তোর চোখের মায়ায় । পর্ব - ০৩
পরেরদিন সকালে মেঘলা একটু তাড়াতাড়ি কলেজে চলে আসে। লেট হলে আবার স্যার কি শাস্তি দেয় বলা তো যায় না, কলেজে এসেই কোনোদিক না গিয়ে ক্লাসরুমে প্রবেশ করে । ক্লাস রুমে ডুকে দেখে এখনো ক্লাস শুরু হতে পাঁচ মিনিট বাকি আছে।
-"যাক আজকে তাড়াতাড়ি আসতে পারছি, এবার দেখি ওই ব্যাটা বদ**মাইশ আমাকে কিভাবে কথা শুনায় হুহ,
-"কিরে একা একা দাঁড়িয়ে কি বিড়বিড় করছিস বললো স্নেহা।
-"আজকে আর স্যার আমাকে অপমান করতে পারবে না, আজকে আমি তাড়াতাড়ি ক্লাসে আসছি, পড়াও শিখে আসছি।
-"আচ্ছা তুই স্যার কে কি করেছিস বল তো, প্রথম দিন এসেই স্যার তোর পিছনে পড়লো কেন।
-"আমি আবার কি করবো, ওই ব্যাটা স্যার একটা শয়**তান, তাই তো আমার মতো মাসুম বাচ্চার সাথে এরকম করে।
""তারপর ওরা আরো অনেক কিছু বলতে থাকে হঠাৎই মেঘলা পিছনে তাকিয়ে দেখে রিফাত দাঁড়িয়ে আছে, ওরা দুজন কথা বলায় এতটাই ব্যস্ত ছিলো যে কখন স্যার এসে ওদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে বুঝতেই পারে নি।মেঘলা তাকিয়ে দেখে রিফাত রক্ত চক্ষু নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে , যা দেখে ওরা দুজনেই ঘাবড়ে যায়,
-"মেঘ-রে আজকে তুই শেষ , স্যার তোকে আজ আস্ত রাখবে না, মেঘলা মনে মনে এসব ভাবছে,তখনই রিফাত বলে,
-"কি বলছিলে তুমি আমাকে
-"কই কিছু বলিনি তো
-"আমি শয়**তান, বদ**মাইশ তাই না
-"ইয়ে মানে স্যার
-"কান ধরো
-"স্যার আমি,, কিছু টা কাঁপাকাঁপা গলায়
-"জাস্ট শ্যাট আপ,,আমি এক কথা দুইবার বলি না,চুপচাপ কান ধরে একপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো।
___হায়রে এখন এই ভরা ক্লাস রুমের সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে আমায়,সবাই আমাকে নিয়ে মজা নিচ্ছে ।আশে পাশে না তাকিয়ে কেন যে এসব বলতে গেলাম,স্নেহাও বিষন্ন মন নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। ভরা ক্লাস রুমে এইভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে মোটেও ভালো লাগছে না আমার,পা টা ও ব্যাথা করছে ভীষণ। আমাকে এভাবে দাঁড় করিয়ে রেখে স্টুডেন্টদের সাথে দিব্যি হেঁসে হেঁসে ক্লাস করছেন রিফাত স্যার, ইচ্ছে করছে একটা বাড়ি দিয়ে মাথাটাই ফাটিয়ে দিই।উফফ পা টা অনেক ব্যাথা করছে, সবাই আমার দিকে তাকিয়ে কেমন মিটিমিটি হাসছে, মেঘলার ভাবনার মাঝেই রিফাত বলে উঠে,
-"আশা করি আজকের শাস্তির কথা মনে থাকলে,,ভবিষ্যতে কখনো টিচারদের সাথে বেয়া**দবি করার মতো দুঃসাহস দেখাবে না।
এই বলে স্যার চলে যায়, স্যার যেতেই মেঘলা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই ধপ করে বসে পড়ে, ওর চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে।
স্নেহা মেঘলার পাশে বসে বলে, তোরে বলছিলাম স্যারের ক্লাসে একটু সাবধানে থাকবি,স্যার খুব রাগী তুই শুনলি না, অনেক কষ্ট হচ্ছে তাই না রে।
-" আমি কি জানতাম নাকি স্যার পিছনে এসে এভাবে আমাদের কথা শুনবে, ওই ব্যাটারে আমি দেখে নিবো,একটু ভুলই তো করছি তার জন্য এরকম শাস্তি দেওয়া লাগে, আমার পা টা অনেক ব্যাথা করছে রে।
-"এই মেয়ে সবার সাথে ত্যাড়ামি করতে যেও না, দেখলে তো স্যার কি পরিমাণ রাগী, কত হ্যান্ডসাম স্যার কোথায় একটু লাইন মারবে তা না তুমি স্যারের সাথে ঝগড়া করছো। ক্লাসের সবাই একসাথে বলে মেঘলাকে।
-"তোমাদের রুচি খারাপ হতে পারে আমার না, আমি কখনো এই বজ্জাত স্যারের সাথে লাইন মারতে যাবো না
-"কি বললে আমাদের রুচি খারাপ , সবাই একসাথে বলে উঠে
--মেঘলা ওদের কারো কথার জবাব না দিয়ে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসে , উদ্দেশ্য বাড়িতে যাওয়া,মেঘলার পিছু পিছু স্নেহাও বেরিয়ে আসে কারন পায়ের ব্যাথার জন্য মেঘলা ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না।
স্নেহাঃমেঘ দাঁড়া, তুই তো ঠিক মতো হাঁটতে পারবি না, আমি তোকে বাসায় দিয়ে আসবো।
-"না তুই ক্লাস কর, আমি রিকশা নিয়ে চলে যাবো,
এই বলে মেঘলা কলেজ থেকে বেরিয়ে একটা রিকশায় উঠে বাসার দিকে রওনা হয়।
অপরদিকে রিফাত অফিস রুমে বসে ভাবছে,
-"মেয়েটাকে মনে হয় আজকে একটু বেশিই শাস্তি দিয়ে ফেলছি, কিভাবে বারবার পায়ে হাত দিচ্ছিলো,মুখটা কেমন কাঁদোকাঁদো করে রাখছিলো, হয়তো অনেক ব্যাথা করছে , একবার কি গিয়ে দেখে আসবো,না না আমি কেন যাবো, ও অন্যায় করেছে তাই শাস্তি পেয়েছে, আবার মন বলছে একটু গিয়ে দেখে আসলে কি হয়, রিফাত যেন দোটানায় পড়ছে মন বলছে যেতে মস্তিষ্ক বলছে যাবে। শেষে না পেরে মনকেই সায় দিলো সে যাবে গিয়ে একবার দেখে আসবে, ভাবতে ভাবতে রিফাত চলে আসলো মেঘলাদের ক্লাসের সামনে ,ফাস্ট ইয়ারের ক্লাসে তখন ক্লাস করেছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক নুরুল ইসলাম স্যার, ক্লাসের সামনে রিফাতকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি বললেন,
-"আরে নতুন স্যার যে, কি করছেন ভিতরে আসুন।
তার কথার জবাবে রিফাত মুচকি হেঁসে বলে, জ্বি স্যার এদিকেই যাচ্ছিলাম, আপনি ক্লাস করুন সমস্যা নেই।
তারপর পুরো ক্লাসে এক পলক চোখ বুলিয়ে চলে যায়। রিফাত চলে যেতেই স্যার আবার পড়ানো শুরু করে , আর রিফাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছে,
কি ব্যাপার ওকে তো কোথাও দেখলাম না, তাহলে কি বাসায় চলে গেছে , যাই হোক ওদের ক্লাসের কাউকে জিজ্ঞেস করে নিবো। একটু পরে ঘন্টা বাজলে স্যার ক্লাস থেকে চলে যেতেই রিফাত স্নেহাকে ডেকে মেঘলার কথা জিজ্ঞেস করে,
-"মেঘলা কি বাসায় চলে গেছে
স্নেহাঃজ্বি স্যার ওর নাকি পায়ে অনেক ব্যাথা করছে, তাই বাসায় চলে গেছে।
রিফাতঃ ওহ্, একা যেতে পারবে তো, তুমি যাও নি কেন সাথে।
স্নেহাঃআমি যেতে চাইছিলাম, ও বললো পারবে যেতে।
রিফাতঃওহ্,আমার আসলে তখন এতটা রিয়েক্ট করা উচিত হয় নি।
স্নেহাঃস্যার মেঘ একটু চঞ্চল হলেও মনটা অনেক ভালো, আপনি ওর সাথে এরকম না করলে ও পারতেন।
--উত্তরে রিফাত কিছু একটা ভেবে মন খারাপ করে আচ্ছা ঠিক আছে তুমি ক্লাসে যাও, বলে ওখান থেকে চলে আসে। আর স্নেহা ভাবছে,যাহ বাবা কি হলো এটা, স্যার মন খারাপ করলো কেন, নিজে শাস্তি দিলো আবার নিজেই মন খারাপ করে চলে গেলো, সবই মাথার উপর দিয়ে গেলো,আমি বরং এখন ক্লাসে যাই।
চলবে..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com