আপু যখন বউ । পর্ব - ০৫
সকালে হাতের আঙ্গুলে গরম কিছু লাগায় লাফিয়ে উঠলাম! তাকিয়ে দেখি জান্নাত কফির মগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে!
আঙ্গুলে তাকিয়ে দেখি কফি লাগানো! বুঝলাম আঙ্গুলটাকে কফিতে গোসল করিয়েছে!
আমিঃ ভালো ভাবে ডাকলেই তো উঠে যেতাম এভাবে কফিতে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেওয়ার মানে কি?
জান্নাতঃ তোকে মানে বুঝাতে পারবো না! আর তোকে এর আগেও একবার ডেকে গেছি কিন্তু তুই উঠিস নি! তাই এটা করতে হয়েছে! তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে আমাকে নিতে যেতে হবে!
আমিঃ যান আপনাকে আটকে রেখেছে কে?
জান্নাতঃ তোকে নিয়ে যেতে বলেছে আম্মু! তাড়াতাড়ি কর আমার প্রচুর খিদে পেয়েছে!
সালার হাসবো না কাদবো এটা নিয়ে ভাবতে লাগলাম! সবার অভিশাপ হয়তো আজকে এসে আমাকে পেয়েছে! এসব ভাবতে-ভাবতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম!
এসে দেখি বিছানায় বসে-বসে আমার মোবাইল টিপতেছে! মোবাইলটা নিতে চাইলে সেটা সরিয়ে ফেলে!
আমিঃ ঐ আপনি আমার ফোনটা নিয়েছেন কেনো?
জান্নাতঃ চেক করতাছি?
আমিঃ কি চেক করেন আপনি?
জান্নাতঃ কোনো মেয়ের সাথে রিলেশান আছে কি না! থাকলে আম্মুর কাছ থেকে তো তোকে কতগুলো বকা শুনানো যাবে!
কপালে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে গেলাম! প্যরায় আর রাগে শরীরটা ছিড়ে যাচ্ছে! বাসা বলে চুপচাপ হজম করে নিচ্ছি!
জান্নাতঃ কিরে তুই এখনো রেডি হচ্ছিস না কেনো?
আমিঃ হচ্ছি! (বলেই রেডি হতে লাগলাম)
রেডি হয়ে নিচে গেলাম দুজন! গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে!
ভাইয়াঃ কিরে তোর আসতে এতো দেরি হলো কেনো?
জান্নাতঃ আসলে ওনার কাপড় বেড় করতে গিয়ে আমি একটু দেড়ি করে ফেলেছি! তাই রেডি হতে দেড়ি হয়ে গেছে ওনার!
জান্নাতেত কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম! যাক দোষটা নিজের উপর নেওয়াই ভালোই হয়েছে!
ভাইয়াঃ জান্নাত আমি জানি ওর উঠতে নিশ্চয় দেরি হয়েছে! তাই তুমি ওর দোষ নিজের কাধে নেওয়ার কোনো দরকার নেই! তুমি খেতে বসো!
ভাইয়ার কথা শুনে আরো বেশি অবাক হলাম! তার মানে জান্নাত বাশ দিয়ে নিজেকে উপরে উঠিয়েছে! আর এই জন্যই দোষটা নিজের কাধে নিয়েছিলো!
এসব ভাবতে-ভাবতে নাস্তা শেষ করে রুমে চলে আসলাম! রুমে বসে-বসে মোবাইল টিপতেছিলাম! হঠ্যাৎ জান্নাত এসে হাজির হলো রুমে!
আমিঃ বাশ কি আরো আছে থাকলে দিয়ে যান!
জান্নাতঃ আরে এইতো মাত্র শুরু তোর জন্য তো বাশের জঙ্গল লাগিয়ে রেখেছি আমি?
আমিঃ একটা রিকোয়েস্ট আছে রাখবেন প্লিজ!
জান্নাতঃ আগে বল পড়ে ভেবে দেখবো!
আমিঃ বিয়ের তো আরো পাচদিন! সো এই কয়েকটা দিন আমাকে জ্বালায়েন না প্লিজ! কারণ বিয়ের পর তো লাইফার তেজপাতা করবেন সেটা আমার জানা হয়ে গেছে! সো এই কয়েকটা দিন জ্বালিয়েন প্লিজ!
জান্নাতঃ ওকে! কিন্তু আমারও একটা শর্ত আছে?
আমিঃ কি শর্ত বলেন!
জান্নাতঃ আমি যেভাবো বলবো সেভাবে বিয়ের আগ পর্যন্ত চলতে হবে?
আমিঃ ওকে! বিয়ের পর যে যার-যার মতো চলবো তাইতো!
জান্নাত কিছু না বলে হালকা হেসে চলে গেলো! মানেটা আর বুঝার বাকি রইলো না!
যাক তারপর আবার একটু ঘুমিয়ে নিলাম! দুপুরে আম্মু এসে ডাক দিলো!
উঠে ফ্রেশ হয়ে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে নিলাম! তারপর রুমে এসে মোবাইল টিপতে লাগলাম!
বিকেলে সব বন্ধুদের সাথে দেখা করবো বলে রেডি হচ্ছিলাম তখনই জান্নাত রুমে আসলো!
জান্নাতঃ কিরে কোথাও যাবি নাকি?
আমিঃ হুম!
জান্নাতঃ পড়ে যাস আপাতত আমাকে তোদের গ্রামটা ঘুড়িয়ে দেখা!
আমিঃ অন্যকাউকে নিয়ে যান!
জান্নাতঃ আম্মুকে বলতে হবে নাকি ভালো – ভালোই রাজি হয়ে যাবি?
আমিঃ আচ্ছা চলেন!
জান্নাতঃ এইতো গুড বয়!
তারপর জান্নাতকে নিয়ে গ্রাম ঘুড়তে বেড় হয়েছি! জান্নাত ঘুড়ে-ঘুড়ে দেখতে লাগলো আর আমি শুধু রাস্তা চিনিয়ে দিতেছি আর পাহারা দিতেছি!
জান্নাত গিয়ে একটা নদীর পাড়ে বসে পড়লো! তাই আমিও কিছুক্ষণ বসে রইলাম! হঠ্যাৎ পিছন থেকে কেউ আমার নাম নিয়ে ডাক দিলো!
তাকিয়ে দেখি তৌফিক (গ্রামের বেষ্টফ্রেন্ড) ডাক দিয়েছে! তারপর আমার কাছে আসলো!
আমিঃ কিরে কি অবস্থা!
তৌফিকঃ এইতো ভালো তা তোর কি খবর?
আমিঃ চলতাছে?
তৌফিকঃ শুন তোকে যেটা বলতে এসেছি! মারিয়া তোকে যেতে বলেছে! তুই নাকি ওর নাম্বার ব্লক করে দিয়েছিস তাই তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে পাঠিয়েছে!
তৌফিকের কথাটা শুনেই জান্নাত আমার দিকে রাগি চোখে তাকালো!
আমিঃ কো কো কোন মারিয়া! আমি কোনো মারিয়া টারিয়াকে চিনি না!
তৌফিকঃ শুন ওও বলছে তোকে কোনোকিছুর জন্য প্রেশার দিবে না! যা একবার দেখা করে আয়! আর ওনি কে?
আমি কিছু বলার আগেই জান্নাত বলে উঠলো!
জান্নাতঃ আমি হুসাইনের এর খালাতো বোন?
আমি হা করে ওনার দিকে ফিরে তাকালাম! ওনি কি বললেন!
তৌফিকঃ ওহ! আচ্ছা হুসাইন আমি যাই তুই গিয়ে এখনই দেখা করে আয়! নাহলে পড়ে সময় করে দেখা করে নিস!
আমিঃ ওকে!
তৌফিক উঠে চলে গেলো! আমি জান্নাতের দিকে তাকাতেই দেখি রাগে আগুন হয়ে আছে! কি বলবো কিছুই বুঝতেছি না!
আমিঃ আসলে আপু…..(আর কিছু বলতে পারলাম না তার আগেই ঠাসসসস….করে চড় গালে বসিয়ে দিলো)
জান্নাতঃ আগে জানতাম তুই শয়তান এখন তো দেখি তুই লুচ্চামিও করিস!
কিছু না বলে চুপ করে গালে হাত দিয়ে বসে রইলাম!
জান্নাতঃ চল এখনই গিয়ে মারিয়ার সাথে কথা বলবি! আর যা সম্পর্ক ছিলো সব ভেঙ্গে দিয়ে আসবি? আর আমার কথা জিঙ্গেস করলে বলবি আমি তোর কাজিন! ভুলেও বলবি না আমি তোর হবু বউ! (বলে জান্নাত দাড়িয়ে গেলো)
আমিঃ ওকে!
আমিও উঠে উনাকে নিয়ে গেলাম মারিয়ার কাছে! গিয়ে দেখি মারিয়া দাড়িয়ে আছে! তারপর দুজনে মারিয়ার কাছে যেতে লাগলাম!
তখনই মোবাইলে কল আসলো! তাকিয়ে দেখি জান্নাতের কল!
আমিঃ আমি তো আপনার সামনেই তাহলো আমাকে কল দিছেন কেনো? ?
জান্নাতঃ রিসিভ করে চুপচাপ বুক পকেটে রেখে দে?
আমিঃ কেনো?
জান্নাতঃ তোর মারিয়া তোকে কি বলে তা শুনবো! খবরদার ভুলেও ফোনটা কাটবি না! চল!
ওনার এই কথা শুনে রাগে শরীরটা জ্বলে যাচ্ছে তাও কিছুই বললাম না! চুপচাপ গেলাম মারিয়ার কাছে!
মারিয়ার চোখে হালকা পানি! কিন্তু আমি অসহায় তাই কিছুই করতে পারতেছি না! মারিয়া আমাকে দেখেই এগিয়ে আসলো!
মারিয়াঃ কেমন আছো রাজ?
আমিঃ হুম ভালো তুমি?
মারিয়াঃ ভালো! ওনি কে?
আমিঃ আমার কাজিন!
মারিয়াঃ ওহ! হাই আপু?
জান্নাতঃ হ্যালো! “কেমন আছো মারিয়া!
মারিয়াঃ ভালো! “আপনি কেমন আছেন?
জান্নাতঃ ভালো! তোমরা কথা বলো আমি ঐখানে আছি! (বলেই জান্নাত দূরে চলে গেলো)
মারিয়াঃ সরি তোমাকে ডাক দেওয়ার জন্য! আসলে তোমাকে তো আর পাবো না তাই চাইছি শেষবারের মতো একবার জড়িয়ে ধরতে!
আমিঃ শেষবারের মতো মানে? তুমি কি ভাবতেছো?
মারিয়াঃ আরে ভয় পেয়ো না আমি আত্বহত্যা করবো না! তুমি তো বিয়ের পরে অন্যকারোর হয়ে যাবে তখন তো আর জড়িয়ে ধরতে পারবো না! তাই এখন একটু জড়িয়ে ধরবো! প্লিজ না করো না!
কি বলবো কিছুই বুঝতেছি না! জান্নাত যদি দেখে ওকে জড়িয়ে ধরেছি তাহলে তো আমার খবর আছে!
যা হওয়ার পরে দেখা যাবে! টান দিয়ে মারিয়াকে বুকে জড়িয়ে নিলাম! মারিয়া কান্না করে দিলো! আমার চোখের কোণ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো!
কিছুক্ষণ পর মারিয়াকে ছেড়ে দিলাম! আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো নিজেকে সামলাতে পারবো না!
মারিয়াঃ ভালো থেকো! (বলেই মারিয়ার চলে গেলো)
আমি চোখের পানি মুছে জান্নাত আপুর সামলে আসলাম! রাগে আপুর মুখ লাল হয়ে আছে!
জান্নাতঃ এইটার সুদ বিয়ের পর তুলবো! অন্য মেয়েকে জড়িয়ে ধরা তাই না! (রাগে গজ গজ করতে-করতে বললো)
তারপর আর কোনোকিছু না বলে ওনাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম!
বাসায় এসে দেখি বাসা টুক-টাক সাজানো শুরু হয়ে গেছে! যাই হোক রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম! তারপর রাতে খাওয়া-দাওয়া করে দিলাম একটা ঘুম!”
এভাবে কেটে গেলো চারদিন! সন্ধ্যায় বিয়েটাও হয়ে গেলো! কবুল বলার সাথে – সাথে নিজের সব সুখকে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছি!
রাত ১২ টার দিকে পুকুর পাড়ে দাড়িয়ে-দাড়িয়ে মারিয়ার কথা ভাবছিলাম!
মারিয়ার যখন ক্লাস নাইনে তখন আমি ক্লাস টেনে তখন থেকে রিলেশান আমাদের! কখনো মারিয়াকে খারাপ নজরে দেখি নি! পড়ালেখার শেষ করার পর মারিয়াকে বিয়ে করার নিয়ত ছিলো! কিন্তু জান্নাত এসে সবকিছু শেষ করে দিলো!
আম্মুকেও মারিয়ার ব্যপারে বলতে পারি নি! কারণ মারিয়ার পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের শত্রুতা! কিন্তু জান্নাত আমার জীবনে না আসলে আম্মুকে যে কোনো ভাবে মানিয়ে ফেলতাম! কিন্তু এটা কোনোভাবেই সম্ভব না!
মারিয়া মেয়েটা আমাকে খুব ভালোবাসে! কিন্তু একটা ভিলেন এসে সবকিছু শেষ করে দিলো! এসব ভাবতে-ভাবতে কখন যে চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে গেলো বুঝতেও পারি নি!
চোখের পানি মুছতেছি তখনই কেউ কাধে হাত রাখলো! তাকিয়ে দেখি ভাইয়া-ভাবি পিছনে দাড়িয়ে!
ভাইয়াঃ কিরে মন খারাপ?
আমিঃ নাহ! এমনিতেই!
ভাবিঃ ওহ! আচ্ছা যা জান্নাত একা রুমে বসে আছে কখন থেকে?
আমিঃ হুম! (বলেই সেখান থেকে চলে আসলাম)
তারপর বাসায় এসে নিজের রুমে গেলাম! এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম!
দরজা লাগিয়ে ফিরতেই………..!
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com