ভালোবাসি প্রিয় । পর্ব - ০৪
নাফিসা পেছনে তাকিয়ে দেখলো মেহেদীর ফ্রেন্ড রিসাদ! রিসাদ আবার বলতে লাগলো,
- একটা গানের রিকোয়েস্ট ই তো করছে। তাছাড়া তোমার বড় আপুরা রিকোয়েস্ট করছে, তাও না!
নাফিসা জবাব দিলো,
- আচ্ছা গান গাইবো। তবে একটা শর্তে,
- কি?
- মেহেদী ভাইয়াকে গিটার বাজাতে হবে।
রিসাদ হা করে রইলো! আর মনে মনে বললো, " মেহেদী গিটার না বাজিয়ে তোমার মাথায় গিটার দিয়ে বাড়ি দিবে!" নাফিসা চুপ থাকতে দেখে রিসাদকে আবার বললো,
- আসেনি আজ মেহেদী ভাইয়া?
- হ্যাঁ, এসেছে। কিন্তু গিটার ছাড়াই তো তুমি সুন্দর গাও।
- কিন্তু আমি যে এখন গিটার সহিত গাইবো...
মেয়েগুলো বললো,
- আচ্ছা মেহেদী ভাইয়াকে আমরা বলবো গিটার বাজাতে।
মেহেদী আবিদের সাথে রিসাদের বাইকে গেইটের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে ছিলো।
মেয়েগুলো তাকে অনেক রিকুয়েষ্ট করে বললো।
মেহেদী খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে নাফিসা ইচ্ছে করেই তেলে বেগুন ভাজছে।
সেও রাজি হয়ে গেল। নাফিসাকে বাগানে নিয়ে আসা হলে নাফিসা গান গাইলো আর মেহেদী গিটার বাজালো।
মেয়েগুলোর সাথে আরো অনেক ছেলে মেয়ে জড়ো হলো।
নাফিসার গান শেষ হতেই সবাই মেহেদীকে গান শুনাতে বললো।
এবার মেহেদীর আবদার, নাফিসাকে তার সাথে গান গাইতে হবে।
মেহেদী কে জ্বালাতে পেরে এতোক্ষণ নাফিসার আনন্দ হলেও এখন খুব রাগ হচ্ছে।
সুযোগ বুঝে মেহেদীও তাকে পাল্টা ধাওয়া দিচ্ছে! এখন তো না করারও সুযোগ নেই।
তাকে গান গাইতেই হলো। দুজনের একত্রে গান শুনে সবাই খুব খুশি হলো।
আর তাদের খুব সুন্দর জুটির প্রশংসা করলো।
বাইরে থেকে খুশি দেখালেও ভেতরটা দুজনেরই রাগে ফাটছে।
যে যার মতো চলে গেলো। আসার সময় দিনা আবিদের কাছে ঘড়িটা ফেরত দিলো।
- দিচ্ছো কেন? রেখে দাও।
- তোমার ঘড়ি নিয়ে আমি কি করবো!
- তাহলে পরিয়ে দাও, হাতে নিবো না।
- তাহলে পায়ে পরিয়ে দিবো?
আবিদ হেসে তার হাত বাড়িয়ে দিলো।
দিনা ঘড়ি পরিয়ে দিতেই আবিদ দিনার হাতে একটা র্যাপিংএ মোড়ানো প্যাকেট দিলো।
- এটা কি?
- হবে হয়তো কিছু!
- আমার এসবের কোন প্রয়োজন নেই। তুমি নিজের প্রতি কেয়ার কর। এটাই এনাফ!
- ফেরত দিবে?
- না। চাকরির ইন্টারভিউ রেজাল্ট কি হলো?
আবিদ নিশ্চুপ থাকায় দিনা তার উত্তর পেয়ে গেল। তাই আবার বললো,
- আমার কাছে কিন্তু বেশি সময় নেই। আমি কাউকে কিছু বলতেও পারছি না। আর এসব সইতেও পারছি না। যা করার তারাতাড়ি করো। না হলে খারাপের চেয়েও খারাপ কিছু হয়ে যাবে।
আবিদ কিছু বলতে পারলো না। দিনা তার আগেই দ্রুত পায়ে চলে গেলো সেখান থেকে। চাকরি না হলে এখানে তার তো কোন দোষ নেই! সে তো চেষ্টা করেই যাচ্ছে!
নাফিসা সেখান থেকে ফিরে এসে বই পড়ছিলো। ক্লাস শুরু হতে আরো দশ মিনিট বাকি। শিক্ষার্থীরা দুএকজন ছাড়া সবাই বাইরে। দিনাকে মন খারাপ করে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে নাফিসা প্রশ্ন করলো,
- কি হয়েছে তোর? এভাবে আছিস কেন?
-.....
- দিনা, কি হয়েছে। বল আমাকে....
- আবিদকে ছাড়া আমি অন্য কারো কাছে যাবো না, নাফিসা। অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।
- কেন ভাইয়ার ফ্যামিলি কি তোকে মেনে নিবে না?
- ওর ফ্যামিলিতে কোন প্রব্লেম নেই। কিন্তু আমার ফ্যামিলি কি মানবে! এদিকে বাসায় আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলা হচ্ছে।
- বাসায় বলেছিস ভাইয়ার কথা?
- না।
- না বললে তো বিয়ে ঠিক করবেই।
- কি বলবো আমি! কিছু বললেই তো জানতে চাইবে ছেলে কি করে, পরিবারের অবস্থা কেমন! তখন আমি কি জবাব দিবো! সব ফ্যামিলি চায় তাদের মেয়েকে তাদের চেয়েও উচ্চ ফ্যামিলিতে বিয়ে দিতে। আবিদের অবস্থা এতোটা ভালো না। প্রায় আমাদের চেয়েও একটু নিম্ন।
- বাসায় বলিস নি। অথচ আগে থেকেই জানা তোর ফ্যামিলি কি বলবে না বলবে! প্রেমে পড়ার আগে আবিদের অবস্থা জেনে নিলি না!
- অবস্থা, ধনসম্পদ, মর্যাদা, রূপ দেখে কেউ কাউকে ভালোবাসে না, নাফিসা।
মানুষের মনটা সবথেকে বেশি মূল্যবান।
- কে বলেছে! রূপ দেখেই তো মানুষ প্রেমে পড়ে। পরেই না মনটা যাচাই করে।
তেমন তোর ফ্যামিলিও এটাই করবে।
- এখন আমি কি করবো বল..!
- বাসা থেকে পালিয়ে বিয়ে কর।
- কি যা তা বলছিস! এটা আমি কখনোই করবো না। বাবা মায়ের একটাই মেয়ে আমি।
আমাদের দু ভাইবোনকে নিয়ে, আমাদের স্বার্থের কথা ভেবে তাদের সকল চেষ্টা। তা ধংস করে দেই কিভাবে!
- তাহলে, ভুলে যা আবিদ ভাইয়াকে। আর যার সাথে বিয়ে ঠিক হচ্ছে তাকে বিয়ে করে নে।
দিনা অশ্রুসিক্ত নয়নে, অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
- এটাও সম্ভব না!
নাফিসা মলিন হেসে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
- জীবন অনেক কঠিন। এমন কিছু সময় আসে যা মানুষকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দোটানায় ফেলে দেয়। আর সেই চিন্তা করতে করতেই মানুষ তার জীবনটাকে শেষ করে দেয়। কিন্তু এই বো-*কাপ্রান, একটা বারের জন্যও চেষ্টা করে দেখে না সে সফলতা অর্জন করতে পারে কি না! আগে তুই বাসায় বল, তারপর দেখ কি হয়।
- সেই সাহস নেই আমার। অন্তত একটা চাকরি যোগাড় করতে পারলেও আমি একটু সাহস পেতাম। কবে থেকে বলছি একটা চাকরি যোগাড় করতে। একটা কথাও আমার শুনছে না। খুব বেশি কিছু চেয়েছি আমি তার কাছে! কেউ কি কোন বেকার ছেলের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিবে! অবশ্য এতে তারও দোষ দেয়া যায় না, সে চেষ্টাও করছে অনেক।
- বুঝেছি খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছেন। আর খুব দামি ও কঠিন একটা জিনিস চেয়েছেন, যা বাংলাদেশে খুজে পাওয়া খুব এবং খুবই কঠিন। চাকরি বললেই আর খুজলেই পাওয়া যায় না। ভাগ্যেও থাকতে হবে। ভাইয়া কোন সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স কমপ্লিট করেছে?
- একাউন্টিং ই।
- আমি যাবো তোর বাসায় আংকেল আন্টির সাথে কথা বলতে।
- কিহ!!
- কি আবার! নিবি না নাকি তোর বাসায়?
- আমি সেটা বলছি না! তুই কথা বলে তো আমার ঘুম হারাম করে দিলি! যদি বাবা মা রেগে আরো উলটাপালটা কিছু করে ফেলে!
- করলে করবে, ধরে নিবি তা তোর ভাগ্যে ছিল। চুপ করে বসে থাকলে তো আর কোন সমাধান খুঁজে পাবি না!
- কবে যাবি?
- আজ যাবো না। কালকে দেখি...
- আচ্ছা।
বাসায় ফিরে মেহেদী তার গিটারকে সাবান দিয়ে ইচ্ছে মতো ঘষেমেজে ওয়াশ করতে লাগলো। রাগে তার গা ঝিমঝিম করছে। এই গিটার শেষ পর্যন্ত ওই মেয়ের গানে ব্যাবহৃত হলো! মেহেদীর মা ছেলের কান্ড দেখে অবাক!
- কি করছস এইসব! পা-*গল হইয়া গেছস! নষ্ট হইয়া যাইবো তো!
- হোক নষ্ট!
- আরে! ওঠ! গিটার দে। কার জিদ এর উপর ঝারতাছস?
মেহেদী কোন জবাব না দিয়ে গিটার রেখে চলে গেলো। মা গিটার সুতি কাপড় দিয়ে মুছে যত্নসহকারে রেখে দিলেন।
পরদিন ভার্সিটি একটু আগেই চলে এলো মেহেদী। নাফিসা গেইট দিয়ে ঢুকতেই মেহেদী তার সমানে হাটতে লাগলো। নাফিসা একটু অবাকই হলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
- কিছু বলবেন?
- হ্যাঁ, তোমার সাথে পাশাপাশি হাটতে পারি?
নাফিসা এবার চরম পর্যায়ে অবাক!!! অত:পর জবাব দিলো,
- হাটছেন ই তো!
- হ্যাঁ, এটাই বলতে চাচ্ছি। আর কিছু না।
- আজব মানুষ!
নাফিসা ক্লাস পর্যন্ত এসে ক্লাসে প্রবেশ করলে মেহেদী বারান্দা দিয়ে তার ক্লাসের দিকে চলে গেলো। গ্যাপ ক্লাসে দিনার সাথে ক্যান্টিনে বসে কফি খাচ্ছিলো আর গল্প করছিলো। হঠাৎ মেহেদীর ফ্রেন্ড রিসাদ এসে দিনাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
- দিনা, কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে আবিদ তোমাকে ডাকছে।
দিনা একটু অবাক হলো, কারণ আবিদ ওকে কখনো এভাবে কাউকে দিয়ে ডাকে না। তাও রিসাদ তার ফ্রেন্ড, হয়তো কোন প্রয়োজনে ডেকেছে। তাই ভেবে নাফিসাকে বলে দিনা বেরিয়ে গেলো ক্যান্টিন থেকে। রিসাদ নাফিসাকে বললো,
- একটু বাইরে আসবে নাফিসা? ক্যান্টিনের ওপাশটায়...
- কেন?
- তোমার সাথে একটু কথা ছিলো।
কয়েকদিন যাবত রিসাদের আচরণ ভালো লাগছে না নাফিসার কাছে। কাল আবার ওই আপুদের সাথে জোট হয়ে গান গাইতে বললো। আজ কথা বলার জন্য সুযোগ খুজছে! দিনাকে হয়তো এজন্যই পাঠিয়ে দিয়েছে। এতোসব ভেবে নাফিসা জবাব দিলো,
- না, আমি এখন কোথাও যাবো না। যা বলার এখানেই বলুন।
রিসাদ একটু আশেপাশে তাকিয়ে নাফিসার পাশেই বসে পড়লো।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com