পর্দার আড়ালের জগতের কিছু ব্যতিক্রম
মানুষকে কবরে রাখার পর পর্দার আড়ালের জগতের স্তরবদদ্গী হিসেবে মানুষের
গোটা দেহটা চারটা পদার্থের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া, এটাই হচ্ছে সাধারণ
নিয়ম কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায়, হাজার হাজার বছর আগে
ইন্তেকাল করেছেন অথচ লাশ অক্ষত অবস্থায় বিদ্যমান। সমস্ত নবী রাসূলগণের
লাশ অক্ষত অবস্থায় থাকে। আল্লাহতায়ালার পথে শাহাদাৎ বরণকারীদের লাশও
অক্ষত অবস্থায় থাকে। ওহুদের যুদ্ধে যারা শাহাদাত্তরণ করে ছিলেন তাদেরকে
ওছদের ময়দানেই দাফন করা হয়েছিল।
ছিচল্লিশ বছর পর হযরত মুয়াবিয়া (রা.) এর জামানায় বিশেষ প্রয়োজনে
তাদের লাশ তুলে অন্যত্র দাফন করা হয়েছিল।
তখন তাদের লাশগুলি থেকে তাজা রক্ত ঝড়তে দেখা গেছে।
হযরত আবু মুসা আশয়ারী (র.) যখন ইয়ামান জয় করেন। তখন দেখতে পান যে,
শহর রক্ষা প্রচীরের একাংশ ভেঙ্গে গেছে। তিনি তার সেনাবাহিনীকে প্রাচীরটি
মেরামত করতে নির্দেশ দিলেন। সেনাবাহিনীর লোকেরা প্রাচীরটি মেরামত করল।
কিন্তু টিকল না অল্প সময়ের মধ্যে প্রাচীরটি আবার ভেঙ্গে পরল। আবু মুসা
আশয়ারী (রাঃ) প্রাচীরটি আবার ভাল করে মেরামত করার নির্দেশ দিলেন,
দেয়ালটা পুনরায় মেরামত করা হল। কিন্তু টিকল না আবার ভেঙ্গে গেল। অতঃপর
হযরত আবু মুসা (র.) বললেন হে শহরবাসী! তোমরা কি বলতে পার ওখানে কি
আছে? দেয়ালটা বার বার মেরামত করা হচ্ছে। কিন্তু তা ভেঙ্গে যাচ্ছে কেন?
লোকেরা বলল আমরা শুনেছি ওখানে নাকি একটি কবর আছে। হযরত আবু মুসা
আশয়ারী (র.) বললেন, ওখান থেকে মাটি খোড়, দেখ- দেয়ালের নিচে কি আছে?
সেনাবাহিনী মাটি খুড়ে দেখতে পেলেন মাটির নিচে একটি লাশ তলোয়ারের উপর
বর করে সোজা দাড়িয়ে আছে। তার তলোয়ারে লেখা আছে-
انا حارث ابن مضض قتلت مع الصابئين
“আমি হারিছ ইবনে মাদাদ, অগ্নি পুজকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি”।
আলমে বরযখের মধ্যে এ এক আশ্চর্য নিদর্শন। যা দেখে মানুষেরা হেদায়েত
গ্রহণ করতে পারে। মানবরূপী মেশিন যার আদি স্রষ্টা আল্লাহতায়ালা, তাঁর বিধান
অনুযায়ী যদি মেশিন চালানো হয়, তবে তা ইসরাফিলের সিঙ্গার ফুৎকার পর্যন্ত
বিদ্যমান থাকবে। উল্লেখিত হারিছ ইবনে মাদাদ হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর
বংশধর। তিনি আরবে অগ্নি পুজকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। অতঃপর হযরত
আবু মুসা আশয়ারী (র.) বললেন লাশ অন্যত্র দাফন করে দাও। ওখান থেকে
লাশ হটানোর পরে দেয়ালটা পুনরায় মেরামত করে দেয়া হল।
এবার প্রচীর টিকে গেল। আল্লাহ তায়ালা তার অসীম কুদরতের নমুনা প্রকাশ করার জন্য
মাঝে মাঝে এমন কিছু রহস্য উদ্ঘাটন করে দেন যা দ্বারা মু'মিনের ঈমান আরও
তাজা হতে পারে, আর অবিশ্বাসীদের অন্তরে ঈমান প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
হযরত ওমর ফারূক (র.)-এর খেলাফাত আমলে নাজরানের একটি পতিত
জমিতে একটি লোক মাটি খুড়ছিল। হঠাৎ সে মাটির মধ্যে একটি লাশ দেখতে
পায়। লাশটি বসা অবস্থায় আছে তার কানের মধ্যে একটি তীরবিদ্ধ হয়ে আছে
যা এক কান হতে অন্য কান পর্যন্ত পার হয়ে গেছে। তার কান থেকে তাজা রক্ত
ঝড়ছে। তার হাতের আংগুলে একটি চাদির আংটি, আইটিটির উপরে লেখা
রয়েছে “রাব্বি আল্লাহ”।
ওমর ফারূক (র.) এর কাছে খবর পৌঁছানো হল, তিনি বললেন
“লাশটা যে ভাবে আছে ওভাবেই থাকতে দাও এবং মাটি এমনভাবে
সমান করে দাও যাতে কোন চিহ্ন না থাকে। অতঃপর ওভাবেই লাশকে মাটির
নিচে ঢেকে রাখা হল। উক্ত যুবকের কাহিনী সূরা বুরূজের শানে নুযুলে বিভিন্ন
তাফসীরে উল্লেখ আছে। ঐ যুবকের নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ইবনে নমীর। ঘটনাটি
সংগঠিত হয়েছে হযরত ঈসা (আ.)-এর তিরোধানের পরে এবং মুহাম্মাদ (স.)-
এর আবির্ভাবের পূর্বে। ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে, নাজরানের শাসক ছিল
একজন কাফির, তার দরবারে বড় একজন যাদুকর ছিল। যাদুকর বৃদ্ধ হয়ে
গেল। সে রাজাকে বলল আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি যে কোন সময় আমার মৃত্যু হতে
পারে, তাই আপনি আমার কাছে একটি মেধাবী ছেলে পাঠান যাতে আমি আমার
যাদুবিদ্যা ঐ যুবককে শিখিয়ে যেতে পারি। অন্যথায় আমার মৃত্যু হয়ে গেলে
যাদুবিদ্যা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বাদশাহ অনুসন্ধান করে একটি মেধাবী ছেলে খুঁজে
পেল। সে ছেলেটিকে যাদুবিদ্যা শিক্ষার জন্য বৃদ্ধ যাদুকরের কাছে পাঠাল।
ছেলেটি নিয়মিত যাদুকরের কাছে যাতায়াত করত। যাতায়াতের মধ্যে কোন
একদিন ছেলেটির সাথে এক রাহেবের সাথে দেখা হল।
রাহেব বলা হয় খৃষ্টান আলেমগণকে। ধীরে ধীরে রাহেবের সাথে ছেলেটির সম্পর্ক গড়ে উঠল। এক
পর্যায় ছেলেটি ইসলাম গ্রহণ করল এবং রাহেবের কাছ থেকে দ্বীন শিখতে লাগল,
ছেলেটা এখন একই সাথে যাদু বিদ্যাও শিখে এবং দ্বীনও শেখে। ছেলেটি
একদিন তার রাহেব ওস্তাদের কাছে বললেন ওস্তাদ আমাকে ইসমে আজম
শিখান, রাহেব বললেন, তোমার এখনও ইসমে আজম শিক্ষার সময় হয়নি।
ছেলেটি নিজেই ইসমে আজম শেখার চেষ্টা করল।
সে তীরের শলাকায় আল্লাহ তায়ালার এক একটি নাম লিখে তা আগুনে পোড়া দেয়,
শলাকাগুলি পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। তারপর কোন একদিন, শলাকার উপরে
আল্লাহতায়ালার এমন একটি নাম লিখল যে, শলাকাটি আগুনে নিক্ষেপ করার পর
তা লাফিয়ে আগুন থেকে বের হয়ে আসল। তখন সে ঐ নামটিকে চিহ্নিত করল এবং রাহেবকে
বলল ওস্তাদ! আমি এসমে আজম খুঁজে পেয়েছি। ছেলেটি উভয় ওস্তাদের কাছে
যাতায়াত অব্যাহত রেখেছে। কোন একদিন দেখা গেল একটি বাঘ রাস্তা
আবরুদ্ধ করে রেখেছে। যাত্রীরা পথ অতিক্রম করতে পারছে না সবাই দাড়িয়ে
আছে। এমতাবস্থায় ছেলেটি ওখানে উপস্থিত হল। ছেলেটি একটি কংকর হাতে
নিয়ে বলল; রাহেবের কাছ থেকে আমি যে আল্লাহর সন্ধান লাভ করেছি, আমি
সে আল্লাহর নামে বাঘটিকে আঘাত করছি।
কংকরের আঘাতে বাঘটি মারা গেল। ছেলেটি সম্বন্ধে মানুষের ধারণা সৃষ্টি হল যে,
ছেলেটির কাছে অলৌকিক কিছু আছে।
এভাবে ছেলেটি একদিন আল্লাহর নামে এক অদের চোখে হাত
বুলালে অন্ধ দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে পেল। রাজ দরবারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী
অন্ধ ছিল, সে ছেলেটির সাথে যোগাযোগ করল এবং অনুরোধ করল হে ছেলে!
তুমি কি আমার দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিতে পার? ছেলেটি বলল, আমি যে আল্লাহর
উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি, আপনি যদি ঐ আল্লাহতায়ালার উপর বিশ্বাস স্থাপন
করেন, তা হলে আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে পারেন। লোকটি
ইসলাম গ্রহণ করল। ছেলেটি তার চোখে হাত বুলানোর সাথে সাথে সে দৃষ্টিশক্তি
লাভ করল। এভাবে ছেলেটির খবর রাজদরবারে পৌঁছে গেল। অবিশ্বাসী রাজা
ছেলেটিকে ধমক দিল এবং বলল তুমি আমাদের ধর্মে ফিরে এসো অন্যথায়
তোমাকে হত্যা করা হবে। রাজা রাহেবকে এবং অন্ধ ব্যক্তিকে হত্যার নির্দেশ
দিল। তাদের হত্যা কার্যকর করা হল। এবার ছেলেটিকে (যার নাম আব্দুল্লাহ
ইবনে নমীর) বলা হল তুমি আমাদের দ্বীনে ফিরে না আসলে তোমাকে হত্যা করা
হবে। ছেলেটি ইসলাম ত্যাগ করতে রাজী হল না। রাজা তার সৈন্য বাহিনীকে
আদেশ করুল, আব্দুল্লাহ ইবনে মীরকে উত্তাল ভূ-মধ্য সাগরে ঢেউর মধ্যে
নিক্ষেপ করে হত্যা কর। রাজার বাহিনী যারা আব্দুল্লাহ ইবনে নমীরকে হত্যা
করতে গেল তারা সবাই ডুবে মরল। আব্দুল্লাহ ইবনে নমীর জীবন্ত ফিরে এল।
রাজা তাকে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার আদেশ দিল। যারা তাকে
পাহাড়ে নিয়ে গেল সবাই পাহাড় থেকে পরে গিয়ে মারা গেল ইবনে নমীর অক্ষত
অবস্থায় ফিরে এল।
বিষয়টি ক্রমশঃ সকল মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পরল। রাজা খুব চিন্তিত হয়ে পরল।
আব্দুল্লাহ ইবনে নমীরকে কীভাবে হত্যা করা যায়।
আব্দুল্লাহ ইবনে নমীর বললেন, রাজা আমাকে হত্যা করতে হলে আমার আল্লাহর
নামে আমাকে আঘাত করতে হবে। তখন বাদশহ একটি তীর হাতে নিয়ে “বি-
ইসমে রব্বিল গোলাম” অর্থাৎ আমি এই যুবকের রবের নামে আঘাত করছি,
বলে তীর ছুড়ে মারল, অমনি তীরটা আব্দুল্লাহ ইবনে নমীরের এক কান হতে
অপর কান পর্যন্ত ভেদ করল। যুবক শাহানাতরণ করল।
দৃশ্যটা দেখে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ যুবকের রবের উপর ঈমান আনল।
বাদশাহ মহাবিপদে পরে গেল, শেষ পর্যন্ত ঐ নও মুসলিমদেরকে হত্যা করার জন্য পরিখা খনন করে
তারমধ্যে আগুন ধরিয়ে দিয়ে জলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে, নব মুসলিমদেরকে
হত্যা করা হয়েছিল। শাহাদাৎ বরণকারী উল্লেখিত যুবকের লাশ হযরত ওমর
ফারক (র.)-এর জামানায় আল্লাহতায়ালা প্রকাশ করে ছিলেন। যার ফলে
মানুষেরা কুরআনের সত্যতাকে উপলব্ধি করতে পারে। কুরআনে এ ঘটনাকে
আছহাবুল উখদুদ নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com