Breaking News

আইসিটি স্যার যখন বর । পর্ব - ২২



রুমে শুয়ে শুয়ে কান্না করতেছি। স্যারের বলা প্রত্যকটা কথা ভাবতেই আমার বুকে চুরির ন্যায় আঘাত করতেছে। ভালোবাসার মানুষের বলা একটা অপমানকর কথা সহ্য করা কত কষ্ট সেটা সত্যি বলার ভাষা রাখে না, তার মধ্যে সবার সামনে অপমান করাটাতো আরও কষ্টকর।

স্যার সবার বললেন, আমার মত মেয়েদের জন্য নাকি সব মেয়ের বদনাম হয়। আমি কি এতটাই খারাপ? এতটাই ক্যারেক্টারলেস? আমি আর কখনোই স্যারের সামনে যাবো না,কখনওই না।জানি না ওনাকে না দেখে থাকতে পারবো কি না?

জানি না ওনাকে ছাড়া আমার সময় গুলো কেমন হবে? কিন্তু আমি এইটাই জানি কখনো উনার সামনে যাবো না। ওনার সামনে যাবো না ভাবতেই বুকের ভিতর একরাশ কষ্ট ভর করতেছে। চোখেরজলে যেন চারপাশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।

ভালোবাসায় কষ্ট আছে কিন্তু এতটা তা জানা ছিলো না। যতই যাই হোক আমি স্যারের জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাবো, অনেক দূরে। কখনো ওনার সামনে আমার এই মুখ নিয়ে দাঁড়াবো না। ভাবতেই কান্নায় ভেঙে পরলাম, কিন্তু আমায় ভেঙ্গে পরলে হবে না। একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে, তাই চোখে পানি মুছে নিয়ে নিজেকে শক্ত করলাম।

আম্মি আর আব্বুর আমার রুমের ডেকে পাঠালাম,
আব্বুঃ কিরে মা কি হয়েছে?
আম্মিঃ আমিও তো সেটাই বুজতেছি না, কলেজ থেকে এসে কেমন অদ্ভুত আচরণ করতেছে, কি হয়েছে কিছুই বলছে না।
আব্বুঃ কি হয়েছে ফারহা? তোমার চোখমুখের এই অবস্থা কেন? কি হয়েছে আমার মা টার? কেউ কিছু বলেছে আমার মেয়েটাকে?
ফারহাঃ তেমন কিছু না আব্বু,,, আসলে আব্বু তোমাদের আমার কিছু বলার ছিলো।
আব্বুঃ আমিও তো সেটাই বলতেছি,,, বলো না কি হয়েছে আমার মায়ের?
আম্মিঃ হুম বলো কি বলবে?
ফারহাঃ তোমরা তো এই শুক্রবার আমার এনগেইজমেন্ট ঠিক করছো, কিন্তু আমি চাই এই শুক্রবার বিয়েটা হয়ে যাক।

আব্বুঃ কি!😱😱😱
আম্মিঃমানে!😲😲😲😲
ফারহাঃ হুম, তোমরা যদি ওদের বাড়ীতেই আমার বিয়েটা দিতে চাও তো এই শুক্রবার বিয়ে দিতে হবে নয়তো আমি এই বিয়ে করবো না।

আব্বুঃ কিন্তু তা কি করে সম্ভব! ওনারা বলেছেন তোমার পড়ালেখা শেষে হলেই বিয়েটা হবে, এখন আমি ওনাদের কি ভাবে কি বলবো?
ফারহাঃ আমি এতকিছু জানি না। এখানে যদি বিয়ে দিতে হয় তো শুক্রবারেই হবে আর না হয় আমি ওনাদের ছেলেকে বিয়ে করবো না।
আম্মিঃ ফারহা এইটা কোন ধরনের ছেলে মানুষী হচ্ছে? এইটা একটা বিয়ে ছেলেমানুষি করার জিনিষ না। মাত্র চারদিনের মধ্যে কিভাবে এত কিছু করা সম্ভব? তার থেকেও বড় কথা আমরা এই কথাটা ওনাদের কোন মুখে বলবো?
ফারহাঃ আমি তো বললাম, না হয় আমি এই বিয়ে করবো না। আর হ্যা আমি আর কোনো কথায় শুনতে চাই না, এইটা আমার শেষ কথা। বিয়ে হলে এই শুক্রবার হবে না হলে আমি কখনওই এই বিয়ে করবো না।
আব্বুঃ আচ্ছা আমি ওনাদের সাথে কথা বলে দেখি কি করা যায়।
আব্বু রফিক সাহেবকে( জিয়ানের বাবা) কল দেন।

মনে মনে আমি জানি রাগের মাথা আব্বু আম্মি তোমাদের আমি কষ্ট দিচ্ছি। (আমরা ছেলেমেয়েরাই যে এমনিই মা বাবাকে শুধু কষ্ট দিই, উনাদের অনুভূতি গুলা বুঝার চেষ্টা করি না তাও ওনারা হাসি মুখে সব মেনে নেন) কিন্তু কি করবো বলো আমার যে এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
দুইবার রিং হওয়ার পর কল পিক করেন উনি,,,
আব্বুঃ আসসালামুয়াইলাইকুম বেয়াই সাহেব,
রফিক সাহেবঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম, কেমন আছেন বেয়াই সাহেব?
আব্বুঃ আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো,, আপনি?
রফিক সাহেবঃ আলহামদুলিল্লাহ্‌,
আব্বুঃ বাসার সবাই কেমন আছেন?
রফিক সাহেবঃ সবাই অনেক ভালো আছে। বিয়ে শুরু হওয়ার আগেই বাড়ি মাথায় তুলছে সবাই মিলে। হাহাহা
আব্বুঃ ওহহ,,আসলে বেয়াই সাহেব আমাদের একটা কথা ছিলো।
রফিক সাহেবঃ আরে বেয়াই বলেন না কি কথা?
আব্বুঃ যদি আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকে তো, বিয়েটা পরে না হয়ে যদি এখন হয়ে যেতো তাহলে ভালো হতো আরকি।

রফিক সাহেবঃ একদম আমার মনের কথা বলেছেন আপনি আমিও এইটাই চাচ্ছিলাম কিন্তু আপনারা রাজি হবেন কি না এই ভেবে বলি নাই।
আব্বুঃ তাহলে তো খুব ভালো। তাহলে এনগেইমেন্টের দিনেই বিয়েটা হয়ে যাক?
রফিক সাহেবঃ কথাটা মন্দ বলেন নাই। আচ্ছা আমি সবার সাথে আলোচনা করে তারপর আপনাকে জানাচ্ছি।
আব্বুঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
উনাদের বলা একএকটা কথা শুনে আমার বুকের ভিতর তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার জীবনটাই কেউ কেড়ে নিচ্ছে। আমি জানি না এর পর কি হবে? কি করবো আমি? কি ভাবে সামলাবো? পারবো তো সবটা সামলাতে? পারবো তো নিজেকে সামলাতে?
মিনিট কয়েক পর রফিক সাহেব আবার কল দেন, উনারা সবাই রাজি। আব্বুও এই কথাটা শুনে অনেক খুশি হলেন।

২দিন পর
শুরু হয়ে গেছে বিয়ের সব আয়োজন, আর মাত্রই কয়েকটা দিন বাকি এত তাড়াতাড়ি সব কিছু সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সবাই,
সেদিন কলেজ থেকে চলে আসার পর জিহাও অনেকবার কল দিয়েছে। কিন্তু কল রিসিভ করি নাই, কথা বলতেই ইচ্ছা করছিলো না। বাধ্য হয়ে ও আমাদের বাসায় আসে। এসে বিয়ে কথাটা শুনে আমাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে যাতে এত তাড়াতাড়ি এই সিদ্ধান্ত না নিই। ব্যর্থ হয়ে বিয়ের দাওয়াত নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারি নি।
অন্যদিকে

রাহাত ফারহার সাথে খারাপ ব্যবহার করার পর থেকেই অনুতাপে ভুগতেছে। কলেজে গিয়ে ফারহাকে অনেক খুজে কিন্তু ওর দেখা মিলে না। মিলবেই বা কি করে ওতো কলেজ আসে না। মেয়েটা হয়তো খুব কষ্ট পেয়েছে, এই ভাবে কষ্ট দেওয়া তার উচিত হয় নাই। কিন্তু একবার যে ক্ষমা চাইবে তার উপায়ও নেই, কলেজেই তো আসে না ক্ষমা চাইবে কি করে। ওর চঞ্চলতা, ঝগড়া দুষ্টুমি সব যেন রাহাতের চোখের মাঝে ভাসতেছে। সব কিছুর থাকার মাঝেও রাহাত একটা শুন্যতা অনুভব করতেছে, এই শুন্যতা ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com