ভালোবাসি প্রিয় । পর্ব - ০৬
লেখাটা পড়ে নাফিসা হাসলো। বইটা বন্ধ করে বালিশ টা কোলে নিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ।
পরদিন ভার্সিটিতে পা রাখতেই মেহেদী সমান তালে নাফিসার সাথে হাটতে লাগলো। নাফিসা কিছু বলছেনা দেখে মেহেদী বললো,
- কুচ তুম কহো, কুচ হাম কাহে....
- কি বলবো?
- কি বলবে মানে! আমার প্রশ্নের উত্তর দিবে।
- কিসের প্রশ্ন?
- নাফিসা, তুমি বই পড়ো নি?
- কিসের বই?
- ইকোনমিকস।
-কেন! বইয়ে কি ছিল?
- নাফিসা, আমি শিউর তুমি বই পড়েছো। ইচ্ছে করে কথা এড়িয়ে যাচ্ছো!
আমি কিন্তু সিরিয়াস। প্লিজ কিছু বলো...
- কি বলবো?
মেহেদী এবার হাটা থামিয়ে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নাফিসার দিকে।
নাফিসা এভাবে তাকাতে দেখে হিহি করে জোরে হেসে ক্লাসের দিকে চলে গেলো।
দিনার সাথে দেখা হতেই জিজ্ঞেস করলো আবিদকে পেপার দিয়েছে কিনা! দিনা উত্তরে হ্যাঁ জানালো।
আজ ক্লাস করতে তেমন একটা ভালো লাগছে না,
তাই দিনাকে অফার করলো ক্যান্টিনে চটপটি খাওয়ার জন্য।
পরপর দুটো ক্লাস করে ক্যানটিনে চলে গেলো।
অর্ডার করার দুমিনিট পর চটপটি চলে এলো।
আহা! গরম গরম চটপটি, সাথে টক পানি! গরম ধোঁয়া উঠে যাচ্ছে প্লেট থেকে।
দু চামচ মুখে দিতেই ফুরুৎ করে মেহেদীর আগমন!
মেহেদী এসে তারাহুরো করে নাফিসার পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
দিনা নাফিসা দুজনেই অবাক! এভাবে তাকাতে দেখে মেহেদী বললো,
- এভাবে তাকাচ্ছো কেন আমার দিকে! শুধু শুধু আমাকে দেখে লাভ নেই!
আমি তোমাদের মতো এতো সুন্দর নই।
তারা দুজনেই হেসে উঠলো। তাদের হাসি দেখে মেহেদী আবার বললো,
- দিনা, রাগ করো না। তোমার হাসি থেকে নাফিসার হাসি অনেক সুন্দর। না মানে আমার কাছে মনে হয় আরকি! আবিদ থাকলে হয়তো তোমার হাসিটাই বেশি সুন্দর বলতো।
দিনা মিটিমিটি হাসছে আর নাফিসা রাগে ফাটছে!
- আপনি এখানে কেন?
- কি আপনি আপনি শুরু করেছো! দিনাই তো, অন্য কেউ তো আর নেই এখানে। তুমি দিনার ব্যাপার সব জানো, তাহলে আমাদের কথা দিনার কাছে লুকাচ্ছো কেন!
- মানে!
- ওফ! ড্রামা বন্ধ করো তো!এসবের মানে আজকাল ছোট বাচ্চারাও জানে!
দিনা নাফিসার দিকে অবাক হয়ে তাকালে নাফিসা বললো,
- দিনা, সত্যি বলছি। আমি তোর কাছে কিছুই লুকাচ্ছি না!
- ভাইয়া আপনি কি পা-*গল হয়ে গেছেন!
- হুম, প্রেম পা-*গলা!
- হিহিহি..... তা এখানে এসেছেন কেন!
- কেন আবার! তোমাদের সাথে চটপটি খেতে। মামা, চটপটি শেষ না?
ক্যানটিনের ম্যানেজার জবাব দিলো, "না" মেহেদী আবার বললো,
- আচ্ছা, তার মানে শেষ! কিন্তু চামচ তো হবে, একটা চামচ পাঠান।
- হিহিহি.... ভাইয়া মামা বলেছে চটপটি শেষ না। এখনো আছে...
- একটু বেশিই বুঝে ফেলেছো তুমি, আমি বলেছি শেষ না? মামা বলেছে না। না এবং না কেটে গেলে বাকি আছে শেষ! তারমানে শেষ....
- হিহিহি....
কথা বলতে বলতে ক্যান্টিনে কর্মরত ছোট ছেলেটি চামচ নিয়ে হাজির।
- দূর ব্যাটা! চামচ আনতে এতোক্ষণ লাগে! চটপটি তো ঠান্ডাই হয়ে গেছে! নাফিসা খাও খাও...
নাফিসাকে খেতে বলে মেহেদী নিজেই নাফিসার প্লেট থেকে খাওয়া শুরু করলো। দিনা নাফিসা দুজনেই অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো। মেহেদী নাফিসার চামচ দিয়ে নাফিসার মুখে তুলে দিলো। মেহেদী এখন এটা করবে, কেউ ভাবতেই পারেনি! নাফিসা রেগে তাকাতেই মেহেদী বললো,
- বুঝেছি তো আমি খাইয়ে দেওয়ার জন্যই হা করে ছিলে। সমস্যা নেই, দিনা ছাড়া কেউ দেখেনি। নেক্সট ও কি আমি তুলে দিবো?
- আপনি আমার প্লেট থেকে খাচ্ছেন কেন?
- শুনলে না, চটপটি আর নেই। তাছাড়া এক প্লেটে খেলে ভালোবাসা বাড়ে গো ভালোবাসা বাড়ে। দিনা খেয়েছো কখনো আবিদের সাথে এভাবে?
- না।
- হালকা হালকা প্রেম তোমাদের। ফুউউউউই দিলে বাতাসের সাথে উড়ে যাবে।
আমাদের প্রেম গভীরের চেয়েও অনেক গভীর। তোমরা দুবছরেও এতোটা গভীরে যেতে পারো নি।
নাফিসা খাচ্ছো না কেন? বিল আমি দিয়ে দিবো চিন্তা করো না। দিনারটা সহ দিয়ে দিবো।
আর শোনো, দিনা তো জেনেই গেছে আমাদের ব্যাপারে।
তাই দিনার সামনে এখন থেকে আর লুকাচুপি খেলতে হবে না।
দিনা খেতে লাগলো, আর বলতে লাগলো,
- নাফিসা খা, খা... ভাইয়া প্লেট একটা কিন্তু চামচ দুইটা হলো কেন?
- কি বলো তোমার সামনে এক প্লেটে খাবো বলে এক চামচেও খাবো নাকি!
লজ্জা করে না বুঝি আমাদের! সেটা তো চলবে গোপনে...
- হিহিহি...
- দিনা তুই যাবি এখন আমার সাথে?
নাফিসা বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো, মেহেদী হাত টেনে আবার বসিয়ে দিলো।
- দিনার প্লেটের অর্ধেকও খাওয়া হয়নি, এখনি উঠে যাবে! আর তুমি উঠে যাচ্ছো কেন!
ভালোবাসার মানুষ উঠে পড়লে কি খাবারের টেস্ট থাকে! আমারও খাওয়া শেষ হয়নি, বসে থাকো।
- আচ্ছা! এবার টেস্ট বাড়িয়ে দিচ্ছি....
নাফিসা প্লেটে মরিচের গুঁড়ো ঢেলে দিলো।
- এবার খান...
মেহেদী তার সবটুকু খেয়ে নিলো।
- খুশিতো এবার?
দিনা নাফিসা দুজনেই হা করে আছে।
- ভাইয়া এমন ঝাল কিভাবে খেলেন!!!
- প্রেমে পড়লে নাকি সব খাবার মিষ্টি লাগে। আজ তার প্রমাণ পেলাম....
যাইহোক, বিল দিয়ে আসি আমি। তোমরা আরো কিছু খাবে নাকি? আমি অর্ডার করে দেই।
- নাফিসা তোর তো খাওয়া হয়নি। খাবি কিছু?
- না চল। আর বিল আমি দিয়ে দিয়েছি।
- গার্লফ্রেন্ড নাকি শুধু খরচ বাড়ায়। আমার ক্ষেত্রে উল্টো! তুমি তো আমার খরচ কমিয়ে দাও!
নাফিসা আর কিছু না বলে দিনার সাথে বেরিয়ে গেলো।
গানের প্রাক্টিস এর সময় মেহেদী আজ প্র্যাক্টিস করতে চাইছে না।
স্যারকে বলে বাসায় চলে যেতে চাইছে।
নাফিসাও দেখলো মেহেদীর চোখ মুখ লাল হয়ে আছে!
স্যারও জিজ্ঞেস করছিলো মেহেদী অসুস্থ কি না! মেহেদী বললো সে ঠিক আছে,
তবে একটু খারাপ লাগছে তাই চলে যাবে। স্যার সম্মতি দিলে মেহেদী বাসায় চলে গেলো।
.
মেহেদী ছাড়া আজ শুধু নাফিসা আর রিয়াদের প্রাক্টিস চললো।
গত দুদিন যাবত মেহেদী ভার্সিটি আসেনি। দুদিন পর দিনা ক্লাসে এসেই নাফিসাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।
- আরে হচ্ছে টা কি!
- লাভ ইউ দোস্ত! ওহ, না এটা বলা যাবে না। থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ ডিয়ার।
- পা-*গল হয়ে গেলি নাকি!
- হুম। হিহিহি...
- কি হয়েছে, সেটা বল...
- বাবা মা আবিদের সাথে বিয়ে দিতে রাজি.... (হাতটা নাফিসার সামনে বাড়িয়ে) গট এনগেজড!
- এটা কিন্তু একদমই ঠিক হলো না! তুই আমাকে ইনভাইট না করে এনগেজড হয়ে গেলি!
- সরি দোস্ত, এরকম কিছু হবে আমি ভাবতে পারিনি। কাল আবিদের বাবা মা দেখতে এসে হঠাৎ করেই হলো। আর পরের শুক্রবার মানে, ৯দিন পর বিয়ে ঠিক করলো।
- হোয়াট! এতো তারাতাড়ি!!
- হুম। আবিদের বাবা মা বললো তারা কোথাও বেড়াতে যাবে। ফিরতে ২/১ মাস দেড়ি হবে। এজন্য হয় এ সপ্তাহে বিয়ে হবে আর না হয় দুমাস পর। বাবা কি বুঝে সামনের সপ্তাহ বাছাই করলো!
- যাক ভালোই হয়েছে। শুভ কাজে দেরি করতে নেই। হিহিহি....
- তোকে কিন্তু দু তিনদিন আগেই যেতে হবে। বাবা মা যাবে তোদের বাসায় দাওয়াত করতে।
- এতো আগে গিয়ে কি করবো। বাসা তো কাছেই। তাছাড়া এগারো দিন পর আমাদের সেকেন্ড টার্ম কমপিটিশন।
- আমাদের বাসা থেকে আসবি। আর দু একদিন প্রাক্টিস মিস হলে কিছু হবে না।
তুই এমনিতেই ভালো গাইতে পারছ।
- আহহ! সবাই নিজ স্বার্থে মতলবি!
- হিহিহি... ভালো কথা মনে হয়েছে, মেহেদী ভাইয়া নাকি সেদিন ঝাল খাওয়ার পর জ্বরে ভুগছে। তাই দুদিন যাবত ভার্সিটি আসছে না! ঝালে ভাইয়ার এলার্জি আছে। বেচারা প্রেমে পড়ে এলার্জির কথা ভুলে গেছে!
- ভালো হয়েছে! আমি কি বলেছি নাকি, ঝাল খেতে!
- সত্যি করে বলতো, কি এমন করলি যার ফলে হঠাৎ প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে!
- আশ্চর্য! কি আযব কথাবার্তা বলছিস! আমি কিছু করিনি...
সেদিন ভার্সিটিতে এসে মেহেদীকে না দেখলেও ক্লাস শেষে প্রাক্টিস এ ঠিকই দেখেছে।
রিয়াদের প্রাক্টিস চলাকালে নাফিসা চেয়ারে বসে রইলো। মেহেদীও কাছে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
- কতোদূর এগিয়েছো নাফিসা?
- যতোদূর সম্ভব।
- আমি তো শুধু সেকেন্ড গুনেছিলাম কখন ভার্সিটি আসবো আর তোমার সাথে দেখা হবে!
- তাই নাকি! কতো সেকেন্ড গুনেছেন শুনি?
- কতো সেকেন্ড যেনো...... এই দেখো তোমাকে দেখার পর সব ভুলে গেছি!
- হিহিহি....
মেহেদী চুপিচুপি নাফিসার পার্সে কিছু রাখলে নাফিসা তা দেখে ফেললো। তাই বললো,
- ব্যাগে কি রেখেছেন তুলে নিন।
- এমন কেন করো!
- আমি কিন্তু ফেলে দিবো।
- আচ্ছা, ফেলে দিয়ো। কিন্তু আমার সামনে ফেলো না।
মেহেদী আর সেখানে বসে না থেকে উঠে চলে গেলো। নাফিসা শুধু ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com