সুরা ইউসুফের ৫ ও ৬ আয়াতের তাফসীর । তাফসীর ইবনে কাসীর
৫ নং আয়াতের তাফসীর: হযরত ইয়াকুব (আঃ) স্বীয় পুত্র হযরত ইউসুফের (আঃ) স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনে তাঁকে যে কথা বলেছিলেন আল্লাহ তাআ’লা এখানে ঐ খবরই দিচ্ছেন। তিনি এই স্বপ্নের ব্যাখ্যাকে সামনে রেখে পুত্র ইউসুফকে (আঃ) সতর্ক করতে গিয়ে বলেনঃ “হে আমার প্রিয় পুত্র! তোমার এই স্বপ্নের কথা তুমি তোমার ভাইদের সামনে বর্ণনা করো না।
কেননা এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা এই যে, তোমার ভ্রাতাগণ তোমার সামনে খাটো হয়ে যাবে। এমনকি তারা তোমার সম্মানার্থে তোমার সামনে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে মাথা নত করবে। সুতরাং খুব সম্ভব যে, তোমার এই স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনে এর ব্যাখ্যাকে সামনে রেখে তারা শয়তানের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে যাবে এবং এখন থেকেই তোমার সাথে শত্রুতা শুরু করে দেবে।
আর হিংসার বশবর্তী হয়ে ছলনা ও কৌশল করে তোমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করবে। রাসূলুল্লাহর (সঃ) শিক্ষাও এটাই তিনি বলেছেনঃ “ তোমাদের কেউ যদি ভাল স্বপ্ন দেখে তবে সে যেন তা বর্ণনা করে। আর কেউ যদি কোন খারাপ স্বপ্ন দেখে তবে সে যেন (শয়ন অবস্থায়) পার্শ্ব পরিবর্তন করে এবং বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে; আর এর অনিষ্টকারীতা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং কারো কাছে যেন তা বর্ণনা না করে, তাহলে ঐ স্বপ্ন তার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না।
মুআ’বিয়া ইবনু হায়দাহ্ আল-কুশায়বী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যে পর্যন্ত স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা না হয় সেই পর্যন্ত তা পাখীর পায়ের উপর থাকে (অর্থাৎ উড়ন্ত অবস্থায় থাকে), আর যখন ওর ব্যাখ্যা বর্ণিত হয় তখন তা সংঘটিত হয়ে যায়। (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) এবং কোন কোন আহলে সুনান বর্ণনা করেছেন)একারণেই এ হুকুমও নেয়া যেতে পারে যে, নিয়ামতকে গোপন রাখা উচিত,
যে পর্যন্ত না ওটা উত্তমরূপে লাভ করা যায় এবং প্রকাশিত হয়ে পড়ে। যেমন হাদীসে এসেছেঃ “প্রয়োজনসমূহ পুরো করার ব্যাপারে ওগুলি গোপন করার মাধ্যমে সাহায্য নাও, কেননা যে ব্যক্তি কোন নিয়ামত লাভ করে তার প্রতি হিংসা করা হয়ে থাকে।
৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআ’লা হযরত ইয়াকুবের (আঃ) উক্তির সংবাদ দিচ্ছেন, যে উক্তি তিনি তাঁর পূত্র হযরত ইউসুফের (আঃ) ব্যাপারে করেছিলেন। তিনি তাঁর পুত্রকে বলেছিলেনঃ বৎস! যেমনভাবে আল্লাহ তাআ’লা তোমাকে মনোনীত করেছেন যে, স্বপ্নে তোমাকে এই তারকাগুলি, সূর্য এবং চন্দ্রকে তোমার প্রতি সিজদাবনত অবস্থায় দেখিয়েছেন, তেমনিভাবে তিনি তোমাকে নুবওয়াতের উচ্চ মর্যাদাও দান করবেন এবং তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিবেন।
আর তিনি তোমার প্রতি তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করবেন অর্থাৎ তোমাকে রাসূলরূপে প্রেরণ করবেন এবং তোমার প্রতি ওয়াহী পাঠাবেন।
যেমন তিনি ইতিপূর্বে তাঁর খলীল বা দোস্ত ইবরাহীমের (আঃ) প্রতি ও ইসহাকের (আঃ) প্রতি ওয়াহী পাঠিয়েছিলেন ও নুবওয়াত দান করেছিলেন, যাঁরা ছিলেন তোমার পিতামহ ও প্রপিতামহ। নুবওয়াতের যোগ্য কে বা কারা তা আল্লাহ তাআ’লা ভালরূপেই অবগত রয়েছেন।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com