কষ্ট - হানিফ সংকেত । পর্ব - ০২
কোচকানো জামার পকেট হাতড়ে পাঁচটি টাকার সন্ধান পেয়ে বেশ উৎফুল্ল হয়ে ওঠে সুমন । যাক একদম ফাঁকা নয়। ক'টি টাকা আছে। দোকানিকে পাঁচ টাকার নোটটি বাড়িয়ে দিয়ে বললো-
আট আনার সিগারেট দিন তো।
দোকানি অবাক চোখে তাকায় সুমনের দিকে
ফাইজলামি করতাছেন মনে হয় ।
ফাজলামোর কি করল ঠিক বুঝতে পারে না সুমন।
জ্বী--আমি তো আপনাকে কোন খারাপ কথা বলিনি। আট আনার সিগারেট চেয়েছি মাত্র। সুমন বোঝাতে চেষ্টা করে---
: আরে মিয়া--আট আনার সিগারেট পাওয়া যায় না, বিড়ি পাওয়া যায়, লইবেন?
অগত্যা আট আনার পাঁচটি বিড়িই কিনে নেয় সুমন। পকেট গড়ের মাঠ। সিগারেট খাওয়া ধৃষ্টতা। সিগারেটের অভ্যেস কোন কালেই ছিল না সুমনের। জেলখানায় আর এক খুনের আসামী তারা মিঞা তাকে এ অভ্যেসটি শিখিয়েছে। প্রথম প্রথম প্রচন্ড আপত্তি করেছিল সুমন।
না খাবো না। সিগারেটের ধোয়া সহ্য হয় না ।
তারা মিঞা পিঠ চাপড়ে বলতো-
“এই জেলখানা কোনদিন সহ্য হইবো ভাবছোস্ । ভাবোস্ নাই । আমিও ভাবি নাই । এখন সব সহ্য হইয়া গেছে। তোরও হবে। টান দে। মানুষ অভ্যাসের দাস।"
সেই থেকে একটা দুটো করতে করতে অভ্যাসটা আয়ত্তে এসে গেছে সুমনের। সুমনের বাবা কোনদিন সিগারেট খাওয়া পছন্দ করতেন না। পুরানা পল্টনের জামাতখানার বাড়িতে ড্রইং রুমে সোফার টেবিলে একটি লাইটারসহ এ্যাশট্রে ছিল ওর বাবার সংগ্রহে। কেউ এসে সিগারেট খেতে চেয়ে লাইটারটা তুলে নিলেই এ্যাশট্রে থেকে একটা শব্দ ভেসে আসতো “প্লিজ ডোন্ট স্মোক” ।
যিনি সিগারেট খেতে চাইতেন তিনি লজ্জা পেয়ে নিজেই আবার সিগারেট পকেটে রেখে দিতেন। আর বাবা মিটি মিটি হাসতেন। সেই বাবার সন্তান সুমন আহমেদ-সিগারেট নয় বিড়ি ফুঁকছে। কি এক অজানা ব্যথায় মনটা নাড়া দিয়ে ওঠে। মুখ ভর্তি এক বলক ধোঁয়া ছেড়ে ভাবতে থাকে সুমন ।
দ্বিতীয় বর্ষ বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র সুমন আহমেদ চৌধুরী। মাত্র ১৮ বছর বয়সে খুনের দায়ে জেলখানায় ঢুকেছে। ঐ বয়স থেকেই তার সঙ্গী হয়েছে চোর, গুন্ডা, বদমাশ। মেধাবী ছাত্র বলে সবাই আলাদা দৃষ্টিতে দেখতো সুমনকে। চেহারাটা ছিল অনেকটা বাবার মত। বন্ধুদের অনেকেই সুমনকে নাম ধরে না ডেকে ডাকতো, “হ্যান্ডসাম” বলে ।
এইতো জেলে যাবার কদিন আগের ঘটনা। কলেজে সাংস্কৃতিক সপ্তাহ উদযাপিত হবে সাজ সাজ রব। সবাই ব্যস্ত। চারিদিকে খুশীর জোয়ার। সুমনের কেন যেন এসব তেমন ভাল লাগতোনা। চুপচাপ দেখতো। কোন কিছুতেই অংশগ্রহণ করতো না।
কেউ কিছু করতে বললে এড়িয়ে যেত। কিন্তু সেবার পড়লো 'মহা ফ্যাসাদে। কলেজের একদল মেয়ে এসে ধরেছে। সুমনকে কিছু করতেই হবে। সাংস্কৃতিক সপ্তাহের শেষ দিনে রয়েছে নাটক। আর নাটকে নায়িকার চরিত্রটি করছে কলেজের সবার মন কাড়া দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সিথী। টিফিন পিরিয়ডে সবাই সিথীর আশেপাশে একবার চক্কর দেবেই। যেমন সুন্দরী।
তেমনি মেধাবী। লম্বা, শ্যাম বর্ণা। মাথার চুলগুলো কিছুটা লালচে। পিঠ অব্দি ছড়ানো । এলোমেলো । চোখ দুটোও তেমন কালো নয়। তবে বুদ্দি দীপ্ত । অসাধারণ না হলেও ওর মধ্যে ছিল আকর্ষণ করবার মত প্রচন্ড ক্ষমতা। যা কলেজের অনেককেই অস্থির করে তুলতো। তবে সুমনকে কখনও অস্থির করতে পারেনি। সিঁথীর দিক থেকে তেমন বাঁধা না থাকলেও সুমন কেন যেন এড়িয়ে চলতো ওকে। আসলে ওর স্বভাবটাই এমন। সেই সিঁথীই এসেছে সুমনের কাছে ।
সুমন ভাই এবার কিন্তু আপনাকে ছাড়ছি নে ।
কি ব্যাপার? কি অপরাধ করলাম? থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করে সুমন।
কিছুই করেননি, তবে করতে হবে।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com