Breaking News

ভালোবাসি প্রিয় । পর্ব - ০৮



নাফিসা আরও কিছুক্ষণ দাড়িয়ে, অহনাকে নিয়ে ছাদে এলো। বন্ধুদের অনুরোধে নাফিসা ও মেহেদী একসাথে দুইটা গান গেয়ে শোনালো।

বিয়ের দিন নাফিসা একটা গোল্ডেন কালার লেহেঙ্গা পড়েছে।
বরযাত্রী আসার পূর্বে পুরোটা সময় দিনার আশেপাশেই ছিলো।
বড় যাত্রী এলে মেহেদী গেইটের ভিরে নাফিসাকে খুজেছে কিন্তু পায়নি।
ভেতরে এসে দিনার পাশে বসে থাকতে দেখলো।
সাথে মামাতো বোনটাও আছে! একা পাওয়ার সুযোগ খুঁজে একটু আধটু কথা বলতে পেরেছে।

রিসিপশনের দিন দিনা বার বার কল করে যেতে বলেছে নাফিসাকে।
দিনার মা ও জোর করছে তাই আবিদের বাসায় গেলো দিনাকে আনতে।
সেখানে আর অহনা যায়নি। স্টেজের একপাশে রিসাদসহ বন্ধুদের সাথে হাসিঠাট্টা করছিলো মেহেদী। নাফিসাকে দেখে সেখান থেকে চলে এলো।
- কেমন আছো?
- আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?
- আলহামদুলিল্লাহ। এদিকে চলো.... রাতে কল রিসিভ করোনি কেন?
- ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
- অহ! আজ এতো ভালো লাগছে কেন তোমাকে?
- কখনো এটা বলেছো, যে আজ খারাপ লাগছে!
- হাহাহা.... কখনো খারাপ লাগেইনি, বলবো কিভাবে!
- মিথ্যে কথা সব!
- খারাপ লাগছে বললে সত্য মেনে নিবা?
নাফিসা আর কিছু বললো না। আবিদের রুমের কাছে এসে দেখলো এখানে কেউ নেই! তাই মেহেদী নাফিসাকে বললো,
- ভেতরে চলো।
- সবাই ওদিকে। এখানে আমাদের দুজনকে দেখলে খারাপ কিছু ভাববে!
- সবাই ওদিকে, তাই আমাদের এখানে কেউ দেখবে না। চলো...
মেহেদী নাফিসার হাত ধরে ভেতরে এসে দরজা লক করে দিলো কিন্তু জানালা খোলাই আছে।
- একি! দরজা লক করছো কেন তুমি?
- কেন! আমার কাছে থাকতে ভয় পাও?

- না।
- তাহলে!
- আমরা অন্যের রুমে আছি। কেউ দেখলে উল্টাপাল্টা ভাববে, মেহেদী।
- কেউ যাতে না দেখে সেজই তো লক করলাম।
কথা বলতে বলতে মেহেদী আস্তে আস্তে নাফিসার দিকে এগিয়ে একদম নাফিসার কাছে এসে দাড়ালো। নাফিসা মুখে বলেছে ঠিকই ভয় পায় না, কিন্তু মনে ঠিকই ইতস্তত বোধ করছে! মেহেদী মুচকি হেসে বললো,
- বিশ্বাস নেই আমার উপর?
- আছে!
- ভালোবাসো আমাকে?
- প্রমাণ দিতে হবে?
- না, একটা গিফট দিবে। লাভ গিফট...
- হিহিহি..... সরি, এরকম কোন গিফট নেই আমার কাছে!
- নাফিসা, আমি সিরিয়াস বলছি!
- কি গিফট, বলো?
- লি-*প কি-*স।

নাফিসা চোখ বড় বড় করে মেহেদীর দিকে তাকালো!
লি-*প কি-*স কি ভালোবাসার গিফট! এমনিতেই একটু সংকোচে আছে সে,
তাও মনের সাথে যু-*দ্ধ করে মেহেদীর সামনে এতোক্ষণ নরমাল থাকার চেষ্টা করছে!
আর এখন ও কি বললো এটা!
- পারবে না গিফট দিতে!
মেহেদী দুহাত পকেটে রেখে দাড়িয়ে আছে। নাফিসার চোখে একটু একটু পানি জমছে!
তবুও মেহেদীর মাথাটা দু'হাতে টেনে নিচু করে সামনে এনে পায়ের আঙুল ভর দিয়ে উঁচু হয়ে দাড়ালো নাফিসা। আস্তে আস্তে নিজের ঠোঁট জোড়া মেহেদীর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। কাছাকাছি আসতেই মেহেদী তার হাত সরিয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে হাসতে লাগলো।

তুমি কি ভেবেছো, সত্যিই আমি এখন এমন গিফট নিবো! আই এম জাস্ট জোকিং ইয়ার!
এভাবে ভালোবাসা প্রমাণ করতে হয় না। ভালোবাসা মন থেকে হয়, ফিল করতে হয়...
এসব লিপ কি-*স টিস কিছু না!
নাফিসা হঠাৎ মেহেদীর কলার ধরে জোরে হেচকা টান দিলো তার দিকে।
টাল সামলাতে না পেরে মেহেদী নাফিসাকে নিয়ে খাটে পড়ে গেলো।
নাফিসা তার নিচে পড়ে আছে, কিন্তু এখনো কলার ছাড়েনি! একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
মেহেদী দৃষ্টি সরিয়ে উঠার চেষ্টা করতেই নাফিসা আবারও কলার টেনে কাছে টানলো।
এবং চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললো! কি বুঝাতে চাইছে সে, মেহেদী কিছুই বুঝতে পারছে না!
এই চেহারায় তাকিয়েও থাকতে পারছে না, কেমন যেন একটা মায়া কাছে টানছে মেহেদীকে!
- নাফিসা ছাড়ো....
মেহেদী কলার থেকে নাফিসার হাত সরিয়ে তারাতাড়ি উঠে পড়লো।
একটানে নাফিসাকেও বসিয়ে দিলো। নাফিসা শুধু মেহেদীর দিকে তাকিয়ে আছে।
- ঠিক আছো তুমি?

- নাফিসা, ঠিক আছো তুমি?
নাফিসা কোন জবাব দিলো না। উঠে দাড়িয়ে দরজার উপরের লকটা খুলতে চেষ্টা করে পারলো না,
মেহেদী এসে পেছনে দাড়িয়েই খুলে দিলো।
নাফিসা বেরিয়ে চলে গেলো। একটু পর মেহেদীও বেরিয়ে বন্ধুদের কাছে ফিরে এলো।

অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরলো।
এর মধ্যে আর নাফিসা ও মেহেদীর মধ্যে কোনো কথা হয়নি।
রাতে মেহেদী কল করেছে। কিন্তু নাফিসা রিসিভ করে নি। আবার মেসেজ সেন্ট করেছে,
" কল রিসিভ করছো না কেন? "
"রেগে আছো আমার উপর? "
" রাগের কারণ কি? "
পরপর তিনটা মেসেজ এলো। কোন রিপ্লাই পেল না। এবার নাফিসা নিজেই কল করলো।
- বলো...
- কল রিসিভ করছিলে না কেন?
- এমনি।
- এমনি মানে! তাহলে এখন ব্যাক করলে কেন?
- ইচ্ছে হলো তাই।
- এমন করে কথা বলছো কেন? রেগে আছো আমার উপর?
- না।
- উহুম, রেগে আছো। কিন্তু রাগ করার কারণ কি?
- বললাম তো, রাগ করি নি।
- কাল আসবে না ভার্সিটিতে?
- হ্যাঁ।
- ক্লাস করবে? নাকি প্রাক্টিস?
- দুটাই। আরো কিছু বলবা?
- আমি তো বললাম ই। এবার তুমি বলো...
- কি বলবো?
- যা ইচ্ছা...
- বাসায় ফিরেছো? খেয়েছো? পড়েছো? ঘুমিয়েছো?
- হাহাহা.... জেগে আছি।
- আমি ঘুমাবো।
- আমি তোমার কথা শুনবো।
- আমি কিন্তু সত্যিই ক্লান্ত। অনেক ঘুম পেয়েছে।
- ওকে, সুইট একটা লাভ নাইট দাও। তারপর ঘুমাও।
- আমি সুইট খাই না, তাই এমন কিছু দিতেও পারি না।
- তাহলে ঘুমাতেও পারবে না।
- ওকে, লাভ নাইট।
- হয়নি... আবার বলো...
- লাভ নাইট, ডিয়ার!
- লাভ নাইট, জানেমন...

সকালে ভার্সিটিতে চলে এলো নাফিসা। আগামীকাল গানের সেকেন্ড টার্ম কমপিটিশন হবে।
আজ প্রাক্টিস টা বেশি জরুরি। দিনা আসেনি আজ।
কবে থেকে আসবে কে জানে! একা একা ক্লাস করতেও ভালো লাগছে না।
ভার্সিটিতে দিনার সাথে যতটা মিশে অন্যদের সাথে তার শতকরা পাচ ভাগও না!
পরপর তিনটা ক্লাস করে লাইব্রেরিতে বসে গতক্লাসের নোটগুলো শেষ করলো।
লাইব্রেরী থেকে ক্লাসে ফেরার পথে কেউ হাত টেনে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে এলো।
রুমটা খালি! মেহেদী এনেছে নাফিসাকে!
- কি ব্যাপার? এখানে আনলে কেন?
- তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য, জান.….
- কিসের সারপ্রাইজ?
- আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। কাল কমপিটিশন এ যাবা?
- কমপিটিশন হলে যাবো না কেন!
- যদি আমি যেতে নিষেধ করি....
- কি বলছো এসব! নিষেধ করবে কেন!
- কারণ আমি চাই না তুমি কমপিটিশনে এটেন্ড করো।
- এতোদিন ধরে প্রাক্টিস করছি, এখন তুমি নিষেধ করছো কেন?
- এতো কথা কিসের? বলেছি যাবে না, তো যাবে না।
- তুমি যাবে?
- হ্যাঁ।

- তাহলে আমি যাবো না কেন?
- কারণ তুমি গেলে আমি জিততে পারবো না। প্রথম থেকেই তোমাকে আমার সহ্য হয় না।
তুমি, তোমার এই সুর সবচেয়ে বেশি অসহ্যকর! আমার সাথে পাল্লা দিতে আসবে না কখনো।
তাহলে বিপদে পড়বে।
- কি বলছো তুমি এসব! হঠাৎ এমন আজেবাজে কথা বলছো কেন! কি হয়েছে তোমার!
আগে তো এমন ছিলে না! ভালোবাসতে তুমি আমাকে!
- ভালোবাসা! হা হা হা.... নাটক ছিলো সুইটহার্ট! নাটক... নাটক বুঝো!
তোমাকে তো আমার সহ্যই হয় না! ভালোবাসবো কিভাবে!
এসব প্রেম, ভালোবাসার কোন মূল্য নেই আমার কাছে!
তোমার চেয়ে শতরূপের রূপসী কন্যারাও এসেছিলো প্রেম চিঠি নিয়ে!
কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছে। এখন কমপিটিশন থেকে কে-টে পড়াই তোমার জন্য উত্তম।
নাফিসা পলকহীন তাকিয়ে আছে তার দিকে।
চোখে অশ্রু ভীড় জমিয়েছে! অন্যদিকে মেহেদীর মুখে হাসি! নাফিসা দাতে দাত চেপে বললো,
- আর যদি আমি কমপিটিশন থেকে না সরে যাই!

- সেটাও পূরণ হবে না গো.... তোমাকে সরানোর ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছি আমি। এই দেখো...
মেহেদী মোবাইলে নাফিসা আর মেহেদীর ছবি বের করলো।
এটা তো সেই ছবি, দিনার গায়ে হলুদে নাফিসা মেহেদীকে জড়িয়ে ধরেছিলো!
আরেকটা রিসিপশনে আবিদের রুমে মেহেদী পকেটে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে আর,
নাফিসা মেহেদীকে কাছে টেনে কি-*স করতে যাচ্ছে!
- একটা মেয়ে জোর করে একটা ছেলের সাথে নোং-*রামি করার চেষ্টা করছে! ভাবা যায়!!!
ভেবে দেখোতো, এই ছবি যদি ফেসবুকে, ভার্সিটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে মুখ দেখাতে পারবে তুমি!
সহ্য হবে এসব তোমার! এই ছবিগুলো যদি তোমার পরিবারের কাছে পৌছে যায়,
উনারা সহ্য করতে পারবে কি!
তোমাকে কমপিটিশন থেকে সরানোর জন্যই সাজানো ভালোবাসার এই প্ল্যান!
আগেও বলেছি এখনো বলছি, আমার সাথে লাগতে এসো না।
অনেক বড় সমস্যায় পড়বে! কমপিটিশন থেকে নাম না সরালে কি ঘটবে তোমার লাইফে,
কল্পনাও করতে পারবে না তুমি। ভেবে দেখো, সময় আছে এখনো!

মেহেদী বেরিয়ে গেলো ক্লাস থেকে! নাফিসাও মন খারাপ করে বেরিয়ে এলো।
যার কাছ থেকে নোট নিয়েছে, তাকে নোট ফেরত দিয়ে অডিটোরিয়ামে এলো প্রাক্টিস এর জন্য।
মেহেদী লক্ষ্য করছে সে চিন্তিত! নাফিসা গান গাইতে গিয়েও পারলো না!
বারবার আটকে যাচ্ছে! স্যারকে অনেক বলে বাসায় চলে এলো।
মেহেদী আর রিয়াদের প্রাক্টিস চললো আজ। বাসায় ফিরে ফোনটাও বন্ধ করে দিলো নাফিসা!

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com