অন্ধপ্রেম । পর্ব - ১২
শীতল ঘুমের মধ্যেই তার সুখের সাগরে ভাসছে আর মুচকি মুচকি হাসছে ...
রাজের ধমকে শীতলের ঘুম ভেঙে চুরমার হলো বাট তার ঘোর এখনো কাটেনি ,,,
শীতল রাজকে জড়িয়ে ধরে বললো I love you too
রাজ শীতলকে এক ধাক্কা দিয়ে বেড থেকে উঠে পড়লো ,,,
_What nonsense .What the hell with you bloody full .
শীতলের ঘোর ভাঙলো ..
সে বুঝতে পেরেছে কি করেছে রাজের সাথে ..
শীতল লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে ..
_কি হলো কথা বলছো না কেনো ??
ঘুমের মধ্যে তো আমার সাথে ....
আর এখন এতো লজ্জার কি হলো ??
যত্তসব ঢং ...
রাজ শাওয়ার নিতে চলে গেলো ...
শীতল এখনো লজ্জা পাচ্ছে ...
_উনি কি বললেন ?? ঘুমের মধ্যে আমি কি করেছি .
ছিঃ ছিঃ উনি কি ভাবছেন আমার সমন্ধে .
ধ্যাত মাথাটা গেছে পুরোপুরি ভাবে বোধয়..
রাজ রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলো ..
রাজ আর শীতলের তেমন কথা হয়না ঠিক মতো ..
এই কয়দিনে শীতল রাজকে অবজার্ভ করেছে ...
রাজের লাইফ স্টাইল একেবারে বাধিয়ে রাখার মতো ..
সে সব সময় সময় মেইন্টেইন করে চলে ..
শীতলের মতো ঢ্যারস অলস নয় সে ..
রাজের কথা বলার ধরণ জাস্ট অসাধারন যদিও শীতলের হার্টবিট ধক ধক করে রাজ যখন কথা বলে ..
শীতল সব সময় এমন ধরনের একটা রাজকুমারের ওয়েটে ছিলো বাট শীতলের কপালে রাজকুমার নামক একটা রাক্ষস এসে জুটেছে ..
শীতল নিজের ভাগ্য মেনে নিয়েছে তাই সে রাজের সাথে মানিয়ে চলতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ..
বাট রাজের মতো সিংহকে নিজের বসে এনে সংসার করা এক রকম সোজা কাজ নয় ..
শীতল অনেকবার চেষ্টা করেছে রাজকে বোঝাতে সে রাজের সাথে থাকতে চায় ,তার সাথে সংসার করে সারাজিবন কাটিয়ে দিতে চায় ..সবকিছু ভুলে সুখের সমুদ্রে ভাসতে চায় শীতল .
বিকোজ বিয়ে তো একবারই হয় .উপরওয়ালার ইচ্ছে হয়েছে বলেই রাজের সাথে তার বিয়ে হয়েছে ...
শীতল রাজকে নানা ভাবে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করে ..
এই তো সেদিন সব ভুলে কিচেনে গিয়েছিলো রান্না করতে রাজের পছন্দ মতো ..
কিচেনে গিয়ে দেখে দুটো সেফ রান্না করছে ..
রাজ দুটো সেফ এনেছে রান্না করতে সেটা শীতলকে বলার প্রয়োজনও মনে করলো না ..
রাজ সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে ..
_একটা কথা বলবো ??
_আমি কথা না বলতে বললে কি কথা বলবেনা ??
_আসলে বলতে চাচ্ছিলাম আপনি সেফ কেনো এনেছেন ??
আমাকে একবারও বললেননা যে .
_আমি কি করবো না করবো সেটা তোমাকে বলে করতে হবে নাকি ??
_আপনি কথাটা অন্যভাবে নিচ্ছেন .
আমি মিন করতে চাচ্ছি ,আমি তো আছি তাহলে সেফ কেনো আনতে হবে ??
রাজ ল্যাপটপ অফ করে শীতলের সামনে এসে দাড়ালো ..
শীতল মাথা নিচু করে শাড়ির আচল শক্ত করে ধরে রেখেছে ..
_কেনো তুমি কি সেফ ??
যার কাজ যেটা তাকে সেটাই করতে হয় .
তোমার কাজ হলো শুধু মাত্র বেডে .
এখন তোমার কাজ কি অন্যজনকে করতে দেওয়া উচিৎ ??
তুমি বললে তোমার কাজ অন্য একজনকে করতে দেওয়া উচিৎ .
শীতল নিজের কানকে বিশ্বাস করছে না ..
রাজ তার কথা কে এভাবে ধরে তুলনা করবে ..
সেদিন শীতল অনেক কেদে ছিলো ..
শীতল নিজে নিজেই বললো ..
_অনেক হয়েছে আর থাকবো না রাজের সাথে ..
একটা অমানুষকে আমি মানুষ বানাতে চেয়ে ছিলাম.
আমাকে বিন্দু মাত্র সম্মান করেনা ..
কেনো থাকবো এখানে ..
কাল সকালে রাজ অফিসে চলে গেলে আমিও চলে যাবো অনেক দূরে তখন উনি বুঝবেন আমার মূল্য .
মাঝ রাত রাজ ঘুমিয়ে আছে আর শীতল জেগে আছে ..
জেগে জেগে রাজকে দেখছে ..
কাল সে চলে যাবে ..রাজকে আর কখনো দেখতে পাবেনা সে ..
হাজার হোক রাজ তার স্বামি ..
রাজের জন্য তার ভিষন কষ্ট হচ্ছে ...
সকালে রাজ অফিসে চলে গেলো ..
শীতল ও ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিচে নামলো ..
_বউরানি কেমন আছো ??
শীতল চমকে গেলো খালাকে দেখে ..
ময়মনসিংহ থেকে খালার আরো কয়েকদিন পর আসার কথা ছিলো বাট এখনি চলে এসেছেন ..
_তুমি এতো সকালে ??
_কি করবো আর তোমাদের কথা মনে হচ্ছি তাই চলে এলাম .
_আচ্ছা ..বাড়িতে সবাই কেমন আছে ??
_ভালো সবাই ..
তুমি কি কোথাও যাচ্ছো ??
শীতল চমকে গেলো ..
সত্যি টা বলে দিলে খালা রাজকে ফোন করে বলে দেবে তারপর রাজ তাকে কখনোই যেতে দেবেনা উল্টো শিকল পড়িয়ে বেধে রাখবে ..
_না কোথাও না .বারান্দায় তোমাকে দেখতে পেয়ে ছিলাম তো তাই নিচে এলাম তোমাকে রিসিভ করতে ..
খালা হাসতে হাসতে ব্যাগ থেকে কিছু বয়াম বের করলো ..
সবগুলো আচারের বয়াম .
ময়মনসিংহ থেকে এনেছেন.খালা বয়াম গুলো রুমে সেলফে এনে রেখে দিলেন .
অনেক ধরনের আচার ছিলো ..
জলপাই ,চাইল্তা,রসুনের আচার ইত্যাদি .
আচার গুলোতে প্রচুর তেল দেওয়া ছিলো .
আচার গুলোতে ঘি দেওয়া ছিলো .
আর রসে যেনো থৈ থৈ করছে আচারগুলো ..
শীতলের নিমিষেই মন ভালো হয়ে গেলো বাট মাথায় বাড়ি থেকে পালানোর কথা এখনো মনে আছে ..
বিকালে খালা টিভি দেখছে ..
শীতলও খালার পাশে ফ্লোরে বসে টিভি দেখছে ..
সিনেমাতে একটা বউ ছিলো যে তার স্বামিকে ভিষন ভালোবাসতো বাট তার স্বামি তাকে একটুও ভালোবাসতো না .
বউটা খুব ধার্মিক ছিলো তাই সে তার স্বামিকে ঠিক রাস্তায় নিয়ে আসার জন্য প্রচুর চেষ্টা করতে থাকে .
কোনো ভাবেই সে হাল ছাড়েনি .
শত শত অপমানের পরও বউটা তার স্বামিকে ছেড়ে যায়নি বরং আরো তিন গুন ভালোবাসা নিয়ে স্বামিকে ঠিক পথে আনার চেষ্টা করতেই থাকে ..
বউটা শুধু একটা ডাইলগ বলে সব সময় ,,,
একবার না পারলে দেখো শতবার .
বউটা সববসময় তার ভালোবাসা নানা ভাবে প্রকাশ করে .
স্বামি যত অপমান করে বউটা ততই ভালোবাসে তার স্বামিকে ..
স্বামিটা বউয়ের এমন ভালোবাসা দেখে বুঝতে পারে তার ভুল গুলো একসময় .
আর তখন তার বউয়ের কাছে মাফ চেয়ে সুখের সংসারে ভাসতে থাকে দুজন .
তাদের দুটো ছেলে মেয়ে হয় যারা তাদেে ভালোবাসার ফলস্বরুপ .
শীতল সিনেমাটা দেখে অনেক কিছু বুঝতে পারলো ..
উপরওয়ালা তাকে কিছু ইশারা দিয়েছে সিনেমাটার মাধ্যমে ..
শীতলও ঐ বউটার থেকে কম যায়না .
ঐ বউটা যদি তার স্বামিকে ঠিক করতে পারে তবে শীতল কেনো পারবেনা .
শীতল কেনো ছেড়ে যাবে রাজকে তাদের বিয়ে তো খোদা তায়ালার ইচ্ছে অনুযায়ি হয়েছে .
শীতল কখনো হার মানেনি .তাই সে এতো সহজে ধমে যাওয়ার মেয়ে নয় ...
রাজকে সে যেভাবেই হোক তার ভালোবাসা দিয়ে সঠিক পথে আনবেই .
তাকে বুঝিয়ে দেবে ভালোবাসার থেকে প্রতিশোধ বড় নয় .
রাতে রাজ ঘুমিয়ে আছে .
শীতলের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো বউটার মতো ..
সে রাজের পাশে শুয়ে ধীরে ধীরে রাজকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরলো ..
শীতলের বেশ ভালো লাগছে রাজকে এভাবে জড়িয়র ধরে থাকতে ...
হঠাৎ রাজ শীতলকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটু দূরে সরে গেলো .
শীতলের ভিষন রাগ হলো সে অভিমান করে অন্যপাশে মুখ নিয়ে শুয়ে থাকলো .
পরক্ষনেই বুঝতে পারলো সে কার উপর রাগ করছে ..
যার উপর রাগ করছে সে তো জানেনা তার উপর কেউ রাগ করে আছে .
রাজ তো শীতলের অভিমান ,রাগ ভাঙাবেনা যা করার তা শীতলকে ই করতে হবে ..
শীতল আবারও রাজকে জড়িয়ে ধরলো ..
রাজ বিরক্ত হয়ে শীতলের দিকে তাকালো ..
রাজ ভেবেছে শীতল ঘুমের ঘোরে এমন করছে ..
সে আবারএ একটু দূরে সরে গেলো ..
শীতল আবারএ তাকে জড়িয়ে ধরলো ..
রাজ এবার সরে আসতেই ফ্লোরে পড়ে গেলো ..
শীতল ঘুমের মধ্যেই হাসছে রাজের আড়ালে ..
রাজ এদিক সেদিক তাকিয়ে নিজেই কিছুটা লজ্জা পেলো তারপর শীতলের পাশে শুয়ে পড়লো ..
শীতল আবারও তাকে জরিয়ে ধরলো ..
রাজ আর তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলোনা ..
শীতল মনে মনে বলছে এখন তো বুকে জায়গা করে নিলাম ধীরে ধীরে মনেও জায়গা করে নেবো বিকোজ একবার না পারলে দেখো শতবার .
সকালে শীতল ঘুম থেকে উঠে দেখে রাজ নেই .
কাল রাতে রাজকে জব্দ করতে পেরে শীতল বেশ খুশি ..
হঠাৎ রাজ রুমে এসে বললো ,,,
_জামা কাপড় গুছিয়ে নাও .
_কেনো ??শীতল কিছুটা অবাক হয়ে বললো ,,
_কক্সবাজারে যাবো ।
শীতল খুশি হয়ে বললো ,,
আমারা কি ঘুরতে যাবো ??
_হানিমুনে যাবো ।
_মানে আমারা হানিমুনে যাবো সত্যি সত্যি ??
রাজ রেগে বললো ,,,
_এতো কথা বলো কেনো ??
রেডি হতে বলেছি রেডি হও ..
শীতল খুব সুন্দর করে সেজেগুজে রাজের সাথে এয়ারপোর্টে গেলো ..
বাট লেট হওয়ার জন্য প্ল্যান মিস করলো তারা ।
শীতলকে নিয়ে রাজ রেলস্টেশনে গেলো .
তারপর টিকিট কেটে একটা কামরায় বসলো তারা .
তারাহুরোর জন্য কোনো খালি কামরা পায়নি রাজ .
শেয়ারে যেতে হচ্ছে তাদের .
শীতল এতো সুন্দরি লাগছে যে আশেপাশে সবাই তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে শুধু রাজ তাকাচ্ছেনা একবারও .
.কিছুক্ষন পর একটা স্টেশনে তাদের ট্রেনটা থামলো ...
হঠাৎ একটা ছেলে শীতলের ন্যাকলেস বাহির থেকে ধরে টান দিলো ,,
শীতলের গলা কেটে ব্লিডিং হচ্ছে ..
শীতল রাজকে ডাকার চেষ্টা করছে বাট রাজ কানে হেডফোন গুজে আছে সেজন্য শীতলের কথা সে শুনতে পারছেনা .
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com