মুখোশের আড়ালে। পর্ব - ০৩
একসময় তারা তর্নিশার বাসায় আসতেই,
তারা বাহিরে এসে দেখে এম্বুলেন্স থেকে কর্নিয়া, রাফিন বেরিয়ে আসছে।
আর দুইজন লোক একটা লাশ এম্বুলেন্স থেকে বের করে তাদের সামনে রাখে।
তর্নিশার আব্বু আম্মু কর্নিয়া আর রাফিনের সামনে এসে বলে, এসব কি? এটা কার লাশ? আমাদের বাসায় কেনো এনেছো?
সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবার চোখে জল।
কর্ণিয়া তর্নিশার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে।
তর্নিশার আম্মু কর্নিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, কেনো কাঁদছিস এইভাবে? কি হয়েছে?
তর্নিশা আব্বু কার লাশ এটা দেখার জন্য লাশের মুখের উপর থেকে কাপড়টা ছড়াতেই তর্নিশার মুখ দেখে তর্নিশা,আ,আ,আ বলে চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে কাঁদতে শুরু করে।
রাফিন আর রুহাম দৌড়ে এসে তর্নিশার আব্বুকে ধরে বলে আংকেল এইভাবে কাঁদবেন না।
তর্নিশা আম্মু তর্নিশার লাশ দেখে তর্নিশা বলে চিৎকার দিয়ে সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এইভাবে আর কিছু সময় কেটে যায়। তর্নিশাকে খুব সুন্দর করে জানাযা পড়ে কবর দেওয়া হয়।
সবাই তর্নিশাদের বাসায় ড্রয়িং রুমে চুপচাপ বসে আছে।কারো মুখে কোন কথা নেই সবার চোখে জল।
তর্নিশা আব্বু কর্নিয়া,রাফিন,রুহাম,উর্মি,হ্যালি,ক্যাথিয়ার উদ্দেশ্য বলে এসব কি করে হলো? আমার মেয়েকে কে খুন করেছে? আমার মেয়ের তো কোন শত্রু ছিলো না।
আমরা সেটায় এতক্ষণ ধরে ভাবছি,জানিনা কি থেকে কি হয়ে গেলো,কে আমাদের সে অজানা শত্রু,যে মুখোশের_আড়ালে লুকিয়ে এই খুনটা করেছে? ( রাফিন)
-- এখন আমাদের সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে।পুলিশ এখন তদন্ত করছে, খুব শিগগির সে খুনিটা ধরা পড়বে। (হ্যালি)
তর্নিশার আব্বু সবার উদ্দেশ্য বলে যে আমার মেয়েকে এইভাবে মেরেছে তাকে একবার সামনে পেলে জানিনা তার সাথে আমি কি করবো।
কেউ কোন কথা না বলে সেখানে চুপচাপ বসে থাকে
এইভাবে আর দুইদিন কেটে যায়
সবাই তর্নিশার জন্য মন খারাপ করে আছে।
কর্নিয়া বেলকনিতে বসে মোবাইলে পুরানো ছবি গুলো দেখছে,যেখানে সে তর্নিশার সাথে সময় কাটানোর মুহূর্ত যে ছবি গুলো তুলেছে। আর চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে।
কর্নিয়া এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা, তার প্রিয় বান্ধবী আর নেই, তার দমবন্ধ হয়ে আসছে৷ যার সাথে দিনে একবার কথা না বলে থাকতে পারতো না। তার সাথে আজ দুইটা দিন কোন কথা হয় না।
প্রিয় কিছু হারানো অনুভূতি যে কত কষ্টের সেটা সে আজ উপলব্ধি করতে পেরেছে। সে কতক্ষণ তর্নিশার ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলো সে নিজেই জানে না।
এই কয়দিন তার বাকি বন্ধুদের সাথে তেমন কথা হয় নি।
শুধু রাফিনের সাথে মাঝে কথা হয়েছে।
কর্নিয়ার আম্মু(অর্নিমা) কর্নিয়ার কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে বলে, দেখ মা এটাই বাস্তব সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। তর্নিশাকে যে মেরেছে তার কঠিন শাস্তি হবে তুই দেখে নিস।
যা উঠে ফ্রেস হয়ে কিছু খেয়ে নে।
আমি নিচে যাচ্ছি তুই আই এই বলে অর্নিমা নিচে চলে আসে।
কর্নিয়ার আব্বু (কামরুল) এই কয়দিন অফিসে যায় নি। সে বাড়িতে বসে কাজ করছিল।
হঠাৎ সে দেখে তার বিজনেস পাটনার ( আমির) একটা নোটিশ পাঠিয়েছে তাদের নতুন প্রজেক্টটা অন্য কেউ কিনে নিচ্ছে। এটা দেখে কামরুল দ্রুত অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচ্ছে।
কর্নিয়া নিচে এসে তার বাবাকে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নামতে দেখে, তার বাবার সামনে গিয়ে বলে, বাবা এত তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছো?
--কামরুল কর্নিয়াকে তার সামনে দেখে একটা ডুক গিলে বলে, মা অফিসে যাচ্ছি,একটা কাজ আছে।
-- কি কাজ আমাকে বলো,আমি তোমাকে বলছি না, তোমার এখন রেস্টের দরকার আমি আছি। অফিসের সবকাজ আমি দেখে নিবো। (কর্নিয়া)
-- কামরুল কপালে হাত বুলিয়ে কর্নিয়ার উদ্দেশ্য বলে আম্মু একটা কথা বলবো রাগ করবি নাতো? (কামরুল)
--আব্বু রাগ করবো কেনো? তুমি বলো, আর আমাকে এত ভয় পাওয়ার কি আছে আব্বু, তুমি ও না ?(কর্নিয়া)
-- তার বাবা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, আসলে মা তোকে না জানিয়ে আমি একটা প্রজেক্টটে কাজ করা শুরু করেছি। কিন্তু আজ তোর আংকেল আমির,আমাকে বলেছে সে প্রজেক্টটা নাকি অন্য কেউ কিনে নিচ্ছে। যদি এই প্রজেক্টটা অন্য কারো হাতে চলে যায় তাহলে আমাদের অনেক টাকা লশ হয়ে যাবে।
---কর্নিয়া তার বাবার মুখে এটা শুনে রেগে তার হাতের মোবাইলটা ফ্লোরে ছুড়ে মারে। মোবাইল পড়ার আওয়াজে তার বাবা কর্নিয়ার কাছে এসে বলে, মা এত রেগে যাচ্ছিস কেনো?
-- বাবা তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে না জানিয়ে এটা করার, তোমাকে আগে ও বলেছি এটা আমার বিজনেস এটাতে শুধু আমার অধিকার, তোমাকে একটা কথা কতবার বলবো?
-- সরি! মা আমাকে ক্ষমা দে। আমি জানি আমার সব সম্পত্তির মালিক একমাত্র তুই, কিন্তু তুই এই বয়সে বিজনেস না করে, নিজের মত একটু ঘুরাফেরা কর। (কামরুল)
-- নাহ, বাবা আমি K,kকোম্পানিকে নাম্বার ওয়ান করে ছাড়বো।(কর্নিয়া)
--দেখ মা আমাদের বিজনেসটা অনেকটা উন্নত দেশে আমরা তিন নাম্বার অবস্থানে আছি। তাই তুই এসব নিয়ে ভাবিস না(কামরুল)
--তুমি জানো না আমি কেমন? যেটা একবার বলি সেটাই করি (কর্নিয়া)
এই বলে কর্নিয়া রেগে হনহন করে উপরে গিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে চলে আসে।
তার মা নাস্তা করার জন্য ডাকতে শুরু করে মা কর্নিয়া কিছু খেয়ে যা।
-- না আম্মু আমার খিদে নেই, বাবা তুমি বাসায় থাক আমি অফিসে যাচ্ছি, আজ থেকে আমি সব সামলাবো আর দেখে নিও, এই প্রজেক্টটা আমি পাবো, এই বলে কর্নিয়া বাসা থেকে বের হয়ে তার নিজের গাড়িটা নিয়ে বেড়িয়ে পরে।
কর্নিয়ার বাবা সোফায় বসে একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে থাকে, মেয়েটাকে এত বড় করে ও মানুষ করতে পারলাম না। সব সময় নিজের জেদটায় ধরে রাখে।
তার মা সেখানে এসে বলে, তোমাকে আগে ও বলেছি আমার মেয়েকে এতটা দূর্বল ভেবো না। এতবছর বিজনেস করে তুমি কি করতে পারলে।এই মেয়েটা এই প্রজেক্ট পেয়ে ছাড়বে।
তারা বাবা এটা শুনে রেগে বলে তোমার কারণে আমার এই মেয়েটা এত উচ্ছন্নে গেছে। হিংসা রাগ, অহংকার তার মনে গেঁথে রয়েছে, একদিন দেখে নিও এর ফল কতটা খারাপ হবে।
এই বলে তার বাবা হনহন করে রুমে চলে যায়।
এবার আশা যাক কর্নিয়ার ব্যাপারে কিছু কথা
(কর্নিয়া খন্দকার, সে যেমন সুন্দর তেমনি ভয়ংকর, তার বয়স ২১ বছর চলছে, সে অর্নাস প্রথম বর্ষ একাউন্ট বিভাগে উপর কোর্স করছে। ছোট বেলায় মা- বাবার অতিরিক্ত ভালোবাসা পেয়ে তার মনে অহংকার, হিংসা লোভ সবকিছু তার মধ্যে গেঁথে রয়েছে। আর সে যেটা চায় সেটা যতক্ষণ নিজের করে না নিবে ততক্ষণ সে থামবে না। তার জন্য সে সব কিছু করতে পারে। তারা সাত বন্ধু ছোট বেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়ে উঠা। ( তবে তর্নিশার খুন কে করছে? কেন করেছে? সব কিছু গল্পে জেনে যাবেন )
কর্নিয়া অফিসে এসে সকল স্টাফদের উপর অকারণে রাগান্বিত হয়ে তাদের উপর চিল্লাতে শুরু করে। সে নিজের কেবিনে গিয়ে তার ম্যানেজারকে সেখানে আসতে বলে।
ম্যানেজার আসতে কর্নিয়া রেগে বলে, বাবা যে প্রজেক্টের উপর কাজ করছিলো, সে প্রজেক্টের পুরো ডিটেইলস আমাকে এনে দাও,এক্ষুনি।
ম্যানেজার দ্রুত তার কেবিনে গিয়ে সব ডিটেইলস এনে কর্নিয়ার সামনে রাখে।
কর্নিয়া দেখে এই প্রজেক্টটার উপর অনেক গুলো টাকা ব্যায় করেছে। যদি এই প্রজেক্টাটা সাকসেস না হয় তাহলে অনেক গুলো টাকা লশ হয়ে যায়। প্রায় দেড়শ কোটি টাকার মতো।
-- এখন প্রজেক্টাটা নিয়ে সমস্যা কিই? (কর্নিয়া)
-- আসলে এই প্রজেক্টা যে জায়গায় লন্স করা হবে। সেটা নাকি অন্য একজন আর আগে থেকে কিনে নিয়েছে।
সে এখন দাবি করছে এটা নাকি এখন তারই প্রাপ্য,তাকে নাকি এই প্রজেক্টে ফিফটি% সেয়ার দিতে হবে। আর যদি আমরা না করি তাহলে এই প্রজেক্টটে যাদের যাদের হাত আছে সবার উপর মামলা করে দিবে। (ম্যানেজার)
--- কর্নিয়া এটা শুনে বসা থেকে উঠে টেবিলে জোরে বারি দিয়ে বলে, তার সাথে ও একবার তো একবার দেখা করতেই হয়। আমিও দেখতে চাই সে কতবড় খেলোয়ার।
ওর সাথে এখনি আমার একটা মিটিং এরেন্জ কর।
-- ম্যাডাম আপনি এসব কি বলছেন?
-- আমি যেটা বলেছি সেটায় করো(কর্নিয়া)
--আচ্ছা আমি দেখছি।(ম্যানেজার)
এই বলে তার কেবিনে গিয়ে ভাবতে থাকে এখন আমার কি করা উচিত,এসব ভাবতে সে তার কাছে কল দেয়।
কিছুক্ষণের মধ্যে কলটা রিসিভ করতেই ম্যানেজার বলে
--- হ্যালো,আপনি কি আরহাম খান বলছেন?
-- না!আমি ওনার পি,এ বলছি, আপনি কে?
-- আমি K.K কোম্পানির ম্যানেজার বলছি, ওই প্রজেক্টা নিয়ে আমাদের ম্যাডাম আপনার স্যারের সাথে সরাসরি কিছু কথা বলতে চাই। আপনি একটা ওদের একটা মিটিং এরেন্জ করে দিতে পারবেন?
--- আচ্ছা আমি স্যারের সাথে কথা বলে দেখছি,আর যদি স্যার রাজি হয়ে যায় তাহলে আপনাদের ইমেইল সব কিছু জানিয়ে দিবো। এই বলে কলটা কেটে দেয়।
প্রায় একঘন্টা পর ম্যানেজার দেখে তাদের কম্পিউটারে ওই কোম্পানি থেকে একটা মেসেজ আসে,সেখানে লেখা আছে এই কপি শপে( একটা ঠিকানা দেওয়া) বিকেল চারটায় আপনার ম্যাডামকে এখানে চলে আসতে বলবেন।
ম্যানেজার দ্রুত কর্নিয়াকে গিয়ে সবকিছু বলে।
-- ওকে তাহলে দেখবো ও কতবড় বিজনেস ম্যান, যে আমাদের কোম্পানির ক্ষতি করতে চাই।
এই বলে কর্নিয়া অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়ে।
বিকেল চারটায় কর্নিয়া, একটা ব্লাক কলারের শার্ট,জিন্স পেন্ট,চোখে চশমা,হাতে পার্স ব্যাগ নিয়ে, তার বাবা মা কে বলে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে সে কপি শপের দিকে রওনা দেয়।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com