তোর চোখের মায়ায় । পর্ব -০৮
ভ্যাপসা রোদে গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা সবার। প্রকৃতি যেন পানি শূন্যতায় ভুগছে।চারিদিকে সূর্যের উতপ্ত রোদ।গরমে মানুষজন হাঁপিয়ে উঠেছে। নিজের রুমে শুয়ে আছে মেঘলা।মাথার উপর ফ্যানটা ঠকঠক আওয়াজ করে ঘুরছে। একটু আগেই মেঘলার ঘুম ভেঙ্গেছে। কলেজ থেকে ফিরে খাওয়া দাওয়া করেই ঘুমিয়ে গেছিলো। ঘুম ভেঙ্গেছে মাত্র কিছুক্ষণ হলো, বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চাচ্ছে না।
কিছুক্ষন এভাবে শুয়ে থাকার পর আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসে। ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে যেতেই মনে পড়ে, স্নেহা ওকে বলছিলো বাড়িতে এসে কল দিতে কি কথা বলবে। বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে আবার বেলকনিতে চলে যায়।স্নেহার নাম্বারে কল দিতেই রিসিভ করে ফেলে,
-কিরে কি করছিস।(মেঘলা)
-এইতো বসে আছি, তুই কি করছিস।
-ঘুম থেকে উঠলাম মাত্র।
-ওহ্ আচ্ছা,আঙ্কেল আন্টি কেমন আছে।
-হুম ভালো আছে, তুই না আমাকে কি বলবি।
-হুম বলবো তো, লজ্জা লাগছে।
-আহাগো তুমি আবার কবে থেকে এত লজ্জাবতী হয়ে গেলে।
-একদম মজা করবি না বলে দিচ্ছি, না হয় বলবো না কিন্তু।
-আচ্ছা, আচ্ছা, মজা করবো না। এবার তো বল
-হুম বলছি
-এত ঢং না করে তাড়াতাড়ি বল।
-বলছি তো, একটু অপেক্ষা কর।
-ব্যাপার কিরে বল-তো, এত লজ্জা পাচ্ছিস কেন,তুই আবার কারো প্রেমে টেমে পড়লি না তো।
-হুম দোস্ত।
-এ্যাহ,,,সত্যি নাকি
-হুম রে সত্যি
-কার কপাল পুড়ালি তুই আবার, কে সে যে তোর মতো ডাইনী বউ পেতে চলেছে।
-দেখ মেঘ, ভালো হচ্ছে না কিন্তু, বাজে কথা বলবি না একদম। আর তার নাম শুনলে তুই হার্টফেল করবি বুঝলি।
-ওমা তাই নাকি রে, তাহলে তো শুনতেই হচ্ছে,বল বল কে সেই মহৎ ব্যক্তি।
-রিফাত স্যার।
-কি
-বলছি না তুই শুনলে হার্টফেল করবি।
-দোস্ত তুই দুনিয়ায় আর ছেলে খুঁজে ফেলি না, ওই ব্যাটা রা**ক্ষসকেই তোর পছন্দ হতে হলো। না এ আমি মানি না, রিফাত স্যার কখনোই আমার এত কিউট বান্ধবীর বর হতে পারে না।
তারপর ওরা এটা সেটা বলতে থাকে।
বেলকনিতে রাখা চেয়ারটাতে বসে মেঘলার ছবি দেখছে রিফাত।
ছবি গুলো কলেজে অনুষ্টানের দিন মেঘলার অজান্তেই তুলেছে রিফাত।
ছবিতে মেঘলা ওর ফ্রেন্ড’দের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে,
ঠিক সেই মুহূর্তেই ছবিগুলো তুলেছে। রিফাত মেঘলার হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
এই মেয়েটার চেহারায় এত মায়া কেন, যে কেউ প্রথমবার তাকালেই চোখ ফিরাতে ইচ্ছে করে না।
হাসলে গালে টোল পড়ে যেটা চেহারার সৌন্দর্যকে দিগুণ বাড়িয়ে দেয়।
কাজল কালো মায়াবিনী চোখ, যেটা হাজারো ছেলের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
রিফাত মেঘলার ছবিটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক ও পড়ছে না।
যেন হাজার জনম দেখলেও তৃষ্ণা মিটবে না।
কেউ গলা খাঁকারি দিতেই রিফাতের ধ্যান ভাঙ্গে পাশে তাকিয়ে দেখে রুহি।
রিফাত মেঘলার ভাবনায় এতটাই মগ্ন ছিলো যে,
কখন রুহি এসে তার পাশে দাঁড়িয়েছে সেটা টেরই পায় নি।রিফাত তাকাতেই রুহি বলে,
-কি ভাই, এখনও কি বলবি নাকি আমি যা ভাবছি সেরকম কিছু না।
-আসলে আপু, ইয়ে মানে
-হয়েছে মেয়েদের মতো এত লজ্জা পেতে হবে না। মেয়েটা কে বল
-আমাদের কলেজেই পড়ে, মেঘলা।
-কি তুই শেষমেষ ছাত্রীর প্রেমে পড়লি।
এটা শুনেই রিফাত মাথা নিচু করে ফেলে। রিফাতকে এমন করতে দেখে রুহি বলে,
-আরে ভাই মন খারাপ করছিস কেন,আমি তো মজা করছি।
তবে মেয়েটা কিন্তু দেখতে মাশাআল্লাহ ।
আমার ভাইয়ের সাথে ভীষণ মানাবে।
এটা শুনেই রিফাতের মুখে হাসি ফুটে উঠে।সে উঠে দাঁড়িয়ে একহাতে রুহিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-আমার লক্ষী বনু।
-হয়েছে হয়েছে আর পাম দিতে হবে না।
তো মেঘলা কি জানে আমার ভাইটা যে তাকে এত ভালোবাসে।
-না আপু, এখনো বলি নি, তবে কিছু দিনের মধ্যে বলবো।
-দেরি করিস না কিন্তু, যত তাড়াতাড়ি পারবি ও-কে তোর মনের কথা বলে দিবি।
-আচ্ছা ঠিক আছে আপু।
তারপর দুই ভাই বোন মিলে কথাবার্তা হাসি আড্ডায় মেতে উঠে।
রিফাত আজ অনেক খুশি, কারণ তার ভালোবাসার মানুষটাকে তার বোনের পছন্দ হয়েছে।
বোনের পছন্দ মানে বাবা মায়ের ও পছন্দ হবে। ভাবতেই রিফাতের খুশি লাগছে।
রুহি কথা বলার ফাঁকে বারবার আড়চোখে খেয়াল করছে তার ভাই কেমন প্রান খুলে হাসছে।
রুহি মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে, ভাইয়ের এই হাঁসিটা যেন সারাজীবন থাকে।
জানালার পর্দা ভেদ করে সকালের সোনালী আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে যায় মেঘলার।
ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সকাল সাড়ে আটটা বাজে।
বিছানা ছেড়ে উঠেই ব্রাশ হাতে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
ব্রাশ করা শেষ হলে রুমে আসতে নিতেই ওর চোখ পড়ে বেলকনিতে রাখা চেয়ারটাতে,
কৌতুহলী হয়ে সেদিকে এগিয়ে যায় মেঘলা।
চেয়ারের উপর একটা চিরকুট রাখা সাথে একটা তাজা গোলাপ ফুল। চিরকুটটাতে লেখা,,
কোনো এক মিষ্টি সকালে
তোমার হাতটি ধরে
শিশির ভেজা ঘাসে হাটবো দুজন।
শুভ সকাল প্রেয়সী,,,,,,
চিরকুটটা পড়ে চিন্তিত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা।
কে এই ব্যক্তিটি যে মেঘলার অগোচরে ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে।
কিছুক্ষন ভাবনার পরে ও মেঘলা কিছুই ভেবে পাচ্ছে না,
কে হতে পারে সেটাও আন্দাজ করতে পারছে না।
তাই আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে চলে যায়।
একটুপর ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই ড্রয়িংরুম থেকে খুব জোরে হাসির শব্দ আসছে।
সচারাচর এরকম হাসির শব্দ হয় না বাড়িতে কখনো।
হয়তো বাড়িতে কেউ এসেছে,কে এসেছে সেটা দেখার জন্য মেঘলা ড্রয়িংরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়,,,,,,,,,
চলবে..
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com