বাইশের বন্যা । ডাকাতের রাত । পর্ব - ০১ । লিখা- তাসরিফ খান
বন্যার ষষ্ঠ দিনের ঘটনা।
আগের রাত থেকে আমাদের কাছে ফোন আসতে শুরু করে,
দুয়ারা বাজার এলাকার বন্যার্ত মানুষেরা নাকি কোনো খাবার পাচ্ছে না।
হাওরের পানি বৃদ্ধি এবং সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায়- তীব্র স্রোতের মুখে
ছাতক হয়ে দুয়ারা বাজার পর্যন্ত কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পৌঁছাতে পারছে না ।
সিলেট থেকে দুয়ারা বাজার এলাকার সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বিপদ যখন আসে, সবদিন থেকেই আসে।
একদিকে যেমন চারপাশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিলো
অপরদিকে মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আসা ষোল লক্ষ টাকার ফান্ড হাতে থাকা সত্ত্বেও আমরা সিলেট
থেকে সমস্ত ত্রাণের বাজার করতে পারছিলাম না।
দেখতে দেখতে চোখের সামনে হুড়হুড় করে সব পণ্যের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছিলো ।
মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে পঁচিশ কেজি ওজনের চিঁড়ার বস্তা আটশো টাকা থেকে
এগারোশো টাকা এবং বিকেলে গিয়ে তা ষোল'শ টাকা হয়ে যায়।
শুধু তাই না, দশ টাকা দামের প্রতি পিস মোমবাতি আমাদের একশো বিশ টাকায় কিনতে হচ্ছিলো ।
বিপদ এখানেই থেকে যায়নি; সেদিন রাত হতে সিলেটের বড়ো বড়ো বজারগুলো থেকে
এক এক করে সব রকম ত্রাণ সামগ্রী স্টক আউট হয়ে যাচ্ছিলো।
আমরা তৎক্ষণাত সিদ্ধান্ত নিই, মানুষের দেয়া এই অনুদানের টাকাগুলো আমরা এভাবে খরচ করবো না। আমরা ঢাকা থেকে সমস্ত মালামাল কিনে সিলেট পর্যন্ত এগুলো ক্যারি করে আনবো ।
প্রয়োজনে যা করা লাগে করবো
আরো পড়ুনঃ
তবুও চোখের সামনে এই বিপদগ্রস্ত মানুষগুলোকে না খেয়ে থাকতে দেব না ।
আমরা খুব সকাল সকাল ফ্রেস হয়ে সোনার বাংলা কমিউনিটি সেন্টারে চলে গেলাম।
গিয়ে দেখলাম আজিজ ভাই মাথায় ত্রাণের বস্তা নিয়ে ঘামতে ঘামতে ট্রাকের দিকে যাচ্ছেন । আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলেন, রাতে ঘুমান নাই তাসরিফ ভাই? আপনার চোখ তো লাল হয়ে আছে।
হ্যাঁ, ভাই ঘুমাইছি। তবে শুতে শুতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিলো । কিন্তু আপনার মাথায় বস্তা কেন?
উনি হাসিমুখে বললেন, আরে এটাতে কোনো সমস্যা নাই। আপনারা আমরা তো একই মানুষ ৷
তা ঠিক আছে, কিন্তু আপনার তো বয়স হইছে আর এই বস্তা তো আপনার টানার কথা না।
ভলান্টিয়াররা কই?
ওরাই সব টানতে ছিলো ভাই। কিন্তু সারারাত না ঘুমাইয়া কাজ করছে তো, দুই-একজন একটু বেশি ক্লান্ত হইয়া পড়ছে তাই আমিই কইছি পাঁচটা মিনিট রেস্ট নিয়া তারপর কাজ করতে ।
আজিজ ভাইয়ের এই মহানুভবতায় আমি খুব অবাক হলাম। উনার এভাবে বস্তা টানার কথা ছিলো না। কারণ আজিজ ভাই মূলত এই সোনার বাংলা কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজার। এমনিতেই তিনি নিজের চাকরির রিস্ক নিয়ে পুরো কমিউনিটি সেন্টারটা ফুড প্যাকিংয়ের গোডাউন হিসেবে খালি করে দিয়েছেন, বিনিময়ে একটা টাকাও চাননি ।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com