়িতে উঠে পড়ে।তার যে খুব তাড়াতাড়ি মাহিরের কাছে পৌঁছতে হবে,কেমন একটা উত্তেজনা কাজ করছে তার মধ্যে। এর আগে মাহিরের সাথে এত দেখা করেছে এরকমটা কখনও লাগে নি তার।অতঃপর তার যাত্রা শুরু হয় প্রিয় মানুষটির উদ্দেশ্যে।
-- রাত এগারোটা পর্যন্ত মাহির কাজি অফিসের সামনে অপেক্ষা করে,কিন্তু নাদিয়া আসে না,ফোন ও বন্ধ।মাহির পায়চারি করে আর ভাবে নাদিয়া কেন আসছে না,ওর কোন বিপদ হলো না তো!!

পরদিন সকালে.......
-- মা, আপু তো রাত থেকে ফোন ধরছে না।কি হলো বলো তো?আমি রাত থেকে ফোন দিয়েই যাচ্ছি,ফোন বন্ধ বলছে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না মা।
কথাটি বলতে বলতে ফোন হাতে বেরিয়ে আসে নোয়া।ফোন দিতেই থাকে তার বড় আপুকে।
-- কি বলিস!মেয়েটার তো আজকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল।ফোন কেন রিসিভ করবে না?(মা)
-- আমার কিন্তু ভীষণ চিন্তা হচ্ছে মা।
-- আচ্ছা চিন্তা করিস না নোয়া,বিকেল পর্যন্ত দেখ কি হয় ফোন না দিলে তোর বাবাকে বল গিয়ে ঘুরে আসতে নাদিয়ার ওখান থেকে।
-- আচ্ছা মা।

দুদিন কেটে যায় নাদিয়ার কোন খোঁজ মিলেনি এখনও।নাদিয়ার বাবা পুলিশকে জানিয়েছে কিন্তু কোন লাভ হয় নি তাতে।
এদিকে মায়ের মত নোয়া ও সারাক্ষণ তার বড় বোনের জন্য কান্নাকাটি করে।
সময়ের মত সময় যাচ্ছে কিন্তু নাদিয়ার খোঁজ কিছুতেই মিলছে না। এর মাঝে মাস পেরিয়ে গিয়েছে নাদিয়ার নিখোঁজ হওয়ার।নোয়া যেন তার বড় বোনের শূন্যতাটা খুব বেশি করে বুঝতে পারছে,তার মা ও যেন একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।আর যেন কোন আশাই বেঁচে নেই নাদিয়াকে খুঁজে পাওয়ার।
নাদিয়ার মেস থেকেও কল এসেছিল, নাদিয়ার সমস্ত জিনিসপত্র বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য,আর কতদিন এভাবে তারা রুম ফাঁকা রাখবে!তাই নাদিয়ার বাবা মেসে গিয়েছে সব জিনিসপত্র নিয়ে আসতে।

বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নোয়া বসে বসে নাদিয়ার জিনিসপত্র ছুয়ে ছুয়ে দেখেছে আর কান্না করেছে।
আজকাল একটু বেশিই মিস করে নাদিয়াকে।
নোয়া মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো তার বোন তো বাবার ইচ্ছে পূরণ করতে পারলো না,সে এবার ভর্তি হবে নাদিয়ার ভার্সিটিতে।বাবার ইচ্ছের সাথে নিজের ইচ্ছেও পূরণ করবে নোয়া।।
সব জিনিসপত্র ঠিক করে মা-বাবার কাছে গেল নোয়া।
-- ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কিছু বলবি মা?(মা)
-- মা,বাবা একটা কথা বলতে এলাম।।
-- হ্যাঁ বল (বাবা)

-- বাবা,আপু যেখানে পড়াশোনা করছিলো,প্লিজ বাবা আমাকে ওখানে ভর্তি করিয়ে দাও।আমি ওখানে পড়ব।
-- বড় মেয়েকে তো হারিয়েছি,এখন তুই আবদার ধরছিস ওখানে পড়ার জন্য?
-- হ্যাঁ বাবা,আমি পড়লে ওখানেই পড়ব।
-- নাদিয়ার মা,তোমার মেয়েকে বলে দাও আমি ওকে ওখানে পড়াবো না,আমি আমার আরেক মেয়েকে হারাতে পারব না।
কথাটি শুনে নোয়া অনেক বোঝায় বাবাকে,অতঃপর রাজি হতেই হয়।বাবার রাজি হওয়া দেখে নোয়ার মুখে হাসি ফুটে।

কিছুদিনের মধ্যে ভর্তি হওয়ার সব ব্যবস্থা করে ফেলে নোয়া।কলেজের বন্ধুবান্ধবগুলো ভালো কোথাও ভর্তি হলেও,সবার থেকে ভালো রেজাল্ট থাকা সত্ত্বেও নোয়া, তার ভালোবাসা,তার বোনের টানে তার ভার্সিটিতেই ভর্তি হবে।
নোয়ার মনে হয় সে এখানে ভর্তি হলে তার বোনের কাছাকাছি থাকতে পারবে,এই ভার্সিটির আনাচে কানাচে রয়ে গেছে তার বড় আপুর স্পর্শ। নোয়া তার বোনের স্পর্শের মধ্যেই বন্দী হয়ে থাকতে চায়।

ভার্সিটির প্রথম দিনে,গেইটের সামনে এসে দাঁড়াতেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে নোয়ার,এইখান দিয়েই নাদিয়া যাতায়াত করতো।নিচে তাকিয়ে ছলছল চোখে ভাবে আপু হয়তো এখানে নয়তো ওখানে পা রেখেই ভেতরে ঢুকতো!!তার মনটা যেন ডুকরে কেঁদে বলতে চায়,"কই চলে গেলি রে আপু!"
ধীরপায়ে ভেতরের দিকে এগিয়ে চলে নোয়া।

-- দোস্ত তাহলে তুই থাক,ঘুরাঘুরি কর,ক্লাস কর আমি যাই স্নেহা ফোন দিচ্ছে বারবার, দুদিন দেখা করি নাই,আজকে খুব প্যারা দিচ্ছে।(পিয়াস)
-- যা যা,তোদের কপালে মেয়েও আসে,আমার কপাল সারাজীবন ফাঁকা থাকে,চাইলেও পার্মানেন্ট রাখতে পারি না।(মাহির)
-- তোর কপালে মাইয়া ঠিকই আসে ভাই,তুই রাখতে জানিস না,এখন দেরি হয়ে যাচ্ছে, থাক গেলাম।(পিয়াস)
-- যাহ,বিকেলে দেখা করিস কিন্তু।

পিয়াস চলে যাওয়ার সাথে সাথে মাহিরের চোখ পড়ে তার থেকে দশ/বারো কদম দূরের দুটি চোখের ওপর।আহ্ কি দারুণ মায়াবী দুটো চোখ।মায়াবী চোখের অধিকারিণী কারও সাথে কথা বলছে সামনে আরেকটা মেয়ে দাঁড়িয়ে, তাই শুধু পাশ থেকে চোখ দেখা যাচ্ছে।
মাহিরের যেন নেশা লেগে যায়,এই প্রথম তার শরীর টলছে,মায়াবী চোখের অধিকারিণীকে দেখতে ইচ্ছে করছে।আজ যেন মাহিরের এই মায়াবতীকে দেখতেই হবে,নইলে রাতে চোখ দুটি খুব জ্বালাবে,,মাহির সবকিছু ভুলে সামনের দিকে এগোতে থাকে......

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com