হাতে লেখা পত্রিকা - Hand Writing Newspaper
হাতে লেখা পত্রিকা - Hand Writing Newspaper
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাতলা গ্রামের হাসান পারভেজ (৪০)। কখনো ইটভাটায় কাজ করে,কখনো গ্রামের অবস্থাশালী পরিবারের গৃহস্থালির কাজ করে এবং কখনো খেতখামারে দিনমজুরি করে সংসার চালান।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে হাতে লিখে বের করেন চার পৃষ্ঠার একটি পত্রিকা যার নাম "আন্ধারমানিক"।
নিজ হাতে খবর লেখার দুরূহ কাজটি করেন পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক হাসান পারভেজ।
হাসান পারভেজ পত্রিকার নাম সম্পর্কে বলেন, আমার উপজেলার নদীর নাম ‘আন্ধারমানিক’ তাই নদীর নামেই পত্রিকার নাম দিয়েছি। একটি স্লোগানও যুক্ত করেছি—‘আঁধারে মানিক্যের সন্ধান’।
পত্রিকা বের করার কারণ সম্পর্কে যানতে চাইলে হাসান পারভেজ বলেন,প্রথমত গ্রামীণ জনপদের মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও সাফল্য তুলে ধরতেই পত্রিকা বের করেছি। আরও একটি কারণ আছে! আমি কবিতা লিখি। তবে কোথাও ছাপাতে পারিনি। ভাবলাম, পত্রিকা বের করলে কবিতাও ছাপাতে পারব।পরে ২০১৯ সালের ১ মে থেকে আমার পত্রিকা বের হয়েছে।
প্রতিটি প্রতিবেদন আমি পত্রিকায় নিজের হাতে লিখি। শুধু শিরোনামগুলো কম্পিউটারে কম্পোজ করে দেই। পত্রিকা হাতে লেখার পর আমি মূল কপির ২০০ থেকে ২৫০টি ফটোকপি করি।
প্রতিটি কপির জন্য খরচ ৭ টাকা। প্রতিটি পত্রিকার দাম ১০ টাকা। সব কপি বিক্রি করা গেলে ৫০০ টাকার মতো লাভ থাকে।
অর্থসংকটসহ নানান কারণে পত্রিকার বেশি সংখ্যা বের করতে পারিনা। একটি ফটোকপিয়ার, ছবি তোলার জন্য একটি ক্যামেরা অথবা মোবাইল ফোন ও একটি কম্পিউটার থাকলে কাজটি সহজ হতো।
পত্রিকার সংবাদ সংগ্রহের জন্য প্রতিবেদক, রিপোর্টার ও কর্মী সম্পর্কে হাসান পারভেজ বলেন,পত্রিকার সঙ্গে ১৫ জনের মতো লোক কাজ করেন। বলতে পারেন, তাঁরাই আমার সংবাদকর্মী। কেউ ভ্যান চালক, কেউ দরজি, কেউ কৃষক, কেউ রাজমিস্ত্রী, কেউ গৃহিণী। গ্রামে তাঁদের চোখে পড়া ঘটনা আমাকে বলেন। আমি লিখে দেই। তাদের আমি কাউকেই টাকা দিনা বা তাঁরা কেউ টাকা নেন না।
পত্রিকার পাঠক সম্পর্কে হাসান পারভেজ বলেন,শুরুতে শুধু আমার গ্রামের মানুষকে পত্রিকাটি পড়াতে চেষ্টা করেছি। পরে
রুবিনা নামের ৯ বছরের একটি মেয়েকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন আলোচিত হয়। এখন পাশের ৫-৬ টা গ্রামের মানুষ আমার হাতে লেখা পত্রিকা পড়েন।
রুবিনার প্রতিবেদনটি ছিলো:রুবিনার মা ডলি বেগমকে পায়ে শিকল পরিয়ে রাখা হতো। কারণ, তাঁর মানসিক অসুস্থতা ছিল। পরিবারটি অত্যন্ত দরিদ্র। তাঁদের দুঃখ-কষ্টের জীবন পত্রিকায় তুলে ধরি।
পরে এই পত্রিকার মাধ্যমেই স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন পরিবারটিকে একটি ঘর ও ২ শতাংশ জমি দিয়েছে।
হাসান পারভেজ এর পরিবার ও পড়াশোনা সম্পর্কে বলেন,পরিবারে স্ত্রী ও দুই মেয়ে। বড় মেয়েটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আর পড়াশোনা, ১৯৯৬ সালে আমার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।টাকার অভাবে দিতে পারিনি। পরে ২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছি। ২০১৭ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি (ভোকেশনাল) পাস করেছি। এখন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকও করছি।
পত্রিকার নিয়ে তার আগামী ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, পত্রিকা বের করি মনের আনন্দে। আমি হাতে লিখেই পত্রিকা বের করব। তবে পৃষ্ঠা বাড়ানোর ইচ্ছা আছে। এখন আমি নিজ ঘরের বারান্দাকে কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছি। আলাদা একটি অফিস নিতে চাই।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com