অন্ধপ্রেম । পর্ব - ০৮

রোদ ভেতরে ঢুকতে পারলোনা দাড়োয়ানের জন্য ।রাজ দাড়োয়ানকে আগেই বলে দিয়েছে শীতলের বাড়ির কাউকে যেনো ঢুকতে না দেওয়া হয় ।

রোদ ভাদ্য হয়ে চলে গেলো রাজের বাড়ি থেকে ,,

সকাল হয়েছে শীতলের জ্ঞান ফিরেছে ,,

পুরো শরীর ব্যাথায় জ্বলছে ,,

শরীরের অনেক জায়গায় লাল লাল দাগ হয়ে গিয়েছে ।

শীতলের হাত পা বাধা নেই আর ,,

মনে হয় রাজ খুলে দিয়েছে ,,

শীতল নিজে নিজে বেড থেকে উঠে পড়ে ,,

রাজ তখনো বেডে উপর হয়ে ঘুমিয়ে আছো ,,

রাজ কে ঘুমন্ত অবস্থায় কি যে নিষ্পাপ লাগছিলো তা বলার বাহিরে ,,

অথচ জেগে থাকলে জানোয়ারের মতোই ভিহেবিয়ার করে ।

শীতলের আর সহ্য হচ্ছেনা ,,

এভাবে তার জিবন রাজের অত্যাচারে চলতে পারেনা ,,

শীতলের কিছু একটা করতে হবে রাজের হাত থেকে বাচার জন্য,,

আত্মহত্যা করা মহা পাপ তা না হলে সে কবেই এই পথ বেছে নিতো ,,

শীতলের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো রাজকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে ,,

শীতল একটা বালিশ নিয়ে রাজের দিকে এগিয়ে গেলো ,,

শীতল স্থির করলো রাজকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলবে ,,

শীতল বালিশ নিয়ে এগুতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো ,,

তার হাত চলছেনা ,,

তার মন মানছেনা রাজকে

মেরে ফেলতে ,,,

হাজার হোক শীতল তো বাঙালি মেয়ে ।

যে মেয়েদের স্বামি যেমন হোক না কেনো তাকেই মেনে নিতে হয় ।

সারাজিবন তার সাথেই থাকতে হয় ।

রাজ ঠিক বলেছিলো শীতলের সম্পর্কে ,,

শীতল কখনো তার স্বামিকে ধোকা দিবেনা ,,

শীতল বালিশটা ফ্লোরে ছুরে মেরে শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে দাড়ালো ,,

সেখানে বসে চিৎকার করে কান্না শুরু করলো শীতল ,,

তার কান্না কেউ দেখতে পারছেনা ,,

একমাত্র আল্লাহ ছাড়া তার নিজের বলতে কিছু নেই ,

নিজের পরিবারও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ,,

সে মরতেও পারছেনা আর মারতেও পারছেনা ,,

শীতল কি করবে তা ভেবে পাচ্ছেনা ।

কিসের দোষে এতো শাস্তি তা সে এখনো জানেনা ।

শাওয়ার করে শীতল রুমে এসে দেখে রাজ বেডে নেই ,,

রাজের গাড়ির চাবিএ নেই ,,

শীতল গাড়ির হর্ন পেলো তার মানে রাজ বাহিরে যাচ্ছে ,,

হঠাৎ টেলিফোনের রিং হলো ,,,

এসময় কে ফোন করলো সেটাই ভাবছে শীতল ,,

শীতল সোংকোচ নিয়ে ফোনটা ধরলো ,,

ফোনের ওপাশের আওয়াজ শুনে শীতলের বুঝতে বাকি রইলোনা কে ফোন করেছে ,,

শীতলের মা ফোন করেছে শীতল কে ,,

দুজনেই কান্না করে কথা বলছে ,,

শীতলের মা শীতলকে একটা পার্কে দেখা করতে বলেছেন ,,

.কি যেনো জরুরি কথা বলবে শীতলকে ।

শীতল ফোন রেখে নিচে গেলো ,,

পুরো বাড়ি ফাকা ,,

রান্নার মহিলা আর রাজের চাচা ময়মনসিংহে বেড়াতে গিয়েছেন ,,

ওখানে তাদের কি যেনো কাজ আছে তাই গিয়েছে ,,

10 টা বাজে ঘরিতে শীতল এখনো খাইনি ,,

শীতল একা কি করবে তাই পুরো বাড়িটা একটু ঘুরে ঘুরে দেখছে ,,

হঠাৎ একটা রুমের সামনে সে থমকে দাড়ালো ,,

এই রুমের চাবি রাজের কাছে থাকে ,,

কারো ঢোকা নিষেধ এই রুমে ,,

রাজ মাঝরাতে এখানে আসে সেটা শীতল কয়েকবার লক্ষ্য করেছে,

আজকে দরজা খোলা রুমের ,,এই সুযোগ শীতলের রুমের ভেতরে কি আছে সেটা দেখার ,,

শীতল বড্ড কৌতহূল হচ্ছে রুমের ভেতরে যাওয়ার ,,

শীতল দেরি না করে সেখানে গেলো ,,.

রুমটা দেখে মনে হচ্ছে কোনো মেয়ের রুম এটা ,,

মেয়েদের জামা কাপড় লসমেটিক্স দেখেই বুঝলো শীতল ,,

শীতল বেশ ভালো করে দেখলো রুমটা ,,

হঠাৎ টেবিলের উপর দুটো ডাইরি দেখতে পেলো ,,

একটাতে রাজ লেখা আর একটাতে রোজা লেখা ,,,

পার্সোনাল ডাইরি দুটোই ।

শীতল ভাবলো রাজের বিষয়ে এখানে কিছু থাকতে পারে ,,

রাজের বোন কিভাবে মারা গিয়েছে সেটা শীতল জানে বাট তবুও রোজার ডাইরি পড়তে ইচ্ছে হলো শীতলের ,,

শীতল প্রথমে রোজার ডাইরি খুলে পড়তে শুরু করলো ,,,

রোজা,,,

আমি রোজা ,,

বাবা মা কেই নেই আমার তবে একটা ভাই আছে ।

বাবা মার আদরে ভাইয়া আমাকে মানুষ করেছে ,,

ভাইয়া আমাকে নিজের জিবনের থেকেএ বেশি ভালোবাসে ,,আমার জন্য নিজের জিবন দিতে পারে ,

আমিও একজনকে ভালোবাসি ,,সে আমাকে ভালোবাসে কিনা তা জানিনা তবে তার চোখ দেখে বুঝেছি সে আমাকে ভালোবাসে ।

শীতল বুঝতে পারলো রোজা একজনকে ভালো বাসে ,,

তারপরেও কিছু পৃষ্টা খালি ,,

শেষের কয়েকটা পৃষ্টায় কিছু লেখা দেখতে পেলো শীতল ,,

,,আমি ভাবতাম সে আমাকে ভালোবাসতো বাট আজ জানতে পারলাম ,,সে আমাকে একটুও ভালোবাসেনা ,,

আমি আমার এই জিবন আর রাখবোনা ।

ভাইয়া আমাকে মাফ করে দিয়ো ।

শীতল বুঝতে পারলো রোজা আত্মহত্যা করেছে ।

বাট সে যাকে ভালোবাসতো তার নাম লেখা না থাকায় শীতল তা জানতে পারলোনা ।

এরপর শীতল রাজের ডাইরি খুলে পড়তে শুরু করলো ,,,

রাজ....

আমি আমার বোনকে ভিষন ভালোবাসি ।

তার জন্য জিবনের সব সুখ কোরবানি দিতে পারি ।

আমি খুব রাগি জেদি আর কোঠোর টাইপ বাট আমার এই কঠোর টাইপে সুখের পরশ নিয়ে এলো আমার ভালোবাসা শীতল ...I love you very much her ,,

যে কোনো কিছুর বিনিময়ে আমি ওকে চাই ,,

আজও আমি আমার ভালোবাসাকে নিজের মনের কথা বলতে পারিনি ,,

প্রথম যেদিন ওকে দেখেছিলাম সেদিন এলোমেলো চুলে ওকে এতো সুন্দর লাগছিলো যে ইচ্ছে হচ্ছিলো এখনি বিয়ে করে ওর সৌন্দোর্যে ডুব দিই ।

পরে জানতে পারলাম ও আমার জানের জিগার দোস্ত রোদের বোন ।

পরো ডাইরিতে আমি তোমাকে ভালোবাসি শীতল লেখা ছিলো ,,,

শীতল রাজের ডাইরি পড়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো ,,

সে সপ্নেও ভাবেনি রাজ তাকে কখনো ভালোবাসতো ,,,

এখন তার কিছু রহস্য খুলছে ...

রাজ মাঝে মাঝে ভার্সিটি যেত ,,

শীতলের ক্লাসের সামনে দাড়িয়ে থাকতো এমনকি প্রইভেট কোচিংয়েও রাজ দাড়িয়ে থাকতো .

শীতলের জন্যই রাজ দাড়িয়ে থাকতো সেটা আর বুঝতে বাকি রইলোনা ।

শীতলের মাথায় এক গাদা প্রশ্ন ঘুরছে ,,

রাজ তাকে এতোই ভালোবাসে তাহলে ধর্ষন করলো কেনো ।

জিবন গেলেও কেউ তার ভালোবাসাকে অপমান করেনা ।

তাহলে রাজ এমন করলো কেনো ,,???

কি কারন থাকতে পারে ওর ।

পুরো ডাইরি পড়লেই এই রহস্য জানা যাবে ,,

শীতল আবারো ডাইরি পড়া শুরু করলো ..

ঠিক তখনই রাজের গাড়ির হর্ন বাজলো ...

শীতল ভয়ে তাড়াতাড়ি ডাইরি রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো ।

শীতল রুম থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো ,,

রাজ রুমে এসে শীতলকে ডাকলো ,,,

শীতল সঙ্গে সঙ্গেই রাজের সামনে এসে হাজির হলো ,,

শীতল রাজের দিকে তাকিয়ে রাজকে বোঝার চেষ্টা করছে ...

রাজ তুরি মেরে শীতল কে বাস্তবে নিয়ে এলো,,,

_কি হয়েছে ডার্লিং ?? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো ??

_ আমি কেনো আপনার দিকে তাকাতে যাবো ?? কিছুটা লজ্জা পেয়ে শীতল কথাটা বললো,,,

_যেভাবে তাকিয়ে ছিলে মনে হচ্ছিলো তুমি আমার প্রেমে পড়েছো ।

_আমি আপনার প্রেমে পড়বো ?? দেশে কি লোকের অভাব পড়েছে ,,,

শীতল লক্ষ্য করলো কালকে রাজ যা করলো তার কোনো অনুতাপ নেই রাজের .

মনে হয় নেশায় মাতাল হয়ে সব ভুলে গিয়েছে রাজ ,,

_কি ব্যাপার তোমার গায়ে এগুলো কিসের দাগ ??

_এসববব,,,

_ বুঝেছি এসব আমার উপর রেগে করেছো তাইনা ??

শীতল এবার বুঝতে পারলো রাজের রাতের কথা কিছু মনে নেই ,,,

_আমার গায়ে আমি যা ইচ্ছে তাই করবো তাতে আপনার কি ??

রাজ শীতলের কথা শেষ হতেই শীতলকে বিছানায় ফেলে দিয়ে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলো,,,

শীতলের ভয়ে প্রান যায় যায় অবস্থা,,,

কতবার বলবো তুমি আমার সম্পত্তি ,,

তোমার উপর কারো অধিকার নেই সয়ং তোমারও ,,

তোমার উপর শুধু আমার অধিকার ,,

এই রাজ হলো তোমার মালিক ,,

আমার যা ইচ্ছে তাই করবো তোমার সাথে ,,

তোমাকে মারবো কাটবো তারপর আমিই আবার জোরা লাগাবো ,,

বুঝতে পেরেছো কি বলেছি তোমায় ??

শীতল মাথা নাড়ালো,,

রাজ আবার বলতে শুরু করলো ,,

_কাল পার্টিতে তুমি যা করেছো তা এখনো ভুলিনি আমি ।

সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলে ,,

আমার সাথে তো কখনো হেসে কথা বলোনা.

আর যদি কখনো দেখি কারো সাথে কথা বলতে তাহলে তোমাকে জবাই করে কবর দেবো ,,,

রাজের কথা শুনে শীতলের হার্ট ধক ধক করছে,,,

_কখনো কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে যেনো না দেখি তোমায় ,,ছেলেদের থেকে একশত হাত দূরে থাকবে ,

মনে রাখবে আমার নজর সবসময় তোমার উপর বিকোজ আমি তোমাকে.....

রাজের গলে আটকে গেলো.....

চলবে...