কষ্ট - হানিফ সংকেত । পর্ব - ০৩
কি করতে হবে রলবে তো?
আমাদের নাটকে অভিনয় করতে হবে ।
অভিনয়? আমি করবো?
হ্যাঁ, আপনি ।
এবং আপনি নায়কের চরিত্রে অভিনয় করবেন। পাশ থেকে বলে ওঠে কলেজের বাচাল বলে পরিচিত মৌসুমী।
হোঃ হোঃ করে হেসে ওঠে
সুমন,
তোমাদের কি মাথা খারাপ হয়েছে? আমি করবো নায়কের চরিত্রে অভিনয়? আমি ভালভাবে কথাই বলতে পারি না। সুমনকে কথা শেষ করতে না দিয়েই মৌসুমী ফোড়ন কাটে ।
শুনুন, নায়িকার নামটি শুনলে ধেই ধেই করে রাজী হয়ে যাবেন। এ নাটকে নায়িকার চরিত্রটি কে করছে জানেন?
কে? মুখ ফসকে প্রশ্নটি বেড়িয়ে আসে সুমনের।
আমাদের সিথী। সমবেতভাবে উত্তর দেয় সিথীর বান্ধবীরা।
সিথীর দিকে তাকিয়েই আচমকা একটা ধাক্কা খায় সুমন। সোজা তাকিযে আছে সুমনের দিকে। যেন বিচারক এখনই রায় ঘোষণা করবের সুমন ভেবে পায় না কি বলবে। সুমনকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়েই মৌসুমী বলে ওঠে
সুমন ভাই, মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ। আরে পুরো কলেজের ছাত্ররা এই চরিত্রটি করার জন্য পাগল হয়ে আছে। কিন্তু সিঁথী আপনি ছাড়া আর কারো সাথে এই চরিত্র করবে না। বুঝলেন, 'হ্যান্ডসাম' ।
সুমন অস্বস্তি বোধ করে। এই মেয়েটির মুখে কিছু আটকায় না নাকি । বেশ বেহায়াতো।
কি করছেন তো? সিঁথীর আকস্মিক প্রশ্নে চমকে ওঠে সুমন।
কাল জানালে হয় না? হঠাৎ মুখের ওপর না বলতে পারে না সুমন। সিঁথীর জন্যে । আসলে মেয়েটি খুব ভাল। সহজ-সরল ।
না। এক্ষুণি জানাতে হবে। সম্মতি না নিয়ে কিছুতেই ছাড়তে রাজী নয়। মৌসুমী ।
দেখ মৌসুমী, হঠাৎ করে বললে। আর আমিও হঠাৎ করে হ্যাঁ বলে দেয়াটা কি ঠিক হবে? একটু ভেবে নেই। সুমন বোঝাতে চেষ্টা করে।
সিঁথী হেসে ওঠে বলে-কিছু কিন্তু জিনিসের সিদ্ধান্ত কিছু হঠাৎই নিতে হয়। এই যে আকাশটি দেখছেন- এর মধ্যেও একটি হঠাৎ আছে। হঠাৎ মেঘ হয়। হঠাৎ মেঘ ডাকে । আর বৃষ্টিটাও কিন্তু হঠাৎ হয়। আমিও কিন্তু হঠাৎ রাজী হয়েছি। শুধু
আপনার কথা বলায়।”
কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না সুমন। বুঝতে পারছে সবাই সুপরিকল্পিতভাবেই উদ্যোগটা নিয়েছে। কলেজের অনেকেই ব্যাপারটা জানতো। শুধু সুমন জানতো না। সুমনের যোগ্যতা ওর সুবোধ চরিত্র এবং সুমন হ্যান্ডসাম। সবার অনুরোধে সুমন সেই নাটকে অভিনয় করেছিল।
করতালি মুখর মিলনায়তনে সবার মুখে মুখে ছিল সুমন আর সিঁথীর প্রশংসা। হান্ডসাম সুমন। প্রচন্ড হাসি পায় সুমনের। সেই 'হ্যান্ডসাম' সুমনকে কেউ দেখলে আজ চিনতে পারবে না। অনেকগুলো বছরের ব্যবধান। ১৮ বছরের সুমন এখন ২৯ বছরের যুবক।
তবে টগবগে বা দগদগে যুবক নয়। যেন নেতিয়ে পড়া কোন বৃদ্ধ। মিথ্যে খুনের বোঝা মাথায় নিয়ে সাক্ষী প্রমাণের অভাবে অন্যের শাস্তি ভোগ করে এসেছে দীর্ঘ ১২ টি বছর। কাউকে বিশ্বাস করাতে পারেনি।
এমনকি নিজের বাবা-মাকেও নয়। আদালতে বিচারের সময় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ দেখে সে নিজেই অবাক হয়েছে। এও কি সম্ভব? সত্যিই কি সে খুন করেছে আসিফকে ? না, আর কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক সুমন নিজে তো জানে যে সে খুন করেনি। সূর্য যেমন সত্যি, চাঁদ যেমন সত্যি, এটাও তেমনি সত্যি। কিন্তু মিথ্যের এই পৃথিবীতে সত্য বেঁচে আছে করুণার পাত্র হয়ে।
খৈ ভাজার মত এসব কথা ভাজতে ভাজতে উঠে দাঁড়ায় সুমন। এক জায়গায় এতোক্ষণ এভাবে বসে থাকা ঠিক নয়। মানুষের মেজাজ কেমন যেন তিরিক্ষি হয়ে থাকে। সুমন সময় মত না উঠলে তাকে উঠে যেতে বাধ্য করতে পারে দোকানী। জেল থেকে বেরিয়ে কয়েক ঘন্টায় এটুকু অন্তত সে বুঝতে পেরেছে। দুটি শক্তি দিয়ে যেন পুরো জাতি চলছে এখন।
ছল আর বল। ছোট বেলায় পড়েছিল সাফল্য সাধনার ফল। সাফল্য সহজলভ্য নয় । অনেক চেষ্টায়, অনেক পরিশ্রমে তাকে অর্জন করতে হয়। কারণ পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। জেল থেকে বেবিয়ে তার মনে হচ্ছে এদেশে একটি শ্রেণী খুব
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com