আইসিটি স্যার যখন বর । পর্ব - ২০
বিকাল ৪টার দিলে রেড়ি হয়ে নিলাম। আমি একটা বাসন্তী রঙ্গের শাড়ী পরলাম,হাতে লাল চুড়ি, কপালে লাল টিপ, ঠোটে লাল লিপস্টিক, চোখে গারো কাজল দিলাম। আয়নায় নিজেই নিজেকে দেখে মুগ্ধ হলাম। মনে হচ্ছে যেন বসন্ত তার রং এ আমার রাঙিয়ে দিয়েছে। ফুল ও পাখির মতো আমাকে বসন্ত তার বাসন্তী আবহাওয়ায় ছুঁয়ে গেছে। তানহার ডাকে ভাবনায় ছেদ পরে,
তানহাঃ ওয়াও আপু তোকে কি যে সুন্দর লাগছে না! পুরাই পরী।
তানহার দিকে তাকিয়ে দেখি,,, বাসন্তী কালারের গাউন, লাল লিপস্টিক, লাল টিপ, হালকা কাজল দিয়েছে চোখে সব কিছু মিলে ওকেও অসম্ভব সুন্দর লাগতেছে। হালকা করে ওর গালটা টেনে দিয়ে,,
ফারহাঃ আর আমার ছোট্ট বোনটা কি কম সুন্দর নাকি? তাকে তো একদম ছোট্ট পরীর মত লাগতেছে।আমি যদি ছেলে হতাম না আজকে তোর নির্ঘাত প্রমে পরতাম।
তানহাঃ হইছে আর পাম মারতে হবে না। আমি জানি তোকে বেশি সুন্দর লাগতেছে।
দুইজনে মিলে ঝগড়া করছিলাম। তখনি,
আম্মিঃএমনিতেই আমার দুই মেয়ে মাশাল্লা অনেক সুন্দর। আর আজকে তো আমার দুই মেয়েকেই অসম্ভব সুন্দর লাগতেছে।
কথা বলতে বলতে আম্মি আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। তারপর চোখ থেকে কাজল নিয়ে আমাদের দুইজনের কানের নিচে লাগিয়ে দেয়।
আম্মিঃ কারো নজর যেন না লাগে আমার মেয়েদের উপর।
কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রাখলাম। কিন্তু বেশি কতক্ষণ লজ্জা পাইলে তো হবে না, তাহলে আমাদের মেলায় যেতে দেরি হয়ে যাবে। তার থেকে ভালো লজ্জা ত্যাগ করি। অবশেষে লজ্জা ত্যাগ করে বললাম,,
ফারহাঃ আচ্ছা আম্মি আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে,আমরা তাহলে এখন যাই। কেমন?
আম্মিঃ আচ্ছা যাও।তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসবে কিন্তু।
ফারহাঃ আচ্ছা আম্মি বাই।
তানহাঃ বাই আম্মি।
জিহাকে ওদের বাড়ীর সামনে থেকে নিয়ে আমারা তিনজনে মেলায় চলে আসলাম। জিহা আর আমি একি রকম সাজে সেজেছি। জিহাকেও খুব সুন্দর লাগতেছে।
মেলার মধ্যে অনেকেই প্রায় আমাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো।মেলায় আমরা অনেকক্ষণ ঘুরলাম,তানহা তো খুশিতে আত্নহারা। আমরা অনেক অনেক জিনিষ কিনলাম, ফুচকা খেলাম। মেলায় এসে ফুচকা না খাওয়া মানেই মেলায় আসায় বৃথা।
আমার বেশ কিছুক্ষণ ধরে মনে হচ্ছে কেউ আমাদের অনুসরণ করতেছে। প্রথমে মনের ভুল ভেবে বাদ দিলেও, এখন মনে হচ্ছে সত্যি কেউ আমদের অনুসরণ করতেছে।
ফারহাঃ এই জিহা,,জিহা।
জিহাঃ কি হইছে?
ফারহাঃ শুন না আমার মনে হচ্ছে কেউ আমাদের ফলো করতেছে।
জিহাঃ আমি একটা জিনিস বুঝি না। চাচ্চু আর আন্টি তোকে এখনো বাসায় রেখেছে কেন?
ফারহাঃ মানে?
জিহাঃ তোকে তো আরও আগেই মেন্টাল হস্পিটালে পাঠানো দরকার ছিলো।
ফারহাঃ।
তানহাঃ আমিও এইটা বলি কিন্তু আম্মি আব্বু বুজে না।
ফারহাঃতানহায়ায়ায়ায়া,,, বাসায় যাই তারপর তোকে বুঝাব কে যাবে আর কে থাকবে আমি আর এক মিনিটও এই খানে থাকবো না। চল বাসায় চল।
তানহাঃ আপি প্লীজ প্লীজ আর একটু থাক। প্রমিজ তোকে আর কিছু বলব না।
ফারহাঃ বললাম না আর এক মিনিটও থাকবো না।
জিহাঃ মাত্রই তো আসলাম আর একটু পরে যাই।
ফারহাঃ তোরা থাক আমি যাচ্ছি গা। বলে হাটা শুরু করলাম,
জিহাঃ দূর,,, আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো কোনো এলিয়েনের সাথে ঘুরতে যেতে নেই।
তারপর তিনজনে মিলে একটা গাড়ী করে বাসায় চলে আসলাম,, জিহা আর তানহা দুইজনেই সারা রাস্তা মুখ পেচার মতো করে রাখছিল। আসলে আমার সেই খানে খুব ভয় করছিলো মনে হচ্ছে কেউ আমাদের ফলো করছে তাই তো বাহানা খুজে মেলা থেকে চলে আসলাম।
বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে শুয়ে আছি শরীরটা অনেক দুর্বল লাগতেছে। শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপতেছিলাম এমন সময় মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ পরতে আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। আজকে তেরো ফেব্রুয়ারি তার মানে কালকে ভ্যালেন্টাইন ডে। আর আমি তো জান্নাতদের চ্যালেঞ্জ করেছিলাম চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি আমি ওই ছেলেকে মানে রাহাত স্যারকে প্রপোজ করবো যদি এক্সচেপ্ট না করে তো আমি আর ওনার সামনে যাবো না। মনের ভিতর একটা ভয় করতেছে, ইস কেন যে তখন এই কথাটা বলতে গেলাম। রাগের মাথায় আমি যে কি বলি না নিজেই জানি না। ওই যে কথায় আছে না রেগে গেলে তো হেরে গেলে। মাথার ভিতর একরাশ চিন্তা নিয়ে শুয়ে আছি। কালকে কি হবে? স্যার কি আমায় রিজেক্ট করে দিবে? ওনার প্রতি যে আমার এত ভালো লাগা ভালোবাসা চিন্তা আবেগ সব মিথ্যা হয়ে যাবে? জানি না কাল কি হবে? সত্যি আমার অনেক ভয় করতেছে। যাই হোক কালকেরটা কালকে দেখা যাবে,এখন ঘুমাই।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে ক্লাসের জন্য বের হলাম। প্রত্যেকদিনের মতো আজও জিহা আর আমি এক সাথে রিক্সা উঠলাম।
জিহাঃ ফারহা তোর কি মনে আছে জান্নাতদের কি বলেছিলি?
সামনের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলাম,,, জিহার কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম।
ফারহাঃহুম মনে আছে।
জিহাঃ তার মানে তুই সত্যি সত্যি স্যারকে আজকে সবার সামনে প্রপোজ করবি?
ফারহাঃহুম
জিহাঃ দেখ স্যারকে কিন্তু এই পর্যন্ত অনেক মেয়ে প্রপোজ করছে কিন্তু সবাইকে রিজক্ট করছে।কিন্তু সবারটা অন্য ব্যাপার কারণ ওরা তো তোর মতো সবার সামনে করে নাই। তুই তো সবার সামনে প্রপোজ করবি,,ভেবে দেখ।
জিহার কথায় যেন আমার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠছে। না জানি আজ কি হবে! আসলেই তো স্যার যদি আমায় সবার সামনে অপমান করে? তখন! তখন কি করবো আমি! আজকে যদি উনি আমার রিজেক্ট করে তাহলে আমি জীবনে কখনো ওনার সামনে যাবো না। কোন মুখেই বা যাবো? চক্ষুলজ্জা বলেও তো একটা কথা আছে তাই না?
ফারহাঃ চুপ করে রইলাম।
ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথে জান্নাত, তানিয়া, তাসমিম,ফাহমিদা আরও অনেকে সবাই মিলে আমায় ঘিরে ধরলো। মনে হচ্ছে ওদের অনেক দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।
তানিয়াঃ এই ফারহা,,,,কি বলেছিলি মনে আছে?
তাসমিমঃ চ্যালেঞ্জ করছিলা বাবু মনে আছে?
ফাহমিদাঃ আজকে কিন্তু তোর প্রপোজ করার কথা ছিলো ওই ছেলেটাকে।
জান্নাতঃ কখন করবা বেপ্পি?
সবার এত প্রশ্ন শুনে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। সাথে ভয়ও বেড়ে গেলো।
ফারহাঃ সময় হলে দেখতে পাবি। আমি যখন বলেছি তো করবোই, মাইন্ড ইট। এখন সবাই সর সামনে থেকে ক্লাসে যাবো।
সবাই এক সাথেঃ আচ্ছা।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com