তোমার মনের মধ্যিখানি । পর্ব - ০১
ভার্সিটিতে প্রথম দিন এসেই র্্যাগিং এর শিকার হবে তা ভাবতে পারে নি নিঝুম! ভয়ে তার শরীর ঝিম মেরে বসে আছে। সামনের ছেলেটা ( আহিম ) বাঁকা হেসে তার দিকে চিরকুট টা বাড়িয়ে দিল।
শুকনো ঢোক গিলে চশমা হাত দিয়ে ঠিক করে কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের হাত বাড়িয়ে দিল নিঝুম। চিরকুট হাতে পেতেই শক্ত করে মুঠ করে নিল। ছেলে গুলোর সাথে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েগুলো এসে নিঝুম কে ঘিরে ধরল। হাত দিয়ে ইশারা করে দূরের একটা ছেলেকে দেখিয়ে বলল,
"ওই যে দেখছো, ওই ছেলেটাকে গিয়ে এই চিরকুট টা দিয়ে আসো যাও!
ডান পাশের মেয়েটা ( দিয়া ) নিঝুমের গলা জড়িয়ে বলল, কি আছে জানতে চাও!
মাথা নাড়ল নিঝুম। মেয়েটা হেসে বলল, প্রেমপত্র!
নিঝুমের শ্বাস বোধহয় বন্ধ হয়ে যাবে। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল মেয়েটার দিকে।
ভয়ে তার আত্না শুকিয়ে যাচ্ছে।
বাম পাশের মেয়েটা ( রিয়া ) হেসে বলল, আরে আরে সত্যি ভাবলে নাকি।
না না তেমন কিছু না। শুধু কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে তা'ই দিয়ে আসো।
বিশ্বাস না হলে তুমি খুলে দেখো। কি দেখবে?
"ননননা ঠিক আছে। আমিই দিয়ে আসছি। এরপর যেতে দিবে তো আমায়!
পেছনের মেয়েটা ( তানিশা ) এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
তোমাকে আটকে রেখে আমার লাভ কি বলোতো। আচ্ছা নামটা যেনো কি বলেছিলে তোমার!
"ননিঝুম!
"Whatever, যাও যাও দিয়ে আসো !
পাশের দুই মেয়ে তাকে ঢেলে পাঠালো। নিঝুম ভয়ে ভয়ে আগাচ্ছে।
পেছন থেকে সবাই চেঁচিয়ে তাকে চিয়ারাপ করছে। এ যেন কোন যুদ্ধে যাচ্ছে।
নিচু হয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর এসে পড়ল নিঝুম। আশপাশ তাকিয়ে ছেলে টাকে খুঁজতে লাগল।
"না দেখতে পাচ্ছি না তো, এই তো এখানেই ছিল।
এখন গেলো কোথায়? চলে গেল নাকি? এতো তাড়াতাড়ি! এখন কি হবে?
চিরকুট না দিয়ে গেলে তো তারা আমাকে ছাড়বে না।
ধুর ভালো লাগেনা আমার সাথে হতে হয় এমনটা!
কাঁদো কাঁদো মুখ ঘুরে পেছন ফিরতে দেখে ছেলেটা তার জায়গায় বসে আছে।
সেইই হাঁটতে হাঁটতে ছেলেটাকে পার করে এগিয়ে এসেছে। দাঁত বের করে হাসল সে।
গুটি গুটি পায়ে এসে হাজির হলো ছেলেটারে সামনে।
বেঞ্চেতে বসে বইয়ে মুখ গুঁজে বসে আছে ছেলেটা। নিঝুম তার মুখ দেখবার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল।
হুট করে বই টা একটু নিচু হলো। নিঝুম ছেলেটার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইল।
এতো সুদর্শন ছেলে খুব কম'ই দেখেছে সে।
কিন্তু সামনে থেকে আজ এই প্রথম বার ছেলেটা কে দেখল নিঝুম।
চোখ বড় বড় করে তার দিকেই তাকিয়ে রইল। চারদিকের সবকিছু থমকে গেছে তার সাথে।
মনে হচ্ছে শুধু এখানেই সে আর এই ছেলেটাই আছে।
পাশ থেকে কেউ কাগজের ঢিল ছুড়ে মারল। নিঝুম লাফিয়ে উঠল।
পাশে ফিরে দেখল সেই ছেলে মেয়ে গুলো। তাকে ইশারায় চিরকুট'র কথা বলছে।
নিঝুমের বোধ হলো। ঢোক গিলে বলল,
আমাকে তারা এদিকে পাঠিয়েছে, বলেছে এই চিরকুট আপনাকে দিতে।
প্লিজ চিরকুট টা নিয়ে নিন!
কোন জবাব পেলো না। ছেলেটা এক মনে বই পড়ে যাচ্ছে। নিঝুম আবারো ডাকল তাকে।
কোন সাড়া না পেয়ে ওই ছেলেমেয়েগুলোর দিকে তাকাল।
তারা আবারো ইশারায় বলছে চিরকুট দিতে।
নিঝুম একটু এগিয়ে এসে চিরকুট টা হাত দিয়ে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
আপনি এটা নিন প্লিজ। আমার ক্লাস শুরু হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। দয়া করে নিন এটা!
ছেলেটা হাত বাড়িয়ে চিরকুট টা নিল। কিন্তু নিঝুমের দিকে ফিরল না।
নিঝুম অবাক হয়ে গেল। ছেলেটাকে এখন আরও কাছ থেকে দেখছে সে।
বইয়ের মাঝেই ডুবে আছে সে। নিঝুম পা পিছনে বাড়িয়ে নিল।
আবারো এলো সেই ছেলে মেয়ে গুলোর কাছে। বলে উঠল, আমি দিয়ে এসেছি,
এখন আমি ক্লাসে যাই!
যেই না যেতে যাবে অমনি এসে তাড়া আবার তার সামনে এসে দাঁড়াল।
সামনের সুন্দরী মেয়েটা ( তানিশা ) হেসে বলল, আহ তুমি তো শুধু দিয়েই এলে কিছু তো আনলে না।
"কিছু আনার কথা ছিল কি?
"কেন তুমি গিভ অ্যান্ড টেক কথাটা শুনো নি।
"গিভ অ্যান্ড টেক!
সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠল। মেয়েটা বলল, যাও যাও আগে জবাব নিয়ে এসো এরপর তোমাকে যেতে দেবো। বুঝলে!
"কিন্তু আমি..
কিছু শুনলো না তারা। তাকে ধরে আবারো ছেলেটার কাছে পাঠালো।
বিচলিত হয়ে ছেলেটার সামনে আবারো দাঁড়িয়ে আছে নিঝুম। তার গলা বার বার শুকিয়ে যাচ্ছে।
কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। নিঝুম মাথা তুলে আবারো তাকাল ছেলেটার দিকে।
এবারো তার মুখের সামনে বই! নিঝুম এবার তার মুখ না দেখে বই টা পড়ার চেষ্টা করল।
কিসের বই এটা? কোন ইংরেজী বই হবে বোধহয়। নিঝুম খানিকটা নিচু হয়ে বই পড়ার চেষ্টা করছে।
হঠাৎ দেখল বই টা আরো নিচু হয়ে যাচ্ছে। নিঝুম আরো নিচু হয়ে গেল।
প্রায় বসেই পড়ল। হঠাৎ তার বোধ হলো বইটা আর পড়া হচ্ছে না।
পড়লে এতো নিচে কি করবে। মাথা তুলে দেখল ছেলেটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
নিঝুম লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। বিস্ময় দৃষ্টিতে আবারো তাকিয়ে রইল ছেলেটার দিকে।
ভ্রু উঠিয়ে ইশারায় ছেলেটা বলতে চাইলো "কি হয়েছে?
নিঝুম থমতম খেয়ে বলল, জবাব নিতে এসেছি!
ছেলেটা ভ্রু কুঁচকালো। নিঝুম দেখল বেঞ্চের এক কোনেই চিরকুট টা পড়ে আছে। নিঝুম হাতের ইশারায় বলল, এই যে চিরকুট, এর জবাব! এটা কিন্তু আমি দিই নি!
ছেলেটা চোখ বুলিয়ে পাশে তাকাল। চিরকুট টা হাতে নিল। এদিকে নিঝুম হাত দিয়ে ওদিকে ইশারা করে বলছে, চিরকুট সে দেই নি তারা তাকে দিয়ে জোড় করে পাঠিয়েছে। ছেলেটা হাসল। তার পাশে থাকা ব্যাগ থেকে একটা কাঠগোলাপ বের করল। তরতাজা এই ফুল দেখে নিঝুম অবাক!
চিরকুটের উপর ফুল রেখে তা বাড়িয়ে দিল নিঝুমের কাছে। নিঝুম নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
স্নিগ্ধ বাতাস, নির্বাক এই পরিবেশে কোথায়ও যেন হারিয়ে গেল সে।
অনেকক্ষণ ধরে হাত বাড়ানোর পরও চিরকুট না নেওয়ায় ছেলেটা নিজেই উঠে দাঁড়াল।
নিঝুম শ্বাস বন্ধ করে নিল। ছেলেটা এসে তার কাছে দাঁড়িয়ে হাত বাড়াল।
নিঝুম চোখ বড় বড় করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।
ছেলেটা ইশারায় বলেই যাচ্ছে চিরকুট নিতে। এক পর্যায়ে নিঝুম হাত বাড়াল।
চিরকুট হাতে নিতেই ছেলেটা আবারো বেঞ্চিতে বসে বই পড়তে লাগলো।
নিঝুম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চিরকুট'র দিকে।
শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার, হবেই তো শ্বাস বন্ধ করে আছে সে।
জলদি করে শ্বাস নিতে শুরু করল। ঘন ঘন শ্বাস ফেলে তাকাল ছেলেটার দিকে।
তবুও ছেলেটা তার দিকে ফিরে তাকাল না। বইয়ের মাঝেই মুখ গুজে রইল।
তানিশা নামের মেয়েটা ছো মেরে নিঝুমের হাত থেকে চিরকুট নিল আর তাকে বলল চলে যেতে।
নিঝুম পাশ দিয়ে যেতেই দেখল তানিশা ধপাস করে নিচে পড়ে গেল।
ছুঁড়ে ফেলে দিল কাঠগোলাপ টা। চিরকুট টা হাতের মাঝে মুঠো করে নিল।
নিঝুম অবাক হয়ে গেল। দলবল নিয়ে রাগতে রাগতে চলে গেল সে।
তারা যেতেই নিঝুম এলো সেই ফুলের কাছে। হাত বাড়িয়ে ফুলটা নিল সে।
কি স্নিগ্ধ ফুলখানা! মেয়েটার মনে কি মায়াদয়া নেই। কিভাবে এই ফুল ফেলে দিল সে।
কতোটুকু ভালোবাসা নিয়ে এই ফুল জন্মেছে সে কি জানে!
নিঝুম মিটিমিটি হেসে ফুলটা কে দেখতে লাগল। হুট করেই কেউ এসে তার হাতে ধাক্কা দিয়ে ফুলটাকে আবারো ফেলে দিল। আতংকিত গলায় বলে উঠল, তুলো না ওই ফুল, তুলো না!
নিঝুম অবাক দৃষ্টিতে মাটিতে পড়ে থাকা সেই ফুলটার দিকেই তাকিয়ে রইল!
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com