Breaking News

তোর চোখের মায়ায় । পর্ব - ০৭


রাত ১২ঃ৩০ মিনিট,,,

নিজের রুমে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে রিফাত। কিছুতেই ঘুম আসছে না তার, বারবার মেঘলা তিয়াশের সাথে কথা বলার দৃশ্য টা মনে পড়ছে। রিফাত এর আগে কখনো তিয়াশকে দেখে নি, মেঘলার সাথে কি সম্পর্ক সেটাও জানে না । রিফাতের বারবার ভাবছে হচ্ছে কে এই ছেলেটা , মেঘলার সাথেই বা কি সম্পর্ক। নিজের মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না রিফাত।

অনেক ভেবে সে সিদ্ধান্ত নিলো কালকে কলেজে গেলে মেঘলাকে জিজ্ঞেস করবে,
কিন্তু ততক্ষনে রিফাতের মন মানছে না।
আর না পেরে রিফাত ফেসবুকে ডুকে মেঘলাকে মেসেজ দিলো।
তাতেও কোনো লাভ হলো না, কারন মেঘলা তখন অফলাইনে ছিলো।
আর কোনো উপায় না পেয়ে রিফাত রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো এবং ঘুমানোর চেষ্টা করে।

সকালের হালকা রোদ বালির উপর পড়তেই চিকচিক করে উঠছে।রবীন্দ্রনাথের কবিতার একটা লাইন বারবার মনে পড়ছে,
"চিকচিক করে বালু,কোথাও নেই কাঁদা"
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছে মেঘলা।
মাত্রই তন্দ্রায় ব্যাঘাত ঘটেছে, সাথে সাথেই ব্রাশ নিয়ে বেলকনিতে চলে আসলো মেঘলা ।
উদ্দেশ্য সকালের প্রকৃতি দেখা, এমনিতে মেঘলা তেমন একটা ভোরে উঠতে পারে না।
আজ যেহেতু একটু তাড়াতাড়ি উঠছে তাই সকালের স্নিগ্ধ বাতাস
গায়ে লাগানোটা কোনোভাবেই মিস করতে চাইছে না মেঘলা।
"ব্রাশ করা শেষ হতেই ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো,
সকলের সাথে ব্রেকফাস্ট সেরে নিজের রুমে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ
ফেসবুকে নিউজফিড স্ক্রোল করে।
-এভাবেই কেটে যায় সারাদিন। মেঘলা তার মায়ের সাথে টুকিটাকি কাজকর্ম করে।
ওইদিকে রিফাতও নিজের ব্যস্ততায় সময় পার করে।

পরেরদিন,,,
"""" মেঘলা রিকশা থেকে নেমেই সোজা কলেজের গেইট টপকে দৌড়ে আসছে।
ক্লাস শুরু হতে আর মাত্র দুই মিনিট বাকি আছে, তাই কোনো রকমই দেরি করতে চাইছে না সে।
সিঁড়ি দিয়ে ঝড়ের গতিতে দৌড়ে আসছে মেঘলা,
আচমকা কারো সাথে ধাক্কা লাগতেই তাল সামলাতে না
পেরে ব্যক্তিটি নিচে পড়ে যায় এবং তার উপর মেঘলাও পড়ে।

--মেঘলা কার উপরে পড়ছে সেটা দেখার জন্য সামনে তাকাতেই ওর চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে যায়।
""ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে মেঘলা রিফাতের দিকে।
এই জন্যেই বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।
কথাটা যে বলেছিলো সে ও যে কথাটা ভুল বলে নি সেটা এই মুহূর্তে হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে মেঘলা।
কিন্তু কেন যে বারবার তার সাথেই এসব অদ্ভুত কান্ড ঘটে, সেটাই ভেবে পাচ্ছে না মেঘলা।
আবারো চোখ পিটপিট করে তাকালো মেঘলা রিফাতের দিকে, রিফাত ও তার দিকে তাকিয়ে আছে।
তবে রেগে আছে কি না সেটা বুঝা যাচ্ছে না।
ভয়ে এক প্রকার ঘাবড়ে গিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় মেঘলা বললোঃ
-" স্যরি স্যার, বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি।
একটু তাড়াতাড়ি যেতে গিয়ে এমনটা হয়েছে।
-"তো আজকে সারাদিন কি আমার উপর থাকার চিন্তা করছো নাকি।
রিফাতের কথাতেই মেঘলার হুঁশ আসে এতক্ষণ সে রিফাতের উপরে আছে,
মুহূর্তেই লজ্জায় লাল নীল হতে থাকে।তাড়াতাড়ি উঠতে গিয়ে হাত পিছলে
আবার রিফাতের উপর পড়ে মেঘলা।সাথে সাথে রিফাত চেঁচিয়ে বলে,
-"তুমি কি আজকে আমার কোমর ভাঙ্গার জন্য কলেজে আসছো নাকি,ইডি**য়ট।
রিফাতের চেঁচানো শুনে ভয়ে মেঘলা আতঙ্কে উঠে।
-"সরি স্যার, সরি সরি।

-তারপর মেঘলা তাড়াতাড়ি করে উঠে পড়ে।
সাথে সাথে রিফাতও উঠে দাঁড়িয়ে শার্ট ঝাড়তে ঝাড়তে ক্লাস রুমে চলে যায়।
রিফাত যেতেই মেঘলা একটু আগের ঘটনা মনে করে লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
হঠাৎই ওর মনে পড়ে রিফাত ক্লাস রুমের দিকে যাচ্ছে,
মুহূর্তেই লজ্জা ভুলে মেঘলা ক্লাস রুমের দিকে দৌড় দেয়।
কেননা রিফাত তার আগে ক্লাস রুমে চলে গেলে আবার বকা শুনতে হবে।
ক্লাস রুমের সামনে আসতেই রিফাত আর মেঘলা দুজনে আবার মুখোমুখি হয়।
মেঘলা দু'বার সরি বলে তাড়াতাড়ি গিয়ে নিজের সিটে বসে পড়ে।
-" যাক বাবা সময় মতো আসতে পেরেছি। (হাঁপ ছেড়ে)
একে একে সব গুলো ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে আছে মেঘলা, মাহি আর স্নেহা।
তখনই একটা ছেলে এসে বলে,
-"তোমাদের মধ্যে মেঘলা কার নাম।
-"আমিই মেঘলা,বলুন।
-" তোমাকে রিফাত স্যার ডাকছে, এক্ষুনি যেতে বলেছে।
একথা বলে ছেলেটি চলে যায় আর স্নেহা মাহি দুজনেই মেঘলার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
স্নেহাঃকিরে মেঘ তুই আজকে আবার কি করলি।
মাহিঃ স্যার তোকে ডাকছে কেন কি করেছিস তুই।
মেঘলাঃসেটা তো আমি ও জানি না।
এই বলে মেঘলা চলে যায়।মাহি আর স্নেহা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ওরা ভাবছে আজ হয়তো মেঘলার কপালে শনি আছে।

-রিফাতের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা।ভিতরে যাবে কি যাবে না সেটাই ভাবছে। মেঘলার ভাবনার মাঝেই রিফাতের চোখ যায় দরজার দিকে, আর সেখানে মেঘলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
-"কি ব্যাপার, ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন, ভিতরে আসো।
-"জ্বি স্যার।

--রিফাতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা আর রিফাত টেবিলে কিসের কাগজপত্র দেখছে,মেঘলা অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর ও রিফাত কিছু বলছে না দেখে বলে,
-"স্যার, বলছিলাম কি,,,,
-"এক গ্লাস পানি দাও তো
রিফাতের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায় মেঘলা রিফাতের দিকে। মেঘলা অবাক হয়ে বলে
-"পানি দিবো স্যার।
-"হুম দিতেই তো বললাম। (না তাকিয়ে)
মেঘলা রিফাতের সামনের টেবিলে পানি রাখলো নিয়ে। তারপর আবার দাঁড়িয়ে রইলো রিফাত কিছু বলে কি না তাকে।কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরও রিফাত কিছু বলছে না দেখে মেঘলা বলে,

-"স্যার, বলছিলাম কি
-"ফ্যানটা একটু ছাড়াে তো।
-"কি বললেন স্যার।
-"ফ্যানটা ছাড়ো প্রচুর গরম লাগছে।
তারপর আর কি করার একরাশ বিরক্তি নিয়ে মেঘলা ফ্যান ছেড়ে দিয়ে রিফাতের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-"স্যার ছেড়ে দিয়েছি।
-"এটা কি করলে তুমি (ধমক দিয়ে)
রিফাতের ধমক শুনে কেঁপে উঠে মেঘলা।
-"আমি কি করেছি স্যার।
-"তোমার জন্য আমার সব কাগজপত্র উড়ে গেছে, এখন ফ্যান অফ করে এগুলো গুছিয়ে এদিকে নিয়ে আসো।
-"কিন্তু স্যার আপনিই তো বললেন ফ্যান ছাড়তে।
-"শাট আপ, তাড়াতাড়ি ফ্যান অফ করে কাগজগুলো উঠাও বলছি।
কোনো উপায় না পেয়ে মেঘলা কাগজগুলো গুছিয়ে রিফাতের সামনে টেবিলে রাখে।তারপর আবার দাঁড়িয়ে থাকে, খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর আবারও ভয়ে ভয়ে মেঘলা বলে,

-"স্যার, বলছিলাম কি,
-"কাগজগুলো৷ আলমারির উপরে রাখো।
-"কি,
-''রাখতে বলছি।
রিফাত যে তাকে জ্বালানোর জন্য এমনটা করছে সেটা বুঝতে পেরে মেঘলা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বলে,
-আমি পারবো না, আপনি বললেন ফ্যান ছাড়তে এখন বলছেন এসব গুছাতে।ডেকে এনে একটার পর একটা কাজ করিয়ে যাচ্ছেন।
এই বলে মেঘলা রিফাতের রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসে।আর রিফাত মেঘলার যাওয়ার পানে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। মূলত মেঘলাকে একনজর দেখার জন্যই তার এত বাহানা।
চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com