পরেরদিন সকালে মেঘলার ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে ওর পায়ে একটুও ব্যাথা নেই, আর পা টাও কেমন যেন আঠালো লাগছে,মনে হচ্ছে কেউ মলম লাগিয়েছে । হঠাৎই ওর কালকে রাতের কথা মনে পড়ে যায় , কালকে কলেজ থেকে আসার পর মেঘলা প্রায় একঘন্টা শাওয়ার নেয়, তারপর খেয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষন মোবাইল টিপে ঘুমিয়ে যায়, রাতে আর উঠে নি,
ওর আম্মু খাওয়ার জন্য অনেকবার ডেকেছে কিন্তু মেঘলা বলে দিয়েছে খাবে না। তাই আর উনিও ডাকেন নি।রাতে মেঘলা যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন ওর মনে হয়েছিলো, ওর পায়ে কেউ স্পর্শ করছে, কিন্তু চোখ খুলে অন্ধকারে কিছুই দেখতে পায় নি, এটাকে মনের ভুল ভেবে তেমন পাত্তা দেয় না একটু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়।মেঘলা বিছানার উপর বসে বসে এসব ভাবছিলো তখনই ওর চোখ যায় বেলকনির দিকে,
বেলকনির দরজা খোলা দেখে সেদিকে এগিয়ে যায়, গিয়ে দেখে বেলকনিতে রাখা গোলাপ ফুলের গাছটা টব সহ উল্টে পড়ে আছে। তারমানে কি সত্যিই রাতে বেলকনি দিয়ে কেউ রুমে প্রবেশ করেছে, কিন্তু কে সে, রিফাত স্যার না তো, না না কি ভাবছি আমি স্যার এরকম টা করতে যাবে কেন আর স্যার
তো আমাকে ভালো করে চিনেও না। তারপর আর বেশি কিছু না ভেবে জটচলদি ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসে , এসে দেখে সোফায় বসে মিস্টার আলতাফ আহমেদ খবরের কাগজ পড়ছেন আর এক হাতে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। মেঘলা গিয়ে ওর বাবার পাশে বসে,
-"গুড মর্নিং আব্বু
-"গুড মর্নিং মামনী, কেমন আছো,পড়াশোনা কেমন চলছে.?
-"জ্বি আব্বু ভালো।
কি ব্যাপার আমি কোনো স্বপ্ন দেখছি না তো এটা কি সত্যিই আমাদের মেয়ে, পাশে থেকে মেঘলার মা বললেন।
-"আম্মু তুমি ও না , বলে মেঘলা ওর আম্মুর দিকে তাকায়।সাথে সাথে মিসেস সালমা বেগম বলে উঠেন,
-"হয়েছে হয়েছে আমি তো মজা করছি, তা আজ এত সকাল সকাল আমার ঘুম পাগলি মেয়েটার ঘুম ভাঙ্গলো কি করে?
-"আম্মু তোমাকে তো বললামই আমাদের কলেজে নতুন টিচারের কথা অনেক রাগী দেরি হলে শাস্তি দেয়।
-"আচ্ছা ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি খেয়ে কলেজে যাও, সালমা বেগম ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাতে সাজাতে বললেন।
সবার সাথে নাস্তা শেষ করে মেঘলা কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হয়,কিছুক্ষন বাদেই কলেজে এসে পৌঁছে যায় । রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে কলেজের ভিতরে প্রবেশ করে। একে একে সবগুলো ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরে, সেদিন আর রিফাত মেঘলাকে কোনো বকা বা শাস্তি দেয় নি, রিফাত যতক্ষণ ক্লাসে ছিলো মেঘলাও ততক্ষণ একটা কথাও বলে নি। বাড়ি ফিরে প্রতিদিনের মতো লম্বা একটা শাওয়ার নেয় মেঘ, গরমে অবস্থা নাজেহাল।দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে যায়, বিকেলে উঠে মায়ের সাথে টুকটাক কাজকর্ম করে, সন্ধ্যায় কিছুক্ষন পড়তে বসে, রাতে ডিনার শেষে ঘুমিয়ে যায়।
পরেরদিন সকালে যথারীতি মেঘলা ঘুম থেকে উঠে যায়। আজকে শুক্রবার হওয়ায় মেঘলার বাবাও বাড়িতে আছেন,মেঘলা ব্রেকফাস্ট সেরে ওর বাবার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করে,তারপর নিজের রুমে চলে যায়।
দুপুর ২ঃ৩০,,,,,,,,
" খাওয়া দাওয়ার পর মেঘলা ওর আম্মুকে বলে বাহিরে বের হয়, মেঘলাদের বাড়িটা তিনতলা, মেঘলা-রা দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকে প্রথম তলায় বাড়িওয়ালা ও তৃতীয় তলা অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা থাকে, মেঘলা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, ওর বাবা সামান্য সরকারি কর্মকর্তা।মেঘলা-দের বাড়ি থেকে একটু দূরেই মাঠের মতো একটা ফাঁকা জায়গা আছে, বর্তমানে মেঘলা ওখানেই যাচ্ছে।
রিফাত এদিকে একটা কাজে যাচ্ছিলো নিজের গাড়ি করেই,ড্রাইভ করতে করতে
হঠাৎই ওর চোখ যায় রাস্তার পাশে থাকা খোলা মাঠ টায় আর ওর চোখ যেন সেখানেই আটকে যায়।
রিফাত মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে মাঠে থাকা রমণীটির দিকে,মাঠে মেঘলা ছোটো ছোটো ছেলে
মেয়েদের সাথে লাফালাফি করে খেলছে আর হাঁসছে।অপলকভাবে তাকিয়ে আছে রিফাত
মেঘলার দিকে, আর মুখে রয়েছে তার মিষ্টি হাঁসি। এই মুহূর্তে মেঘলাকে রিফাতের কাছে
একদম ছোট বাচ্চা মনে হচ্ছে , কে বলবে এই মেয়ে ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে,
দেখে তো মনে হচ্ছে ক্লাস টু বা থ্রির কোনো স্টুডেন্ট। এই মেয়ে যে সত্যিই চঞ্চল স্বভাবের সেটা যে কেউ দেখলেই বলতে পারবে। রিফাতের মুখ দিয়ে অটোমেটিক বেড়িয়ে আসে
এই মূহুর্তে রিফাতের ও ইচ্ছে করছে মেঘলার কাছে যেতে কিন্তু সব চাওয়া তো আর পূর্ণ হয় না, রিফাত আবারো মনোযোগ দিলো মেঘলার দিকে, একটা সাদা রঙের সেলোয়ার-কামিজ পড়ে আছে মেঘলা, চুলগুলো খোলা, কি সুন্দর হেঁসে হেঁসে কথা বলছে বাচ্চাদের সাথে, রিফাত চোখ বন্ধ করে নিলো, এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে রিফাতের ভিতর দিয়ে। যেন আবার সেই প্রথম দিনের মাতাল করা মায়ায় জড়ানো অনুভূতি। সেই মায়াবী চোখ, নেশালো ঠোঁট,কোমর ছড়িয়ে যাওয়া লম্বা ঘন কালো চুল, চেহারায় এক অদ্ভুত মায়, যেটা মনোমুগ্ধকর বানিয়ে দিয়েছে রিফাতকে। আনমনে হাসলো রিফাত.........
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com