আইসিটি স্যার যখন বর । পর্ব - ১০
কলেজে ঢুকে যা দেখি আমার মাথা পুরাই গরম হয়ে যায়,,,, আবার বুকের ভিতর একটা মোচর দিয়ে উঠে,,, জিহা ভয়ে আমার হাতটা চেপে ধরলো,,,,
গেইটের সামনে জাহিদ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে,,,, হাতে মুখে অনেক জায়গা ব্যান্ডস করা,,,,, উনাকে দেখে আগের কথা মনে উঠতেই রাগ,, ঘৃণা,,ভয় তিনটাই কাজ করছে মনের ভিতর,,,,,
ফারহাঃ আ,, আ,আপ,আপনি!
জাহিদ ভাইয়াঃ আমি আসলে,,,,,
ফারহাঃ আপনি কেন আবার এসেছেন? এত কিছু করার পরও আপনার শান্তি হয় নাই? কেন আমার লাইফটা হেল করে দিচ্ছেন,,, কি দোষ করেছি আমি আপনার? কেন আপনি আমার সাথে এমনটা করতেছেন?
জাহিদ ভাইয়াঃ ফারহা আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি,,, আমায় মাফ করে দাও প্লীজ,,,,
ফারহা & জিহাঃ ক্ষমা!!!
জাহিদ ভাইয়াঃ ফারহা আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করেছি,,,,
এই ভুলে হয়তো কোনো ক্ষমা হয় না,,,
তাও আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি,,,, রাহাত স্যার আমামার চোখ খুলে দিয়েছে,,, আমারও তো বোন আছে তাই না,,আমি সত্যি অনেক বড় ভুল করেছি,,,
জানো আজকে দুদিন এই অপরাধ বোধটা আমার খুড়েখুড়ে খাচ্ছে,,হস্পিটালে আমার এক একটাদিন কতটা যন্ত্রণায় থেকেছি,,,,,নিজেকে কতটা অপরাধী মনে হয়েছে তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না,,,,যখন শুনলাম তুমি আজকে কলেজে আসছো নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না,,,আমার এই অবস্থায় হস্পিটাল থেকে আসতে দিচ্ছিল না কিন্তু আমি জোর করে চলে আসছি,,,,,
ফারহাঃ ওয়েট ওয়েট,,,, আপনি জানলে কী ভাবে আজকে আমি কলেজ আসবো?
জাহিদ ভাইয়াঃ একটু চেপে গিয়ে,,,, সেটা না হয় পরে একদিন বলবো,,, কিন্তু এখন প্লীজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও,,,,
জিহাঃ আপনি যেই অপরাধ করেছেন,,, তার কী কোনো ক্ষমা আছে? একটা মেয়ের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ চিনিয়ে নিতে ছেয়েছেন,,,, তারপরও আপনি ওর কাছ থেকে ক্ষমা আসা করছেন?
ফারহাঃ আপনি চলে যান এই খান থেকে,,,,
জাহিদ ভাইয়াঃ আমি সত্যি এই অপরাধ বোধ নিয়ে বাঁচতে পারবো না আজকে তুমি এক আমাকে এই অনুতাপ থেকে রক্ষা করবে আর না হয় আমি নিজেই নিজেকে মুক্ত করবো ,,,
ফারহাঃ ক কি ক কর করবেন আপনি,,,
জাহিদ ভাইয়াঃ তুমি যদি আমায় ক্ষমা না করো তাহলে আমি সুইসাইড করবো,,,
ফারহাঃ
জিহাঃ
জাহিদ ভাইয়াঃ হুম,,, এইটা ছাড়া আমার কাছে আর কোন অপশন নেই,,, সত্যি আমি মুক্তি পেতে চাই,,,,
ফারহাঃ না না সুইসাইড করতে হবে না আপনি যে আপনার ভুলটা বুঝতে পেরেছেন,,, এইটাইই অনেক,,,,
জাহিদ ভাইয়াঃ তুমি আমায় ক্ষমা করেছ তো ফারহা?
ফারহাঃ হুম করছি,,,
জিহাঃ মনে মনে,,,এই খাটাশটা এই রকম শয়তান মার্কা হাসি দিচ্ছে কেন! ওর কি আবার কোনো মতলব আছে নাকি? কি জানি বাবা,,,এই ফারহাটাও না,,, কি দরকার শয়তানের সাথে এতত ভাব করার,,দূর ছাই...
জাহিদ ভাইয়াঃ সত্যি!
ফারহাঃ হুম সত্যি,,,
জাহিদ ভাইয়াঃ প্রমাণ করো,,,,,
ফারহাঃ কি ভাবে?
জাহিদ ভাইয়াঃ ফ্রেন্ডস হয়ে??
ফারহাঃ ওকে,,,
জাহিদ ভাইয়াঃ থ্যাংক্স
উফ জিহা কি হলো টা কি! এই ভাবে চিমটি দিচ্ছিস কেন? সব চামড়া তুলে নিবি নাকি?
জিহাঃ ফিসফিসয়ে,,, আরে ফারহা,,তোর মাথার সব তার ছিঁড়ে গেছে নাকি? তুই এই শয়তানটাকে ক্ষমা করলি তো করলি আবার ফ্রেন্ডও বানালি?
ফারহাঃ আরে বাবা উনি তো উনার ভুলটা বুজতে পেরেছেন তাই না? তাই উনাকে আমার একটা সুযোগ দেওয়া দরকার,,,,, তাছাড়াও জানিস না পাপিকে নয় পাপকে ঘৃণা করতে হয়,,,
জিহাঃ রাখ তোর বড় বড় কথা,,,,, দেখবি এর জন্য কিন্তু তোকে পরে পস্তাতে হবে,,,মনে রাখিস,,,,
ফারহাঃ আরে তুই,,,,
জাহিদ ভাইয়াঃ কি ব্যাপার তোমার কি ফুসুরফাসুর কি আজকে শেষ হবে?
ফারহাঃ হুম হুম বলেন,,,,,
জিহাঃ হুম,,, মনে মনে শয়তান তোকে বলতে হবে,, ইচ্ছা করতেছে দুইটা লাথি দিয়ে উগান্ডা পাঠাই দিতে,,,
জাহিদ ভাইয়াঃ আচ্ছা তোমার ক্লাসে যাও,, আমার হস্পিটালে যেতে হবে,,,,, বাই
ফারহা & জিহাঃ বাই,,,,,
জিহাঃ ফারহা তুই এইটা কোনো কাজ করলি?
ফারহাঃ মানুষ মাত্রই তো ভুল তাই না।।। আর উনি তো উনার ভুল বুজতে পেরেছেন তাহলে,,,,,
জিহাঃ শুধরাইলে ভালো,,, তবে একটা কথা আছে কি জানিস? কুকুরের লেজ সারাজীবন সুরুঙ্গের মধ্যে থাকলে ও সোজা হয় না,,,,, আচ্ছা যাই হোক এখন ক্লাসে চল,,,
ফারহাঃ সেই ভালো,,,, চল,,,
আসার সময় অফিসরুমের সামনে রাহাত স্যারকে অয়ন স্যার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতেছে ,,, রাহাত স্যার আজকে ব্লু শার্ট আর ব্লাক প্যান্ট পরছে,,,,, ফর্সা গায়ের রঙ,,মুখে খোচা খোঁচা দাড়ি,, কথা বলার সময় মুখে সব সময় সেই হাসিটা ঝুলিয়ে রেখেছে,,,, হাইটও মাশাল্লা,,,, সব দিক থেকেই অসম্ভব সুন্দর,, মেয়েদের তো মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হয়,,, যদি ছেলেদের মিস্টার ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অনুষ্ঠিত হতো তাহলে আমাদের রাহাত স্যার ফাস্ট হতেন,, যাই হোক বজ্জাতটাকে আমার খুব ভালো লাগে,,,
জিহাঃ কিরে আজকে আর ক্লাসে যাবি না নাকি দুনিয়ার সব এইই খানে শেষ করে তারপর যাবি,,,,
ফারহাঃ দূর হও আপদ একটা,,, কত ভালো ভালো কথা ভাবছিলাম মাঝ খান থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে আমার ভাবনায় পানি ঢেলে দিলি,,,,,,
জিহাঃ আজিব,,,,,তো ক্লাস যাবি না?
ফারহাঃ তোর পকপকানির জন্য যেতে পারছি কই?
জিহাঃ অসহ্য,,,,
ফারহাঃ আচ্ছা চল,,,, স্যারের পাশ দিয়ে আসলাম যাতে একটু অসুস্থতা নিয়ে জিজ্ঞাস করে কিন্তু একি পাশ দিয়ে আসলাম কেমন আছি জিজ্ঞাস করা তো দূরেরর কথা একবার তাকালোও না,,,,, ওই দিন আমাকে ওইরকম অবস্থায় রেখে এলো একটু খোজ তো নিলো না এখনও একটু জিজ্ঞাস করতেছে না,,,
বজ্জাত,,, হাতি,,, বিল্লি তোকে ইচ্ছা করতেছে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে রোদে শুকিয়ে শুটকি বানিয়ে কুকুরকে খাওয়াই,,,, শয়তান দেখবি তোর বিয়ে হবে না,,,হলেও তোর বউ টাক্কু হবে টাক্কু,,,, ধ্যাততেরি
মাথায় এক বালতি রাগ নিয়ে ক্লাসে চলে এলাম,,,
ক্লাসে ঢুকতেই সবাই আমাকে ঘিরে ধরলো,,,, ওই দিন কি হয়েছিল? কেন আমি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম,,,, কে কি করেছিল আমার সাথে? রাহাত স্যার কি ভাবে দেখলেন! ইভেন অনেকেই আমার উপর জেলাস যে রাহাত স্যার আমায় কোলে নিয়েছে,,,, সবাই এক সাথে এত প্রশ্ন করেছে যে মেজাজটাই খারাপ করে দিচ্ছে,,,,
ফারহাঃ উফ অসহ্য,,,, সবাই এক সাথে এত প্রশ্ন করলে কোনটা ছেড়ে কোনটার আন্সার দিবো,,,, আর তাছাড়া তোদের কী খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নাই? পড়তে আসছিস পড়,,,, এত কিছু জেনে তোদের কাজ নাই,,,
জান্নাতঃ আরে বল না কী হয়েছে?
ফারহাঃ আবার,,,,,
সুরাইয়াঃ উঠছিস উঠছিস তাও রাহাত স্যারের কোলে,,, কেনরে কলেজে কি আর কোনো মানুষ ছিলো না?
ফারহাঃ কি রকম পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি,, তোর কেউ পাচ্ছিস নাকি রে?
সুরাইয়াঃ
তাসমিঃ এই ফারহা একটু বল না প্লীজ,,,,
সবাই একসাথেঃ প্লীজ,,,
ফারহাঃচুপচাপ এইখান থেকে তোরা যাবি নাকি! আমাকে কিছু করতে হবে ,,, আর তোরা তো জানিস আমি যদি একবার কিছু করা শুরু করি তাহলে,,,, ,,তাহলে কি করবো আমার থেকে তোরাই ভালো জানিস,,,
এইটা বলার সাথে সাথে সবাই এক এক করে ভেগে গেছে,,,,,, হিহিহি ভয় পাইছে,,,,আমার কত গুলা গুণ আছে যে গুলার জন্য এই প্রাণী গুলা আমাকে এত্ত ভয় পায়,,,,
তারপর ক্লাস শুরু হলো,,, এক নাগাড় ক্লাস করতে যে কত বোর লাগে যারা করে তারাই বোঝে,,,,,অসহ্য,,,
এইবারের ক্লাস রাহাত স্যারের,,,, উনি আসলেন,,, এসেই হোমওয়ার্ক গুলোর কথা বলতেছেন,,,,,
রাহাত স্যারঃ আজকে যারা যারা হোমওয়ার্ক করো নাই,, তারা সবাই দাঁড়িয়ে যাও,,,, আমি কিন্তু ছেক করবো,, পরে যদি দেখি যে হোমওয়ার্ক না করে বসে আছো,, তাহলে কিন্তু অনেক বড় শাস্তি পেতে হবে,,
ফারহাঃ আমি দাঁড়াবো? না থাক দাঁড়ানো লাগবে বা স্যার তো জানে আমি অসুস্থ ছিলাম কলেজ আসি নাই আর তাছাড়া এত জনের মাঝখান থেকে খুজে বেরও করতে পারবে না,,,,আমি বরং অন্য একটা লিখা খুলে বসেই থাকি,,, যদি ধরা না পরি তো ভালোই,,,
রাহাত স্যারঃ কেউ দাঁড়াচ্ছো না,,,, সবাই বসে আছো তার মানে সবাই হোমওয়ার্ক করে এনেছ,,,,গুড ভেরি গুড,,,
এই বলে এক এক করে স্যার সবার খাতা দেখতেছেন,,, অনেকক্ষণ দেখার পর এইবার আমার খাতা দেখতেছেন,,, আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি,,,,
রাহাত স্যারঃ এইটা কি?
ফারহাঃ নিশ্চুপ,,,,
রাহাত স্যারঃ চুপ করে আছো কেন? আমি কি বলেতেছি কানে যায় না? আন্সার মি,,,
ফারহাঃ স্যার আসলে আমি তো অসুস্থ ছিলাম তাই এই দুই দিন কলেজে আসি নাই তাই আর কি?
রাহাত স্যারঃ আসছো কি আসো নাই,,, এই কইফিয়ত তো আমি চাই নাই,,,, আমি বলেছিলাম যে যারা হোমওয়ার্ক করে নাই তাদের দাঁড়াতে বলছি,,, তুমি দাঁড়াও নাই কেন? তাও আবার অন্য একটা লিখা খুলে বসে আছো নিজেকে খুব চালাক মনে করো তাই না?
ফারহাঃ আসলে স্যার আপনি তো জানতেন তাই আর দাঁড়াই নাই,,,,
রাহাত স্যারঃ চুপ করো একদম চুপ,,, কোনো কথা বলবা না,,, যাও,, টেবিলের উপর উঠে কান ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকো,,,
ফারহাঃ স্যার,,,,,
রাহাত স্যারঃ এক্সপ্লেইন চাই নাই,,,,,
ফারহাঃ,,
উফ একবার এই দিকে পড়ে যেতে যাচ্ছি একবার এই দিকে,,,,
নাইজেরিয়ান,, এনাকন্ডা,, উল্লুক,, হনুমান,,,বজ্জাত,,, খবিশ,, কুত্তা, বিল্লি,,, ইচ্ছা করতেছে তোর বই খাতা সব গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে উগান্ডা পাঠাই দিতে,,,, আমার মত একটা বাচ্চা মেয়েকে শাস্তি দিতে তোর বিবেকে লাগে না,,,দাঁড়াতে দাড়াতে আমার পায়ে পুরা ব্যাথা হয়ে গেছে,,,,এক পায়ে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায় নাকি তাও আবার কান ধরে
জনপ্রিয় পোষ্ট সমূহঃ
ঘন্টা বাজার পর যে বসে যাবো,,,
রাহাত স্যারঃ বসতেছ কেন? আমি বসতে বলছি তোমায়?
ফারহাঃ স্যার ঘন্টা তো বেজে গেছে তাই ভাবলাম,,,,
রাহাত স্যারঃ তো? আমি আছি এখনো ক্লাসে,, রাইট?
ফারহাঃ সরি স্যার,,,,, তুই ক্লাসে থাকলে কি হইছে? তোকে কি আমি কোলে নিয়ে নাচবো?
রাহাত স্যারঃ হুম,,,নেক্সট যেন এমন না হয়,,,,
ফারহাঃ ওকে স্যার,,,, হবে আলবাত হবে দেখি তুই কি করিস,,,শয়তান একটা,,,
স্যার চলে গেলেন আর আমিও বসে পরলাম,,,, আহ আমার এক পা আজকে শেষ,,,,,,
কলেজ ছুটি হওয়ার পর,,, প্রতিদিনকার মত আমি আর ফারহা রিক্সা করে যাচ্ছিলাম,,,,,,
হঠাৎ করে একটা জিনিস চোখে পরলো,,
পরবর্তী পর্ব পড়তে পেইজটি তে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com