আপু যখন বউ । পর্ব - ১১
খেয়াল করে দেখি মারিয়ার চোখের কোণে পানিতে টলমল করতেছে! আর মায়াভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে!
আমিঃ ওহহ সরি মারিয়া আমার গল্প বলে হয়তো তোমাকে দুঃখ দিয়ে ফেলেছি! সরি সরি…
আমিঃ আরে থুর কি বলো! তুমি যাকে পছন্দ করেছো সে নিশ্চয় ভালো হবে! চিন্তা করো না আমাকে নিয়ে! আমার কোনো একটা গতি হয়ে যাবে! আর এমনিতেও আমার কোনো শিওর নাই যেকোনো সময় রং বদলে ফেলতে পারি! যেমনটা তোমার সাথে করেছি!
মারিয়া এবার আর চোখের পানি আটকাতে পারলো না! হু হু করে কেদে উঠলো!
ওর মন ঠিক করা লাগবে! কি করা যায় ভাবতেছি!
আমিঃ মারিয়া আমার একটা রাখবে!
মারিয়াঃ হুম বলো!
আমিঃ মারিয়া তুমি তো আর আমার হবে না! প্লিজ আমার একটা হেল্প করে দিলে আমি জান্নাতের উপর আমার সব প্রতিশোধ নিতে পারবো!
মারিয়াঃ জান্নাত আপুর উপরে কিসের প্রতিশোধ নিবে তুমি আর কিরকম হেল্প!
আমিঃ জান্নাত যে আমাকে এতটুকু জ্বালিয়েছে সেগুলোর প্রতিশোধ নিবো জান্নাতের থেকে! আর হেল্পটার কথা কিভাবে বলবো বুঝতে পারতেছি না!
দুজনে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম আর মারিয়া আমার দিকে তাকিয়ে রইলো!
মারিয়াঃ আমাকে প্রেম করার নাটক করতে হবে তাইতো!
মারিয়ার কথা শুনে চমকে উঠলাম ওও আমার মনের কথা কিভাবে বুঝতে পেরে গেলো! ওও কিভাবে জানলো আমি এটাই বলতাম ওকে! “
মারিয়াঃ শুনো জানলাম কিভাবে এটা ভেব না! আর তুমি এখনো আমার কাছে আগের মতোই আছো! তোমার চোখ দেখে আমি সব বুঝতে পারি তুমি কি বলতে চাও! তুমি এখনো আমার কাছে সেই আগের হুসাইন আছো?
ওর কথাগুলো শুনে হালকা হলাম! কারণ মারিয়া নাকি আমার চোখ পড়তে পারে এটা আগে থেকেই জানি! এবারও হয়তো চোখ পড়েছে! তাই কিছুটা হালকা হলাম!
মারিয়াঃ শুনো তোমার যেকোনো হেল্প লাগলে বলবে আমি আছি তোমার পাশে!
মাথা নেড়ে শুধু হ্যা বললাম!
মারিয়াঃ আচ্ছা তুমি কি জান্নাত আপুকে ভালোবাসো।
আমিঃ জানি না!
মারিয়া কিছু না বলে কেমন জানি একটা সন্দেহ মূলক হাসি দিলো!
আমিঃ কি হলো হাসলে কেনো?
মারিয়াঃ না এমনি! আচ্ছা এটা বলো যে এখানে রেগিং এর কি অবস্থা! মানে কি কি করতে বলে! তুমি তো এখানে পুরোনো তাই জানলে বলে দাও প্লিজ!
এবার আমি মুচকি হাসলাম!
মারিয়াঃ কি হলো তুমি মুচকি হাসলে কেনো এবার!
আমিঃ আসো তুমি!
বলেই মারিয়াকে নিয়ে কেন্টিনে গেলাম! নতুন – পুরাতন প্রায় সবাই আছে এখানে! তাই আমি – মারিয়া – মেহেদী ভাই তিনজনে একটা টেবিলের উপর দাড়ালাম!
আমিঃ Attention guess!
সবাই তাকালো আমাদের দিকে!
আমিঃ হাই, আমি হুসাইন, এই ভার্সিটির ২য় বর্ষের ছাত্র! এতটুকুর বেশি আমি কিছু বলতে চাই না! আর আমার সম্পর্কে পুরোনো যারা আছে সবাই জানে! বিশেষ করে নতুন যারা এসেছো তারা কিছুদিনের মাঝেই আমার সম্পর্কে জানতে পারবে!
সো আমি যেটা বলতে এসেছি! এই যে এই মেয়েটা ওর নাম হলো মারিয়া! আমার ফ্রেন্ড!” মারিয়া ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি এসেছে! তাই টেনশানে আছে রেগিং নিয়ে!
তাই আমার ক্লাসমেইট বা সিনিয়ার ভাই এবং আপুদের জানানো যাচ্ছে যে, সবাইকে রেগিং করলেও আমার ফ্রেন্ডের দিকে যেনো কেউ নজর না দেয়! আর কেউ যদি ওর সাথে খারাপ আচরণ বা বেয়াদ্দবি করে তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না!
তারপর মারিয়াকে নিয়ে গাছ তলায় চলে আসলাম!
আমিঃ রেগিং এর চিন্তা গিয়েছে!
মারিয়াঃ হুম! এমন ভাবে না বললেও পারতে! এখন তো কেউ ফ্রেন্ড হতে চাইবে না!
আমিঃ সমস্যা কি তুমি আমাদের টিমের মেয়েদের সাথে চলাফেরা করবে!
মারিয়াঃ তারা তো সিনিয়ার আমার!
আমিঃ তো কি হয়েছে কিছুদিন গেলে ফ্রেন্ডশিপ ঠিকই হয়ে যাবে!
মারিয়াঃ ওকে দেখি! তা এখন কি করবে!
আমিঃ কি আর করবো, বাসায় যাবো!
মারিয়াঃ ওহহ!
মেহেদী ভাইঃ হুসাইন তুই তোর লাষ্ট প্লেনটা করবি কবে থেকে?
আমিঃজান্নাত আপুর পরিক্ষা শেষ হয়ে যাক! এখন করলে ওনার পরিক্ষার খারাপ হবে! আর আমি চাই না পরিক্ষায় এসব সমস্যা হোক!
মেহেদী ভাইঃ ওকে! তাহলে মারিয়া ততদিন রিলেক্সে ক্লাস করতে থাকুক!
আমিঃ ওকে! তা মারিয়া তুমি কোথায় থাকো এখানে!
মারিয়াঃ চাচার বাসায়!
আমিঃ ওহ! তাহলে তো ভালোই!
মারিয়াঃ হুম!
তারপর ওনাদের সাথে কথা শেষ করে বাসায় চলে আসলাম!
ফ্রেশ হয়ে বসে-বসে টিভি দেখতে লাগলাম! জান্নাত পড়তে তাই আর ডিসষ্টাব করলাম না!
বিকেলে ছাদে হাটতেছিলাম তখন জান্নাত এসে আমার সামনে এসে দাড়ালো!
আমিঃ কিছু বলবেন!
জান্নাতঃ হুম!
আমিঃ কি?
জন্নাতঃ কালকে আব্বু-আম্মু আসবে এখানে? তাই বাজারে যা গিয়ে সব বাজার নিয়ে আয়!
আমিঃ ওহ! তা হঠ্যাৎ এখানে আসবে কেনো?
জান্নাতঃ সামনে আমার পরিক্ষা তাই আমার যেনো কোনো কাজ না করতে হয় তাই আম্মু আসবে! আমি শুধু পড়ালেখায় মন দিবো!
আমিঃ এমনিতেও কি কাজ করেন আপনি? সব তো আমিই করি!
জান্নাতঃ ঐ রাগাবি না বলে দিলাম! যা গিয়ে বাজার থেকে সবকিছু কিনে নিয়ে আয়! আর কাল থেকে আম্মু বাসায় রান্না করবে!
আমিঃ ওকে!
কেনা কাটা শেষ করে সন্ধ্যায় আসলাম! ফ্রেশ হয়ে রুমে যেতেই দেখি আমার শাশুড়ি আর শশুড় বসে আছে!
ওনাদের দেখে অবাক হয়ে গেলাম! ওনাদের তো কালকে আসার কথা তাহলে আজকে কেনো!
তারপর হাসি-মুখে ওনাদের সাথে কৌশল বিনিময় করলাম! জান্নাত আপু গিয়ে রান্নাঘরে সব কিছু ঠিক করলো! তারপর আমার শাশুড়ি গিয়ে রান্না করে নিলো!
খাবার খেতে সবাই একসাথে বসলাম! জান্নাত ওনাদের খোজ-খবর নিতে লাগলো! আর এতদিন পড়ে হাতের রান্না পেয়ে সামনে গিলে যাচ্ছি! তখনই জান্নাতের আব্বু বলে উঠলো!
জান্নাতের আব্বুঃ জামাই আমরা কি নাতি-নাতনির মুখ দেখবো না!
ওনার এই কথা শুনে খাবার গলায় আটকে গেলো! না ভিতরে যাচ্ছে না বাহিরে ফেলতে পারতেছি! বড়-বড় চোখ হয়ে গেলো!
কি বলবো কিছুই বুঝতেছি না! জান্নাত আপুর দিকে তাকিয়ে দেখি ওনিও একই ভাবে টাসকি খেয়ে আছেন! তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললাম!
আমিঃ জ্বী আসলে আপনার মেয়ে চাইতেছে!
পরিক্ষাটা শেষ হওয়ার পর এসব নিয়ে প্লেন করতে!
জান্নাতের আব্বুঃ ওহহ! তাহলে তো ভালোই!
জান্নাতের আপু একটা শান্তির নিশ্বাস ফেললো! খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমি ঘুমাতে আমার রুমে গিয়ে দেখি রুমে তালা ঝুলছে! তখনই জান্নাতের কাছে আসলাম!
আমিঃ আমার রুমে তালা ঝুলতেছে কেনো?
জান্নাতঃ কোনো ঝুলতেছে জানিস না! যা গিয়ে চুপচাপ সোফায় শুয়ে পড়!
আমিঃ সোফায় থাকতে সমস্যা হয়!
জান্নাতঃ তাহলে চুপ করে খাটে পড়!
ভাবলাম যাক এবার ওনি সোফায় থেকে দেখুক কতো মজা সোফায় থাকাটা! এসব ভেবে আমি শুয়ে পড়লাম! আর ওনি তখন পড়তে ছিলেন!
আমি শুয়ে-শুয়ে মোবাইল টিপতেছিলাম কিছুক্ষণ পর ওনি পড়া শেষ করে এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লেন!
অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম! আবার মনে-মনে খুশিও হলাম যে ওনার পাশে শুতে পেরে!
হঠ্যাৎ মনে পড়লো ঐদিন রাতের কথা! তাড়াতাড়ি শুয়া থেকে উঠে বসলাম!
জান্নাতঃ কিরে উঠে গেলি কেনো?
আমিঃ আমি সোফায় ঘুমাবো!
জান্নাতঃ কেনো! এখনই না বললি সোফায় ঘুমাতে তোর সমস্যা হয়!
আমিঃ আপনার সাথে আমি ঘুমাবো না! আপনি আমাকে কোলবালিশ এর মতো ব্যবহার করেন! আপনার সাথে ঘুমানোর চেয়ে সোফায় ঘুমানো অনেক ভালো!
জান্নাতঃ ওকে! যা গিয়ে সোফায় ঘুমা!
তারপর বালিশ আর কাথা নিয়ে চলে গেলাম সোফায়! তারপর শুয়ে ঘুমিয়ে গেলাম!
এভাবে চলে গেলো ২ মাস! জান্নাত আপুর পরিক্ষাও শেষ হয়ে গেলো! আঙ্কেল-আন্টি আজকে বিকেলে চলে যাবে!
দুইমাসে কত যে একটিং করেছি সেটা একমাত্র আমি জানি! ওনাদের সন্দেহ করার সুযোগ দেই নি! আর বাসায় পাড়তে যাইনি! সকালে বেড় হলে সন্ধায় বাসায় ফিরতাম!
এদিকে এই দুই মাসে মারিয়ার সাথে খুব ভালো ফ্রি হয়ে গেছি! এখন আর পুরোনো কথা নিয়ে মন খারাপ হয় না! তবে মারিয়ার থেকে ভালো আমাকে কেউ বুঝতে পারবে না এটা নিশ্চিত!
আজকে আঙ্কেল-আন্টি চলে যাবেন তাই বিকেলে বাসায় চলে আসলাম! ওনারা সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে ওনারা চলে গেলেন!
পরেরদিন ভার্সিটিতে চলে গেলাম! এসে দেখি সবাই বসে আছে!
সবার সাথে দেখা করে মেহেদী ভাই আর আরো কয়েকজন কে নিয়ে মারিয়া আসার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম!
মারিয়া আসার পর সবাইকে আমার প্লেনটা বললাম! সবারই প্লেনটা পছন্দ হয়েছে!
প্লেনের মূলটা হলো একটা couple contest হবে! যে উইনার হবে তাদেরকে আমাদের টিমের পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে! সবা বয়ফ্রেন্ড আর গালফ্রেন্ড এটাতে জয়েন করতে পারে! কে কাকে কতটা ভালোবাসে এটার পরিক্ষা হবে! একদিনেই খেলাটা শেষ করা হবে!
এতটুকুই বলি বাকিটা প্লেনটা পরে জানতে পারবে!
প্লেন শেষে আর ক্লাস করলাম না! বাসায় গিয়ে অনেক কাজ আছে!
বিকেল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম! বিকেলে জান্নাত আপুকে একটা চমক দেখাবো!
বিকেলে জান্নাত আপুকে ডাক দিয়ে ছাদে নিয়ে আসলাম! ওনাকে নিয়ে একপাশে দাড় করালাম! যা হচ্ছে তা যদি কাজ করে যায় তাহলেই জান্নাত কে বুঝাবো কতো ধানে কত চাল!
জান্নাতঃ কিরে কিছু বলবি নাকি?
আমিঃ হুম! (মাথা নাড়লাম)
জান্নাতঃ তাহলে বল!
তারপর হঠ্যাৎ পিছন….!
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com