স্তর বদলীর সাথে সাথে কাজের পরিবর্তন
মানুষ যখনই একটি স্তরবদলী করে অন্য একটি স্তরে প্রবেশ করে।
তখনই তার কাজের পরিবর্তন ঘটে এবং সাথে সাথে নুতন কাজটি শুরু হয়।
তার মৃত্যুর ফেরেস্তারা নাফস এবং রূহ ইল্লিইন অথবা সিজ্জীনে জমা দিয়ে দেয়ার পরপরই
স্তরবদলী হয়ে মুনকার নাকীর দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং মৃত ব্যক্তি কোন সংযোগ পাবে জান্নাতের না জাহান্নামের?
এ ব্যাপারে মৃতব্যক্তির পরীক্ষা শুরু করে দেয়া হবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে- তোমার রব কে?
তোমার দ্বীন কি? মোহাম্মদ (সঃ)-এর প্রতিকৃতি তার সামনে হাজির করে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে এ ব্যক্তিকে তুমি চিন কি?
এ ব্যক্তি সম্পর্কে দুনিয়াতে তুমি কি মন্তব্য করতে?
যারা এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে তাদের সংযোগ হবে জান্নাতের সাথে,
আর যারা এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না বলবে হ্যাঁ হ্যাঁ লা-আদরী (আফসুস! আমি
জানি না) তাদের সংযোগ হবে জাহান্নামের সাথে।
ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে তার শারীরিক দেহের একটি স্তরবদলী হয়,
আর তা হচ্ছে এতদিন তার পৃথিবীর উপরিভাগে থাকার অধিকার ছিল। মৃত্যুর সাথে সাথে তার এ অধিকার হারিয়ে গেছে।
এখন তাকে থাকতে হবে মাটির নিচে। এখন কাউকে যদি মাটির নিচে রাখতে বিলম্ব হয় তবে
মনে করুন- বিদেশে কারো মৃত্যু হয়েছে তাকে হাসপাতালের ডিপ ফ্রিজে রাখা
হয়েছে, ওখান থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাকে দেশে এনে দাফন করতে তিন মাস
সময় লাগতে পারে অথবা কারো ভাগ্যে হয়ত মাটিই জুটল না। শিয়ালে অথবা
কুমীরে খেয়ে ফেলল অথবা দাফনের পরিবর্তে লাশ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা
হল। উল্লেখিত কারণ সমূহের কোন কারণেই তার আধ্যত্মিক স্তরবদলীর কার্যক্রম
বিলম্বিত হবে না। অর্থাৎ মুনকার নাকীরের সওয়াল জওয়াব, জান্নাত অথবা
জাহান্নামের সাথে সংযোগ স্থাপন বিলম্বিত হবে না। মোটকথা কবর আজাবের
জন্য কবর শর্ত নয় মৃত্যুর পরেই মানুষের আলমে বরযখ বা পর্দার আড়ালের
জগত শুরু হয়ে যায়। লাশের সাথে পৃথিবীর মানুষেরা যে আচরণই করুক না কেন
তাতে পর্দার আড়ালের জগতের কার্যক্রমে কোন প্রভাব পরবে না।
একটি দৃষ্টান্ত
মনে করুন- বাংলাদেশ সরকার ধান উৎপাদনের জন্য আমেরিকা থেকে একলক্ষ সেচ মেশিন ১০ বছরের জন্য ভাড়ার চুক্তিতে আমদানী করেছে। একলক্ষ মেশিন বাংলাদেশে পৌঁছে যাওয়ার পর, বাংলাদেশ সরকার একলক্ষ ড্রাইভারের কাছে
একলক্ষ মেশিন হস্তান্তর করল। ড্রাইভারগণ যারা একটি করে মেশিন পেল,
প্রত্যেকেই মেশিনের সাথে একটি ক্যাটালগ বই পেল। ক্যাটালগ বইটিতে মেশিনের ছবিসহ মেশিন চালাবার যাবতীয় নিয়মকানুন বলে দেয়া হয়েছে। মেশিনে কি পরিমান তৈল, মবিল পানি ব্যবহার করতে হবে সবকিছু ক্যাটালগ
বইতে উল্লেল্লখ আছে। এখন যে ড্রাইভার ক্যাটালগ বই অনুযায়ী তার মেশিন চালাবে সে ড্রাইভারের মেশিন নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দশ বছরই তার মেশিন ভাল সার্ভিস দিবে।
আর যে মেশিনকে ড্রাইভার ক্যাটালগ অনুযায়ী চালায়নি, ঠিকমত তৈল, মবিল ও পানি ব্যবহার করেনি,
সে মেশিন অল্প দিনের মধ্যেই বিকল হয়ে যাবে। মরিচা ধরে যাবে। এ মেশিন দ্বারা কোন সুফল পাওয়া যাবে
না। এ ভাবেই দশ বছর পার হয়ে যাবে।
মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর আমেরিকা থেকে মেশিন ফেরত নেয়ার জন্য ইঞ্জিনিয়ার আসবে তার সাথে
লেবার আসবে। এখন তারা ইঞ্জিনিয়ারের আদেশক্রমে মেশিনগুলো খুলবে প্যাকেটে করবে।
যে মেশিনগুলো ক্যাটালগ অনুযায়ী চালানো হয়েছে সে মেশিনগুলো খুলতে কোন সমস্যা হয়নি।
খুব সহজেই মেশিনগুলো খুলে প্যাকেট করে আমেরিকায় ফেরত পাঠান হবে।
কিন্তু যে মেশিনগুলো ক্যাটালগ অনুযায়ী চালানো হয়নি, মরিচা ধরে বিকল হয়ে পরে আছে,
সে মেশিনগুলো সহজে খোলা সম্ভব হবে না। লেবারগণ ইঞ্জিনিয়ারকে বলছেন স্যার;
এ মেশিন খোলা যাচ্ছে না প্যাচমুড়িগুলো সব মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। তখনই ইঞ্জিনিয়ার বলবেন
হ্যামার দিয়ে কিছু সময় পিটেয়ে দেখ, মরিচাগুলো দুর হয় কিনা? তারপর
ঘুরানোর চেষ্টা কর, দেখ- খোলা যায় কিনা।
লেবাররা হ্যামার দিয়ে পিটিয়েও যখন কোন সুরাহা করতে পারল না। তখন ইঞ্জিনিয়ার বলবেন, বড় হ্যামার দিয়ে
পিটিয়ে ভেঙ্গে চুরমার করে মেশিন প্যাকেট কর এবং ওগুলি আলাদা রাখ।
ওগুলিকে আলাদা গুদামে রাখা হবে এবং অকসনে সেল দেয়া হবে।
অতঃপর ভাঙ্গা লোহাগুলি যারা নিলামে খরিদ করবে তারা ওগুলি দিয়ে দাও, কাস্তে, খোন্তা, কুঠার, ইত্যাদি বানাবে, আর ওগুলি বানাতে হলে কি করতে হবে তাও কর অর্থাৎ পোড়াও আর পিটাও তারপর যা বানাবে তা বানাও।
পোড়ানো আর পিটানো ছাড়া কিছু বানানো সম্ভব হবে না।
এবার লক্ষ্য করুন- মানব দেহের প্রতি, মানব দেহের স্রষ্টা হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা।
মানবনামী ঐ মেশিন চালানোর ক্যাটালগ বই হচ্ছে আসমানী কিতাব।
কাজেই আসমানী কিতাব দ্বারা যারা দেহনামক মেশিন চালাবে, মেয়াদ শেষান্তে তাদের মেশিন খুলে চালান করার
জন্য লেবারসহ ইঞ্জিনিয়ার আসবেন, ঐ মেশিন খুলতে কোনপ্রকার অসুবিধা হবে না। মেশিন ভাল,
তাই ভাল গুদামে জমা হবে। আর মানবনামী মেশিন যদি
ক্যাটালগ বই তথা আসমানী কিতাব অনুযায়ী চালানো না হয় তবে ঐ বিকল্প
মেশিন খোলার সময়ই ভেঙ্গে চুরমার করা হবে এবং ভাঙ্গা লোহার ভাগ্যে যা ঘটে,
মানবনামী ভাঙ্গা মেশিনের ভাগ্যেও তাই জুটবে, পোড়ান আর পিটান।
উল্লেখিত দৃষ্টান্তে ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন আজরাইল, লেবার হচ্ছেন আজরাইলের
সহযোগী ফেরেস্তাগণ, গুদাম হচ্ছে ইল্লিন ও সিজ্জীন। ক্যাটালগ বই হচ্ছে
আসমানী কেতাব। কাজেই কুরআনের বিধান অনুযায়ী যারা জীবন পরিচালনা
করবে না তাদের দেহ মেশিন যখন খেলা হবে তখন শারীরিক দেহ হতে
আধ্যাত্মিক দেহকে পৃথক করা হবে আর তা ভেঙ্গে চুরমার করা হবে। সূরা
মুহাম্মাদের ২৭ আয়াতে বলা হয়েছে-
فكيف إذا توفتهم المليكة يضربون وجوههم وأدبارهم
তাদের কি অবস্থা হবে যখন ফেরেস্তারা তাদের প্রাণসংহার করবে, তাদের মুখের
উপর এবং পিঠের উপর পিটাতে থাকবে।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com