তোর চোখের মায়ায় । পর্ব - ০২
হনহন করে ক্লাস রুমে ডুকেই স্নেহার পাশে বসে পড়ে মেঘলা।স্নেহা হচ্ছে মেঘলার বেষ্টফ্রেন্ড। স্যার এখনো আসে নি, যাক বাবা বাঁচা গেলো। স্নেহার পাশে বসতেই বলে উঠলো,,,
সরি ঘুম থেকে উঠতে পারি নি রে।
তোর এই ঘুমের জন্য কোনদিন দেখবি তোর জামাই তোকে ছেড়ে যায়
বাজে কথা বলবি না একদম।
কি হয়েছে মেঘ, রেগে আছিস কেন
রেগে থাকবো না তো কি করবো, কত বড় সাহস আমাকে বেয়াদব বলে।
তারপর একটু আগে মেঘলার সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছু স্নেহাকে খুলে বললো।ওদের কথার মাঝে প্রিন্সিপাল সহ আরো একটা লোক ক্লাসে প্রবেশ করে, মেঘলা তাকিয়ে দেখে সকালের ছেলেটা। প্রিন্সিপাল কে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে সালাম প্রদান করে। প্রিন্সিপাল সবাইকে পরিচয় করিয়ে বলে, উনি হচ্ছে রিফাত আহমেদ আমাদের কলেজে নতুন জয়েন করেছে, আজ থেকে উনি তোমাদের ইংরেজি ক্লাস নিবে। তারপর স্যারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ঠিক আছে আমি তাহলে যাই, আপনি ক্লাস নিন কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। এ বলে প্রিন্সিপাল চলে যায় আর রিফাত সকলের উদ্দেশ্যে বলে,
আমার পরিচয় তো সকলে জানলেই এখন একজন একজন করে তোমাদের নাম বলো। তখন একজন দাঁড়িয়ে বলে, স্যার আমি মোহনা, এভাবে একে একে সকলে তাদের নাম বলে। এবার মেঘলার পালা, রিফাত তাকিয়ে দেখে সকালের সেই মেয়েটি,মুহূর্তের মাঝে ওর চেহারার হাঁসি খুশি ভাব পরিবর্তন হয়ে রক্তবর্ন ধারন করে,, যা দেখে ভয়ে মেঘলার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। মেঘলাকে কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিফাত কিছু টা ধমকের সুরে বলে,
কি ব্যাপার তুমি নাম বলছো না কেন,
ধমক শুনে কিছু টা তুতলিয়ে বলে
জ্বি স্যা-র মেঘলা জান্নাত।
ঠিক আছে বসো
তারপর রিফাত বই নিয়ে পড়ানো শুরু করে , এরই মাঝে স্নেহা মেঘলার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
মেঘ দেখ না নতুন স্যার কি হ্যান্ডসাম, ক্লাসের সব মেয়েরা কিভাবে হা করে তাকিয়ে আছে, ইশশ আমি তো প্রথম দেখাতেই ফিদা।স্নেহার কথা শেষ হতেই মেঘলা বলে উঠলো,
হ্যান্ডসাম না ছাই, ওই ব্যাটা আস্ত একটা বদমাইশ, মুখটা কেমন গম্ভীর করে আছে।
রিফাত অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ করছে মেঘলা আর স্নেহা কিছু বলছে, ও মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে
দাঁড়াও
স্যার,,,,
আই সেইড স্ট্যান্ড আপ
আর কি করার অগত্যা মেঘলা দাঁড়িয়ে যায়। রিফাত ওর সামনে এসে বলে, কি কথা বলেছিলে এতক্ষণ।মেঘলা চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, রিফাত আবারও বলে উঠে কলেজে পড়াশোনা করার জন্য আসো নাকি অন্য কিছু করার জন্য , নেক্সট টাইম আমার ক্লাসে কোনো রকম অনিয়ম করলে ক্লাস থেকে বের করে দিবো ইডিয়ট। এতক্ষণ সময় মেঘলা মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো, অপমানে মুখ থমথমে হয়ে আছে। ও বুঝলো সকালের ঘটনার জন্য স্যার রেগে আছে তাই ওকে এতগুলো কথা শুনালো।তখনই বেল বেজে উঠে রিফাত চলে যায়।
পরের দুইটা ঘন্টা মেঘলা মন খারাপ করেই শেষ করে । বাসায় এসে শাওয়ার নিয়ে ঘুমিয়ে যায় । বিকেলে কারো ডাকে ঘুম ভাঙ্গে,ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে, সামনে ওর খালাতো বোন তুলি দাঁড়িয়ে আছে।য
আরে তুলি আপু তুমি কখন এলে, খালামনি এসেছে।
শুধু খালামনি না আরো একজনও এসেছে, কিন্তু তোর তো কোনো খবর নেই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস।
তোমাদের সাথে আর কে এসেছে আপু
গেলেই দেখতে পাবি,
এ বলে তুলি মেঘলার রুম থেকে চলে আসে,তুলি যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই মেঘলা ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে দেখে সোফায় ওর খালামনির পাশে একটা ছেলে বসে আছে।ওর আম্মু ও সবার সাথে বসে গল্প করছে,
তোমরা কখন এসেছো খালামনি
মেঘলার ডাকে সকলে ওর দিকে তাকায়,সাথে সাথে ওর খালামনি বলে উঠে
এইতো মামনি আমরা আরো একটু আগে এসেছি, তুমি ঘুমাচ্ছিলে, তা মামনি তোমার আম্মু বললো তুমি কলেজ থেকে এসে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেছো, এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না এরকম করলে তো আমার মা টা অসুস্থ হয়ে যাবে।
উনি কে খালামনি,তিয়াশের দিকে তাকিয়ে মেঘলা জিজ্ঞেস করে।
আরে মেঘ এটা তো তিয়াশ ভাইয়া, তুই এত তাড়াতাড়ি ভাইয়াকে ভুলে গেলি।তুলির কথা শুনে মেঘলা বলে
কেমন আছো তিয়াশ ভাইয়ু, কতদিন পর দেখলাম তোমায়,
তিয়াশের কোনো হুঁশ নেই, সে তো এক দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে , সদ্য ঘুম থেকে উঠা মেঘলা কে তার কাছে মনে হচ্ছে কোনো অপ্সরী।
-"ভাইয়া কোথায় হারিয়ে গেলে,, তুলির বলা কথাটা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই হকচকিয়ে উঠে তিয়াশ, পর মুহূর্তে নিজেকে সামলিয়ে মেঘলা দিকে তাকিয়ে বলে, হুম ভালো আছি, তুই কেমন আছিস
মেঘলাও মিষ্টি হেসে বলে, আমিও ভালো আছি।
এই হাঁসিটাও যেন তিয়াশকে আরো মুগ্ধ করে , কত মায়াবী হাঁসি।
এরই মাঝে বাসার কলিংবেল বেজে উঠে, মেঘলা গিয়ে দরজা খুলে দেখে ওর আব্বু দাঁড়িয়ে আছে। মিস্টার আলতাফ আহমেদ ও ভিতরে এসে সোফায় বসে পড়ে, ড্রয়িংরুমে জমে উঠে আড্ডার আসর।
রাতে খাওয়া দাওয়া করে মেঘলার খালামনিরা সবাই চলে যায় তাদের বাসায়।
চলবে..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com