আইসিটি স্যার যখন বর । পর্ব - ১১
রাস্তার পাশে তাকাতেই দেখি রাহাত স্যার একজন বৃদ্ধ মহিলার হাত ধরে রাস্তা পার করে দিচ্ছে,,, আর হেসে হেসে কথা বলতেছে
,,,,, আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি,,,, যতক্ষণ পর্যন্ত রিক্সা থেকে উনাদেরকে দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত তাকিয়ে ছিলাম,,,, সত্যি মানুষটা অনেক ভালো,,,, মানুষ কতটা ভালো হলে এমন মানসিকতার পরিচয় দিতে পারে,,,এইসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে এলাম,,,,,,
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখি আম্মি রান্না করতেছে,,,, কিন্তু এই অসময় রান্না করতেছে কেন কেউ আসবে নাকি? তানহা আর রহিমা সব কিছু পরিপাটি করতেছে,,,,, আমার মাথায় কিছুই ঢুকতেছে না,,,,, যাই আম্মিকে জিজ্ঞাস করে দেখি,,,,,
ফারহাঃ কি ব্যাপার আম্মি এই সময় তুমি রান্না করতেছ,, তাও এত কিছু? কেউ আসবে নাকি?
আম্মিঃ হুম আসবে তো,,,,,,স্পেশাল মেহমানরা আসবে আজকে,,,,
ফারহাঃ তা কে সে তোমার স্পেশাল মেহমানরা শুনি,,,,,
আম্মিঃ তোমার বেশি শুনতে হবে না,,, যাও খেয়ে ধেয়ে রুমে গিয়ে রেস্ট নাও,,,
ফারহাঃ হুহ,,, না বললে নাই,, আমার এত ঠেকা পরে নাই তোমার মেহমানদের লিস্ট শুনতে,,,
দূর বাবা,,,,আম্মি কিছু বললো না কেন? আচ্ছা তানহাকে একটু একটু ট্রাই করে দেখি কিছু বলে কি না,,,
ফারহাঃ এই তানহা শুননা,,, তোর জন্য কিছু চকলেট নিয়ে আসছি লাগবে?,,,,,,
তানহাঃ সত্যি? লাগবে অবশ্যই লাগবে,,, আমার লক্ষি আপু,,লাভ ইউ উম্মাহ
ফারহাঃ আচ্ছা তাহলে আগে আমায় এইটা বল যে আজকে বাসায় কে আসবে? তারপর দিবো,,,
তানহাঃ মনে মনে ওহ তাহলে এই ব্যাপার,,,, আমায় ঘোষ দেওয়া হচ্ছে তাই না,,,,, দাঁড়াও খাওয়াচ্ছি তোমার ঘোষ,,,
ফারহাঃ কিরে কি হলো,, কি এত ভাবছিস? বল,,,
তানহাঃ আসলে আপু হয়েছে কি,, আমি না চকলেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি,,,, ডক্টর নিষেধ করেছে,,,, চকলেট খেলে নাকি দাতে পোকা হয়,,,,,
ফারহাঃ শয়তান মাইয়্যা কথা ঘুরাস,,, তোরে তো আমি,,,,
দূর ছাই যে আসার আসুক আমার কি,,,, আমি আর মাথা না ঘামিয়ে,,, হাল্কা কিছু খেয়ে শুয়ে আছি,,,,,
পাশ থেকে মোবাইলটা নিয়ে রাহাত স্যারের আইডিতে ঢুকে উনার পিক গুলো দেখতেছি,,,, এইটা আমার প্রতিদিনকার কাজ,,,, যে দুইদিন কলেজ যাই নাই উনার পিক গুলো দেখে সময় কাটিয়েছি,, জানিনা কেন পিক গুলো দেখলে আমার কাছে এতটা শান্তি অনুভব হয়,,,,,
উনার প্রতিটা কাজ কেমন যেন আমার মনের মাঝে একটা ভালো লাগা কাজ করে,,,কেন জানিনা প্রতিটা মুহূর্তে উনাকে আমি ফীল করতে পারি,,, কেন এমন হয়? আজকে উনার প্রতি শ্রদ্ধাটা আজকে আমার যেন আরও বেড়ে গেছে,,,, আমি জানি না কেন আমি উনাকে নিয়ে এতটা ভাবি? তাহলে কি আমি উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি?? কিন্তু তা কি করে সম্ভব? কয়একদিনের দেখায় কি একটা মানুষকে ভালোবাসা যায়? আমি জানি না সত্যি জানি না,,,,, যদি কয় একদিনের দেখায় একজনকে ভালোবাসা না যায় তাহলে উনার প্রতি আমার যে ভাবনা,,, ভালো লাগা,,অনুভূতি সেগুলো কি? সেগুলোর কি কোনো নাম নেই?
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানি না,,,হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে,,, পা সরিয়ে নিচ্ছি তাও দিচ্ছে,,,, দূর আমার ঘুমটাই নষ্ট করে দিলো,,, রেগে মেগে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি তানহা ডাইনিটা দাঁত বের করে হাসতেছে,,,, এইটা দেখে রাগ আরও বেড়ে গেলো,,,
ফারহাঃ কি হচ্ছেটা কি? আমি ঘুমাচ্ছি দেখতে পাচ্ছিস না,,,, পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছিস কেন? মাথার তার একটা ছিরে গেছে নাকি? বেয়াদব,,, ফাজিল মাইয়্যা,,,
তানহাঃ দেখ ফালতু বকবক করবি না,,,,,ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি,,,,
ফারহাঃ আমি ফালতু বকবক করি? আমি?
তানহাঃ হুম তুই,,,,
ফারহাঃ তোকে তো আমি
আম্মিঃদুইবোনের চিল্লাচিল্লি শুনে তাড়াতাড়ি উপরে এসে দেখে রিতিমত মারামারিও লেগে গেছে দুইজনে,,,,,,কি হচ্ছেটা কি? বাসায় মেহমান আছে তোমরা জানো না? আর তানহা তোমার কিসের জন্য পাঠাইছি আর তুমি কি কররেছ?
তানহাঃ আসলে আম্মি,,,,
আম্মিঃ চুপ করো,,,একটা কাজও তোমারা ঠিক মত করতে পারো না,,,, ফারহা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসো,,সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করতেছে,,
ফারহাঃ আমি কেন রেডি হবো? ওরাই বা আমার জন্য ওয়েট করতেছে কেন?
আম্মিঃ ওনারা তোমায় দেখতে এসেছে,,,,,,
ফারহাঃ আমায় দেখতে এসেছেন মানে?
আম্মিঃ মানে তোমাকে ওনাদের ছেলের বউ করে নেওয়ার জন্য দেখতে এসেছে,, বুঝেছ?
ফারহাঃ কিন্তু আম্মি আমি এখন বিয়ে করবো না,,, আর তাছাড়া আমার বিয়ে বয়সও হয় নাই,,তোমরা আমাকে বাল্যবিবাহ দিতে পারো না,,,,এইটা একটা অপরাধ,,,
আম্মিঃ সেটা আমরা জানি,,, আর বিয়েটা এখন হবে না,,,, তোমার পড়ালিখা শেষ হওয়ার পর বিয়ে হবে,,এখন জাস্ট এনগেইজমেন্টটা হবে,,,,,
ফারহাঃ কিন্তু আম্মি,,,,,,
আম্মিঃ তোমার কিন্তু পরে শুনবো,,, এখন ওনারা অপেক্ষা করতেছে,,,,তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আসো,,,,
এর মধ্যে রহিমা এসে,,
রহিমাঃ খালাম্মা আপনারে,,,, আপামনির পারধর এন লাউ & মারধর এন লাউ নিচে ডাকতাছে,,,,
আম্মিঃ মানে?
রহিমাঃ আরে খালাম্মা এইডা বুজেন নাই?
আম্মিঃ নাহ তো,,,
রহিমাঃ শ্বশুর শ্বাশুড়ি রে ইংলাজিতে পারধর এন লাউ আর মারধর লাউ কয়,,,,, এইড়াও জানেন না,,
ফারহা & তানহাঃ
আম্মিঃ তোরে এইসব ফালতু ইংরেজি বলতে যে বলে? যা নিচে যা,,,, আর হা তানহা তুমি ফারহা কে রেডি করে দাও,,,
ফারহাঃ কিন্তু আম্মি তুমি আমার কথাটা শুনো,,,,,,,,
আম্মিঃ পরে শুনবো,,, এখন আমি ওনাদের সামনে কোনো সিনক্রিয়েট করে চাচ্ছি না,, সো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও,,, এই বলে আম্মি চলে গেলো,,,
আমি জামাটা চেইঞ্জ করে আসলাম,,,, তানহা আমায় সাজিয়ে দিচ্ছে,,,, আর আমি আমার ভাবনাতে আছি,,,,আমার ডেভিলটাকে নিয়ে আমার যে অনুভূতি সবগুলো কি মিথ্যা হয়ে যাবে? জীবনে প্রথম কারো প্রতি আমার ভালো লাগা,,ভালোবাসা সব কিছু শুরু হওয়ার আগেই এই ভাবে শেষ হয়ে যাবে? কিছুতেই না,,,, যেই ভাবে হোক এই বিয়েটা আমায় আটকাতেই হবে,,, আব্বু,,,হুম আব্বু এখন আমার শেষ ভরসা,,, আব্বুকে দিয়েই কিছু একটা করতে হবে,,,,
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com