Breaking News

উলঙ্গ মন । পর্ব - ০১



আচ্ছা বাবা, তোমরা যেইটা দিয়ে হিসু করো.. ঐটা মুখে নিলে কী হয়??

নিজের ৬ বছরের বাচ্চা মেয়ে মনিকার মুখে এই প্রশ্নটা শুনে মিশকাত পুরো থতমত খেয়ে গেল।
মনিকা এতক্ষন চিপস খাচ্ছিল আর টিভিতে কার্টুন দেখছিল।
হঠাৎই টিভি থেকে চোখ সরিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করে সে।
প্রশ্নটা করেই সে আবার কার্টুন দেখায় মনোযোগী হয়ে পড়ে।
মিশকাত আম খাচ্ছিল, কথাটা শুনামাত্র ওর হাত থেকে আমের প্লেট'টা ধপাস করে মেঝেতে পড়ে যায়!!
ওদিকে স্ত্রী নীলা রান্না ঘর থেকে ছুটে এসে বল্লঃ
--- কী হয়েছে?

------- [আমতা আমতা করে] না, কিছু না। হাত থেকে প্লেটটা ছুটে পড়ে গেছে!
--- [একটু ঝাঁজালো স্বরে] তুমি যে কি? কৈ স্ত্রীকে হেল্প করবা সেটা না বরং কাজ বাড়িয়েই যাচ্ছ.....
[আর কিছুক্ষণ বকবক করে, ফ্লোর পরিস্কার করে চলে যায়]
মিশকাতের চোখে-মুখে তখনও ভয়, বিস্ময় আর কৌতূহল। এইটা কী ধরনের প্রশ্ন?
মনিকার মাথায় এই প্রশ্ন এলো কীভাবে?
আর ওরতো প্রশ্নের উত্তর শোনারো ভ্রূক্ষেপ নেই কারণ সে আবার স্বাভাবিক ভাবেই টিভি দেখছে!!

মেয়েটার সাথে এই প্রসঙ্গে আর কিছু বলার সাহস হয় না ওর। দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে বাসায় এসেছিল, সময় হওয়াতে আবার দ্রুতই চলে যেতে হলো অফিসে। কিন্তু অফিসের কাজে কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারে না। কয়েকজন কলিগ ওর অন্যমনস্ক ভাব ধরতে পেরে জিজ্ঞেস করেঃ
--- মিশু, কোনো সমস্যা?
----- [মৃদু হেসে কাঁধ ঘুরিয়ে] নাহ্, কোনো সমস্যা নেই।
--- তবে মুড অফ যে? আচ্ছা চল, চা-কপি....
----- আজ না, অন্য দিন!

অতঃপর রাত ৮ টায় অফিস ছুটি হওয়ার সাথে সাথে বাসায় চলে আসে।
কিন্তু ওর মনের খুঁতখুঁতই ভাব দূর হচ্ছে না,
তাইতো কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক হয়ে ড্রয়িংরুমে বসে থেকে সাতপাঁচ ভাবেঃ
মনিকার বলা সেই এক লাইন প্রশ্নের তাৎপর্য কিছুতেই বের করতে পারছে না।
মেয়েটার বয়স সবে পাঁচ পেরিয়ে ছয়ে পড়েছে।
এই বছরের শুরুতেই মেয়েটাকে এলাকার একটা স্কুলের শিশু শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়েছে।
এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ের মাথায় এই ধরনের একটা উদ্ভট প্রশ্ন কী করে আসতে পারে
"তা কিছুতেই মাথায় আসে না ওর"!!

এই ধরনের কিছু সামনাসামনি না দেখলে এমন একটা প্রশ্ন মেয়েটার মাথায় আসার কথা না।
কিন্তু যখন মেয়েটা একটু একটু সব কিছু বুঝতে শুরু করেছে তখন থেকে ওর সামনে কখনই ফিজিক্যাল করেনি, তাছাড়া ওদের ফিজিক্যালে অতিরিক্ত নোংরামি কখনই ছিল না,
যেমনটা মনিকার মনে প্রশ্ন জেগেছে!!
মিশকাত বুঝেছিল, বিষয়টা মোটেও হালকা নয়। তাই সে হালকা ভাবে উড়িয়েও দেয়নি।
অনেকক্ষণ ধরে এই বিষয়টা নিয়ে একা একাই চিন্তা করে যায় সে।
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় এই বিষয়ে খোলাখুলি তার মেয়ের সঙ্গেই কথা বলবে।
একটা ছয় বছরের বাচ্চা শিশুকে আমরা যতটা অবুঝ ভাবি তারা মোটেও ততটা অবুঝ হয় না।
এই বয়সে অনেকেরই মানসিক বিকাশ অনেক ভালো হয়।
আমরা যতটা ভাবি, তাঁরা তারচেয়ে অনেক বেশিই বুঝতে পারে।
হয়তো তা তাদের মনের ভেতরেই আবদ্ধ করে রাখে। তাই আমরা ভাবি ওরা অবুঝ!!
রাত ১২ টা, নীলা আর মনিকা ঘুমিয়ে গেছে শুধু মিশকাতের চোখেই ঘুম নেই।
স্ত্রী নীলা মাঝে আর মেয়ে এবং ও তাঁর দুইপাশে শুয়ে।
ঘরে টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে, সেই আলোতেই হঠাৎ মিশকাতের চোখ, স্ত্রীর মুখের ওপর আটকে যায়।
কোনো এক অজানা কারণে ওর বুকটা ধ্বক করে উঠে।
একটা অজানা ভয় মনে বাসা বাঁধে।
যদিও নিলাকে অনেক বেশি বিশ্বাস করে, তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়,
"কোনোভাবে কি ধোকা দিচ্ছে? অন্ধ বিশ্বাসের সুযোগ নিচ্ছে?

যেহেতু মনিকা বাইরের কারও সাথে মিশে না সেহেতু তাঁর মনে এই উদ্ভট প্রশ্ন জাগার কারণ কী?
প্রত্যক্ষভাবে একটাই উত্তর "নীলা"!
কারণ হয়তো মনিকা ওর আম্মুকে এমন কিছু করতে দেখেছে,
তাই তাঁর মাথায় এই প্রশ্নটা এসেছে। তবে কি নীলা পরকীয়ার সঙ্গে জড়িত,
কিন্তু সে এমনটা কেন করবে?
মিশকাতের মাথায় একের পর এক এমন উদ্ভট সব প্রশ্ন এসে মাথার
ভেতর ভয়ংকর রকম জটলা বাঁধতে থাকে।
অসংখ্য অজানা , অচেনা ভয়, সন্দেহ তাঁর মনে চেপে বসে।

সকাল হতেই মিশকাত বাড়ি থেকে রাস্তায় বেড়োয় একটু হাঁটাহাঁটি করতে। তাঁর বাড়ির গেট বরাবর রাস্তার অপজিটে একটা মুদির দোকান। মুদি পণ্যের পাশাপাশি চা'ও বিক্রি হয়। দোকানে বসে চা খেতে খেতে কথার প্রসঙ্গে দোকানদারের কাছে জানতে চায়ঃ
চাচা, ইদানীং বাসার ভেতর বিভিন্ন জিনিসপত্র হারিয়ে যাচ্ছে! আপনি কি কখনো, দিনের বেলাতে এই বাড়িতে অচেনা কাউকে ঢুকতে দেখেছেন?
-- [কিছুক্ষণ ভেবে] সেদিকে তেমন খেয়াল করিনি, তবে মাঝেমধ্যে একটা কমবয়সী ছেলেকে বাড়ি থেকে বের হতে দেখেছি!

কথাটা শুনেই ওর বুকটা ধ্বক করে উঠে! ওখানে আর বেশিক্ষণ না থেকে আবার বাসায় ফিরে যায়।
মিশকাতের মন মেজাজ খারাপ তাই অফিসে ফোন করে জানিয়ে দিলো, আজ সে অফিসে যাবে না। নীলা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলঃ
-- কি বেপার, অফিসে গেলে নাযে??
[সন্দেহের স্বরে] এমনি! টানা অফিস করতে ভালো লাগছে না।
তাই অফিসে বলে একদিন ছুটি নিয়েছি!
অন্যান্যদিন সকালে নাস্তা করার পর,
নীলা মেয়েকে স্কুলে দিয়ে যায়। আজ যেহেতু মেয়ের বাবা বাসায় তাই ঐ গেল।

মনিকা স্কুলের পোশাক পরে রেডি হয়ে বাবার হাত ধরে বাড়ির বাহিরে বেরিয়ে এলো। নীলা গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বাড়ির ভেতরে যেতেই, মিশকাত মেয়েকে নিয়ে স্কুলের পথের উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করল। মনিকা কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলঃ
বাবা, আমরা কোথায় যাচ্ছি?

[মিষ্টি করে হেসে] আমরা আজ সারাদিন অনেক ঘুরবো, আর মজা করবো। আজ আমার অফিস বন্ধ সাথে তোমার স্কুলও!!

[আনন্দে চেঁচিয়ে] হুররেএএএএএ, কি মজা....
বাপ-মেয়েতে, প্রায় ঘন্টা খানেক অনেক জায়গায় ঘুরলো। অকে আইসক্রিম, চকোলেট কিনে দিলো। তারপর কাছেরই একটা পার্কে ঢুকে, দুজনেই একটা বেঞ্চিতে বসলো!!
প্রচন্ড উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনায় মিশকাতের শরীর কাঁপছে। মনিকা এক মনে আইসক্রিম খাচ্ছে, আর মুগ্ধ হয়ে চারপাশের মানুষ জন দেখছে।
একসময় মিশকাত কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে মেয়েকে প্রশ্ন করলঃ
আচ্ছা মা'মনি একটা কথা বলতো, যখন আমি অফিসে থাকি,
তখন কী এই বাড়িতে তোমার আম্মুর সাথে দেখা করতে কেউ আসে....

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com