Breaking News

যে পাখি ঘর বোঝেনা । পর্ব - ০৪

নোয়া যার নজর থেকে বেঁচে থাকতে চাইছিলো তার নজর যেন নোয়ার ওপর বারবার আটকে যাচ্ছে।

মাহির বারবার নোয়াকে দেখে মুগ্ধের শেষ সীমানায় পৌঁছে যায়। একটা মেয়েকে দেখে মাহির কখনও এরকম অনুভব করে নি। মাহির যে এবার সত্যি কারও প্রেমে পড়েছে সেটা সে তার প্রেয়সীকে কিভাবে বোঝাবে!

অবনী আর নোয়া স্টলে স্টলে ঘুরে এটা ওটা দেখছে আর পছন্দ মত কেনাকাটা করছে।এখানে বেশির ভাগ স্টলেই মেয়ে দেখেশুনা করছে।অবনী আর নোয়া ঘুরাঘুরি করছে।
-- দোস্ত চল ফুসকা খাই।(বলেই অবনী নোয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় ফুসকার দোকানে।)
-- আরে টেনে নিয়ে যেতে হবে না আমি এমনিতেই ফুসকা প্রেমী।
-- চল আজকে যে বেশি খেতে পারবে সে উইনার, আর যে হারবে সে আজকের বিল দেবে।
-- হেরে যাবি।(নোয়া)
-- তোকে আমি হারাবো।(অবনী)
-- চল তাহলে দেখা যাক।
-- মামা ফুসকা দিয়েন তো দুই প্লেট।

একপাশে দাঁড়িয়ে মাহির নোয়া আর অবনীর কান্ড দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে।
নোয়া একটা করে ফুসকা মুখে নিচ্ছে আর তৃপ্তিতে চোখ বন্ধ করে নিচ্ছে। নোয়ার এরকম মিষ্টি অঙ্গভঙ্গি মাহির কোনভাবে হাত ছাড়া না করে ক্যামেরাবন্দী করে নেয়।
ফুসকা খাওয়ার মাঝে মামা টক দেন, মামা টক দেন কথাটা যেন বারবার মাহিরের কানে বাজছে।
মাহির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নোয়ার কান্ড দেখে যাচ্ছে।
শেষমেশ অবনী নোয়ার কাছে হেরে যায়,নোয়ার হাসি দেখে মাহির বুকের বা পাশে হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে বলে, "হায়!!"

নোয়া আর অবনী এবার শাড়ির দোকানে গিয়ে দুজন এক রকম শাড়ি কিনে, দোকান থেকে বের হয়ে অন্য দোকানগুলোতে ঘুরতে থাকে।
এক দোকান থেকে বের হতেই পিছন একজন এসে আপু বলে ডাক দেয়। দুজনই পিছনে ফিরে তাকায়।
-- জ্বী?(নোয়া)
-- আপু উপহার।(জনৈক)
-- কিসের উপহার?
-- আপনারা আসার পর আমার দোকানে একজন দশ হাজার টাকার জিনিস নিয়েছে।আপনারাই তো প্রথম কিনেছেন আমার কাছে থেকে। তাই ছোট্ট উপহার এটা।
-- ওহ আচ্ছা, অনেক ধন্যবাদ।(নোয়া)
-- আমিও তো কিনেছি তাই না? আমার উপহার কোথায়?(অবনী)
-- আপনার জন্যও আছে আপু,এই নিন.......
-- ধন্যবাদ আপু।

উনি চলে গেলে আর কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে দুজন।
-- বাসায় যাবি না?(নোয়া)
-- হ্যাঁ যাব,আরেকটু পর যাই।আমার তো এখানে খুব ভালো লাগছে। তোর ভালো লাগছে না?
-- ভালো তো লাগছে কিন্তু অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।চল এখন....
-- এখন থেকে তো প্রায় প্রতিদিন বের হবো, অভ্যাস করে নে।
-- সে পরে দেখা যাবে, আজকে চল।
রাত প্রায় দশটা বেজে গিয়েছে নোয়া আর অবনী দুজন হাত ধরে হাটছে।দুজন দুজনের কথা শেয়ার করছে আর হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে হাটছে।
পিছন থেকে খেয়াল রেখেছে তার "কাজল চোখের মেয়ে" নাম দেওয়া মানুষটির চোখ দুটো।

রাতে প্রায় ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে নোয়া। এমন সময় অবনীর প্রবল ডাকে চমকে উঠে বসে পড়ে সে।
-- ক কি কি হয়েছে?
-- আমার একটা জিনিস সন্দেহ হচ্ছে।(অবনী)
-- এতরাতে আবার তোর কিসের সন্দেহ? ঘুমাস নি কেন এখনও?
-- আচ্ছা উপহারের ব্যাগটার পার্থক্য আছে খেয়াল করেছিস?তোর টা বড়,আর আমারটা ছোট।আর দোকানীর বিক্রি হলেও আমাদের কেন উপহার দিতে যাবে?
-- কি বলতে চাইছিস তুই?(নোয়া)

-- এগুলো অন্যকেউ ওই আপুকে দিয়ে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। আমাদের কাছে বললে ভুল হবে, তোর কাছে পাঠিয়েছে। আমরা যেন ধরতে না পারি তাই আমাকেও দিয়েছে।(অবনী)
-- এরকম কে করবে?
-- আমার তো একজনকে সন্দেহ হচ্ছে।
-- মাহিরকে?
-- ঠিক ধরেছিস। আর সে তো তোকে পছন্দ ও করে।
-- প্যাকেটটা খুলে দেখ তো কি আছে!!(নোয়া)

এদিকে মাহিরের অবস্থা চরম পর্যায়ের। রাত দুটো চলছে তবুও তার দুচোখের পাতা এক করতে পারছে না। সেই দুটি চোখ যেন মাহিরকে ঘুমোতে দিচ্ছে না।
মনে মনে ভাবছে তার তো আগে কখনো এরকম হয়নি তবে নোয়া কে দেখার পর তার এরকম কেন লাগছে সে কি সত্যি সত্যি কোনভাবে নোয়ার প্রেমে পড়ে গেছে!
আর শুয়ে থাকতে না পেরে উঠে বসে মাহির।আচ্ছা নোয়ার জন্য মাহিরের যেমন অনুভব হচ্ছে, মাহিরের এমন অনুভব এর কথা শুনে নোয়ারও কি এরকম অনুভব হবে?

মাঝে মাঝে যখন সে ভাবছে নোয়া তার নাও হতে পারে, তখন তার বুকের মধ্যে কেমন যেন করে উঠছে। আগে যাদের সাথে মাহিরের সম্পর্ক ছিল, কই তাদের জন্য কখনো তো এরকম অনুভব হয়নি মাহিরের!
মাহির এবার বসা থেকে খাট থেকে নেমে পায়চারি করা শুরু করলো। তার কি নোয়াকে সব কিছু জানিয়ে দেওয়া উচিত? নাকি এত তাড়াতাড়ি জানিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না! কিন্তু আমার অতীত!
সেটা যদি সে জানতে পারে!

সকালবেলা........
-- আমি এগুলো নিয়ে গিয়ে একদম ওই ছেলের মুখের ওপর ছুড়ে মারব। মাত্র সপ্তাহখানেক হচ্ছে এখানে আসা আর এর মধ্যেই এসব শুরু করে দিয়েছে।(নোয়া)
-- আরে এত রেগে যাচ্ছিস কেন?দিয়েছে, রেখে দে।
-- তোর কি মনে হয় আমি এই শাড়ি, চুড়ি, নুপুর,ঝুমকো,ফুল এসব রেখে দিয়ে উনাকে বুঝিয়ে দেব আমিও উনাকে পছন্দ করি।
-- তোকে রাতে একটা জিনিস দেখাই নি। দেখবি?

-- কি?
-- এই নে....
অবনী একটা কাগজের টুকরো নোয়ার দিকে এগিয়ে দিলো। নোয়া ভ্রু কুচকিয়ে অবনীর দিকে দেখে কাগজটি হাতে নিয়ে খুলে পড়া শুরু করলো।
--" নেশা লাগিলো রে নেশা লাগিলো রে
বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলো রে"
-- " তোমায় দেখার পর তোমায় ছাড়া থাকাটা
যেন আমার জন্য শাস্তি মনে হওয়া শুরু হয়েছে"
-- " যেদিন থেকে তোমাকে দেখেছি,
সেদিন থেকে সবকিছু দেখা বন্ধ করে দিয়েছি।"

-- কি বুঝলি?(অবনী)
-- যাই হোক না কেন আমি এগুলো ফেরত দেব অবনী, আমি এখানে পড়তে এসেছি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে এসেছি। আমি এগুলোতে জড়াতে চাই না,আর আমার আপু বাবার স্বপ্ন পূরণ না করেই পালিয়েছে।হয়তো কোন ছেলেকে পছন্দ করতো তাই তার সাথে পালিয়ে গেছে।কিন্তু বাবাকে তো একবার জানাতে পারতো।
-- আচ্ছা বাদ দে, যা হওয়ার হয়ে গেছে। তবে যাই বলিস ওই নীলচোখের ছেলেটা খুব বাজে ভাবে তোর প্রেমে পড়ে গেছে।
-- মানুষ যত তাড়াতাড়ি কিছু পেয়ে যায়, তত তাড়াতাড়ি তার কাছে সেই জিনিসটার মূল্য কমে যায়।
-- এটা ঠিক কথা। আচ্ছা চল এখন, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
-- হুম চল, গিয়ে তো দেখব হয়তো ডিপার্টমেন্টের সামনেই দল নিয়ে বসে আছে। দলের মধ্যে যে ছয়/সাতজন আছে সবগুলো একই ধরনের। আরেকদিন রাস্তার পাশে দেখলাম ওই দলের একজন একটা মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-- কেন মাহির তোকে দেখে এটা তো তুই পছন্দই করিস, এখন ঢং করছিস কেন?
-- তুই বের হবি?
-- হ্যাঁ চল।

-- আচ্ছা বল তো ওরা আসছে না কেন? এত দেরি করে কেন আসতে হবে? সারারাত আমি ঘুমোতে পারি নি।(মাহির)
-- ভাই খুব বাজে ভাবে ফেসে যাচ্ছিস কিন্তু। তুই তো এমন ছিলি না! এখনও তোর পিছে কত মেয়ে ঘুরছে আর তুই কি না ওই মেয়েটা পিছনে পড়ে আছিস?(শতাব্দী)
-- আমি ওকে পেলে দুনিয়ার কোন মেয়ের দিকে আর তাকাবো না পর্যন্ত।(মাহির)
-- ঠিক আছিস তো?
-- ওকে না দেখতে পেয়ে আমি ঠিক নেই। সত্যি সত্যি কারও প্রেমে পড়লে কি এরকমই লাগে?(মাহির)
-- ভাই তুই এবার গেছিস।(মাহদি)

একটা প্যাকেট কেউ মাহিরের দিকে ছুড়ে দিলে তা এসে পায়ে ধাক্কা খেয়ে থেমে যায়।
মাহির পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখেই মুখটা রাগে লাল হয়ে যায়,সামনে তাকাতে দেখে নোয়া দাঁড়িয়ে।
রাগে লাল হওয়া মুখটা এক মুহূর্তে চুপসে যায়,সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।

চলবে.....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com