Breaking News

যে পাখি ঘর বোঝেনা । পর্ব - ০২

চোখগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে, সেই মায়াবতী উল্টো দিকে হাটা শুরু করে দেয়।

মেয়েটির পিছু নিয়ে হাটা শুরু করে মাহির,কিছুদূর গিয়ে বুঝতে পারে মেয়েটা নতুন, প্রথম বর্ষের।
আর এগিয়ে না গিয়ে নিজের কাজে চলে যায় মাহির।
মেয়েটা পিছন ফিরে তাকায়,এতক্ষণ যে একজন তাকে অনুসরণ করছিলো এটা সে বেশ বুঝেছিলো।
মাহিরকে ফিরে যেতে দেখেই গোলাপি ঠোঁট দুটোয় মুচকি হাসির রেখা দেখা দেয়।
ধীরপায়ে নতুন বন্ধুটির সাথে ক্লাসে চলে যায় নোয়া।
মাহির এতক্ষণ যে মেয়েটিকে অনুসরণ করেছিলো সে আর কেউ নয়,সে হচ্ছে নোয়া।

নোয়া আর অবনী দুজন ক্লাসরুমে বসে কথা বলছিলো,দুজনের আগে থেকে তেমন পরিচয় নেই,ভর্তির দিনে দুজনের পরিচয়,সেদিন থেকে মুঠোফোনে টুকটাক কথা হয়েছিল, আর সেখান থেকেই বন্ধুত্ব।
-- আচ্ছা আমাদের তো বাসা খুঁজতে বের হতে হবে, ক্লাস শেষ করেই বেড়িয়ে পড়ি তাই না?(অবনী)
-- আমিও তাই ভাবছিলাম,ক্লাস শেষ করে বের হবো।কোনদিকে গেলে বাসা পাওয়া যেতে পারে বল তো, নাকি ভার্সিটির হোস্টেলে উঠবি?(নোয়া)
-- না না বাসা নেব, হোস্টেলে থাকতে পারব না।হোস্টেলে থাকা খুব ঝামেলা।(অবনী)
-- আমিও সেটাই শুনেছিলাম।আচ্ছা তাহলে ক্লাস শেষ করে দুজন বেড়িয়ে পড়ি,কি বলিস?
-- হ্যাঁ। তুই কবে থেকে বাসায় উঠবি?
-- বাসা পেলেও তো মাসের প্রথম থেকেই উঠতে হবে।
-- হুম,কিছুদিন নিজের বাসা থেকেই ক্লাস করতে হবে হয়তো।
-- হুম।

ক্লাস শেষ করে দুপুরের দিকে নোয়া আর অবনী দুজন বের হয় বাসা খোঁজার উদ্দেশ্যে। দুজন পাশের রাস্তায় ঢুকে যায়।দুজন হাটছে এমন সময় অবনীর বাবা অবনীকে ফোন দেয়।
-- হ্যাঁ বাবা!

-- আচ্ছা বাবা আমরা তাহলে অপেক্ষা করছি,তুমি এসো।
অবনী তার বাবাকে লোকেশন বলে দেয় আসার জন্য।
-- কি বলে আঙ্কেল? (নোয়া)
-- এখানে বাবার কোন যেন বন্ধুর বাসা,একরুম নাকি ফাঁকা আছে,বাবা কথা বলেছে।আমাদের নিয়ে যেতে চাইছে,বাসা দেখাতে তাই আসছে এখন।
-- আঙ্কেল ফ্রি আছে?
-- মেয়ের জন্য ফ্রি থাকবে না?
-- না মানে অনেক সমস্যায় থাকতে হয় যে তাই বললাম।আমার বাবার বাহিরে তেমন কোন কাজ নেই।আচ্ছা যাই হোক চল গিয়ে টঙে গিয়ে, এক কাপ চা খাই।
-- দুপুর সময় চা?

-- রেস্টুরেন্টে তো ছেড়ে এসেছি, এখানে এটাই আছে চল তো।
অবনী নোয়াকে টেনে নিয়ে চলে গেল। দুজনে বসে গল্প করছে। এমন সময় টঙের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু ছেলে তাদের কাছে এলো।
--
-- দুটো মেয়ে একা একা ভরদুপুরে টঙে বসে কি করো? তার চেয়ে চলো একসাথে আড্ডা দেই, মজা করি তোমাদেরও ভালো লাগবে আর আমাদের ও।তাই না রে,কি বলিস সবাই?
-- জ্বী ভাই।
-- দুটো মেয়ে আবার একা একা হয় কিভাবে?(অবনী)
-- মেয়ে দেখে চলে আসছেন তাই না?মেয়ে দেখলে তো আপনাদের আসতেই হবে!কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।(নোয়া)

-- এই..
খুব বড় বড় কথা তাই না?দেখাচ্ছি মজা, এই রাফিনকে গাড়ি নিয়ে আসতে বল তো দুইডারেই আজ মজা দেহামু।(এরকম ভাষা ব্যবহার করতে হতে পারে মাঝেমধ্যে)
-- গাড়ি তোদের আনতে হবে না,আমাদের গাড়িই আসছে,তুই শুধু অপেক্ষা কর।(অবনী)
দুইটা ছেলে অবনী আর নোয়ার হাত ধরতে গেলেই পিছন থেকে কারও গলা শুনতে পেয়ে থেমে যায়।
"যে হাত দিয়ে ধরবি সেই হাত কে/টে বাড়িতে পারসেল করে পাঠিয়ে দেব"
কথাটি শুনেই সবাই পিছনে তাকায়।
-- আরে ভাই আপনি এখানে?(বখাটেদের মধ্যে একজন)
-- কেন না আসলে সুবিধা হতো মেয়ে দুটোকে নিয়ে যেতে?
-- না না ভাই, মেয়ে দুটো একা বসে ছিল তাই ভাবলাম কিছু প্রয়োজন কি না, এজন্য এসেছিলাম।আমরা এখনই চলে যাচ্ছি ভাই,চলে যাচ্ছি।

-- চিনে রাখ, এই দুইজনকে চিনে রাখ, এদের আশেপাশে যদি তোদের একবারের জন্য আমি দেখেছি, তাহলে বুঝতেই পারছিস কি অবস্থা করব।
-- স্যরি ভাই আর হবে না।
ছেলেগুলো চলে গলে, নোয়া বুঝতে পারে এটাই সেই ছেলে যে সকালে তাকে দেখছিলো।
-- আপনারা কি নতুন এখানে?(মাহির)
-- হ্যাঁ প্রথম বর্ষে আজকে প্রথম ক্লাস ছিলো, আর এদিকে বাসা খুঁজতে বের হয়েছিলাম।(অবনী)
-- আচ্ছা দুজনেই?
-- হুম। (নোয়া)
-- কোন সাহায্য লাগলে বলতে পারেন, কোনভাবে সাহায্য করতে পারি?(মাহির)
-- না আসলে আমার বাবা আসছে, হয়তো চলেও আসছে প্রায়। (অবনী)
-- আচ্ছা ঠিক আছে,বসুন তাহলে।

"আচ্ছা এই মেয়েটাকে দেখে আমার এমন লাগছে কেন! মনে হচ্ছে শ্বাস প্রশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে, কথা বলতে গিয়ে কন্ঠস্বর কাপছে, গলা ভারী হয়ে আসছে, তার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে কেন পারছি না! আমার তো কখনো এরকম হয় না, তবে কি আমার আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামবে!!
বুকে হাত দিয়ে কথাগুলো ভাবছে মাহির।
-- আপনি কি আমাদের ভার্সিটির?(নোয়া)
-- উম....হ্যাঁ? কিছু বললেন?
-- বলছি আপনি কি আমাদের ভার্সিটির?(নোয়া)
-- হ্যাঁ, ফাইনাল ইয়ারের।
-- তাহলে তো ভালোই হলো।(নোয়া)
-- কেন ভালো হলো?(মাহির)
-- না মানে কোন প্রয়োজনে আপনাকে পাশে পাওয়া যাবে।(নোয়া)
-- হ্যাঁ তা তো অবশ্যই।

-- আপনার নম্বরটা তাহলে রেখে দেওয়া উচিৎ। (অবনী)
-- হ্যাঁ চাইলে রেখে দিতেই পারেন।
-- নিন তুলে দেন নম্বরটা। (অবনী মাহিরের দিকে নিজের ফোনটা এগিয়ে দিলো)
-- আঙ্কেল!(নোয়া)
-- ওহ বাবা চলে এসেছো? (অবনী)
-- হ্যাঁ, এখানে বসে আছো!আরে মাহির বাবা যে,তুমি এখানে??(অবনীর বাবা)
-- আসসালামু আলাইকুম স্যার,কেমন আছেন?
-- ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
-- বাবা কি হয়েছে জানো!
কথাটা বলেই অবনী তার বাবাকে সব বলা শুরু করলো।
-- Well done my son.(মাহিরের পিঠ চাপড়িয়ে কথাটি বললেন অবনীর বাবা)
-- সত্যি আঙ্কেল,উনি ঠিক সময় না এলে একটা ঝামেলা বেধে যেত।(নোয়া)
কিছুক্ষণ কথা চলল সবার মাঝে, আর এই সময়ে মাহির কথার ফাঁকে ফাঁকে নোয়াকে দেখার সুযোগ হাত ছাড়া করে নি।

অবনীর বাবা নোয়া আর অবনীকে গাড়ি করে নিয়ে গিয়ে বাসা ঠিক করে দেয়, বাসা যেহেতু খালি আছে তাই দুই একদিনের মধ্যেই চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলো দুজন।
দুইদিন নোয়া আর অবনীর দুজনের কারও ভার্সিটিতে হয়নি। কারণ বাড়ি থেকে জিনিসপত্র নিয়ে এসে রুম গোছানো অনেক ঝামেলার কাজ আর সময়ের ব্যাপার। জানালায় পর্দা লাগাতে গিয়ে নোয়া খেয়াল করে বাহিরে রাস্তায় মাহির দাঁড়িয়ে পায়চারি করছে। একবার এদিক যাচ্ছে তো আরেকবার ওদিক যাচ্ছে একবার উপরে দোতলার দিকে তাকাচ্ছে যেখানে নোয়া আর অবনী রুম নিয়েছে। মাহিরের থেকে কিছুটা দূরে তার বন্ধুরা বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে।

মাহির এবার দোতলায় কারো দেখা না পেয়ে তার বন্ধুদের কাছে চলে গেল।
-- অবনী এইদিকে আয় দেখ তো কি হয়েছে! আরেকদিনের ওই মাহিরকে দেখছি, নিচে পায়চারি করছে।
-- কই কই দেখি কোথায়?
-- ওইযে দেখ ওদিকে চলে যাচ্ছে তাও বারবার পিছনে ফিরে তাকাচ্ছে।
-- আমি প্রথম দিনেই বুঝেছি ডাল মে কুচ কালা হে।
-- কি বুঝেছিস?

-- আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র ভাই মাহির হয়তো আমার বান্ধবীর প্রেমে পড়েছে। এই দুই দিন দেখতে পায়নি আর সে যেহেতু সেদিন আমাদের সামনে এসেছিল তো পিছু নিয়ে দেখেছে আমরা এই বাসায় উঠেছি।
-- কি যে বলিস না! উনি কেন আমার প্রেমে পড়বে?
-- শোনো আমি বাচ্চা না আমি সবকিছু বুঝি তার জন্যই তো আমি উনার নম্বরটা রেখে দিয়েছি।
-- তুই ও না!!
জানালায় পর্দা টেনে দুজন হাসতে হাসতে আবার কাজে হাত দেয়, কারণ রুম এরকম অগোছালো থাকলে কারও ভালো লাগবে না।সারাদিনের মধ্যে সব ঠিকঠাক করতে হবে।

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com