Breaking News

তোর চোখের মায়ায় । পর্ব - ০৬



পরেরদিন মেঘলা একটা নীল রঙের শাড়ি পড়েছে, সাথে ম্যাচিং চুড়ি, গহনা,মাথায় বেলি ফুলের গাজরা,চোখে কাজল,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক,হালকা মেকাপে মেঘলাকে অসাধারণ লাগছে, মনে হচ্ছে যেন নীল পরি।

-" মাশাআল্লাহ, আমার মেয়েকে একদম পরীর মতো লাগছে, কারো যেন নজর না লেগে যায়। (এই বলে মিসেস সালমা বেগম মেঘলার হাতে হালকা করে কামড় বসিয়ে দিলেন।)
-"কি যে বলো না আম্মু, আজকে আমাদের কলেজে অনুষ্ঠান আছে, তাই তো এই সাজ, না হয় আমি এসব ঝামেলা করতাম নাকি।
-"তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।
-" ঠিক আছে আম্মু আমি এখন যাই।
এই বলে মেঘলা কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হয়।

কলেজে আসতেই স্নেহা মেঘলা কে বলে,
-"কিরে তোর এখন আসার সময় হলো,তুই না বললি তাড়াতাড়ি আসবি, এই তোর তাড়াতাড়ি, এত ঘুম কই পাস তুই, আজকের দিনটা অন্তত দেরি না করলে হতো না।
-" aww বেবি, রাগ করে না , এইতো আমি চলে আসছি।
-" ন্যাকামি করবি না, তোর ন্যাকামি দেখার জন্য আমরা বসে নেই। বলল মাহি
-" তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি।
-" তো কি তোকে আদর করে বলবে নাকি।বলল স্নেহা
-"হুম আদর করেই তো বলবি।
-"আইছি মহারানী, আদর করে বলতে হবো ওনাকে।

এটা সেটা বলতে বলতে যেখানে অনুষ্ঠান হচ্ছে সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলো ওরা।
হাঁটার সময় হঠাৎ করে শাড়ির সাথে পা বেঁধে পড়ে যেত নেয় মেঘলা,
সাথে সাথেই ভয়ে খিঁচে চোখ বন্ধ করে নেয়।তখনই মনে হচ্ছে কেউ ও-কে ধরে ফেলেছে,
কে ধরে রেখেছে দেখার জন্য সামনে তাকাতেই রিফাতকে দেখে একদফা ক্রাশ খায় মেঘলা।
রিফাত কালো পাঞ্জাবি পড়েছে, সাথে ম্যাচিং ঘড়ি, কালো রং সুজ, চুল গুলো জেল দিয়ে
একপাশে সেট করা।এই লুকে একদমই ড্যাশিং লাগছে রিফাতকে, ফর্সা মুখশ্রীতে কালো রং টা বেশ মানিয়েছে।

--"রিফাতও মেঘলা কে দেখে একদম হা। এই প্রথম মেঘলাকে শাড়িতে দেখলো রিফাত।
আসলে প্রতিটি মেয়েকেই শাড়িতে সুন্দর লাগে, যার প্রমান মেঘলা।
রিফাতের কাছে এই মূহুর্তে মেঘলাকে কোনো হুরপরীর থেকে কম লাগছে না।
অবশ্য মেঘলা এমনিতেই অনেক সুন্দরী, দুধে আলতা গায়ের রং,
টানা চোখ, মায়াবী ঠোঁট, হাঁসলে গালে টোল পড়ে। এক কথায় নজর-কাড়া সুন্দরী। রিফাত ভাবছে,,,
"উফফ, এই মেয়ে মনে হয় আমাকে আজকে মেরেই ফেলবে, এত সাজার কি আছে, তুমিতো এমনিতেই সুন্দর। সবাই কি নজরে তাকাচ্ছে, এই মেয়েকে ইচ্ছে করছে।
-" স্যার,এভাবে কি সারাদিন ধরে রাখবেন নাকি। মেঘলা কিছুটা চেঁচিয়ে বললো।
মেঘলার চিৎকার শুনে রিফাত ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে কিছুটা রেগে বললো,
-"এই মেয়ে দেখে চলতে পারো না , শাড়ি সামলাতে পারো না তাহলে পড়ছো কেন।
মেঘলা রিফাতের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, কি হলো স্যার হঠাৎ রেগে গেলো কেন।(মনে মনে
মেঘলাকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিফাত কিছুটা হকচকিয়ে উঠে।
পরক্ষনেই আবার বলে উঠে,
-"এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো, জানি আমি অনেক সুন্দর তাকিয়ে থাকাটা স্বাভাবিক। (কিছু টা ভাব নিয়ে)
-"এ্যাহ,,, মানুষের রুচি এত খারাপ হয় নি, আপনার মতো বুইড়া ব্যাটার দিকে তাকিয়ে থাকবে হুহ।
-" কি বললে আমি বুইড়া, আমাকে কোন দিক দিয়ে তোমার বুইড়া মনে হয়।(বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে)
--মাহি, স্নেহা, দ্বীপা সবাই তখন রিফাত কে দেখে পালিয়ে গেছিলো, কিন্তু এতক্ষণ পর্যন্ত মেঘলাকে যেতে না দেখে ওরা আবার এসে দেখে মেঘলা ও রিফাত দুজন দু'দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-"কিরে মেঘ,, এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন, অনুষ্ঠান তো শুরু হয়ে যাবে চল।বললো স্নেহা
-"হুম চল।মেঘলা বললো

মেঘলা একটু সামনের দিকে যেতেই পিছন থেকে রিফাত ডেকে উঠলো, রিফাতের ডাক শুনে মেঘলা পিছনে ফিরে বললো,
-"জ্বি স্যার বলুন।
-"শুনো বেশি লাফালাফি করবে না, এক জায়গায় বসে থাকবে, ছেলেদের থেকে দূরে দূরে থাকবে।
-" কেন স্যার ছেলেদের থেকে দূরে কেন থাকবো।
-"এত প্রশ্ন করো কেন, যেটা বলছি সেটা করো।
-"আচ্ছা স্যার আপনি কোনো কারনে জেলাস।
-"আমার বয়েই গেছে জেলাস হতে, আমি তো এমনি বললাম। (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো রিফাত)
মেঘলাও মুখ ভেংচি কেটে চলে যায়, স্নেহা, মাহি ওদের কাছে।

অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে, বিভিন্ন গেস্টরা এবং শিক্ষকরা বক্তব্য দিচ্ছেন।
মেঘলা, স্নেহা,মাহি সহ ওদের ক্লাসের আরো কয়েকজন ছেলেমেয়ে মাঠের
এককোণে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। তখনই পিছন থেকে কেউ একজন মেঘলার নাম ধরে ডাক দেয়,
আচমকা কারো ডাকে মেঘলা পিছন ফিরে দেখে তিয়াশ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।
তিয়াশ এখানে আসবে মেঘলা মোটেই কল্পনা করে নি।
পর মূহুর্তেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-"আরে তিয়াশ ভাইয়া তুমি এখানে।
-"হুম দেখতে আসলাম তোদের কলেজের অনুষ্ঠান কেমন হচ্ছে।
-''তুমি আসবে আমাকে বলবে না, তো কি খবর তোমার বলো, আমাদের কলেজ কেমন লাগলো।
-"অনেক ভালো লেগেছে, তোর সাথে দেখা হয়ে আরো বেশি ভালো লাগছে।
" তারপর তিয়াশ মেঘলাকে এটা সেটা বলছে আর মেঘলাও হাসিমুখে সায় জানাচ্ছে।

অন্যদিকে রিফাত মেঘলাকে অনেক্ক্ষণ যাবত কোথাও দেখতে না
পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে এদিকেই আসছিলো।
হঠাৎই রিফাতের চোখ যায় মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেঘলার দিকে।
রিফাত দেখতে পায় মেঘলা একটা অপরিচিত ছেলের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে ,
ছেলেটা ও বারবার মেঘলার মুখের দিকে তাকাচ্ছে। মেঘলাকে অন্য কারো সাথে এভাবে
কথা বলতে দেখে রিফাতের বুকে কেমন চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে,
কেন এমনটা হচ্ছে সে নিজেও জানে না।
রিফাত দেরি না করে তৎক্ষনাৎ মেঘলা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে এগিয়ে যায়।

-" কি ব্যাপার মেঘলা তুমি এখানে কি করছো, আর উনি কে।
তিয়াশের দিকে তাকিয়ে রিফাত প্রশ্ন করলো।
--উত্তরে মেঘলা কিছু বলতে যাবে তখনই রিফাতের ফোন বেজে উঠে, রিফাত তাকিয়ে দেখে
প্রিন্সিপাল কল দিয়েছে। তাই রিফাত কাউকে কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসে।
রিফাত যেতেই স্নেহা বললো,
-"কিরে স্যার এভাবে চলে গেলো কেন।
-"কি জানি হয়তো কোনো জরুরি কল এসেছে তাই। মেঘলার উত্তর
তারপর ওরা আবার গল্পে মেতে উঠে এবং তার কিছুক্ষন পরই যে যার বাড়ি চলে যায়।

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com