অন্ধপ্রেম । পর্ব - ০৯
শীতল রাজকে লক্ষ্য করছে ..সে কি কখনো শীতল কে ভালোবাসতো নাকি ।
শীতলের মাথায় অনেকগুলো প্রশ্ন ঘুর ঘুর করছে ..
রোজার মৃত্যুর কারণ কি ?
সে কাকে ভালোবাসতো ??
কি কারণে সুসাইড করলো..
রাজ কেনো শীতলের সাথে এমন জঘন্য ভিহেবিয়ার করছে ..
রোজার ঘটনার সাথে রাজের শীতলের সাথে যা করছে সেগুলোর সম্পর্ক কি ??
শীতল এটা বুঝতে পেরেছে রোজার সুসাইডের সাথে নিশ্চয় তার কোনো ভূমিকা আছে ..
এসব উওর কেবল রাজ দিতে পারে তবে শীতলের এতো সাহস নেই রাজের মুখ থেকে সত্যি কথা গুলো বের করার .
একমাত্র রাজের ডাইরি পারে সব রহস্যের উওর দিতে ..
রাজ বাড়িতে থাকা কালীন স্টাডি রুমে গিয়ে ডাইরি পড়া সম্ভব না .
পুরো বাড়ি খালি বাট দাড়োয়ান পাহাড়া দিচ্ছে এই জমিদারের মতো দেখতে বাড়িটাকে ...
শীতল যে পালাবে তারও উপাই নেই ...
দাড়োয়ান এক সেকেন্ডের জন্য মেইম ডোর থেকে সরছেনা...
রাতে রেস্তোরা থেকে খাবার আনিয়ে নিজের টুকু খেয়ে রাজ বেডে উপর হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ...
শীতল ভেবেছে তার জন্য খাবার আনেনি বোধয় ..
শীতল বেডে যেতেই দেখলো টেবিলের উপর খাবারের প্যাকেট ..
_যাইহোক লোকটার মনে একটু মায়া হলেও আছে ,,,
বাট একবার বললেই হতো আমার জন্য খাবার এনেছে ...
শীতল খেতে খেতে ভাবছে কখন সে ডাইরি পড়বে আর সবকিছুর থেকে মুক্ত হবে বিশেষ করে রাজের থেকে ..
_খাবার গুলো খেয়ে নাও ডার্লিং ..
না খেলে দূর্বল হয়ে যাবে তখন তোমার থেকে প্রতিশোধ নিতে পারবোনা .
আমার আবার দূর্বলদের কষ্ট দিয়ে ভালো লাগেনা ..
চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় রাজ কথা গুলো বললো শীতলকে..
শীতল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো রাজের কথা শুনে..
সে ভাবেছিলো রাজ ঘুমিয়ে পড়েছে ...
শীতলের খাওয়া শেষ হলে বারান্দায় যায় ঠান্ডা বাতাস খেতে ..
শীতল চোখ বন্ধ করে রাজের দেওয়া কষ্ট আর অপমান গুলো মনে করতে থাকলো ..
শীতল ভুল করে কিছুটা সুপ রাজের গায়ে ফেলে দিয়েছিলো ...
রাজ রাগে পুরো সুপটাই শীতলের শাড়িতে ঢেলে দিয়েছিলো ...
তারপর গায়ে লেগে থাকা সুপটা রাজ কিছুটা টেষ্ট করে বলেছিলো ,,,
_সুপটা স্পোন দিয়ে খাওয়ার থেকে তোমার গা থেকে খেতেই বেশ মজা ..
এখন থেকে তোমার গায়ে এবাভেই ঢেলে ঢেলে খাবার খাবো ডার্লিং ।
সুপটা বেশ ঝাঝাঁলো ছিলো তাই শীতলের পুরো বডি মরিচের মতো জ্বলছিলো ..
কি কষ্টই না হচ্ছিলো তখন শীতলের ..
হঠাৎ শীতল কোমরে কারো হাতের ঠান্ডা স্পর্ষ পেলো ,,,আর ঘারে পেলো গরম নিঃশ্বাষ ,,
গায়ের গন্ধ বেশ চেনা লাগলো শীতলের ...
এতোদিনে রাজের গায়ের গন্ধ বেশ চিন্তে পেড়েছে শীতল ..
পেছনে চোখ খুলে তাকাতেই শীতল কাউকে দেখতে পেলোনা ,,
দরজার পর্দা কিছুটা নড়ে উঠলো ,,
শীতল দৌড়ে রমে গিয়ে দেখে রাজ যেমন ভাবে ঘুমিয়ে ছিলো তেমন ভাবেই ঘুমিয়ে আছে এখনো ...
শীতল ভাবলো সব গুলোই তার মনের ভুল ,,বাট সে রাজকে মনের ভুলে অনুভব করবে কেনো ??
যে কারনেই রাজ তার সাথে এমন ব্যাবহার করুকনা কেনো তারপরেও রাজ অন্যায় করেছে আর সে অপরাধি
শীতল বেডে রাজে পাশে শুতেই রাজ তার কানের লতিতে কামড় দিলো ,,
শীতল একটু চিৎকার করতেই রাজ শীতলের মুখে আঙুল রেখে বললো,,,
_হুশশশ..এতো চিৎকার করো কেনো ...
স্বামিকে একটু আদর করোনা আর নিজেও আদত নিতেও দাওনা ....
শীতল সেই রাতে রাজের ছোয়াগুলো অনুভব করলো ...
আজ তার ঘৃনা লাগছেনা ...
সব হয়েছে ডাইরিতে শীতলকে ভালোবাসে রাজ সেকথা জানার জন্য...
শীতল মাঝরাতে জেগে উঠলো ...
রাজ তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে...
শীতল রাজকে ছাড়িয়ে শাড়ি ঠিক করে স্টাডি রুমে গেলো ..
ডাইরি টা নিয়ে পড়তে শুরু করলো ...
সেখানে ভিবিন্ন ঘটনার কথা লেখা ছিলো ..
শীতল যেখানে যেখানে যেতো রাজও সেখানে সেখানে যেতো ,,সেসব কিছু ঘটনা কথা লেখা ছিলো ...
শীতল যেদিন যে রংয়ের ড্রেস পড়তো তাও লেখা আছে ডাইরিতে,,,
ডাইরিতে একটা জিনস দেখে শীতলের চোখ আটকে গেলো ...
শীতল ডাইরিতে একটা নূপর দেখতে পেলো ..
যেটা ও কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিলো ...
শীতলের নূপুর সমুদ্রে যখন পড়ে গিয়েছিলো তখন ঐ স্থানে হাঙর উঠানামা করছিলো যার জন্য নূপুরটা সেখানে ফেলেই কাদতে কাদতে হোটেলে ফিরে আসতে হয়েছিল ,,,
তারপর হোটেল স্টাফের কাছ থেকে জানতে পেড়েছিলো একটা ছেলে নূপুর আনতে নাকি হাঙরকে উপেক্ষা করে সমুদ্রে লাফ দিয়েছিলো ..
শীতলের বুঝতে বাকি রইলোনা সেই ছেলে রাজ ছিলো ...
রাজ তাকে এতো ভালোবাসে আগে থেকেই আর সেটা শীতল জসনতেও পারলোনা ..
এজন্যই তো শীতল মাঝে মাঝে তার পছন্দের জিনিস গুলো রুমে দেখতে পায় .
রাজ তার পছন্দ অপছন্দ গুলো জানে এজন্যই তো এসব করে ।
শীতল রাজের ডাইরিতে আরেকটা পেজ পেলো ছেড়া যেটাতে রোজা লেখা ছিলো ,,,
সম্ভবত রাজ রোজার ডাইরির একটস পেজ ছিড়ে তার এখানে রেখেছে ...
ডাইরিতে অস্পষ্ট ভাবে
কি যেনো লেখা ছিলো,,
শীতল ভালো করে লেখাটা পড়লো ,,
শীতল প্রায় জ্ঞান হাড়ানোর মতো সিচিয়েশনে পড়লো লেখাটা পড়ে ...
রোদ লেখা ছিলো পেজের নিচে ,,,
সেখানে আমি তোমাকে ভালোবাসি রোদ ,,এই লেখাটা সপ্ষ্ট ছিলো ।
শীতল বুঝতে পারলো রোজা তার ভাইয়াকে ভালোবাসতো ...
বাট তার ভাইয়া কি রোজাকে ভালোবাসতো ??
আর রোদ কিভাবে রোজাকে ধোকা দিলো ??
কি এমন করেছিলো রোদ ??
শীতলের মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এতো গুলো প্রশ্নের সম্মুখিন হয়ে ,,
তবে সে একটা ধারনা পেয়েছে ,,
বোধয় রাজ তার বোনের মৃত্যুর জন্য শীতলের ভাইয়াকে দোষি বানিয়েছে আর রোদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই শীতলকে এভাবে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে ।
ভোর হয়েছে পুরো ডাইরি পড়ার আগেই তাই রুমটা লক করে শীতল নিজের রুমে যায় ,,
রাজ এখনো ঘুমিয়ে আছে ..
রাজের শার্টটা ফ্লোরে পড়ে আছে ...
শীতল রাজকে কিছুটা লক্ষ্য করলো ,,,
রাজকে একদম নিষ্পাপ শিশুর মতো লাগছে ,,,
অথচ এই রাজ শীতলকে ধর্ষন করেছে আর প্রতিনিয়ত শীতলকে অপমান করেই যাচ্ছে ..
আবার সে নাকি শীতলকে ভালোবাসতো কখনো ...
শীতল বিদ্রুপের হাসি দিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো ..
শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে রাজের দুইদিন আগে রাতে বেল্ট
দিয়ে শীতলকে যেভাবে কুকুর বিড়ালের মতো মেরেছিলো তার কথা ভাবছে শীতল .
রাতে এতো অত্যাচার করেছে যে সকালে তা কত সহজে ভুলেও গেলো ..
কি নিষ্ঠুর দুনিয়া ...
সকালে রাজ রেস্তোরা থেকে খাবার আনিয়ে খেয়ে অফিসে চলে যায় ..
শীতল সেই সুযোগে তার মায়ের সাথে দেখা করতে গেলো পার্কে ...
রাজ তাকে বারণ করেছে নিজের পরিবারের সাথে যোগাযোগ না রাখতে ..
তাই শীতল লুকিয়ে গিয়েছে দেখা করতে ,,,
রাজ জানতে পারলে তাকে যেতে দিবেনা.
রাজের তেমন কাজ নেই তাই সে বাড়িতে এসে পড়লো তাড়াতাড়ি ...
বাড়িতে এসে শীতলকে দেখতে পায়না রাজ ,,
রাজ বুঝতে পেরেছে শীতল তার পরিবারের কারো সাথে দেখা করতে গিয়েছে ,,,
রাজ রেগে পুরো আগুন হয়ে গেলো ...
কোর্ট আর শার্ট খুলে মাথায় পানি দিলো রাগ কমানোর জন্য .
রাজের কথা শীতল অমান্য করেছে তা রাজ ভাবতেও পারছেনা ..
রাজ এখন শীতলকে পেলে পুরো জবাই করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই ..
রাজ নিজের রাগ কন্ট্রোল করে ইজি চেয়ারে বসে শীতলের জন্য ওয়েট করতর থাকলো ...
দাড়োয়ানের বাড়িতে ছোট মেয়ে অসুস্থ তাই সে ইমিডিয়েটলি বাড়িতে গিয়েছে আর শীতল সেই সুযোগে বাহিরে বের হতে পড়েছে ...
শীতল ভয়ে ভয়ে পার্কে গেলো ,,,
শীতলের বেশ ভয় করছে বিকোজ রাজকে না জানিয়ে এখানে মায়ের সাথে দেখা করতে এসেছে সে .
রাজ অনেকবার তাকে মানস করেছে পরিবারের কারো সাথে দেখা করতে ...
বাট শীতল রাজের কথা অমান্য করেছে ..
রাজ জানতে পারলে তাকে মেরেই ফেলবে ..
তাই মায়ের সাথে দেখা করেই তাড়াতাড়ি সে বাড়িতে চলে যাবে রাজের অফিস থেকে ফেরার আগেই ..
_কেমন আছিস মা ??
শীতল তার মাকে দেখতে পেয়েই জড়িয়ে ধরলো ,,,
মা মেয়ে দুজনেই কাদছেঁ
_মা বাবা কেমন আছে ?? ভাইয়া কেমন আছে ??
এখনো তোমরা আমার উপর রাগ করে আছো ??
আমি কি তোমাদের জন্য মারা গিয়েছি ??
_চুপ কর শীতল ।
কি সব বলছিস তুই ??
তুই তোর বাবাকে আর ভাইকে কষ্ট দিয়েছিস ,,তারা তোর উপ রেগে আছে কিন্ত তোকে ওরা ভালোবাসে ।
একদিন ঠিক তোকে মেনে নিবে দেখবি ।
_তাই যেনো হয় মা ।
_তোর একি অবস্থা শরীরের ??
রাজ কি তোর খেয়াল করেনা ??
শীতল সত্যিটা তার মাকে জানাতে চায়না তাই কিছু মিথ্যে বললো,,
_তা না মা ,,
রাজ আমাকে অনেক ভালোবাসে ,সে আমার অনেক কেয়ার করে ,আমার পা মাটিতে নামতে দেয়না ,,
আসলে তোমাদের ছেড়ে এসেছি তো তাই এমন দেখাচ্ছে ,,
তোমাদের জন্য মন খারাপ হয় ভিষন ,,,
_সত্যি বল তুই রাজের সাথে সুখে আছিস ??
_হ্যাঁ মা আমি সুখে আছি ।
_আমি তোকে কিছু কথা বলবো মা ,,
আমাদের সোসাইটি নিয়ে চলতে হয় ।
তাই আমার মাথায় হাত দিয়ে বল তুই কখনো নিজের সংসার ছেড়ে আসবিনা ,,
রাজের সাথে থাকবি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ,,
রাজকে স্বামির মর্যাদা দিবি সব সময় ,,
বাঙালি মেয়েদের একবার বিয়ে হয় তাই জিবন দিয়ে হলেও সেটা টিকিয়ে রাখবি ,,,
তোর বাবা কাছে সম্মান আগে ,তুই একবার তার সম্মান নষ্ট করেছিস কিন্তু আর কখনো করবিনা ,,,
.তাহলে তোর বাবা আর বেচে থাকবেনা ..
শীতল স্তব্ধ হয়ে গেলো মায়ের কথা শুনে ,,
মা এসব কি বলছে ,,
সে কিভাবে রাজের মতো অমানুষের সাথে সারাজিবন থাকবে ...
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com