Breaking News

সুধারানী ও নবীন সন্ন্যাসী । পর্ব - ০২


যৌবন গেছে তবু মেজাজ যায়নি। সেই সুরবালার মেয়ে কি এই সুধারানী ? দেখতে হয়।

মিত্তিরদা বললো, 'ওহে, এ পাড়ায় যা কাজ আছে সেরে ফেলে এখানে এস, আমি না দেখিয়ে দিলে তুমি চিনতে পারবে না। দারুণ ঝামেলার বাড়ি।' খামটাকে তিনি ইচ্ছে করেই ফিরিয়ে দিলেন।

পিয়নটি মাথা নেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও কাজে মন বসাতে পারছিলেন না মিত্তিরদা। কোন সুধা ? তার মন বলছিল, এ নির্ঘাৎ সুরবালার মেয়ে। সুরবালার মুখ মনে পড়লেই এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। বাবা বলেছিলেন, "শুয়োরের বাচ্চা, বেশ্যা পাড়ায় বাড়ি বলে চরিত্রহীন হবে ? 

খবনার যদি ওই বাড়িমুখো হস তাহলে জুতিয়ে পিঠের চামড়া তুলে দেব।' তখন সুরবালার বয়স বড় জোর পনের। মাথা ঘুরে গিয়েছিল ওকে দেখে। মিত্তিরবাড়ির ছেলে বলে খাতির ছিল পাড়ায়। আলোময়ী তাই নিষেধ করেনি বাড়িতে ঢুকতে। কিন্তু একদিন গান থামিয়ে কাছে ডেকে বলেছিল, 'বাবা, সুরোর তো গান হল না চেষ্টা করেও। কি যে হবে ওব জানি না। তবে যাই হোক ওর সর্বনাশ করো না ? মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল, তবু উচ্চারণ করেছিলেন বাইশ বছর বয়সে, 'সর্বনাশ মানে ?'

*এই বয়সে মনে রঙ ধরলে সারাজীবনেও উঠবে না। এখনও সবুজ হয়ে আছে, তোমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখবে। আমরা বাঈজী নই, বেশ্যা বলতে বাধে । কিন্তু গান গলায় না থাকলে ওকে তো তাই করেই খেতে হবে । তোমার বাবা এমন মেয়েকে ঘরে তুলবেন কেন ? তার চেয়ে এক কাজ করো, তোমার বাবাকে বলি একটা মাসোহারার ব্যবস্থা করতে, তোমাদের সম্পর্কটা ঠিক থাক

সেদিন কোন কথা বলেননি। ব্যবস্থাটা মেনে নিতে মন চাইছিল না। তার কদিন বাদে বাবা উগ্র মূর্তি ধারণ করে ওইসব কথা শুনিয়েছিল । তখন এপাড়ায় মিত্তিরদার প্রতাপ সবে জমেছে। ভাল দল জুটে গেছে সঙ্গে। কিন্তু তখন মনে হয়েছিল আলাদা সংসার করার সামর্থ নেই যখন তখন ওবাড়িতে গিয়ে কি লাভ। সুরবালা কয়েকবার ডেকে পাঠিয়েছিল। মিত্তিরদা যাননি। তারপর একদিন স্বয়ং সুরবালা হাজির হয়েছিল দোকানে। বাবা তখন নেই, মিত্তিরদা গুলতানি মারছেন । সটান চলে এসে সুরবালা বলেছিল, 'আমাকে বিয়ে করবে কি করবে না?"

মিত্তিরদা মাথা নিচু করে ফেলেছিলেন। জবাব না পেয়ে যেমনি এসেছিল তেমনি চলে গিয়েছিল সুরবালা। সেই থেকে আজ পর্যন্ত দেখা হয়নি। অথচ একই পাড়ায় বাস। একসময় মিত্তিরদার দাপটে পাড়া কেঁপেছে কিন্তু কখনও তিন নম্বরে ঢোকেননি তিনি। মালদার লোকেরা কত বছর ধরে যাওয়া আসা করল, তিনি কোন খোঁজ রাখেননি। অথচ খামটা দেখার পর থেকেই বুকের ভেতর একটা কৌতূহল ফণা তুলছে। এখন তিনি রেস আর 'নেশা' ছাড়া কোন সাত পাঁচে নেই। তবু সুরবালাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে আজ ।

. পিয়নটিকে নিয়ে হাঁটছিলেন মিত্তিরদা। আগে কর্পোরেশন এপাড়ায় নজর দিত, এখন আছে বলেই মনে হয় না। অথচ ইলেকশনের আগে দুটো দলই চাইবে পুরো সোনাগাছি তাদের ভোট নিক। হাঁ, আগে অবশ্য একটা রেওয়াজ ছিল ভোট হলে বিশেষ একটি দলকেই দিতে হবে। 

এখন সময় পাল্টেছে। মেয়েরাও বুঝতে শিখেছে। তাদের মুখেও প্রতিবাদের শব্দ শোনা যায়। বাড়িওয়ালি কিংবা মাস্তানের কথায় তারা ব্যালটবক্স ব্যবহার করে না। কিন্তু তাতে হাল বদল হচ্ছে না কিছু। এত পুরোন একটা ব্যবসা যখন কলকাতায় চলছে অথচ তার ধারা পরিবর্তিত হল না ।

তবে হ্যাঁ, মেয়েদের চেহারাগুলো পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত। আগে সোনাগাছিতে অবাঙালি মেয়ে হাতে গুণে পাওয়া যেত। এখন থৈ থৈ করছে। বাঙালি মেয়েগুলোও চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে হিন্দীতে গল্প করে। দরজায় দাঁড়ানোর ট্রাডিশন অনেকদিনের তাই বলে খদ্দের রাজী না হলে খিস্তি করতে হবে এ কেমন কথা । যৌবনে হলে মিত্তিরদা এসব সহ্য করতেন না। এখন ততক্ষণই সম্মান পাওয়া যায় যতক্ষণ আগ বাড়িয়ে সেটাকে হারাতে না চাওয়া হচ্ছে। মিত্তিরদা দেখলেন পিষ্টো আসছে। 

পিন্টো এপাড়ার প্রতিষ্ঠিত মাস্তান। গায়ের রঙ ফরসা, মেদহীন দেহ, লম্বা এবং ঠাণ্ডা মাথায় খুন করতে পারে। দুবার জেল খেটেছে, থানায় গেছে কয়েকবার। ও ঠিক এপাড়ার ছেলে নয়। এপাড়ার অনেক ছেলেকে বড় হয়ে মাস্তান হতে দেখেছেন। একসময় তার নিজেরও এধরনের কিছু চামচা • ছিল। পিন্টো জন্মেছে ইলিয়ট রোডে। চার বছরের ছেলেকে ফেলে মা পালিয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায় এক জাহাজীর সঙ্গে। পিন্টোর মা জাহাজীদের একটা বারের মক্ষীরানী ছিল। 

সেই ছেলে কি করে সোনাগাছিতে চলে এসে বড় হয়ে মাস্তানে পরিণত হল তা নিয়ে নানান গল্প। কিন্তু ওর নীল চোখ, ঠাণ্ডা গলায় কথা, ছুরি এবং রিভলভারের হাত ওকে নেতা করে তুলেছে এ পাড়ায় । দূর থেকেই পিন্টো হাত তুলেছিল । ও একা নয়, যখনই হাঁটে দুজন সঙ্গী কম সে কম সঙ্গে রাখে, এখনও রয়েছে। মুখোমুখি হতেই পিন্টো বলল, 'দাদা ভালো ?' “চলছে।' মিত্তিরদা হাসলেন।

“সত্যি আপনাকে দেখে হিংসে হয়। কি স্বাস্থ্য । আপনার বয়সে আমরা ছবি হয়ে যাব।'

'বুড়োমানুষের আবার স্বাস্থ্য চললে কোথায় ?

'পাঁচ নম্বরে গিয়েছিলাম। একটা নতুন মেয়ে আসতে চাইছে লাইনে । কোথাও তো শালা ঘর খালি নেই। এক একটা ঘর তিনজনে শেয়ার করে ব্যবসা চালাচ্ছে। ছেড়ে গেলে ফিরে এসে ঘর পাওয়া যেখানে অসম্ভব সেখানে নতুন মুরগী ঢুকবে কি করে ! বাড়িওয়ালি প্যান প্যান করছিল বলে দিলাম—, ছেড়ে দিন এসব কথা। পিন্টো হাসল।

"মেয়েটির ব্যবস্থা হয়েছে ?

“হ্যাঁ। দানা, আপনাকে একটা কথা বলব '

'বলে ফেল।'

"বিরজুকে আপনি সেন্টার দেবেন না। ও শালা বেইমান। সব বাড়িতে মাল ঝাড়ছে ও তো ঠিক হ্যায় কিন্তু জালি মাল ছাড়ছে। এটা ওর লাইন তাই আমি কিছু বলছি না। কিন্তু এখন পাউডারে হাত নিয়েছে। এটা তো চলবে না।' পিন্টো মাথা নাড়তে লাগল ।

'আমি কাউকে সেন্টার দিই না পিন্টো।'

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com