ভালোবাসি প্রিয় । পর্ব - ০৩
(গত পর্বে ছিলো... দিনা আর নাফিসা খুব ভালো বন্ধু হয়,,মেহেদী গান করা শেষে টাকা দিয়ে অপমান করে চলে আসে নাফিসা। তারপর....)
ফিন্যান্স ক্লাস শেষে গ্যাপ ক্লাসে নাফিসা দিনাকে নিয়ে বের হয়ে এলো ক্যানটিনের উদ্দেশ্যে। মাঠে দেখতে পেলো আজও মেহেদীর টিম ফুটবল খেলতে নেমেছে। নাফিসা ইচ্ছে করেই আজ মাঠ দিয়ে ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছে। দিনা নাফিসাকে বললো,
- চলো এদিক দিয়ে যাই।
- দিনা, আমরা একে অপরকে তুই করেও বলতে পারি।
- হিহিহি, আচ্ছা চল এদিক দিয়ে যাই।
- কেন? মাঠ দিয়ে যেতে সমস্যা কি?
- বল লাগতে পারে শরীরে।
- বল লাগবে! নাকি কেউ দেখলে ব-*কাঝকা করবে সেই ভয়ে! হুম?
- কি বলছিস এসব! কে দেখবে!
- হিহিহিহি... আচ্ছা, বল খেলছে মাঠের মাঝখানে। সাইডে আসবে কেন?
- আসতেও তো পারে! মাঠ তো আর বিশাল নয়!
- আচ্ছা, তুই এদিক দিয়ে যা। আমি মাঠ দিয়েই যাবো।
দিনা সাইড দিয়ে চলে গেলো আর নাফিসা প্রায় খেলার রাউন্ডে হাটছে। মেহেদী নাফিসাকে দেখতে পেয়ে বল আজও নাফিসার দিকে পাঠালো কিন্তু সেদিনের মতো এতোটা জোরে নয়।বল নাফিসার পায়ের কাছে আসতেই পা দিয়ে আটকে দিলো নাফিসা। ওদিকে মেহেদীর টিমের আবিদ আর রিসাদ রেগে ফায়ার মেহেদীর কান্ড দেখে। এমনিতেই বিপরীত দল তাদের থেকে এক গোল এগিয়ে আছে, তার উপর খুব ভালো একটা সুযোগ ছিলো এখন একটা গোল নেয়ার।
এমন সময় কি ফা-*জলামো করার দরকার ছিলো মেহেদীর! তাদের দলের অন্যজন বল আনতে যেতে নিলে মেহেদী নিষেধ করলো, তারপর সে এগিয়ে গেলো বল নিতে। নাফিসা এখনো বল পায়ের নিচে আটকে রেখে দাড়িয়ে আছে, আর দিনা মাঠের সাইডে থেকে দেখে দাড়িয়ে আছে। মেহেদী বল নেয়ার জন্য কাছে আসতেই নাফিসা খুব জোরে কিক মারলো। কিন্তু মেহেদীর দিকে নয়, গোলকির দিকে। যার ফলে গোল হয়ে গেল। মেহেদীসহ মাঠের বাকি খেলোয়াড়রা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। নাফিসার কিক স্ট্যান্ডার্ড ছিলো! মেহেদী কিছু বলার আগে নাফিসাই বলে ফেললো,
- গোলকি তো কাছেই ছিলো, ফুটবল গোলকিতে না গিয়ে এদিকে এলো কেন?
- কি জানি!
- আমি জানি, কেন এসেছে।
- কেন?
- খেলোয়াড়ের নিশানা ভুল ছিলো।
- হাহাহা.... আচ্ছা! তুমি তো দেখছি ভালোই খেলতে জানো। চলো, নেমে পড়ো মাঠে, খেলা হয়ে যাক...
- ইচ্ছে নেই।
নাফিসা সেখান থেকে ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়ালো। মেহেদীর টিম তাকে ব-*কাবকি শুরু করেছে। সে ও মাঠের মাঝে যেতে যেতে চিৎকার করে বললো,
- ইচ্ছে আছে, সাথে হেরে যাবার ভয়ও আছে। তাই আসছো না...
নাফিসা তার কথায় কোন প্রতিক্রিয়া জানালো না। তার উপযুক্ত জবাব দিতে হলে এখন তাকে মাঠে নেমে খেলতে হবে। যা সে কিছুতেই করবে না। দিনার কাছে আসতেই দিনা বলে উঠলো,
- বলেছিলাম, বল আসতে পারে এদিকে।
- বল আসেনি, ইচ্ছে করে আনা হয়েছে।
- তুই বুঝলি কি করে?
- এটা সেকেন্ড টাইম ছিলো।
- মানে! আগে থেকেই জানা ছিলো?
- হুম। আর আসতে পারে বলেই আমি মাঠে পা বাড়িয়েছি।
- ডাল মে কুচ কালা হে! কি চলছে সত্যি করে বলতো!
- মানে?
- মানে বাইরে দেখাচ্ছেন একে অপরকে দেখতে পারেন না। মনে কি অন্যকিছু আছে নাকি! প্রেম টেম এমন কিছু? মেহেদী ভাইয়াকেও দেখলাম এক প্রকার হাসতে হাসতে মাঠে চললো!
- হিহিহি..... হাসালি আমায়! আর ডালে কালা থাকলে তো সহজেই চোখে পড়বে। চল...
- হুম..
কয়েকদিন পর ভার্সিটিতে নোটিশ এলো এক মাস পর ৭টি ভার্সিটির মধ্যে এক্সটার্নাল একটা প্রোগ্রামের আয়োজন আছে। "জয়গান" প্রোগ্রামটি শুধুমাত্র তরুণদের জন্য। ৩টি ধাপে প্রোগ্রামটি অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ, প্রথম দুই ধাপে বাছাই করে তৃতীয় ধাপে চ্যাম্পিয়ন নির্বাচন করা হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালক পলাশ স্যার অনেক ভেবে চিন্তে উনাদের ভার্সিটি থেকে মাস্টার্সের মেহেদী, অনার্স ফাইনাল ইয়ারের রিয়াদ আর ফার্স্ট ইয়ারের নাফিসাকে বেছে নিলেন।
তাদের একসাথে ডেকে স্যার তাদের মতামত জানতে চাইলেন। সকলেই পার্টিসিপ্যান্ট করতে প্রস্তুত। স্যারও খুশি হলেন তাদের আগ্রহ দেখে। এই একমাসের মধ্যেই ৩ধাপে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে তাই এখন থেকে নিয়মিত প্রাক্টিস করতে হবে তাদের। স্যার নির্ধারণ করে দিলেন, প্রতিদিন ক্লাস শেষে ১ ঘন্টা করে সময় দিতে হবে প্রাক্টিস এর জন্য। এতে মেহেদী সমস্যায় পড়ে গেলো, কারণ ক্লাস শেষ করে তাকে কোচিং-এ যেতে হবে। কোচিং মিস করলে তো তার উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে! তাই স্যারের সাথে কথা বলে সময়টা এগিয়ে লাস্ট ক্লাসে নিয়ে এলো। অর্থাৎ তারা ভার্সিটির লাস্ট ক্লাস টা মিস করে প্রাক্টিস করবে।
প্রাক্টিস শুরুও হয়ে গেলো। কারণ, নেক্সট উইকে ফার্স্ট স্টেপ চলবে। তাদের বন্ধুবান্ধবও তাদের গান শুনার জন্য ভার্সিটিতে অপেক্ষা করে মাঝে মাঝে ।
খুব ভালোভাবেই তাদের প্রাক্টিস চলছে।
এক সপ্তাহ পর পলাশ স্যার তাদের নিয়ে প্রোগ্রামে উপস্থিত হয়েছে।
৭টা ভার্সিটি থেকে সর্বমোট ২৩ জন পার্টিসিপ্যান্ট করেছে প্রোগ্রামে।
তাদের মধ্য হতে ১১জন বাছাই করা হয়েছে। অত্যন্ত খুশির বিষয়,
মেহেদী, রিয়াদ ও নাফিসা ৩ জনেই বাছাইকৃত!
মেহেদী ২য়, নাফিসা ৩য় এবং রিয়াদ ৮ম! পলাশ স্যার সহ ভার্সিটির সব শিক্ষক আর শিক্ষার্থী অনেক খুশি।
.
দিন যত যাচ্ছে মেহেদীর মনে ভয় তত বাড়ছে! জয়গান চ্যাম্পিয়ন হবে মাত্র একজন। এর উপর নাফিসা তার তীব্র প্রতিযোগী হয়ে উঠেছে। নাহ, এভাবে হচ্ছে না! নাফিসা তার আশেপাশে থাকলে সে এগোতে পারবে না! যে করেই হোক, নাফিসাকে প্রতিযোগিতা থেকে সরাতে হবে। ভার্সিটির ইন্টার্নাল প্রোগ্রাম হলে কোন প্রব্লেম ছিলো না। কিন্তু এক্সটার্নাল প্রোগ্রামে নাফিসাকে সহ্য হচ্ছে না মেহেদীর। এটা নিয়ে খুব বড় স্বপ্ন তার! কিন্তু নাফিসাকে সরাবে কিভাবে! মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে মেহেদীর! যখনই নাফিসার কাছে যাচ্ছে তখনই কোন না কোনভাবে ঝগড়া লেগে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তাকে সরানো যাবে না প্রতিযোগিতা থেকে। অন্য কোন ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু কি করা যায়!!!
দিনা তারাহুরো করে ক্লাসে ঢুকতে নিলেই কারো সাথে ধাক্কা খেতে যাচ্ছিলো। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো নাফিসা সামনে দাড়িয়ে! খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছে দিনাকে, তাই নাফিসা ব্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
- এতো খুশির কারণ কি, শুনি?
- কই, কিছু না তো!
নাফিসা সাথে সাথে সেদিকে উকি দিলো যেদিক থেকে দিনা দৌড়ে এসেছে। বারান্দায় একটা ছেলে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। এই মাত্রই হাত নামালো। হ্যাঁ, এটা সেই ছেলেটা ই যার সাথে দিনাকে আরো একবার কথা বলতে দেখেছিলো নাফিসা। নাফিসাকে উঁকি দিতে দেখেই ছেলেটি মাথা চুলকাতে-চুলকাতে চলে গেলো। এবার নাফিসা বললো,
- তুই বললি কিছু না, কিন্তু আমি যে অনেক কিছু দেখে ফেললাম! এবার কি হবে!!
- নাফিসা, চুপ। তুই কিছু দেখিস নি।
- হিহিহিহি..... আচ্ছা আমি কিছু দেখিনি। এবার বল এটা কি তোমার উনি?
- হুম।
- তা কি এমন বললো, যার ফলে এতো খুশি হয়ে দৌড়ে আসছিলেন?
- নাফিসা, ক্লাসে আছি। এদিকে আয় আমার সাথে।
দিনা নাফিসাকে টেনে কমনরুমের দিকে নিয়ে বারান্দায় ধীর গতিতে হাটতে লাগলো।
- এবার তো বল!
- কি বলবো! ও তো কিছুই বলেনি। হিহিহি....
- কিছু না বললে হাসলি কেন?
দিনা নাফিসার সামনে একটা ঘড়ি দেখিয়ে বললো,
- ওর ঘড়ি নিয়ে এসে পড়েছি।
- হিহিহি..... এজন্যই বুঝি ভাইয়া কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো!
- হুম।
- নাম কি ভাইয়ার?
- আবিদ হাসান।
- বাহ! আবিদ এর শেষে দ আর হাসান এর শেষে ন! দি আর না! দিনা! ভালোই তো!
- হিহিহি....
- কবে থেকে চলছে এসব?
- প্রায় দুবছর। তিনমাস পরে দুবছর কমপ্লিট হবে।
- দু..... বছর! কিভাবে সূচনা হয়েছিল?
- আমার মামাতো বোনের বিয়েতে দেখা হয়েছিলো। বর পক্ষ ছিলো। ভাইয়ার ফুপাতো ভাই।
- বাবাহ! কতো দূর পৌছে গেছে! একদিকে কনের ফুপাতো বোন আর অন্যদিকে বরের ফুপাতো ভাই! তা শুধু শুধু ঘড়ি নিয়ে এলি কেন! এটা কি তোর কোন কাজে লাগবে।
দিনা নাফিসার সাথে কথা বলতে বলতে ঘড়িটা তার হাতে পড়ছে আর খুলছে...
- ভালো করেছি নিয়ে এসেছি। একটা কথাও শুনে না আমার। আমার কাজে না লাগুক, ওর কাজেও লাগতে দিবো না।
- দেখতে কিন্তু অনেক ভদ্রলোক মনে হয়।
- হুম, অনেক ভদ্র। ওর পরিবার ও অনেক ভালো।
ওর মতো মানুষ আমি আর দেখিনি কখনো। যা বলবো তা ই করে।
- এখন না বললি একটা কথাও শুনে না তোর!
- আরে মাঝে মাঝে এমন করে। অর্থাৎ এমনিতে সব ঠিক আছে শুধু ওর নিজের প্রতি কেয়ার লেস!
- ওহ! বুঝেছি। অনেকের চেয়েও অনেক ভালো।
- হিহিহি... চল ক্লাসে যাই।
- হুম।
নাফিসা গ্যাপ ক্লাসে দিনাকে সাথে নিয়ে কিছুক্ষণ লাইব্রেরিতে বই পড়েছে।
পড়া শেষে বারান্দা দিয়ে আসার সময় চারজন মেয়ে এসে ঘিরে ধরেছে তাকে,
গতকাল কি গান গেয়ে থার্ড হয়েছে তা শুনার জন্য।
থার্ড কথাটা শুনে নাফিসার কেমন যেন লাগলো।
মেহেদী না থাকলে আজ হয়তো সে সেকেন্ড থাকতো! যাইহোক, ভাগ্যকে মেনে নিতে হবে।
সামনে কি হয়, তা দেখার অপেক্ষায় রইল নাফিসা।
কিন্তু এখন তার গান গাইতে মোটেও ইচ্ছে করছে না।
নাফিসা বলেছে তাদের, লাস্ট ক্লাসের সময় তাদের প্রাক্টিস চলবে, তখন যেন শুনে।
কিন্তু মেয়েগুলো মানছে না। তাকে জোর করেই যাচ্ছে।
হঠাৎ, পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
- এতো করে বলছে একটা গান গেয়ে শুনাতে পারছো না কেন তাদের?
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com