আপু যখন বউ । পর্ব - ০৬
দরজা লাগিয়ে পিছনে ফিরতেই দেখি জান্নাত উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! আমি কিছু না বলে সোফায় গিয়ে বসে রইলাম!
কিছুক্ষণ পর জান্নাত রুমে আসলো! এসেই আমার পাশে এসে বসলো!
জান্নাতঃ এটা দিয়েছিস কেনো জানিস! হবু বউ থাকতে যে অন্য মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছিস তাই!
কিছু না বলে হালকা একটু হাসলাম!
জান্নাতঃ আজ থেকে চড় খাওয়ার অভ্যাসটা করে ফেল! কারণ এখন থেকে ভুল হলে রাগ দেখাবো না সোজা থাপ্পড় লাগিয়ে দিবো!
আমি চুপ করে বসে রইলাম!
জান্নাতঃ কিছু বলার আছে নাকি এভাবেই চুপ করে বসে থাকবি!
আমিঃআমাকে বিয়ে করেছেন কেনো?
জান্নাতঃ মানুষ বিয়ে করে কেনো? সবাই যে কারণে করে আমি সেই কারণেই করেছি?
আমিঃ আপনি মানুষ?
জান্নাতঃ ঐ তুই কি বলতে চাইতেছত?
আমিঃ না মানে আপনাকে দেখলে আমার পেত্নীর কথা মনে পড়ে?
জান্নাতঃ দেখ এখন রাগাবী না! নাহলে মেরে তোর দাত লাল করে দিবো? (রাগে লাল হয়ে)
আমিঃ এহহহ! আমার জীবনটা তেজপাতা বানাতে যে আসছেন সেটা আমি খুব ভালো করে জানি? ভার্সিটির সুদ নিতে আমাকে বিয়ে করেছেন তাই না!
জান্নাতঃ হুম তো! এখন বেশি কথা না বলে এদিকে আয় বাসর রাত করতে হবে?
আমিঃ মানে? (অবাক হয়ে বললাম)
জান্নাতঃ মানে বুঝাচ্ছি?
জান্নাত এক পা- এক পা করে আমার দিকে আসতে লাগলো! আমি মতলব ভালো না দেখে পিছাতে লাগলাম! কিন্তু কপালে বেশিক্ষণ সায় না দেওয়াই!
অল্পকিছু যাওয়ার পরেই পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলো! এদিকে জান্নাত আমার একদম কাছাকাছি চলে আসলো! আমি হয়তো জান্নাতের হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি! দুজনের মাঝে একফোঁটাও গেপ নেই!
ভাবতেছি জান্নাত কি করতে চাইতেছে? এমন সময় খেয়াল করলাম জান্নাত ওর ঠোট দুটো আমার দিকে এগিয়ে আনতেছে! ” বুঝে গেলাম জান্নাত কিস করবে তাই হাত দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরার জন্য হাতটা উপরের দিকে তুলতে গিয়ে বুঝতে পারলাম
জান্নাত আমার হাতটা ওর হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে!
উপায় না পেয়ে আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম!
অবশেষে জান্নাত আমাকে কিস করে বসলো!” কিস করলো কম কামড়ে ঠোটের ভিতরের অবস্থা বারোটা বাজিয়ে দিলো!
আমি চিৎকারও দিতে পারতেছি না! অবশেষে ছাড়লো আমাকে?
ঠোটগুলো কেটে রক্ত পড়তেছে! তাই চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম!
জান্নাতঃ বাবু আরেকটু আদর করি?
আমি মাথা নেড়ে শুধু না করলাম!
জান্নাতঃ ওকে তাহলে এখন তুমি ঘুমাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসি?
(বলেই জান্নাত চলে গেলো ফ্রেশ হতে)
আমি গিয়ে আয়নায় ঠোটগুলো দেখতে লাগলাম! ঠোটের বাহিরের দিকে একটুও কাটে নি!
কিন্তু ঠোটের ভিতরের দিকটা কেটে রক্ত পড়তেছে!
মুখ চেপে সোফায় গিয়ে বসে রইলাম!
জান্নাত ওয়াশরুম থেকে বেড় হওয়ার পর কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে গেলাম!
ফ্রেশ হয়ে এসে বালিশ আর চাদর নিয়ে সোফায় শুয়ে গেলাম!
সারাদিন ক্লান্ত তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম!
সকালে হঠ্যাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায়! তাকিয়ে দেখি জান্নাত ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়েছে!
তাই আমিও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম! তারপর দুজনে নিচে গেলাম নাস্তা করতে!
নাস্তায় খাওয়ার সময় হালকা একটু ঝাল মুখে দিতেই মুখ জ্বলে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো!
তাও হালকা কিছু খেয়ে উঠে রুমে চলে আসলাম!
এসে মোবাইল টিপতেছিলাম তখনই জান্নাত রুমে আসলো!
এসেই আমার পাশে বসে পড়লো!
জান্নাতঃ কিরে মুখের ভিতর জ্বলতেছে!
আমি কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলাম!
জান্নাতঃ কিরে ঢাকায় যাবি না! না এখানে পড়ে থেকে মার খাবি কোনটা!
আমিঃ সময় হলে চলে যাবো আপনাকে বলতে হবে না!
জান্নাতঃ বাহ রাগ করে আছিস নাকি আমার উপরে!
আমিঃ না আপনার উপর তো ক্রাশ খেয়ে আছি!
জান্নাতঃ তাই নাকি! ওকে সবাই ক্রাশ খায় আমার উপর তাদের মধ্যে নাহয় তুইও একজন!
আমিঃ হুম! তাহলে চলেন এখন তো ক্রাশ যেহেতু আমার বউ তাই তাকে একটু আদর করে দেই! (রাগে ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে)
জান্নাতঃ মা মা মানে! কি বলতে চাইতেছিস তুই!
জান্নাতের হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে টান দিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিলাম! তারপর আমি আমার পা দিয়ে জান্নাতের পা গুলো চেপে ধরলাম!
জান্নাতঃ ঐ তুই কি করতেছিস!
আমিঃ ক্রাশকে আদর করবো!
জান্নাতঃ ছেড়ে দে বলতেছি নাহলে পড়ে তোর অবস্থা খারাপ করে দিবো বলে দিলাম!
খাটের কোণা থেকে ওড়না নিয়ে জান্নাতের হাত গুলো বেধে দিলাম! তারপর গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে আসলাম!
জান্নাতের মুখে ভয়ের ছাপটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি! তারপর বিছানায় উঠে জান্নাতের পেট থেকে শাড়িটা সড়িয়ে দিলাম!
আমিঃ ওয়াও কি সুন্দর পেট আপনার!
জান্নাতঃ ঐ তুই পেটে হাত দিয়েছিস কোন সাহসে?
আমিঃ ওকে হাত দিবো না কিস করবো চলবে! !
জান্নাতঃ ঐ না না না!
কে শুনে কার কথা জান্নাতের পেট চেপে ধরে কয়েকটা কিস করলাম! জান্নাত ভয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে!
আমিঃ এবার আর কোথায় কিস করবো বলেন!
জান্নাতঃ ছাড়া পেলে তোকে মেরেই ফেলবো আমি?
আমিঃ ছাড়ার আগে আমি আপনার যা সম্মান আছে তা সব কেড়ে নিবো!
কথাটা শুনে জান্নাতের চোখ বড়-বড় হয়ে গেলো! এবার আমার দিকে মায়াবী চোখে তাকালো!
আমিঃ এভাবে তাকিয়ে লাভ হবে না কারণ আপনার ডানা না ভাঙ্গলে আপনার ফরফরানি বন্ধ হবে না।
জান্নাতঃ আমি চাই তুই এটা কর! কারণ তুই এটা করলে আমার কাছে হেরে যাবি আর আমি চাই তুই আমার কাছে হেরে যা!
আমিঃ ওকে আজকে মতো ছেড়ে দিলাম!
আমিও দেখে নিবো আপনাকে! (বলেই হাত-পায়ের বাধনগুলো খুলে দিলাম)
জান্নাত কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেলো!
তারপর কিছুদিন বাড়ি থেকে জান্নাতকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসলাম!
ঢাকায় একটা বাসা ভাড়া নিয়ে নিলাম!
পরের দিন দুজনে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে চলে গেলাম ভার্সিটিতে!
সবার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করার পর মেহেদী ভাইদের সাথে কেন্টিনে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম!
তখনই জান্নাত তার বান্ধবীকে পাঠালো আমাকে ডাকার জন্য!
তারপর উঠে গেলাম জান্নাতের কাছে! গিয়ে দেখি জান্নাতের হাতে একটা পেপার নিয়ে দাড়িয়ে আছে?
আমিঃ কি হলো আমাকে ডেকেছেন কেনো?
জান্নাতঃ এই পেপারে একটা সাইন লাগবে তোর তাই?
আমিঃ কিসের পেপার?
জান্নাতঃ তোর আর আমার ডিভোর্স পেপার?
এটাতে সাইন করার ঠিক ৬ মাস পর আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে? (মাহি)
আমিঃ কিহহহহ!
জান্নাতঃ হুম! সাইন কর এটাতে আমিতো তোকে জ্বালাতে বিয়ে করেছি!
তোর কি মনে হয় তোর সাথে সংসার করার জন্য?
আমিঃ নাহ! আমি বলছিলাম ছয় মাস বেশি হয়ে যায় না আপু….
.(আর কিছু বলার আগেই জান্নাত ধমক মারলো)
জান্নাতঃ ঐ চুপপপ! কে তোর আপু?
আমিঃ ওহহ সরি! আসলে মুখ ফসকে বেড় হয়ে গেছে!
জান্নাতঃ যতদিন আমাদের মাঝে বিয়ের রিলেশানটা আছে ততদিন আপু ডাকবি না বলে দিলাম!
নাহলে সবাই সন্দেহ করবে!
আমিঃ ওকে!
জান্নাতঃ কি বলছিলি বল এবার!
আমিঃ আসলে ছয় মাস এটা তো বেশি সময় আমি বলছিলাম কি? আমার একজন চেনা উকিল আছে! আপনি চাইলে তিনমাসে ডিভোর্স করাতে পারবো আমি? (সাইন করতে-করতে বললাম)
জান্নাতঃ তোর মুক্তি পাওয়ার জলদি বেশি তাই না!
আমিঃ হুম! এই নেন পেপার? (পেপারটা ওনার হাতে ধরিয়ে দিলাম)
জান্নাত পেপারটা হাতে নিয়ে ছিড়ে ফেললো!
তারপর সেগুলো টুকরো-টুকরো করে আমার উপরে উড়িয়ে দিলো!
আমিঃ আমি কি তিনমাসেরটার জন্য ট্রাই করবো?
জান্নাতঃ চুপ! তোর মুক্তি পাওয়া আমি বেড় করতেছি! তোর কোনোকিছুই করতে হবে না! আমি একবছরের কন্টাক্ট পেপার বানিয়ে আনতেছি!
আমিঃ সরি আর বলবো না তারপরেও এটা কইরেন না।
জান্নাতঃ চুপ আর একটা কথা বললে সময় বাড়বে বলে দিলাম!
চুপ করে গেলাম! কথা বললে সমস্যা বাড়বে তাই!
জান্নাতঃ গুড যা এখন আর আমি যে তোর বউ এটা যেনো কেউ না জানে?
আমিঃ ওকে! (বলেই সেখান থেকে চলে আসলাম)
তারপর আবার সেই কেন্টিনে এসে বসে গেলাম!
রাগে সারাশরীর দিয়ে আগুন বেড় হইতেছে! ওনি কি পাইছে বিয়েটারে যখন খুশি করবে আবার যখন খুশি সেটাকে ভেঙ্গে দিবে!
ওনার কিছু একটা করতেই হবে? নাহলে হবে না! এসব ভেবে ক্লাসে চলে গেলাম!
বিকেলে ক্লাস শেষ করে বাহিরে ঘুড়ে-ফিরে রাতে নিজের খাবার নিয়ে বাসায় এসে গেলাম!
খাওয়া-দাওয়া করে এসে দেখি জান্নাত রুমের দরজা খোলা রেখে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে!
আমি পাশ থেকে চাদর আর বালিশ নিয়ে সোফায় যাওয়ার সময় মনে হলো জান্নাত কাপতেছে! কাছে গিয়ে কপালে হাত দিতেই দেখি জান্নাতের গায়ে প্রচুর জ্বর!
তাড়াতাড়ি গিয়ে বাটিতে একটু পানি আর একটা কাপড় নিয়ে আসলাম!
মাথায় জল পট্টি দিয়ে পাশের ক্লিনিক এর ডাক্তারকে আসতে বললাম!
ওনি এসে চেকআপ করে ঔষুধ দিয়ে চলে গেলেন!
তারপর আমি ওনার পাশে বসে হালকা-হালকা জল পট্টি দিতে লাগলাম!
আর জান্নাতের ঘুমন্ত চেহারাটা দেখতে লাগলাম!
আজকে আবার নতুন করে ক্রাশ খেলাম জান্নাতের উপরে! মেয়েটা সত্যিই একটা পরি! তার ঘুমন্ত চেহারাটা কেউ একবার দেখলে সে জীবনেও বলবে না জান্নাত যে এতটা বদরাগি!
এসব ভাবতে-ভাবতে কখন যে ওনার পাশেই ঘুমিয়ে গেলাম মনে নেই!
সকালে গালে কারো হাত পড়াতে জেগে উঠলাম! তাকিয়ে দেখি জান্নাত আমার দিকে আগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে!
আমিঃ কি হলো মারলেন কেনো?
জান্নাতঃ আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর সাহস পেলি কোথায় থেকে!
আমিঃ আসলে আমি ইচ্ছে করে… (আর বলতে না দিয়ে থামিয়ে দিলো)
জান্নাতঃ চুপ একটা কথাও বলবি না! আর আজ থেকে তুই অন্যরুমে থাকবি!
তুই একা পেয়ে সুযোগ নিতে চেয়েছিলি?
জনপ্রিয় পোষ্ট সমূহঃ
কাল রাতের পর থেকে ওনার উপর মায়া জমে গেলো! জবাব দিতে গিয়ে পারছি না! তাকে ভালোবেসে ফেললাম না তো! এসব ভাবতে-ভাবতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম!
অনলাইনে খাবার অর্ডার করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম! এসে দেখি খাবার চলে আসছে! তারপর আমি খাওয়া-দাওয়া করে জান্নাতের জন্য খাবারগুলো টেবিলে রেখে চলে গেলাম!
জানি ওর শরীর ভালো না তাই ওর রান্না করতে পারবে না! তাই খাবার রেখে চলে গেলাম ভার্সিটিতে!
দুপুরে কেন্টিনে বসে ছিলাম তখনই মেবাইলটা বেজে উঠলো! পকেট থেকে বেড় করলাম!
তাকিয়ে দেখি………
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com