আইসিটি স্যার যখন বর । পর্ব - ২৫
রাহাতঃওইখান থেকে চলে আসার সময়, বাবা মা তোমরা এখানেই থাকো এদিকটা একটু সামলাও আমি ফারহাকে নিয়ে তারপর আসবো।
রাহাতের মাঃ কিন্তু হয়েছেটা কি?
রাহাতঃ মা এখন এতো বলার সময় নাই এসে তারপর সব বলবো।
রাহাত আর একমিনিট ও দেরি না করে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে।
জাহিদঃ ফারহা জানেমান তোমায় আজকে এখানে কেন তুলে নিয়ে এসেছি জানো? আচ্ছা তুমি বলো তো দেখি কেন নিয়ে এসেছি?
ফারহাঃ যাই করতে নিয়ে আসিস না কেন তুই কখনো সফল হবি না।
জাহিদঃ পারবা না? রাগ করতেছ কেন পারবা এইটা বলেই তো হয়। আচ্ছা শুনো তাহলে আমি বলি, তোমার তো বিয়ে করার অনেক ইচ্ছা তাই না? তুমি আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র ঘৃণাযুক্ত ভালোবাসার মানুষ। আমি কি তোমার ইচ্ছাকে মূল্য না দিয়ে পারি? তাই আজকে আমি তোমার ইচ্ছার মূল্য দেওয়ার জন্য তোমায় বিয়ে করবো। দেখো আমি তোমায় কত্ত ভালোবাসি কিন্তু তুমি কেন আমায় বুজো না?
লুচু জাহিদের নেকা কথাগুলা শুনে ইচ্ছা করতেছে দুইটা থাপ্পড় দিই। রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে,
ফারহাঃ তুই এর আগেও আমার ক্ষতি করার অনেক চেষ্টা করছিস কিন্তু পারিস নাই, আল্লাহ যদি সহায় হয় তো এইবারও তুই আমার কিছুই করতে পারবি না।
জাহিদঃ আমি বুঝিনা এখনো তোর মুখে কথা বের হয় কেমন তাও আবার এত বড় বড় কথা বলতেছিস? আচ্ছা তুই থাক আমি তোর মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা করে আসি, তারপর দেখবো তোর মুখ দিয়ে এত কথা বের হয় কেমনে।
এই বলে জাহিদ ভাইয়া সেখান থেকে চলে গেলেন। জানি না এই হিংস্র মনের মানুষটা আমার কি করবেন! কেউ কি আমায় বাঁচাতে আসবে? কিন্তু কে আসবে? বাবা মা হয়তো ভাবতেছে আমি কারো সাথে পালয়ে গিয়েছি। বরপক্ষ হয়তো এতক্ষণে বাবা মাকে অপমান করে চলে গেছেন।
আচ্ছা আমার আম্মি কি খুব কান্না
করতেছে! আব্বু তুমি কি আর অপমান সহ্য করতে পারতেছ না? আচ্ছা জিহা কি আমাকে আগের মতো ভালোবাসবে!
এখান থেকে যদি কখনো মুক্ত হতে পারিও আমি কি আব্বু আম্মিকে মুখ দেখাতে পারবো? পারবো না কখনোই পারবো না। এতক্ষণ নিজেকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছিলো কিন্তু এখন নিজের থেকে আব্বু আম্মির জন্য বেশি কষ্ট হচ্ছে।আজ আমার রাগের জন্য আব্বু আম্মিকে এতটা কষ্ট পেতে হচ্ছে। আমি যদি জেদ করে এই বিয়ে সিদ্ধান্ত না নিতাম তাহলে আজ এরকম কিছুই হতো না। মানুষ ঠিকি বলে রেগে গেলে তো হেরে গেলে। আজ আমার ভুলের জন্য আমার আব্বু আম্মি বোন সবার কাছে অপমানিত হয়েছে। আমি খুব খারাপ খুব, এজন্যই আমার শাস্তি স্বরূপ জাহিদ আমায় তুলে নিয়ে এসেছে । জাহিদ যা করার করুক আমি আর কিছুই বলবো না, এইটাই আমার শাস্তি।
অন্যদিকে
জিহা আর রাহাতে বাবা মা বাসার সবাইকে সামলাচ্ছে। বাসার সকল মেহমান নানা ভাবে ফারহার বাবা মাকে অপমান করতেছে ওনারা আর সহ্য করতে পারছেন না। জিহা রাহাতে বাবা মা ওনাদের কোনো ভাবে শান্ত করতে পারছেন না। একপর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে চিল্লিয়ে উঠে জিহা ,
জিহাঃ চুপ করুন সবাই প্লীজ চুপ করুন,, আর একটাও ফালতু কথা বলবেন না। কি শুরু করে দিয়েছেন আপনারা।একটু সুযোগ পেয়েছেন তো ওমনি বাজে কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন। আপনাদের ঘরেও তো মেয়ে আছে, তাদের সাথে যে এমন হবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে আপনাদের কাছে? অন্যর বিপদে সাহায্য করতে না পরেন অন্তত আরো বিপদে ফেলবেন না। আপনাদের মতো চিপ মাইন্ডের লোকদের তো এইটাই কাজ,কোথায় কাকে কি ভাবে অপমান করবেন এই চিন্তা ঘুরে সব সময় মাথায়।
জিহার চিৎকার শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো।
জিহাঃ আর হ্যা শুনুন ফারহা কারো সাথে পালায় নাই কিডন্যাপ হয়েছে,বুঝেছেন কিডন্যাপ হয়েছে।
ফারহার আম্মুঃ কি?
ফারহার আব্বুঃ কি বলছো কি?
জিহাঃ জি চাচ্চু।
ফারহার আব্বুঃ তুমি এই কথা এখন বলতেছ? কার এত বড় সাহস যে আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করেছে?
জিহা কলেজে ঘটে যাওয়া সব ওনাদের খুলে বললেন।
উপস্থিত সবাই জিহার কথা শুনে অবাক হয়ে আছে।
আন্টি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলেন না অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন তানহা ধরে ফেলেছে। তারপর সবাই মিলে উনাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ডক্টরের কাছে ফোন করলেন।
জিহাঃ এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম, যার কারণ আমি এতক্ষণ কাউকে কিছু বলি নাই। এইবার হয়েছে আপনাদের শান্তি?
সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহার আব্বুঃ তোমরা ওর খেয়াল রেখো আমি আমার মেয়েটাকে খুঁজে তারপর বাসায় ফিরবো।
জিহাঃ চাচ্চু আপনার কোথাও যাওয়া লাগবে না।রাহাত ভাইয়া গিয়েছেন ফারহাকে উদ্ধার করতে, আর রাহাত ভাইয়া নিজের জীবন দিয়ে হলেও ফারহাকে নিয়েই আসবে এই বিশ্বাস রাখতে পারেন।
রাহাতঃ কিভাবে কি করবে ভেবেই পাচ্ছি না। জাহিদের বন্ধুদের কল করে জিজ্ঞাস করে দেখি কিছু জানা যায় কি না।
জাহিদের কয়েকটা বন্ধুকে কল করে ওর বিষয়ে জিজ্ঞাস করেই জানতে পারে, জাহিদের একটা ফার্ম হাউজ আছে যেখানে জাহিদ অবসর সময় কাটায়। ওর বন্ধুদের থেকে ওই ফার্ম হাউজটার ঠিকানা নিলো। যাদের যাদের সাথে কথা বলছে সবার থেকে ঠিকানা নিয়েছে কারণ হয়তো এদের মধ্যে কেউ ওর সাথে যুক্ত হয়ে ভুল ঠিকানা দিতে পারে কিন্তু না সবাই একি দিয়েছে। রাহাত আর দেরি না করে গন্তব্য স্থানে যাওয়ার জন্য গাড়ী নিয়ে বের হয়ে যায়।
ফারহাঃ খুব কষ্ট হচ্ছে নিজের কাছে মানুষ গুলোর কাছে অপরাধী হয়ে। যাকে ভালোবাসলাম সেও আমার ভালোবাসাটা বুঝলো না, উল্টো সবার সামনে অপমান করতে দুইবার ভাবে নাই। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার খুব, কেউ রইলো না আমার কেউ না। খুব চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করতেছে। কিন্তু তাও পারছি না কারণ জাহিদ আমার মুখটা বেধে দিয়েছে।
বেশকিছুক্ষণ পর জাহিদ কতগুলা কাগজ নিয়ে রুমে আসলো। আমি নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছি উনি চোঁ মেরে মুখের বাঁধন খুলে দিলেন, তারপর আমার সামনে পেপারস গুলো রাখলেন।
জাহিদঃ এইগুলাতে সাইন করে দাও।
ফারহাঃ নিশ্চুপ
জাহিদঃ কি হলো কি বলেছি আমি? কথা কানে যায় না?
ফারহাঃ,,,
জাহিদঃ মাথা খারাপ করবি না বলে দিচ্ছি, তখন কিন্তু বিয়ে না করে অন্য কিছু করবো। চুপ করে আছিস কেন? সাইন করতে বলছি? জোরে চিল্লিয়ে
ফারহাঃ হাত বাধা,,,, শান্ত গলায় উত্তর দিলাম
জাহিদঃ ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার।জানু আগে বলবা না। তুমি তাহলে সবটা মেনে নিচ্ছো,, খুব ভালো। এজন্যই আমি তোমার এত্ত ভালোবাসি। তুমি তাড়াতাড়ি বুঝো না কিন্তু যখন বুঝো তখন একদম শান্ত ভাবে বুঝো। এইটা কত বড় গুণ জানো? যাই হোক আমি সাইন করে দিয়েছি, শুধু তুমি করার বাকি।
জাহিদ ভাইয়া আমার বাঁধন গুলো খুলতেছে আর কথা গুলো বলতেছে।
জাহিদঃ হুম হয়ে গেছে এইবার কাজ শুরু করে দাও।
হাতটা খুব কাঁপছে কলম ধরার শক্তিটুকুও নেই, নিজেকে শক্ত করলাম। সব ভাবনা বাদ দিয়ে নিজের শাস্তির জন্য প্রস্তুত হলাম।
যখনি সাইন করতে যাবো তখনি মনে হলো খুব জোরে কিছু একটা পরে গেছে। মাথায় উঁচু করে তাকিয়ে দেখি জাহিদ ভাইয়া জানালার ওইদিকে পরে আছেন মাথা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। কিন্তু উনি তো আমার সামনেই ছিলেন ওখানে গেলেন কি করে আর পরলেনি বা কি করে? উড়ে গেলেন নাকি?
সামনে তাকিয়ে দেখি রাহাত স্যার। ওনাকে দেখে যেন আমার বিষ্ময়ের শেষ নেই। উনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে জাহিদ ভাইয়ার সামনে গেলেন। উনার কলার ধরে দাড় করিয়ে, তোর সাহস কি করে হলো ওর গাঁয়ে হাত দেওয়ার, ওকে কিডন্যাপ করার? এখন আবার বিয়ে করতে যাচ্ছিলি? তোকে আজকে আমি আজকে আমি এমন বিয়ে করাবো না যে বিয়ে করা তো দূরের কথা বিয়ে বলে যে কোনো শব্দ আছে ওইটাই ভুলে যাবি,,, এই বলে উনি জাহিদ ভাইয়াকে এলোপাথাড়ি মারা শুরু করে দিলেন। মারতে মারতে এক পর্যায়ে মরে যাওয়ার অবস্থা করে ফেলছেন। তারপর পুলিশকে ফোন করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
তারপর কিছু না বলে আমাকে অবাক করে দিয়ে হাত ধরে টেনে গাড়ীর সামনে নিয়ে আসেন।নিজের হাতটা ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু না কিছুতে পারলাম না।
ফারহাঃ ছাড়ুন আমার হাত লাগবে না আপনার দয়া,
রাহাতঃ চুপ,,,
ফারহাঃ কি হলো কি বললাম শুনতে পান নাই? ছাড়ুন আমার হাত আমি একাই চলে যেতে পারবো।
ওনি আমাকে আবারো অবাকে করে দিয়ে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলেন, তারপর গাড়ীতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে গেলেন এবং গাড়ী স্টার্ট করলেন।
ফারহাঃদেখুন আমাকে নামিয়ে দেন বলছি নাহলে কিন্তু আমি চলন্ত গাড়ী থেকে লাফ দিবো।
রাহাতঃ তো দাও,,
ফারহাঃআল্লাহ্! আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলাম।
তারপর আমার বাসার সামনে নামিয়ে দিলেন।
রাহাতঃ যাও উপরে যাও।
ফারহাঃ আজকে নিজের বাসায় আসতে নিজেরি ভয় করতেছে মনে হচ্ছে যেন জমের বাসায় আসতেছি।
ভয়ে ভয়ে বাড়ীর ভিতর ডুকতেছি না জানি কপালে কি আছে!
আমি বাসায় ডুকতে সবাই যেন ঈদের চাঁদ দেখছেন ওইরকম ভাবে লাফাচ্ছেন।
আব্বু আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না করতেছেন আমিও কান্না শুরু করে দিলাম।
আমি ভাবলাম কি? আর হলো কি! মানুষের ভাবনা সব সময় ঠিক হয় না। সবকিছু নিজ চক্ষু পর্যাবেক্ষ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
পরবর্তী পর্ব পড়তে পেইজটি তে লাইক দিন এবং গল্পের লিংক পেতে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন। কমেন্টে আমাদের গ্রুপের লিংক দেওয়া আছে
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com