Breaking News

আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা । পর্ব - ০২

আমি মনে মনে বললাম, আলহামদুলিল্লাহ বলে লাভ নাই।এই পেত্মী থেকে আপনার পোলার মুক্তি নাই। ক্রাশ যেদিকে তাকাইবে, এই ছোঁয়াকে দেখিতে পাইবে।

আন্টি কিছুক্ষণ গল্প করেই চলে গেল।
আমি নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে ফ্যানের ঘোরা দেখতেসি
আর ভাবতেসি ফ্যান সব সময় ডান থেকে বামে ঘোরে কেন?
আম্মা খাইতে ডাকল। আমি খাবার নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।
তখন কানে এল আম্মা আব্বাকে আজকের ঘটনা তার কথার রঙে রঞ্জিত করে শুনাইতেসে।
তার বর্ণনা শুনে আমি মুরগীর ঠ্যাং চাবাইতেসি আর মাথা চাপড়াইতেসি।
হায়রে জননী!!!! এ কি করলা? আম্মা সব শেষে এটা যুক্ত করল যে, তোমার মেয়ের ভীমরতি হইসে?
নইলে এমনভাবে কেউ পাসওয়ার্ড বলে? ব্যাপারটা কেমন সন্দেহজনক না?
- কেন?
- তোমার মেয়ের মাথায় যে বুদ্ধি ধরে তাতে সে কেমনে অর্ধেক পাসওয়ার্ড বলে,
তাও আবার একটা ছেলেকে!? তোমার মেয়ের মতি গতি ভালা না।
উঠতি বয়স। নাহ্, তুমি পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দাও।
- আচ্ছা।
আমি রুমে বসে বসে শুনতেসি আর মনে মনে চিল্লাইতেসি এটা তুমি কি কইলা আব্বা?
তুমি রাজি হইয়া গেলা!!!! তোমার মেয়ে তার হবু জামাইরে ভালোবাসার কথা কওনে
তোমরা এত বড় শাস্তি দিতে পারো না। আমি রুম থেকে চিল্লাই কইলাম,
আম্মা আজকে কি লবণ মুরগী দি রানসো? আম্মাও চিল্লাই কইল,
ভালো না লাগলে নিজে রাইন্দা খাও। আমি মনের দুঃখে আরেকটা ঠ্যাং আইনা চিবাইতে লাগলাম।
আম্মা পিছন থেকে খোঁচা দিয়ে কইল, লবণ না বেশি তাহলে রাতে শুধু তরকারি দিয়ে ভাত খাইস।
কথাটা শুনে মনের দুঃখ এক লাফে দশ গুন হইয়া গেল।
সেই দুঃখে হাড্ডি গুলা এমনভাবে চিবাইলাম যে বিলাই দেখি কইব,
কোন রাক্ষস আজকে মুরগী খাইসে, আমাদের জন্য হাড্ডিটা পর্যন্ত অবশিষ্ট রাখে নাই।
শেষ পর্যন্ত আব্বা ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করছে কি না আর জানতে পারলাম না।
কারণ আমার নিজের কোনো ফোন নাই।

রোজ বিকালে ক্রাশ মাঠে ক্রিকেট খেলতে যাইতো। আমি ক্রিকেট একদম পছন্দ করতাম না।
কিন্তু তার ঠেলায় ক্রিকেট এত ভালোবেসে ফেললাম যে নিজেই বাচ্চাদের একটা ব্যাট বল কিইনা
নিয়ে চলে আসলাম দোকান থেকে। এখন প্রত্যেকদিন আমার একই কাজ।
সকালে স্কুল, বিকালে ব্যাট বল আর রাতে পড়াশোনা। এই তিন নিয়াই আপাতত আমার সংসার।
তারে নিয়া ডাইরিতে হাজার কথা লিখা পুরাই ফেলসি।
এটাও লিখসি যে বিয়ার পরে ক্রিকেট টিম বানামু। লাইনটার কথা মনে কইরা
নিজেই লজ্জায় মুচকি মুচকি হাসি। ভাবি আমার ক্রাশ জানলে কি কইব!!!
একদিন বিকালে ব্যাট বল পাশে রাইখা বিছানায় শুইসি আর ছাদের দিকে তাকাই মুচকি মুচকি হাসতেসি। কোন ফাঁকে এটা আম্মার চোখে পড়ছে খেয়াল নাই।
সাথে সাথে আম্মা রাতে আব্বারে কইল, শোনো, তোমার মাইয়া প্রেম করে।
আব্বা চোখ কপালে তুলে বললেন, কি বলো!? আমি রুম থেকে আম্মার কথা
শুনে চিৎকার দিয়া কইলাম, আম্মু, আজকে নাকি জবার একটা স্পেশাল পার্ট দিবো।
আটটা বাজি গেসে। তুমি দেখবা নাকি আমি ডিস এ্যান্টেনা কাইটা দিমু? এই টনিকেই কাজ হইল।
আম্মা মুখ বন্ধ কইরা রিমোট খুঁজতে লাগল। কারণ আমি যখন বলসি ডিস
এ্যান্টেনা কেটে দিমু, তো কথা না শুনলে তাই করমু। এই নিয়ে দুই বার এমন হইসে।
আব্বাকে অনেক বলে আম্মা লোক আনাই ঠিক করাইসে।
এইবারও হইলে ডিস লোকদের কাছে লজ্জার আর শেষ থাকবো না।
তাই কোনো কথা না শুনলে এই টোটকা রেডি রাখি। যাহা এক ফোঁটাই যথেষ্ট।

আমি পড়ার টেবিলে বসে আছি। সামনে বই খোলা।
কিন্তু আমার মন মৌমাছির মতো ক্রাশ নামক ফুলে ঘুরে বেড়াইতেসে আর মধু সংগ্রহ করে বলতেসে,
আর আছে মধু? আজ আমি হাঁড়ি ভর্তি করে নিয়ে গিয়ে মৌচাক বানাবো।
ফুলও হেসে আমাকে একগাদা মধু দিয়া কইল, লও সখি, এই মধু শুধু তোমার জন্যই জমাই রাখসি।
আমিও সেই মধু নিয়া মৌচাকে রাখসি এমন সময় কে যেন ঢিল মারল মৌচাকে।
তাকিয়ে দেখি আব্বা দরজার সামনে দাঁড়াই আমাকে অনেকক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে ডাক দিসে।
আমি তাকাতেই বলল, পড়ার বই খোলা রেখে কোন দিকে তাকাই হাসতেছিস?

- কই, আব্বু?
- আমি তোরে ভালো করে চিনি। কার পাল্লায় পড়ছিস?
- তুমিও আম্মুর কথা বিশ্বাস করলা? কোন পাগলে আমার সাথে প্রেম করবো?
আব্বা আমার কাছে এসে সুন্দর করে উপদেশ দিয়ে গেলেন যে বই খোলা থাকলে শয়তানে পড়বো।
অতএব পড়ায় মন দাও। আমি মনে মনে কইলাম, যে পড়া, শয়তানও বলব, থাক,
তোর পড়া তুই পড়। আমার অন্য কাজ আছে। এটা বলে সেও পালাইব।
ভেবেই ফিক করে হেসে দিলাম। আব্বা চলে যাচ্ছিলেন।
হাসি শুনে আমার দিকে ফিরে বললেন, আবার হাসিস ক্যান?

- আব্বা, ভাবতেসি।
- কি?
- কালকে কয়টা রসগোল্লা তোমার পেটে গেসে।
এই কথাতেই আব্বা চোরের মতো উঁকিঝুঁকি দিয়ে বললেন, এই, তোর আম্মুকে বলিস না।
আসলে দেখে আর লোভ সামলাতে পারি নাই।
- আমি বুঝি, চিন্তা কোরো না, আমার দিক থেকে এই কথা লিক হবে না।
কথায় বলে না যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যে হয়। হঠাৎ কোথায় থেকে আম্মা এসে হাজির।
আমার কথার শেষ অংশ শুনেই বললেন, কি লুকাইতেসো বাপে ঝিয়ে মিলা।
আব্বা কিছু বলার আগেই বললাম, কালকে কয়টা রসগোল্লা খাইসে সেই সংখ্যাটা বলতে মানা করতেসিলো। আমিও বলসি আমার থেকে এই কথা লিক হবে না।
আব্বা সাথে সাথে চোখ রাঙিয়ে আমার দিকে তাকালেন।
হাঁড়ি হাটে ভেঙে গেসে। আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আবার খেয়েছো!?
তোমার না ডায়াবেটিস। ব্যাস শুরু আম্মার ভাষণ।
আমিও মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগল আর শিখতে লাগলাম।
ভবিষ্যতে ক্রাশকে এভাবে বলতে হবে না!?
ভেবে এবার আটাশটা দাঁত বের করে হাসতে লাগলাম।
আমার হাসি দেইখা আব্বা আম্মা ঝগড়া বাদ দিয়ে আমার দিকে তাকাই রইল।
যেন আমি তাদের মেয়ে না কোনো আজব চিড়িয়া চলে আসছে আমাদের ঘরে।
তাদের দিকে তাকিয়ে আমার হাসি বন্ধ হইয়া গেল। আমি পড়ায় মনোযোগ দিলাম।

দিন দিন তার প্রতি দুর্বল হইতে লাগলাম। ক্রাশের প্রতি আমার হূদয় ক্রাশিত হইতে লাগিল।
আমিও হাল ছাড়ার পাত্রী নই।
আমি যখন তার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ খুঁজতেসি তখন সুযোগ নিজেই আমার কাছে এসে কইল,
ছোঁয়া, তোর দুঃখে দুঃখিত হইয়া নিজেই চলে আসলাম তোর কাছে।
একদিন আন্টি আমাদের পিঠা দিতে আসলেন। আমি তো পিঠার সেই লেভেলের ফ্যান।
আমাকে কেউ সারাদিন পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করলে ওগুলো শেষ না করা
অবধি আমার দুই পা দরজার দিকে নড়ে না।
আমাকে যদি বলে তোকে পিঠাওয়ালার কাছে বিয়া দি দিমু তাইলে হাসতে হাসতে রাজি।
তবে সেটা আগের কথা। এখন আমার জামাই আছে, মানে হবু জামাই আছে।
এখন পিঠাওয়ালাকে বিয়া করা আমার জন্য জায়েজ নাই।
যাই হোক, আন্টি মাত্র পিরিচটা রাখতেই আমি পিঠার সুগন্ধে মৌমাছির মতো
উড়ে উড়ে বসার রুমে চলে এলাম। গিয়ে দেখি পিঠাগুলো
আমার দিকে জুলুজুলু চোখে তাকাই আছে। কিন্তু আন্টির সামনে নিতে পারতেসি না।
হবু শাশুড়ী বলে কথা। যদি দেখে ছেলের বউ রাক্ষসের মতো পিঠা গিলতেসে তাইলে
আর জীবনেও ক্রাশ রে এই মুখো হতে দিবে না।
আমি খালি পিঠার দিকে তাকাইতেসি আর চরকির মতো আন্টি আর আম্মার চারপাশে ঘুরতেসি।
কি কপাল!!! আমার সাধের পিঠা করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাই আছে আর আমিও
বুভুক্ষের মতো তাকাই আছি। আম্মা আমার হাবভাব দেইখা কইল, কি রে, কিছু বলবি?

- না।
আম্মা বলল, যা তো ছোঁয়া, তরকারির লবণ দেখে আয়।
আমি মুখ কালো করে রান্নাঘরে চলে এলাম। আরেকটা বিরক্তির কাজ।
আমি যতদিন লবণ দেখসি ততদিন আম্মার একটা লম্বা ভাষণ শুনতে হইসে। হায় রে ক্রাশ!!!
তোমার জন্য আমার মুখ এখন মিষ্টি না করে নোনতা করতে হবে।
কোথায় আরাম করে পিঠা খাইতাম তার জায়গায় তরকারির ঝোল খাইতেসি।
আমি লবন দেখে নিজের রুমে চলে এলাম। আম্মা আর আন্টি গল্প করতেসে।
আমার ইচ্ছা করতেসে মনের দুঃখে গান গাই।
কিন্তু আন্টি কি আমার গলা সহ্য করতে পারবে? কয়েক মুহূর্ত উপরের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করলাম।
তারপর ভাবলাম, আমারে পিঠা খাইতে দিতেসে না, বইসা বইসা রসের আলাপ করতেসে।
এইটুকু প্যারা তো দেওয়াই যায়। মাত্র গলা পরিষ্কার করে গান গাইব,
এমন সময় আমার কান ওনাদের গল্পের দিকে চলে গেল।
আমি ঠিক শুনছি? আমার ক্রাশ গাজরের হালুয়ার উপর ক্রাশ?
ভালো করে শুনে দেখলাম ঠিকই শুনসি। শুনে আমি কপাল চাপড়াইলাম।
আমার ক্রাশের সব সময় আমার অপছন্দের জিনিসগুলাই পছন্দ কেন?
আমি গাজর দুই কেন চাইর চোক্ষে দেখতে পারি না। আর সেই গাজরের হালুয়া আমার ক্রাশ খায়।
এবার আমার কান্দন আইতেসে। আন্টি কথা বলে চলে গেল।
আমি তাড়াতাড়ি আম্মার ফোনে আব্বাকে ফোন করে কইলাম,
আব্বু এক কেজি গাজর আনবা। আব্বা আমার কথা শুনে হার্টফেইল করল কি না বুঝলাম না।
কারণ ফোনের ওপাশে নিঃশ্বাসের শব্দ পর্যন্ত নাই।
আমি কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করতেই আব্বা বলল, তোর শরীর ঠিক আছে তো?

- হ্যাঁ। মনে করে আনবা কিন্তু, পারলে দুই কেজি আনিও।
তারপর আর কথা নাই। আমি তাকাই দেখলাম ফোন কেটে দিসে। আমি ভাবি কি হলো!?
ফোনে তো টাকা আছে, তাহলে মনে হয় আব্বা কেটে দিসে। থাক গা।
আমি চার হাত পা মেইলা বিছানায় শুয়ে শুয়ে গাজরের অপেক্ষা করতে লাগলাম।
কখন যে ঘুমাই পড়ছিলাম টের পাই নাই।
হঠাৎ তাকাই দেখি আব্বা আম্মা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাই আছে।
আমি ইশারায় বললাম কি?
ওনারাও ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন কি? আমিও আবার জিগাই, তারাও জিগায়।
এভাবে কি কি খেলতে খেলতে বিরক্ত হয়ে উঠে বললাম, কি হইসে?
আব্বা আমার কপালে হাত দিয়ে বললেন, চল ডাক্তারের কাছে।
- হঠাৎ ডাক্তারের কাছে যাবো কেন?
- শরীর ঠিক নাই।
আমার শরীর অথচ আমিই জানি না আমার শরীর খারাপ।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, দুই কেজি গাজর আনসো?
আব্বা আম্মা একে অপরের দিকে তাকাই আছে আর আমি তাদের দিকে।
আমি ডায়নিংয়ে গিয়ে দেখলাম একটা কালো পলিথিনে কিছু গাজর উঁকি ঝুঁকি দিতেসে।
আমি নাক কুঁচকে একটা মোটকা দেখে গাজর ধুয়ে নিয়ে সোফায় বসলাম।
আব্বা আম্মা অবাক হয়ে আমার কান্ড কারখানা দেখতেসে।
আমি গাজরে একটা কামড় দিতেই দুইজনে আঁতকে উঠল।

চলবে…

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com