যে পাখি ঘর বোঝেনা । পর্ব - ০৬
কে রে এটা? আমার তো এবার মনে হচ্ছে এটা মাহির না।(অবনী)
-- যাই বলিস ভালো লিখেছে।
-- কি হচ্ছে আমার সাথে এগুলো!
-- আমাকে কেন কেউ এভাবে লিখে না রে!
-- খুব ইচ্ছে হচ্ছে পাওয়ার তাই না?এমন মাইর দেব না..........
-- আমি এই রাতের বেলায় তোমার সাথে কিভাবে যাব বল? (তায়্যিবা)
-- তুমি আমাকে ভালোবাসো না? আমার তো সমস্যা হচ্ছে না, তাহলে তুমি কেন এমন করছো?(আরিশ)
-- না আরিশ এটা সম্ভব না, আমার তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।(তায়্যিবা)
-- তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন বুঝতে পারছো না কেন তুমি? তুমি কি আমায় ভালোবাসো না?আমার কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছো না!(আরিশ)
-- তোমাকে তো বলেছি আমি, তুমি আমার বাসায় বিয়ের কথা বলো তোমার বাবাকে দিয়ে সেটা তো করছো না।(তায়্যিবা)
-- ধ্যাত সবসময় বিয়ে বিয়ে কর কেন?
-- তো কি করব? বিয়ে করবি না অথচ বারবার তোর সাথে সময় কাটানোর জন্য ফোর্স করবি তাই না? আজকের পর থেকে তুই আমার সাথে যোগাযোগ করবি না। আর যদি যোগাযোগ করারই থাকে তাহলে একেবারে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবি।(তায়্যিবা)
-- তোর মতো মেয়েকে বিয়ে করার জন্য আমি ম/রে যাচ্ছি তাই না!
-- তার মানে?এগুলো টাইম পাস?
-- হ্যাঁ তোর মতো মেয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করা যায় বিয়ে করা যায় না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর তোর দেমাগ আমি বের করছি।
(আরিশ)
এই বলে আরিশ কাউকে কল দিয়ে আসতে বলতে থাকে, আরিশের এমন রুপ দেখে তায়্যিবা ভয় পেয়ে যায়। কি করবে বুঝতে না পেরে আরিশের কাছে থেকে দৌড় দেয় নিজেকে রক্ষা করতে।
এমন সময় আরিশ ও তায়্যিবার পিছনে দৌড়ে যায়, যেমন করেই হোক এই পাখিটা আজকে হাত ছাড়া করা যাবে না।
-- আমরা কিন্তু এখন নুডলস খাবো রান্না করে বুঝেছিস?(অবনী)
-- আমি আগে গিয়ে ফ্রেস হবো দেখ তো পা পিছলে পড়ে গিয়ে কি হয়েছে!(নোয়া)
-- আচ্ছা আমিই রান্না করব আজকে, চল।
-- এই না হলে আমার বন্ধু
দুইজন হাত ধরে হাত নাড়িয়ে হেটে চলেছে। পিছন থেকে কেউ অনুসরণ করছে বুঝতে পেরে নোয়া দাঁড়িয়ে যায়।
সাথে সাথে পিছন পিছন আসা পায়ের শব্দ ও থেমে যায়, আবার দৌড়ে চলে যাওয়ার শব্দও পাওয়া যায়।
-- কি রে কি হলো?(অবনী)
-- আমাদের কেউ অনুসরণ করছে।(নোয়া)
-- তাড়াতাড়ি বাসায় চল, রাতে অনেকেই খারাপ মস্তিষ্ক নিয়ে বের হয়,চল তাড়াতাড়ি। (অবনী)
অবনী নোয়ার হাত ধরে নিয়ে তাড়াতাড়ি হেটে চলে। কিছুক্ষণ পর আবার শব্দ পাওয়া গেলে নোয়া আর অবনী লুকিয়ে পড়ে।
কিন্তু পরে আর কারও উপস্থিতি টের পাওয়া যায় না। তাই নোয়া আর অবনী দ্রুত গতিতে বাসার দিকে রওয়ানা দেয়।
এদিকে তাদের পিছনে আবার কাউকে দেখা যায়, দুজনকে দেখে তার চোখেমুখে হাসির আভা দেখা দেয়।
মাহির রুমে শুয়ে শুয়ে নোয়ার ছবিগুলো আর ভিডিও দেখছিলো। নোয়াকে দেখলেই যেন মাহিরের মনে ভালোবাসার ঢেউ বয়ে চলে।উথাল-পাথাল ঢেউয়ে ভাসিয়ে নিয়ে চলে তাকে। মাঝে মাঝে শীতল হাওয়া প্রকৃতিকে ঠান্ডা করে দিলেও তার ভালোবাসার উষ্ণতা শেষ হয় না।
বুকে তীর নিক্ষেপ করা হাসি তাকে বারবার নোয়ার কাছে টানছে।ছবিটা বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে যায় সে। এ ভালোবাসা যেন শেষ হবার নয়। এর যাত্রা যেন অনন্তকালের।
এক গোলির ভাঙা বাড়িতে মানুষের হট্টগোল। পুলিশ লাঠিচার্জ করে মানুষকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। পাশে দাঁড়িয়ে যাকে খু/ন করা হয়েছে অর্থাৎ আরিশের মা বাবা কান্নাকাটি করছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে মাহির আর তাদের বন্ধুরাও চলে এলো। মাহির যেহেতু বড় রাজনীতিবীদ এর ছেলে সেই সূত্রে সে সবার সাথে পরিচিত। তাকে দেখে পুলিশ অফিসার সামনে এগিয়ে এলো।
-- স্যার আপনি এখানে! (পুলিশ)
-- যার কেস তদন্তে এসেছেন সে আমার বন্ধু। আপনি যেভাবে পারেন কে এই কাজ করেছে তাকে খুঁজে বের করুন।
-- স্যার তদন্ত চলছে, লা/শ নিয়ে যেতে হবে, পোস্টম/র্টেম করে দেখতে হবে কোন কিছু পাওয়া যায় কি না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্ট করব স্যার।
-- কে এই কাজ করেছে তাকে আমার চাই, চাই মানে চাই।(মাহির)
-- জ্বী স্যার, আপনি কোন চিন্তা করবেন না।
-- আচ্ছা আপনি কাজ করতে পারেন এখন......
এই জুবায়ের....
-- হ্যাঁ বল।
-- ওর জিএফ শোনেনি আরিশের কথা?
-- হ্যাঁ, ওই যে পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। বেচারি কান্না থামাতেই পারছে না।
-- আচ্ছা থাক এখানে আমি ওর কাছে থেকে আসছি।
মাহির সবাইকে রেখে তায়্যিবার কাছে গেল।
-- তায়্যিবা?
-- হ্যাঁ ভাইয়া! ( তায়্যিবা মাহিরকে দেখে চুপ হয়ে গেল)
-- আরিশকে কে এমন করতে পারে তোমার কাউকে সন্দেহ হয়? কারণ তুমি ওকে আমাদের চেয়ে এখন বেশি জানো বলতে গেলে।
-- ভাইয়া কি করে যে বলব......
-- বলো সমস্যা নেই।
-- আমি কালকে রাতে ওর সাথে দেখা করি,দুজন অনেকটা সময় পার করি তারপর আমি বাসায় চলে যাই। আমি যদি জানতাম এরকম কিছু হবে তাহলে তো আমি ওকে ছেড়ে যেতাম না..........
কথাটি বলেই তায়্যিবা কান্না করে দেয়। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে দেখে মাহির তাকে শান্ত হতে বলে বন্ধুদের কাছে ফিরে যায়।
এতক্ষণে আরিশের মৃ/তদেহ নিয়ে যায় পোস্টম/র্টেম করার জন্য।
-- নোয়া আজকে আমাদের খাওয়াবে।(অবনী)
-- আমি কেন?
-- কারণ আমি বলেছি তাই।
-- তুই খাওয়া তাহলে তোর এত ইচ্ছে হলে।
-- আরে সবাই চুপ যা, আজকে আমি খাওয়াবো।(মেহের)
-- হ্যাঁ আজকে মেহের খাওয়াবে,কারও চাও নিতে হবে না।( সাদমান)
ক্লাস শেষে সবাই রেস্টুরেন্টে এসেছে খেতে। মেহের সবার জন্য অর্ডার দিয়েছে। খাবার আসতে প্রায় দশ মিনিট সময় লাগবে। সবাই বসে বসে গল্প করছে,হাসিঠাট্টা করছে।
এমন সময় অবনীর চোখ যায় বাহিরে। অবনী নোয়াকে ধাক্কা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকাতে বলে, ততক্ষণে মাহির আর তার বন্ধুরা ভেতরে চলে আসছে।
তাদের একই রেস্টুরেন্টে দেখে নোয়া একটু অবাক হয়।
-- আচ্ছা মাহির কি আমাদের অনুসরণ করে এখানে এসেছে?(নোয়া)
-- কি জানি বুঝতে পারছি না।
-- আরে আমার ভাইয়া এখানে! নোয়া তুই তো আমার ভাইয়াকে চিনিস না তাই না?অবনী চেনে,দাঁড়া তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।(মেহের)
-- আরে না না থাক,দেখ না বন্ধুদের সাথে এসেছে ডাকিস না। অন্য একদিন পরিচয় করিয়ে দিস।(নোয়া)
নোয়া অবনীকেও ধাক্কা দিয়ে বলতে বলে।
-- হ্যাঁ হ্যাঁ আজকে আর এখানে ডাকতে হবে না বাদ দে।( অবনী)
-- আরে কিছু হবে না।
মেহের কারও কথা না শুনে মাহিরকে ডাক দেয়। নোয়া কপালে হাত দিয়ে মুখ ঢাকার বৃথা চেষ্টা করছে আর অবনীর দিকে তাকিয়ে মুখটা বাঁকা করে বসে আছে।
মেহের তার ভাইকে অর্থাৎ মাহিরকে ডাকলে দলে অবনী আর নোয়াকে দেখে এগিয়ে আসে।
-- ডাকছিলি কেন?(মাহির)
-- আমার নতুন ফ্রেন্ডদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। দেখ এটা নোয়া আর এটা অবনী।
-- হ্যালো ভাইয়া.....(নোয়া আর অবনী দুজনে একসাথে বলে ওঠে)
-- হাই, আচ্ছা তোরা খাওয়া দাওয়া কর। আমরা একটু সমস্যায় আছি, পরে কথা হবে।
কথাটি বলেই মাহির চলে যায়। নোয়া আর অবনী একে অপরের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়, মাহির কোন কথা বলল না!!!
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com